Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ঢাকার অতিকায় পানির ট্যাংকগুলো এখন কেন শুধুই আশ্চর্যজনক স্থাপনা!

ইতিহাস বলছে, ১৮৭৮ সালে ঢাকায় প্রথম স্থাপিত হয় ওভারহেড পানির ট্যাংক, যা পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের উত্তরদিকে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এই ট্যাংকটি ‘বাহাদুর শাহ পার্ক পানির ট্যাংক’ নামে পরিচিত। এর লাল ইটের প্রাচীর কাঠামো, স্থাপত্যশৈলী, নির্মাণকৌশল এতই অসাধারণ এবং স্বতন্ত্র যে পথচারীদের নজর কেড়ে নিতে বাধ্য। কিছুটা গম্বুজের মতো দেখতে দানবীয় এই স্থাপনাটি লম্বায় প্রায় পাঁচতলা বাড়ির সমান।
ঢাকার অতিকায় পানির ট্যাংকগুলো এখন কেন শুধুই আশ্চর্যজনক স্থাপনা!

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত & শেহেরীন আমিন সুপ্তি
21 September, 2023, 10:05 am
Last modified: 21 September, 2023, 10:07 am

Related News

  • বাস্তবায়ন শঙ্কার মাঝেই ১ লাখ স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা চট্টগ্রাম ওয়াসার
  • ওয়াসার এমডির দায়িত্বও পেলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক শাহজাহান 
  • পানিতে পোকা, ভোগান্তিতে ঢাকার বাসিন্দারা, দায় নিতে নারাজ ওয়াসা
  • লবণাক্ততা কমায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন বেড়েছে, অনুমোদনের অপেক্ষায় উন্নয়ন প্রকল্প
  • নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, চট্টগ্রামে ওয়াসার ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ কমেছে

ঢাকার অতিকায় পানির ট্যাংকগুলো এখন কেন শুধুই আশ্চর্যজনক স্থাপনা!

ইতিহাস বলছে, ১৮৭৮ সালে ঢাকায় প্রথম স্থাপিত হয় ওভারহেড পানির ট্যাংক, যা পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের উত্তরদিকে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এই ট্যাংকটি ‘বাহাদুর শাহ পার্ক পানির ট্যাংক’ নামে পরিচিত। এর লাল ইটের প্রাচীর কাঠামো, স্থাপত্যশৈলী, নির্মাণকৌশল এতই অসাধারণ এবং স্বতন্ত্র যে পথচারীদের নজর কেড়ে নিতে বাধ্য। কিছুটা গম্বুজের মতো দেখতে দানবীয় এই স্থাপনাটি লম্বায় প্রায় পাঁচতলা বাড়ির সমান।
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত & শেহেরীন আমিন সুপ্তি
21 September, 2023, 10:05 am
Last modified: 21 September, 2023, 10:07 am

স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রতিদিন একটা বিশাল বড় বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে সাত বছর বয়সী ফারদিন। এত উঁচু বিল্ডিং আর কোথাও দেখেনি সে। আশেপাশের সবকিছুর চেয়ে উঁচু এই বিল্ডিং। দৈত্যাকৃতির এই বিল্ডিংটির মাথাটা একদম গোল। দেখে মনে হয় যেন একটা গোল ঘর। আচ্ছা এ ঘরে কি কোনো মানুষ থাকে?

একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দাদুকেই প্রশ্নটা করে বসলো সে। 'দাদু এখানে কারা থাকে?' প্রশ্ন শুনেই দাদু হেসে দিলেন। বললেন, 'এটা কারো বাসা নয় দাদু, এটা হলো পানির ট্যাংক। এখানে আগে পানি রাখা হতো। এখান থেকেই পানি যেত সবার বাসায়।'

'পানির ট্যাংক!' উত্তর শুনে ফারদিনের চোখেমুখে বিস্ময়। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না কীভাবে এত উঁচুতে আগে পানি থাকতো! নাতির বিস্ময় দেখে দাদা বুঝতে পারলেন, এই ট্যাংকগুলো আসলেই এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। অথচ ঢাকাবাসীকে একসময় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল  এই ওভারহেড ট্যাংকগুলোই।

