নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, চট্টগ্রামে ওয়াসার ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ কমেছে

শুষ্ক মৌসুম সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই জোয়ারের সময় ওয়াসার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে, এর ফলে প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ কমেছে।
ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে লবণের উপস্থিতি দেখা দেয়, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এখন মার্চ মাসে এসে লবণাক্ততা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে বড় উদ্বেগ তৈরি করেছে।
রোববার (২ মার্চ) পর্যন্ত ওয়াসার পানিতে রেকর্ড ২ হাজার ৩২০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছ। যার জেরে ওয়াসার চারটি প্রধান প্রকল্প মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ১ ও ২ এবং মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্পে দৈনিক কয়েক ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমেছে, এর ফলে সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, 'কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে।'
তিনি বলেন, '২ মার্চ প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩২০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে। এ কারণে ওয়াসা জোয়ারের সময় পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়, এতে দৈনিক উৎপাদন ৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমে যায়।'
গত কয়েক বছর ধরেই ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে গেছে। মিঠা পানির উৎস কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় এ সমস্যা আরও বেড়েছে।
বর্তমানে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি অকেজো থাকায় পানির প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত সমুদ্রের পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে ভেতরে ঢুকে হালদা নদীতে প্রবেশ করেছে।
ফলে ওয়াসার সার্বিক পানি উৎপাদন সক্ষমতা কমে গেছে। মদুনাঘাট প্রকল্পে আগে দৈনিক ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হতো, এখন উৎপাদন হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৭ কোটি লিটার। কর্ণফুলী প্রকল্পে ২৮ কোটি লিটার থেকে ২৬ কোটি লিটার এবং মোহরা প্রকল্পে দৈনিক ৯ কোটি লিটার থেকে ৭ কোটি লিটারে নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, শিগগিরই বৃষ্টিপাত না হলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এই সংকট দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনেও প্রভাব ফেলেছে।
বর্তমানে হ্রদে পানি রয়েছে ৮৯.৩৯ এমএসএল (গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ), স্বাভাবিক সময়ে যা থাকে ৯৩.৬০ এমএসএল। অর্থাৎ হ্রদে পানি স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৪.২১ এমএসএল কম রয়েছে।
এছাড়া, পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটি চালু রয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াটের পরিবর্তে মাত্র ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
সংকট মোকাবিলায় ওয়াসা স্থিতিশীল পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিকল্প সমাধানের বিষয়টি জোরালোভাবে বিবেচনা করছে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে বা কাপ্তাই হ্রদ থেকে মিঠা পানির প্রবাহ না বাড়লে সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।