কেন আবেদন কমেনি ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের?

স্কিন লাইটেনিং প্রোডাক্টস বা ত্বক ফর্সা করার জন্য ব্যবহৃত কসমেটিক পণ্যগুলো বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশি জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল তো বটেই, বলতে গেলে পুরো এশিয়াজুড়েই রয়েছে ত্বক ফর্সা বা সাদা করার পণ্যের চাহিদা। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোও করছে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিস্ট ইনকর্পোরেটেডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের বাজার পৌঁছাবে ১১.৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ১৮০ কোটিতে।
"স্কিন লাইটেনার্স - গ্লোবাল মার্কেট ট্র্যাজেক্টোরি অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স" শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া মহাদেশভুক্ত অধিকাংশ দেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও কানাডার মতো বড় অর্থনীতিরগুলোর বাজারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এসব দেশের অন্তত ১২৩টি কোম্পানির উপর জরিপ চালিয়ে গবেষণার ফলাফল নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে জার্মানির বির্সডোর্ফ এজি; ভারতভিত্তিক ক্যাভিনকেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড, ইমামি লিমিটেড ও হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিমিটেড; যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জোলেন ইনকর্পোরেটেড সহ আরও অনেক নামকরা কোম্পানি।
ত্বক ফর্সাকারী এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য রকমের সাবান, লোশন, ক্রিম ও মুখে খাওয়ার পিল। এগুলোর মধ্যে ক্রিম ও ব্লিচের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ত্বকের জন্য কতোটা ক্ষতিকারক এইসব পণ্য, সে সম্পর্কে ধারণা থাকার পরেও ফর্সা হওয়ার উন্মাদনা চলছে দেশে দেশে। বাজারে সহজপ্রাপ্যতা ও দামের দিক দিয়ে অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে হওয়ায় এসব পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে উত্তরোত্তর। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উচ্চ গতির ইন্টারনেট ও অনলাইন কেনাকাটার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা এ ধরনের পণ্যের বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করছে।
ভোক্তারা বায়োঅ্যাকটিভ নির্যাস সমৃদ্ধ পণ্যগুলোর দিকে বেশি ঝুঁকছেন, যেগুলোতে সাধারণত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ত্বকের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেইসঙ্গে কেবল নারীরাই নন, ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের প্রতি পুরুষরাও দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের বাজার অনুমান করা হয়েছিল ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে, পরবর্তীতে তা সংশোধন করে এখন অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যে এই পণ্যের বাজার গিয়ে ঠেকবে ১১.৮ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, গবেষণার সময়কাল বিবেচনায় বার্ষিক চক্রবৃদ্ধির হার (কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট- সিএজিআর) হবে ৬.৬ শতাংশ।
বিশ্লেষণের সময় শেষ হওয়া নাগাদ ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের সিএজিআর ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হয়েছে প্রতিবেদনে। মহামারির ব্যবসায়িক প্রভাব ও এ কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পর, ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত ক্লিনজারের সংশোধিত সিএজিআর পরবর্তী ৭ বছরের জন্য অনুমান করা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। এই সেগমেন্টটি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের বাজারের ২১.৭ শতাংশ দখল করে আছে।
চলতি বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের বাজারের আকার অনুমান করা হয়েছে ৩২৭.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বব্যাপী এই বাজারে ৩.৯২ শতাংশ শেয়ারের সমান।
অন্যদিকে, ২০২৬ সালের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের বাজারের আকার সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশটির সিএজিআরের হার ৮.৪ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া, উক্ত সময়ে জাপান ও কানাডায় বাজার বৃদ্ধি পাবে যথাক্রমে ৩.৬ শতাংশ ও ৪.৫ শতাংশ।
এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোতে ত্বক ফর্সা করার সাংস্কৃতিক ও মিডিয়ার আকর্ষণীয় প্রচারণায় ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এশিয়ার নারী ও পুরুষদের ফর্সা ত্বকের প্রতি আগ্রহ আঞ্চলিক বাজার বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়ছে প্রতিবেদনে। কারণ মানুষের এই আগ্রহের কারণেই উৎপাদকরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাজারে আনছেন ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে সেগুলো কিনতে মানুষকে উৎসাহিত করছেন।
এছাড়া, পশ্চিমা সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, এশিয়ায় ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের বাজার বৃদ্ধিতে আবদান রাখছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সূত্র: পিআর নিউজওয়্যার