উপরের ঘটনাটি কাল্পনিক হলেও, ফারদিনের মতো শিশুদের কাছে আর কিছুদিন পর ওয়াসার এই ওভারহেড পানির ট্যাংকগুলো এমনই আশ্চর্যের এক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

ফুলবাড়িয়া পানির ট্যাংক; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

ঢাকার প্রথম ওভারহেড পানির ট্যাংক

ইতিহাস বলছে, ১৮৭৮ সালে ঢাকায় প্রথম স্থাপিত হয় ওভারহেড পানির ট্যাংক, যা পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের উত্তরদিকে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এই ট্যাংকটি 'বাহাদুর শাহ পার্ক পানির ট্যাংক' নামে পরিচিত। এর লাল ইটের প্রাচীর কাঠামো, স্থাপত্যশৈলী, নির্মাণকৌশল এতই অসাধারণ এবং স্বতন্ত্র যে পথচারীদের নজর কেড়ে নিতে বাধ্য। কিছুটা গম্বুজের মতো দেখতে দানবীয় এই স্থাপনাটি লম্বায় প্রায় পাঁচতলা বাড়ির সমান। ১৮৭৮ সালের ২৪ মে থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ট্যাংকটি ব্যবহার করা শুরু হয়।

বাহাদুর শাহ পার্ক পানির ট্যাংক; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

ঠিক কবে এই ট্যাংকটি বন্ধ হয়ে যায় সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। কেউ বলেন পাকিস্তান আমলেই এটি বন্ধ হয়ে গেছে, আবার কারও মতে, বিশ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। যখনই বন্ধ হোক, ১৪৫ বছর বয়সী এই পানির ট্যাংকটি বর্তমানে কেবল একটি অকেজো, জরাজীর্ণ বিশাল স্তম্ভ হয়েই দাঁড়িয়ে আছে।

২০২০ সালের মে মাসে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক এই ট্যাংকটিকে একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো সুনজর আসেনি এই ব্রিটিশ-নবাব নিদর্শনের ওপর। এখন পর্যন্ত এটি সংরক্ষণের কোনো বালাই তো নেই-ই, উলটো এর ভেতরে চলছে মাজার ব্যবসা।

পানির ট্যাংকের নিচে স্থাপিত হয়েছে মাজার; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

বহুদিন আগেই ট্যাংকটি চলে গেছে দখলদারের খপ্পরে। ট্যাংকের নিচের খালি জায়গায় কয়েক দশক আগে স্থাপিত হয়েছে মাজার। গতবছর বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন হয়েছে এটি নিয়ে। প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ট্যাংক এলাকার অস্থায়ী দোকানগুলো থেকে চাঁদাবাজিও চলত এই মাজারের মাধ্যমে।

বর্তমানেও ট্যাংকের দেয়ালের পাশ ঘেঁষে রয়েছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকান। প্রবেশপথে একটি লোহার গেট, সে গেটের ওপরে মাজারের সব ব্যানার, পোস্টার, শানে নুযূল লেখা। অথচ, ঐতিহাসিক এই স্থাপনা, যা কিনা একসময় ঢাকাবাসীকে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে মৃত্যু, মহামারীর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল তা নিয়ে নেই সামান্য স্মৃতিফলকও।

পানির ট্যাংকের নিচে স্থাপিত হয়েছে মাজার; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

লাল ইটের তৈরি সুউচ্চ এই ট্যাংকটি বাহাদুর শাহ পার্কের ঐ মোড়ের অন্যতম আকর্ষণীয় নিদর্শন। গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলে চোখে পড়ে দাবার বোর্ডের মতো সাদা-কালো মেঝে, আর গোলাকার ট্যাংকটির মাঝে একটি লম্বা খাম্বা। ট্যাংকটির মাথার চারদিক খেয়াল করলে চোখে পড়ে সিমেন্টের তৈরি সিংহমুখের। যা বাইরের দিকে হা করে আছে। কিছুটা মিল পাওয়া যায় সিঙ্গাপুরের লায়ন স্ট্যাচুর সঙ্গে। মাজারের রক্ষণাবেক্ষণকারী জানান, বৃষ্টির পানি যেন না জমতে পারে, তাই পানি বেরিয়ে যাবার জন্য এই ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশরা।

বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ঢাকাবাসীর কাছে যেন তার পুরোনো গৌরব আর ইতিহাসেরই জানান দেয় ঢাকার এই প্রথম পানির ট্যাংক।

ঢাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে ওয়াসার মোট ৩৮টি অকেজো ওভারহেড পানির ট্যাংক

ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তাদের অধীনে আছে ৩৮টি ওভারহেড পানির ট্যাংক। যার কোনোটিই আর সচল নেই।

সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে বাহাদুর শাহ পার্কের সমসাময়িক আরেকটি পানির ট্যাংকের দেখা পেয়েছিলাম ঢাকার গেন্ডারিয়ার ভাট্টিখানা এলাকায়। যার স্থাপত্যশৈলী অনেকটা একইরকম। লাল ইট-সুড়কি দিয়ে বানানো ট্যাংকটি।

লাল ইটসুড়কি দিয়ে বানানো গেন্ডারিয়ার ভাট্টিখানা পানির ট্যাংক; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

এলাকাবাসীর মতে, এটি ছিল ঢাকা শহরের দ্বিতীয় পানির ট্যাংক। শেওলাপড়া প্রাচীরে ঘেরা ট্যাংকের এলাকা। বাইরে ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ। প্রাচীরের ভেতর চারপাশে ঝোপঝাড়ের মতো লতাপাতা সব একপাশে স্তূপ করে রাখা। ট্যাংকের নিচের মাটি গর্ত আর পোড়া ছাইয়ে ভর্তি। সেখানকার বুথের অপারেটর মো. সাকিব জানান, জন্মের পর থেকে এমনই দেখে আসছেন ট্যাংকের অবস্থা। এলাকায় কোনো বাড়িতে পিকনিক বা ছোটখাটো কোনো অনুষ্ঠান থাকলে রান্নার আয়োজন করা হয় ট্যাংকের নিচে। কুরবানি ঈদের সময় যাদের বাড়িতে গরু রাখার জায়গা নেই তাদের গরুও বেঁধে রাখা হয় এই ট্যাংকের নিচেই।

পাকিস্তান আমলের পরবর্তী সময়ে স্থাপিত ট্যাংকগুলো দেখতে বেশিরভাগই সাদাটে রঙের এবং পুরোনোগুলোর তুলনায় লম্বায় অনেক বেশি উঁচু। ট্যাংকগুলোর পাশেই আছে ওয়াসার পানির পাম্প, যেখান থেকে সরাসরি পানি সরবরাহ করা হয় এলাকাগুলোতে।

টিকাটুলির হাটখোলা রোডের এই পানির ট্যাংকটিকে দেখা যায় রাজধানী মার্কেটের সামনে থেকেই, ছবি রাফিয়া মাহমুদ প্রাত

হাটখোলা রোড, ফুলবাড়িয়া, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, লালমাটিয়া, মিরপুর ১০- এলাকার ওভারহেড পানির ট্যাংকগুলো ঘুরে দেখা যায় প্রায় একই চিত্র। ফকিরাপুল আর লালমাটিয়ার ট্যাংক দুটি স্টিলের তৈরি। সাধারণ ট্যাংকগুলোর চেয়ে আকারেও বেশ বড় এগুলো।

যে ট্যাংকগুলোর সঙ্গে ওয়াসার জোন অফিস অবস্থিত সেগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও বাকি ট্যাংকগুলো পড়ে আছে অরক্ষিত।

বন্ধ হলো কেন

বিশাল আকৃতির ওভারহেড ট্যাংকগুলো মূলত ব্যবহৃত হত ওয়াসার পানি জমিয়ে রাখার কাজে। পানি শোধনাগার থেকে পরিশোধিত করে পাম্পের সাহায্য ট্যাংকে উঠিয়ে রিজার্ভ করে রাখা হত। 'কোনো কারণে পাম্প নষ্ট হলে সারানোর সময়টুকুতে যেন এলাকাবাসী পানির অভাবে না থাকে সে জন্যই ছিল এই ব্যবস্থা,' বলছিলেন ঢাকা ওয়াসার সহকারী জনতথ্য কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাদের।

সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল বেশ কম। বর্তমানে এই শহরের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি দুই লাখের উপরে। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ. কে. এম. সহিদ উদ্দিন বলেন, 'ওভারহেড পানির ট্যাংকগুলো ভরতেই সময় লাগত ১০ ঘণ্টার মতো। বর্তমানে ঢাকার বিপুল জনগোষ্ঠীকে পানি সরবরাহ দিতে হিমশিম খেতে হয় ওয়াসাকে। তাই রিজার্ভ ট্যাংকে পানি উঠিয়ে রাখার মতো সময় আর নেই। এখন সরাসরি লাইনে পানি সাপ্লাই করা হয় বাড়িগুলোর নিজস্ব রিজার্ভ ট্যাংকে।'

স্টিলের ট্যাংকগুলোর বিশাল আকৃতির কারণে শুধু নিচের মোচাকৃতির অংশটি পূর্ণ করা সম্ভব হতো; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

ঢাকার ৩৮টি ওভারহেড পানির ট্যাংকের কোনগুলো কবে স্থাপিত হয়েছে আর কবেই বা সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে- এর কোনো নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি ওয়াসা সংশ্লিষ্ট কেউ। তাদের কোনো নথিপত্রেও এর রেকর্ড নেই বলে জানান এ. কে. এম. সহিদ উদ্দিন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্যাংকগুলোর ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে রাজি হন ওয়াসার এক অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন মডস জোনে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা তার। তিনি জানান, লালমাটিয়ার স্টিলের ট্যাংকটি স্থাপিত হয়েছিল সত্তরের দশকের শুরুতে। একই সময়ে চালু হয়েছিল ফকিরাপুল ও মহাখালির দুটি স্টিলের ট্যাংক। এই ট্যাংকগুলো প্রতিটিই ছিল অনেক বেশি বড়। এগুলোর পুরোটা কখনোই ভরা যেত না। কেবল নিচের মোচাকৃতির অংশটি পূর্ণ করা হত। যে পাম্প দিয়ে ওভারহেড ট্যাংকে পানি উত্তোলন করা হত সেগুলোর উপরও অনেক চাপ পড়তো। যে কারণে কয়েকদিন পরপর নষ্ট হয়ে যেত পাম্পগুলো।

ফুলবাড়িয়ার পানির ট্যাংক, ভিতরে শাকশবজির ছোট্ট বাগান, ঝুলছে মানুষের কাপড়চাপড়ও; ছবি রাফিয়া মাহমুদ প্রাত

পাম্পের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশি হয়ে যেত এ কারণে। এছাড়াও বড় বড় পানির ট্যাংকের রক্ষণাবেক্ষণও ছিল বেশ ঝামেলাপূর্ণ। উঁচু ট্যাংক থেকে পানি সাপ্লাই করায় পানির চাপও হতো অনেক বেশি। যে কারণে অনেক বাসাবাড়ির পানির ট্যাপ ভেঙ্গে যেত এই চাপে।

ওয়াসার এই প্রাক্তন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মূলত আশির দশক থেকে বন্ধ হতে শুরু করে ওভারহেড পানির ট্যাংকগুলো। কোনো কোনো পানির ট্যাংক বন্ধ হয়েছে ২০০০ সালের পর। সর্বশেষ ২০০৭ সালে আগারগাঁওয়ের পানির ট্যাংকটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা মনে করতে পারেন তিনি।

মিরপুর ১০ পানির ট্যাংক; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

ঢাকা ওয়াসার আরেক অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, 'ওভারহেড ট্যাংকে পানি ওঠালে অনেকটা পানি হেডলস বা সিস্টেম লসে চলে যেত। হয়তো আমরা ১০ হাজার গ্যালন পানি ওঠাতাম ট্যাংকে, কিন্তু সেখান থেকে ৯ হাজার গ্যালনের বেশি পানি লাইনে সরবরাহ করা যেত না। তাই এই ব্যবস্থাটা লাভজনক ছিল না।'

ঢাকায় পানি সরবরাহের ইতিহাস

স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে কখনই ঢাকার সুনাম ছিল না। এ কারণে নিয়মিত প্রতিবছর মহামারীতে ঢাকা শহরে অনেক মৃত্যু হত। মহামারীর কারণ ছিল বিশুদ্ধ পানির অভাব। ১৮৭৮ সালের আগ পর্যন্ত ঢাকায় খাবার পানির উৎস ছিল বুড়িগঙ্গা, বিভিন্ন পুকুর-ডোবা, নোংরা পাতকুয়ো। তখন বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহের কাজ করত সাক্কা বা ভিস্তিওয়ালা নামের পেশাজীবীরা। গত শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত মশকের সাহায্যে পানি সরবরাহের কাজ করত তারা। কিন্তু রোগ-শোক থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন হয়ে পড়লো পরিশ্রুত পানি ব্যবস্থার।

বিজয়নগর পানির ট্যাংক; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

মুনতাসীর মামুনের 'ঢাকার টুকিটাকি' বই থেকে জানা যায়, ১৮৭১ সালে ঢাকার নবাব আবদুল গনি সরকারকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করেন শহরের কল্যাণার্থে ব্যয় করার জন্য। পরে ঠিক হয় এ টাকা ব্যয় করা হবে ঢাকায় পরিশ্রুত পানি সরবরাহের জন্য। কিন্তু পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিল এ প্রকল্পের জন্য অপ্রতুল। ১৮৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে নবাব আবদুল গনি এজন্য শহরের গণ্যমান্যদের নিয়ে একটি বৈঠক আহ্বান করেন। বৈঠকে কোনো জমিদারই টাকা দান করতে রাজি হলেন না। কেবল শহরের বিখ্যাত দুজন বাঈজী রাজলক্ষ্মী আর আমিরজান জানালেন তারা পাঁচশ টাকা করে দান করবেন। বৈঠকের ফলাফল দেখে নবাব গনি নিজেই আরো এক লক্ষ টাকা দান করেন। তবে নবাব গণির শর্ত ছিল ঢাকাবাসীকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করতে হবে। এরপর নবাব আহসানউল্লাহ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং সরকার নব্বই হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন প্রকল্পের জন্য।

১৮৭৪ সালে তৎকালীন ভাইসরয় চাঁদনীঘাটে ওয়াটার ওয়ার্কসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কাজ চলেছিলো ঢিমেতালে। তারপর একসময় দেখা গেল পৌরসভার টাকা শেষ কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। সরকার তখন প্রকল্প শেষ করার জন্য আরো টাকা দিল। এরপর ১৮৭৮ সালে ওয়াটার ওয়ার্কসের কাজ শেষ হয় এবং ঢাকার কমিশনার এফ. বি. পিকক এটির উদ্বোধন করেন। ঢাকায় শুরু হয় পরিশ্রুত পানি সরবরাহ।

ফুলবাড়িয়া পানির ট্যাংক; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

এলাকাবাসীর দাবি সংরক্ষণ হোক ট্যাংকগুলোর, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই ওয়াসার

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত সুবিশাল পানির ট্যাংকগুলো এখনও নজর কাড়ে পথচারীদের। কোনো কোনো জায়গায় বিশাল বিশাল অট্টালিকা এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি সেসব ট্যাংকের সামনে। কালের আবর্তে নির্দিষ্ট কিছু এলাকার নামকরণও হয়ে গেছে পানির ট্যাংকের নামে। অচল হয়ে অবহেলায় পড়ে থাকলেও শহরের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে ওভারহেড ট্যাংকগুলো।

রাস্তার ধারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ফকিরাপুলের পানির ট্যাংক, পুরোনো ট্যাংকদের মধ্যে যার নাম থাকে প্রথম দিকেই; ছবি রাফিয়া মাহমুদ প্রাত

গেন্ডারিয়ার ভাট্টিখানা পানির পাম্প এলাকায় দেখা হয়েছিল সত্তরোর্ধ্ব বাসিন্দা এলাহী বখশের সঙ্গে। জানান, এই পানির পাম্পের আশেপাশে খেলেই বড় হয়েছেন তিনি। তার ভাষ্যে, 'রাতের অন্ধকারে ট্যাংকের উপর উঠে বাতাস খাওয়া, ট্যাংকের নিচে মাংসচোর, বরফপানিসহ কত খেলা খেলেছি ছোটবেলায়। এলাকার সবার স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ট্যাংকটা। এখন অচল থাকলেও আমাদের ঐতিহ্যের অংশ এটা। এলাকার সৌন্দর্যও বাড়ায় ট্যাংকের স্থাপনা। তাই ওয়াসা চাইলেও ট্যাংক ভাঙ্গতে দেইনি আমরা।'

অন্যান্য ওভারহেড ট্যাংকের আশেপাশের এলাকাবাসীরও একইরকম মত। তাদের স্মৃতির অংশ ট্যাংকগুলো। এলাকার ঐতিহ্যবাহী নির্দশনও বটে। তাই সিটি কর্পোরেশন বা ওয়াসার পক্ষ থেকে ট্যাংকগুলো ভাঙ্গার উদ্যোগ নিলে প্রতিবার বিরোধিতা করেন তারা।

ফুলবাড়িয়া পানির ট্যাংক; ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি

ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওভারহেড পানির ট্যাংকগুলো নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই তাদের। অতীতে কয়েকটি ট্যাংক ভাঙ্গার কথা উঠলেও, নানান প্রতিবন্ধকতায় আর ভাঙ্গা হয়নি সেগুলো। নিকট ভবিষ্যতেও এগুলো ভাঙ্গার পরিকল্পনা নেই ওয়াসার।

শহরের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পুরোনো এসব পানির ট্যাংক আর ট্যাংকের ইতিহাস ঠিকভাবে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে প্রকৌশলী এ. কে. এম সহিদ উদ্দিন বলেন, 'সবসময়ই ঢাকা ওয়াসায় কোনো না কোনো সংকট চলছিল। তাই এইদিকটা কখনো ভাবা হয়নি। এখন সংকট অনেকটা মিটেছে, এখন আমরা এগুলো নিয়ে ভাববো।" 

Related Topics

টপ নিউজ

পানির ট্যাংক / ঢাকার পানির ট্যাংক / ওয়াসা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
    রংপুরে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: ৩ উপজেলায় আক্রান্ত ১১ জন
  • পুষ্টিকর ডাবের শাঁসের রয়েছে জনপ্রিয়তা। ছবি: টিবিএস
    ডাবের আশ্চর্য শহরযাত্রা!
  • পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে কৃষিকাজের জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করছেন একজন কৃষক। ছবি: রয়টার্স
    যেভাবে সৌরশক্তিচালিত কৃষিকাজ পানি বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তানকে
  • ইনফোগ্রাফিক: টিবিএস
    সৌর প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমলো উন্মুক্ত দরপত্রে
  • রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলের একটি তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে সচল তেল উত্তোলনের পাম্পিং জ্যাক যন্ত্র। ছবি: ভিটালি তিমকিভ/ স্পুটনিক
    ইউক্রেন যুদ্ধের নতুন মোড়: তেল নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির নতুন খেলা!
  • মোল্লার খিচুড়ি। ছবি: জুনায়েত রাসেল।
    মোল্লা খিচুড়ির টানে পদ্মার পাড়ে

Related News

  • বাস্তবায়ন শঙ্কার মাঝেই ১ লাখ স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা চট্টগ্রাম ওয়াসার
  • ওয়াসার এমডির দায়িত্বও পেলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক শাহজাহান 
  • পানিতে পোকা, ভোগান্তিতে ঢাকার বাসিন্দারা, দায় নিতে নারাজ ওয়াসা
  • লবণাক্ততা কমায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন বেড়েছে, অনুমোদনের অপেক্ষায় উন্নয়ন প্রকল্প
  • নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, চট্টগ্রামে ওয়াসার ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ কমেছে

Most Read

1
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: ৩ উপজেলায় আক্রান্ত ১১ জন

2
পুষ্টিকর ডাবের শাঁসের রয়েছে জনপ্রিয়তা। ছবি: টিবিএস
ইজেল

ডাবের আশ্চর্য শহরযাত্রা!

3
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে কৃষিকাজের জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করছেন একজন কৃষক। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

যেভাবে সৌরশক্তিচালিত কৃষিকাজ পানি বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তানকে

4
ইনফোগ্রাফিক: টিবিএস
বাংলাদেশ

সৌর প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমলো উন্মুক্ত দরপত্রে

5
রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলের একটি তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে সচল তেল উত্তোলনের পাম্পিং জ্যাক যন্ত্র। ছবি: ভিটালি তিমকিভ/ স্পুটনিক
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন যুদ্ধের নতুন মোড়: তেল নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির নতুন খেলা!

6
মোল্লার খিচুড়ি। ছবি: জুনায়েত রাসেল।
ফিচার

মোল্লা খিচুড়ির টানে পদ্মার পাড়ে

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab