Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
July 25, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, JULY 25, 2025
গোধূলিবেলায়

ইজেল

চার্লস ডিকেন্স; অনুবাদ: লুৎফুল কায়সার
02 February, 2025, 12:30 pm
Last modified: 02 February, 2025, 01:07 pm

Related News

  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা
  • ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 
  • মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন
  • নিদ্রাহারা রাতের এ গান
  • বুনো বিড়াল থেকে পোষা বিড়াল: রহস্যময় রূপান্তরের অজানা ইতিহাস

গোধূলিবেলায়

একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে সিগার ধরিয়েছি, তখন শুনলাম ওপাশ থেকে মনিব, মালকিনকে বলছেন, ‘দেখলে তো ক্লারা? পুরো বাড়ি দেখা হলো! কোথায় তোমার সেই লোক? এই বাড়িতে কেউ লুকিয়ে থাকতে পারে?’
চার্লস ডিকেন্স; অনুবাদ: লুৎফুল কায়সার
02 February, 2025, 12:30 pm
Last modified: 02 February, 2025, 01:07 pm
অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ... ওরা ছিল মোটে পাঁচজন। পেশায় সবাই বার্তাবাহক।

পাঁচ দেশের পাঁচটা লোক বসে আছে সুইজারল্যান্ডের সেইন্ট বার্নার্ড গিরিপথের পাশের পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত একটি আশ্রমের বাইরে। সূর্য অস্ত যেতে বসেছে, লাল আলোতে কেমন রহস্যময় লাগছে আশপাশে জমে থাকা তুষার। যেন ওপর থেকে কেউ লাল মদ ছড়িয়ে দিয়েছে এখানে-সেখানে।

উপমাটা সুন্দর লাগল? আমি দিইনি কিন্তু। ওদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী যে লোকটা, সে দিয়েছিল। ও ব্যাটা জার্মান। ওরা সবাই সিগার ফুঁকছিল। সামনের দিকে বিরাট ছাউনিঘেরা একটা জায়গা। আশ্রমের মৃত যাজকদের এখানে কবর দেওয়া হয়, কেউ ঘুরতে এসে মারা গেলে তার জায়গাও এখানে হয়। পাহাড়ের ওপর কোনো বৈষম্য নেই... এখানকার কবরস্থানে ধনী-গরিব সবাই সমান।

ঠান্ডা বাতাস বইছিল। গরম অঞ্চল থেকে আসা কোনো মানুষ হলে এতক্ষণে অসুস্থ হয়ে পড়ত। কিন্তু এই পাঁচ বার্তাবাহক বলতে গেলে গোটা ইউরোপ চষে বেড়িয়েছে, এশিয়াতেও গেছে... সব পরিস্থিতিতেই এরা মানিয়ে নিতে পারে। 

সূর্যাস্তের দৃশ্য মন ভরে উপভোগ করছিল সবাই। 

ভেতর থেকে একটু আগেই বাইরে এসেছি আমি। ভালো লাগছিল না ওখানে, আমেরিকান একটা লোক ফায়ারপ্লেসের সামনে বসে আগুন পোহাচ্ছিল, লোকটা বেশ গোমড়ামুখ। কারও সাথে কথাই বলে না। তাই বাইরে আসা।

ওই পাঁচজনের থেকে খানিকটা দূরে বসেছিলাম। লোকগুলোর কথা বেশ মন দিয়েই শুনছিলাম। আসলে সুইজারল্যান্ডের আশ্রমগুলোয় ঘুরে বেড়ানো আমার শখ।

'অ্যাচ্ছা, চলুন না ভূতের গল্প করি?' ফরাসিতে বলে উঠল ওদের মধ্যকার সুইস লোকটা। তারপর কী একটা যেন বলেছিল সে, লাইনটা বুঝিনি। আমি আবার ফরাসিতে অতটা ভালো নই।

'ভূতটুতের ব্যাপারে তেমন আগ্রহ নেই,' ফরাসিতেই উত্তর দিল জার্মান লোকটা।

'তাই নাকি? কেন?' হাসল সুইস ব্যাটা।

'আসলে ওদের ব্যাপারে আমার জ্ঞান কম। আর যে ব্যাপারে জ্ঞান কম, তাতে আগ্রহ পাব কী করে?'

বাহ, লোকটা দেখি সুন্দর করে কথা বলে! আমিও সুযোগ পেয়ে ওদের কাছাকাছি একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। 

'মানে আপনি অলৌকিকতায় বিশ্বাস করেন না?' বলে উঠল সুইস।

'না না, তেমনটা বলিনি,' একটু কাশল জার্মান, 'অলৌকিকতা আমাদের জীবনেরই অংশ। যেমন ধরুন, হুট করেই একদিন আপনার মনে হলো যে বাড়িতে কেউ আসবে। তিনি চিঠি পাঠাননি, ওই সময়ে তার আসার কথাও না... তারপরেও আপনার ব্যাপারটা মনে হচ্ছে! সন্ধ্যাবেলা দেখলেন মানুষটা হুট করেই হাজির! এটার কী ব্যাখ্যা দেবেন? তারপর ধরুন, আমি লন্ডন, প্যারিস, মিলান বা ফ্রাঙ্কফুর্টের ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটছি। হুট করেই একটা লোককে আমার বন্ধু হেনরিকের মতো লাগল, একটু পর আরেকটা লোককেও ওর মতো লাগল... কিন্তু ওরা কেউ হেনরিক নয়! কারণ, হেনরিক কয়েক বছর আগেই মারা গেছে! এগুলো অসংজ্ঞায়িত ব্যাপার। তবে অলৌকিকতার মধ্যে যে 'ভূত' থাকতেই হবে, এমনটা না।'

'আমার কাছে তো এগুলোই ভুতুড়ে ঘটনা!' হাসল সুইস। 

'অলৌকিক আর ভুতুড়ে এক নয়। ধরুন, ব্ল্যাক ফরেস্টে আপনি চেরিগাছ পেলেন, এটা অলৌকিক। নেপলসে গিয়ে আপনার ম্যাকারনি খেতে ইচ্ছা হলো, আপনি জানেন ওদিকের লোকরা ম্যাকারনি তেমন খায় না... এরপরেও আপনি যে বাড়িতে দাওয়াতে গেলেন, সেখানে ম্যাকারনি দেওয়া হলো! এটাও অলৌকিক। ওহ! ভালো কথা... নেপলসে একবার লেডি মার্কেজা সেজামিয়ার একটা পার্টিতে গেছিলাম আমি। আমার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন বাভেরিয়ান, উনার স্বামীও বাভেরিয়ান। তাই দাওয়াত পেয়েছিলাম আরকি। অনুষ্ঠান চলছে... হুট করেই আর্তনাদ করে উঠলেন লেডি মার্কেজা, 'আমার বোন মারা গেছে! স্পেনে...' পরে খোঁজ নিয়ে কী জানা যায়, জানেন? উনার বোন আসলেই মারা গেছেন, উনি যে সময়ে আর্তনাদ করেছিলেন তার পাঁচ-সাত মিনিট আগে! এগুলো অলৌকিকতা... কিন্তু এখানে ভূত কই?'

'লেডি মার্কেজার ব্যাপারটা আমিও শুনেছি,' এতক্ষণ ধরে চুপ করে থাকা নেপলসের বার্তাবাহকের মুখে কথা ফুটল, 'ফিস্ট অফ স্যান জিনারোর সময়েও কিন্তু অনেক বৃদ্ধ লোকের মৃত্যু হয়! এটাও অদ্ভুত!'

'সেটাই...'

'তা এগুলোর পেছনে কি কোনো অপার্থিব শক্তি কাজ করে?'

'হুম, এসব ব্যাপারে বড় কোনো অভিজ্ঞতা আমার হয়নি, কিন্তু হ্যাঁ... আমাদের মধ্যে একজনের হয়েছে। জিওভান্নি বাপতিস্তা... তোমার পরিচিত ইংরেজ ভদ্রমহিলার কাহিনিটা এদের শোনাও। সবাই মজা পাবে!'

ভালো করে তাকালাম আমি। জিওভান্নি নামের লোকটা আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগার ফুঁকছিল, ওর বাড়ি জেনোয়া।

'বলব?' মৃদু হাসল সে, 'আচ্ছা ঠিক আছে। ঘটনার সত্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্নই আপনারা তুলতে পারেন। তবে এটুকু বলে রাখি, সবটাই বাস্তব।'

শুরু হলো সেই গল্প।

আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে লন্ডনের বন্ড স্ট্রিটের লংস হোটেলে এক ইংরেজ ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয় হয়। উনি ঠিক করেছিলেন যে এক বা দুই বছর ইতালির ওদিকে ঘুরেই কাটাবেন। উনার কয়েকজন বন্ধু আমার নাম বলেছিল। সবকিছু দেখেশুনে উনি আমাকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেন, এটাও বলে দিয়েছিলেন যে কাজ ভালো লাগলে আরও কিছুদিন আমায় রাখবেন। বেতনটাও বেশ ভালো ছিল।

ভদ্রলোক ছিলেন বেজায় সুদর্শন। লন্ডনের অসংখ্য সুন্দরী তরুণী উনার জন্য রীতিমতো পাগল ছিল! কাজে ঢোকার কয়েক দিন পর জানলাম যে ভদ্রলোকের একজন প্রেমিকা আছে, খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবেন উনারা।

যা-ই হোক, রিভিয়েরাতে আমাকে একটা বাড়ি খুঁজে বের করতে বললেন উনি। ওই অঞ্চলটা বেশ ভালো করেই চিনি, জেনোয়া থেকে কাছেই। একটা বেশ পুরোনো প্রাসাদ পেয়ে গেলাম। বড় একটা বাগান আছে... বাগানের কথা বিশেষ করে বলে দিয়েছিলেন মনিব। আমার হবু মালকিন নাকি বাগানে ঘুরতে বেজায় ভালোবাসেন। এ ছাড়া জায়গাটা সাগরতীরেরও বেশ কাছে, সব মিলিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান এখানে বেশ জমবে।

'বাহ! জিওভান্নি, তুমি তো সুন্দর একটা বাড়ি পেয়েছ,' বেজায় খুশি হলেন ভদ্রলোক।

'এ আর এমন কী সিনর?' মৃদু হেসে বলেছিলাম আমি, 'এই অঞ্চল আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি।' বাড়িটা কিনে নিলেন মনিব।

ঘোড়ার গাড়িতে করে আমার মনিব পৌঁছলেন বাড়িটাতে, সাথে উনার হবু স্ত্রীও ছিলেন।

আমি আগে থেকেই উপস্থিত ছিলাম। বিয়েটা বেশ ভালো করেই হয়ে গেল। নতুন মালকিনের খাস দাসী, ক্যারোলিনাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। মেয়েটা অপূর্ব সুন্দরী... গোলাপি গাল আর ভাসা ভাসা চোখের দিকে তাকালে রীতিমতো ঘোর লেগে যায়। বড় ঘরে জন্মালে নিশ্চিত কোনো লর্ডের সাথেই বিয়ে হতো। 

সময় কাটতে লাগল। আমি একটা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করলাম। মালকিন সব সময় কেমন যেন ভয়ে ভয়ে থাকেন। কোথাও একা যেতে চান না। এমনকি বাথরুমে গেলেও ক্যারোলিনাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন বাইরে। এ আবার কেমন কথা? 

ওখান থেকে আমরা ফ্রান্সে গেলাম। দক্ষিণ ফ্রান্সের এক গ্রামে বেশ সুন্দর একটা প্রাসাদ ভাড়া করেছিলেন আমার মনিব। সেখানে বেশ ভালোই দিন কাটছিল, হুট করেই একদিন জরুরি কাজে প্যারিস যেতে হলো মনিবকে। 

সেদিন রাতে ক্যারোলিনা এসে আমাকে জানাল যে মালকিন কেমন যেন উদ্ভট আচরণ করছেন, আমি যেন মনিবকে তাড়াতাড়ি চলে আসতে বলি।

সাথে সাথে এক ভৃত্যকে ঘোড়ায় করে পাঠিয়ে দিলাম। ওই গ্রাম থেকে প্যারিস একদম কাছেই। বিকাল নাগাদ ফিরে এলেন মনিব। মালকিনের চোখ-মুখ ততক্ষণে ভয়ে একদম বসে গেছে!

মনিবকে দেখেই হেসে উঠলেন তিনি (কেমন যেন অস্বাভাবিক সেই হাসি)। এক ঘণ্টা পর সব ঠিকঠাক। ঘুরতে বের হলেন দুজন একসাথে। 

সেই সন্ধ্যায় ধরলাম ক্যারোলিনাকে।

'আচ্ছা, বলো দেখি, মালকিনের কী সমস্যা? সব সময় এমন কেন করেন? উনার কি কোনো অসুখ আছে?'

'উমম... বলতে পারি, তবে কাউকে বলবেন না তো?' আস্তে করে বলল মেয়েটা।

'আরে বলো, কাকে আর বলব?'

'মালকিন আসলে... ভয় পান!'

'কিসের ভয়?'

'উনি একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন।'

'কী স্বপ্ন?'

'স্বপ্নে নাকি একটা লোকের মুখ দেখেছিলেন তিনি... বিয়ের তিন দিন আগে নাকি দেখেছিলেন স্বপ্নটা।'

'লোকটার চেহারা ভয়ংকর নাকি?'

'নাহ, লোকটা নাকি বেশ সুদর্শন, মাথাভর্তি কালো চুল... ধূসর গোঁফ... তবে অস্বস্তিকর ব্যাপার হলো, সে নাকি একদৃষ্টিতে মালকিনের দিকে তাকিয়ে ছিল। অবশ্য অমন চেহারার কাউকেই উনি চেনেন না...।'

'স্বপ্নটা মাঝে মাঝেই দেখেন নাকি?'

'আরে নাহ! ওই একবারই দেখেছিলেন। সেই ভয়ই কাটাতে পারছেন না।'

'তা এতে ভয় পাওয়ার কী আছে?'

'সেটাই মনিবের প্রশ্ন,' হাসল মেয়েটা, 'মালকিন একবার শুধু বলেছিলেন... যে তার ভয়, একদিন না একদিন ওই লোকটা ইতালির ওই বাড়িটাতে আসবে... আর উনাকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাবে! ওই যে আপনার পরামর্শে যে বাড়িটা কিনেছেন মনিব।'

'উনাকে নিয়ে পালাবে? এ আবার কেমন কথা! ধুর!' ভয় পেয়ে গেলাম। বাড়িটা কি তবে মালকিনের পছন্দ হয়নি? এখন মনিবকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে আমার চাকরি খেতে চান উনি? 

যা-ই হোক, কদিন পরেই ফ্রান্স থেকে রিভিয়েরার ওই বাড়িটাতে ফিরে গেলাম আমরা। মালকিন রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্তু মনিব যাবেনই। ওখানকার ছায়ায় ঢাকা পরিবেশ বেজায় ভালো লেগে গেছিল উনার। আর তা ছাড়া সাগরও কাছে।

ওখানে পৌঁছলাম আমরা সবাই। বাড়িটাতে কেমন যেন একটা ঘোরলাগা ভাব আছে। বাগানে কত গাছ... সেগুলোর ছায়াতে বসে থাকতেও ভালো লাগে। বাড়ির সবগুলো জানালা বেশ পুরোনো, দরজাগুলোর অবস্থাও একই। 

স্থানীয় দুজন মহিলাকে রাখা হয়েছিল কাজে। আমিই খুঁজে বের করেছিলাম তাদের। একজন রাঁধুনি, আরেকজন ঘরদোর পরিষ্কার করে, মশা-মাছি মারে। দ্বিতীয়জনকে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, বাড়িটা নিয়ে কোনো ভুতুড়ে গালগল্প আছে নাকি। 

'আরে নাহ সিনর,' হেসে ফেলল মহিলা, 'ছোটবেলা থেকে এই অঞ্চলে আছি, কখনোই এমন কিছু শুনিনি।'

সেদিন সন্ধ্যাবেলা বাড়িটার পুরোনো গুদাম থেকে একগাদা পোর্ট্রেট বের করলাম আমি (মনিবের হুকুম ছিল আরকি)। ইতালির বিখ্যাত অনেক মানুষের ছবিই আছে। মনিব, মালকিন এলেন, ওদের সাথে ক্যারোলিনা।

'বাহ! ছবিগুলো তো ঘরে ঝুলিয়ে রাখা যায়,' হাসলেন মনিব। মালকিন ভয়ে ভয়ে দেখছিলেন ওগুলো। 

কিসের ভয়? উনি কি ভাবছিলেন যে স্বপ্নে দেখা লোকটার পোর্ট্রটেও এখানে থাকবে?

বাড়ির সমস্ত বন্ধ ঘরগুলো খুলে দেখালাম। অবশেষে গেলাম বাগানে। বাগানের ঢোকার তিনটে রাস্তাতেই বেশ কয়েকবার চক্কর কাটলাম আমরা। 

একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে সিগার ধরিয়েছি, তখন শুনলাম ওপাশ থেকে মনিব, মালকিনকে বলছেন, 'দেখলে তো ক্লারা? পুরো বাড়ি দেখা হলো! কোথায় তোমার সেই লোক? এই বাড়িতে কেউ লুকিয়ে থাকতে পারে?'

আচ্ছা! এই কারণে মনিব আমাকে দিয়ে এত খাটালেন।

'সেটাই গো,' ধীরে ধীরে বললেন মালকিন, 'সবই আমার মনের ভুল।'
 
সেই সন্ধ্যায় মালকিন আমাদের সবাইকে পিয়ানো আর হার্প বাজিয়ে শোনালেন, গান গাইলেন! অসাধারণ গানের গলা উনার।

রাতে শোবার আগে মনিব আমায় কানে কানে বললেন, 'বাড়ি একটা দেখেছ জিওভান্নি! অসাধারণ... তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা নেই!'

'আপনি খুশি তো আমিও খুশি, সিনর,' মৃদু হেসে বললাম। 

এরপর?

এরপর কিছুদিন সবকিছু মোটামুটি ভালোই ছিল। বাড়িতে নতুন অনেক কাজের লোক নেওয়া হলো। আমার আর ক্যারোলিনার চাপ কমল। সুযোগ পেলেই ওকে নিয়ে স্থানীয় ক্যাফে, অপেরা আর পার্কগুলোতে যেতাম। মেয়েটা অবাক চোখে সব দেখত। আমার কাছ থেকে ইতালীয় ভাষাও বেশ ভালো শিখে গেল ও।

'আচ্ছা, শোনো,' একদিন জিজ্ঞাসা করলাম ওকে, 'আজকাল মালকিন আর ভয় পান না, তাই না?'

'নাহ, উনি বাথরুমে একা যান,' মুচকি হেসে বলেছিল মেয়েটা।

তারপর একদিন মনিবের কাছে একটা চিঠি এল। আমাকে বাগানে ডেকে পাঠালেন তিনি।

'সিনর, আমায় ডেকেছেন?' প্রায় সাথে সাথেই হাজির হলাম।

'হ্যাঁ, জিওভান্নি শোনো... স্থানীয় এক ভদ্রলোক আসবেন আমাদের এখানে। সিনর দেলোমব্রে। আজকের রাতের খাবারের দায়িত্ব পুরো তোমার... স্থানীয় ভালো ভালো যা খাবার আছে, সবগুলো যেন রান্না করে রাঁধুনিরা, ঠিক আছে?'

'একদম সিনর!'

সিনর দেলোমব্রে? নামটা আগে শুনেছি বলে মনে হয় না। ইতালীয় নাম বলেও মনে হয় না! ইতালির বেশির ভাগ অংশই তখন অস্ট্রীয়দের দখলে। রাজনৈতিক কারণে প্রচুর অস্ট্রীয় অভিজাত এখানে আসা-যাওয়া করতেন। ভাবলাম, ইনিও হয়তো তাদের একজন হবেন। 

সন্ধ্যাবেলা এসে গেলেন সিনর দেলোমব্রে, গেট থেকে উনাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম আমি। মনিব বাগানেই ছিলেন। দুজন করমর্দন করলেন। সবাই মিলে এগিয়ে গেলাম বসার ঘরে।

এরপরেই ঘটল ঘটনাটা!

আমরা ঢুকতেই মুখ তুলে চাইলেন মালকিন। সিনর দেলোমব্রের দিকে নজর পড়তেই কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল উনার মুখটা! আর্তনাদ করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি!

হুট করে একটা অদ্ভুত চিন্তা খেলে গেল আমার মাথায়। ভালো করে খেয়াল করলাম সিনর দেলোমব্রেকে। কালো স্যুট পরে আছেন উনি... বেশ সুদর্শন, মাথাভর্তি কালো চুল... ধূসর গোঁফ! তাহলে কি ইনাকেই স্বপ্নে দেখেছিলেন মালকিন?

মালকিনকে কোলে নিয়ে শোবার ঘরের দিকে ছুটলেন মনিব, পিছে পিছে ক্যারোলিনা। পরে ও আমায় জানিয়েছিল যে জ্ঞান ফেরার পর খুব ভয় পাচ্ছিলেন মালকিন... কিন্তু কোনো কথা বলতে পারছিলেন না।

যা-ই হোক, প্রায় আধা ঘণ্টা পর নেমে এলেন মনিব। এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম আমি আর সিনর দেলোমব্রে। আমার সাথে একটা কথাও বলেননি ভদ্রলোক।

'আপনার স্ত্রীর কী অবস্থা?' মনিবকে দেখেই বলে উঠলেন তিনি।

'ভয় পেয়েছে, সমস্যা নেই... ঠিক হয়ে যাবে!'

'বেশ বেশ, আমি তবে আজ যাই? উনার শরীর ভালো হলে আবার আসব?'

'না না, আপনি না খেয়ে যাবেন না! জিওভান্নি টেবিলে খাবার দিতে বলো।'

'এই অবস্থায় খাওয়া...'

যা-ই হোক, আমার নির্দেশে সব খাবার পরিবেশন করল খানসামা। চুপচাপ খাওয়া সারলেন সিনর দেলোমব্রে। মনিব তেমন কিছুই খেলেন না।

খাওয়া শেষেই বিদায় নিলেন সিনর দেলোমব্রে।

পরদিন খুব সকালে ঘোড়ায় চেপে এসেছিলেন তিনি। সদর দরজা থেকে মালকিনের খোঁজ নিয়েই আবার চলে গেছিলেন।

ওই সপ্তাহে আরও দুবার এমনটা করেছিলেন ভদ্রলোক।

চার দিন পর বেশ সুস্থ হয়ে গেলেন মালকিন।

ক্যারোলিনা আমায় বলল, 'শুনেছেন? মনিব নাকি আমার সিনর দেলোমব্রেকে দাওয়াত করছেন।'

'কিন্তু উনাকে দেখে তো মালকিন ভয় পান!'

'সেটাই... আমার মনে হয় কী জানেন? স্বপ্নে...'

'হুম, আমারও সেটাই মনে হয়!'

'আপনারও! এ তো ভুতুড়ে ব্যাপার! যা-ই হোক, মনিব এসব ব্যাপারে খুব কঠোর... লোকটাকে না ডাকলে কী হতো?'

'না, ঠিকই আছে। মালকিনের ভয়টা ভাঙাতে হবে। ভদ্রলোকের সাথে হাসিমুখে একটু কথা বললে আর ভয় থাকবে না।'

পরের সপ্তাহেই আবার দাওয়াতে এলেন সিনর দেলোমব্রে। এবার হাসিমুখেই উনার সাথে কথা বললেন মালকিন। খাবারদাবার এগিয়ে দিলেন। সবকিছু ভালোভাবেই কেটে গেল।

সন্ধ্যাবেলা বিদায় নিলেন ভদ্রলোক। মনিব তো বেজায় খুশি। তবে একটা জিনিস কেউ খেয়াল করেনি, যা আমি করেছিলাম।

সিনর দেলোমব্রের মুখের দিকে একেবারেই তাকাচ্ছিলেন না মালকিন। কথাও বলছিলেন টেবিলের দিকে তাকিয়ে। কখনো ভুলবশত মুখের দিকে নজর চলে গেলে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলছিলেন তিনি।

সেই রাতে বাগানে বসে চা খেতে খেতে মনিব মালকিনকে বললেন, 'তো ক্লারা? দেখলে? ভদ্রলোককে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই! এসব ফালতু চিন্তাভাবনা বাদ দাও তো।'

'উনি কি আবার আসবেন?' বললেন মালকিন।

'অবশ্যই, আরও অনেকবার দাওয়াত দেব!'

কেমন যেন কেঁপে উঠলেন মালকিন।

'তোমার ঠান্ডা লাগছে নাকি ক্লারা?' একটু অবাক হলেন মনিব।

'আরে না না।'

'খুলে বলো...'

'উনাকে আমার ভয় লাগে... আর দাওয়াত দিও না, হুম?'

'আরে ধুর! ফালতু কথা। জিওভান্নি, খাবারের আয়োজন কিন্তু অসাধারণ ছিল! তুমি পারো বটে!'

'আপনি খুশি তো আমিও খুশি, সিনর,' মৃদু হেসে বললাম।

এরপরের ঘটনা খুবই রহস্যময় আর অসংজ্ঞায়িত।

আমরা সবাই মিলে রোমে বেড়াতে গেছিলাম। সেখানে আমার এক সিসিলিয়ান বন্ধুর সাথে দেখা হলো, ও ব্যাটাও বার্তাবাহকের কাজ করে। অভিজাত এক ইংরেজ পরিবারের সাথে এখানে এসেছিল ও। দুজনে মিলে ঠিক করলাম যে পরের দিন ছুটি নিয়ে পানশালায় যাব।

মনিবকে বলতেই উনি হাসিমুখে ছুটি দিয়ে দিলেন আমায়। বন্ধুও ছুটি পেয়েছিল।

সারাটা দিন এদিক-সেদিক ঘুরে দুপুরে গিয়ে ঢুকলাম পানশালায়। হোটেলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা!

হোটেলের বারান্দায় উঠতেই ক্যারোলিনা এসে আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল, 'জিওভান্নি! শুনুন... আমাদের মালকিনকে পাওয়া যাচ্ছে না!'

'মালকিন! কী হয়েছে উনার?'

ক্যারোলিনা কাঁদতে কাঁদতে আমায় যা বলল, তা গুছিয়ে লিখলে এমন হয়Ñসকালবেলা আমি বেরিয়ে যাওয়ার খানিক পরেই মনিবও একটা জরুরি কাজে বের হয়ে যান। মালকিনকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন উনি। কিন্তু মহিলা বলেন, রাতে উনার ভালো ঘুম হয়নি, সারাটা দিন একটু ঘুমাবেন। কী আর করা? মালকিন ঘুমিয়ে পড়েন। বিকেল পর্যন্ত টানা ঘুমিয়ে গোসল করতে যান উনি...তারপর ঘরে এসে ক্যারোলিনাকে জানান যে একটু বাইরে ঘুরে আসছেন...এর পর থেকেই উনার আর কোনো খোঁজ নেই!
 
'হে ঈশ্বর! কী হলো আমাদের মালকিনের!' ফুঁপিয়ে উঠল ক্যারোলিনা।

'মনিব কোথায়?' কোনোমতে বললাম আমি।

'উনি একটু আগেই এসেছিলেন, আমার কাছে সব শুনে বেরিয়ে গেছেন।'

তখনই মনিব ফিরে এলেন। এই অল্প একটু সময়ের মধ্যে কী চেহারা হয়েছে লোকটার! মুখটা ফ্যাকাশে, চোখ দুটো বসে গেছে!

'জিওভান্নি,' বলে উঠলেন তিনি, 'ভাগ্যিস তুমি এসেছ; শোনো, একটা ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করেছি, তাড়াতাড়ি এসো!'

'কোথায় যাব সিনর?'

'একটা সূত্র পেয়েছি... ক্লারাকে কিছু লোক গাড়িতে করে যেতে দেখেছে! দেরি কোরো না... এসো...'

'পুলিশে জানালে হতো না?'

'সেই সময় আর নেই জিওভান্নি!'

কী আর করা? গাড়িতে উঠে বসলাম মালিকের সাথে। উনি নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। শহর পেরিয়ে বনের মধ্যে ঢুকে পড়লাম আমরা। প্রায় আধা ঘণ্টা চলার পর পরিত্যক্ত একটা ঘোড়ার আস্তাবলের সামনে এসে থামলাম! 

বনের মধ্যে এই আস্তাবল এল কোথায় থেকে?

লণ্ঠন নিয়ে নামলেন মনিব। তারপর এদিক-ওদিক দেখে আমায় ডাকলেন। লণ্ঠনের আলোয় স্পষ্ট দেখলাম যে বাঁ পাশে ঘোড়ার খুর আর গাড়ির চাকার দাগ... আস্তাবলে এসে শেষ হয়েছে চিহ্নগুলো! মানে ওদিক দিয়ে একটা গাড়ি এই আস্তাবলে এসেছে... আমরা আসার বেশ আগেই এসেছিল ওটা সম্ভবত।

'জিওভান্নি, আস্তাবলটা ভালো করে খুঁজে দেখতে হবে' বলে ভেতরে ঢুকে পড়লেন মনিব। আমি দেখলাম। কিন্তু কোথাও কেউ নেই।

হতাশ হয়ে সামনের দিকটা দেখলেন মনিব। নাহ... কোনো ঘোড়ার খুর বা গাড়ির চাকার ছাপ নেই, মানুষের পায়ের ছাপও নেই (মাটি বেশ নরম, মানুষ হাঁটলেও পায়ের ছাপ পড়বে)।

মানে যারা গাড়িতে করে এসেছিল, তারা এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনে যায়নি! 

মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন মনিব। তারপর আমায় খুলে বললেন এক অদ্ভুত কাহিনি!

ক্যারোলিনার মুখে সব শুনে তিনি হোটেলের আশপাশের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে এক ইংরেজ মহিলাকে ওরা একজন ভদ্রলোকের সাথে চার ঘোড়ায় টানা গাড়িতে উঠতে দেখেছে। মহিলাকে দেখে মনে হচ্ছিল, উনি খুব ভয় পেয়েছেন।

ঘোড়া আর গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল পাশের একটা জায়গা থেকেই। সেখানে গিয়ে মনিব জানতে পারেন যে এক ভদ্রলোক, গাড়ি আর চারটে ঘোড়া ভাড়া করেছিলেন। একটু আগেই খালি গাড়ি নিয়ে ঘোড়াগুলো ফিরে আসে! 

যে ভদ্রলোক ঘোড়াগুলো আর গাড়ি ভাড়া করেছিলেন, তার নাম?

মি. দিলোমব্রে।

মালকিন ক্লারা বা মি. দিলোমব্রের আর কোনো খোঁজ কখনোই পাওয়া যায়নি। ঘটনাটা পুলিশকে জানানো হয়েছিল, তারা অনেক চেষ্টা করেও কোনো সূত্র পায়নি।

এই ছিল আমার গল্প।

'কিন্তু এখানে সরাসরি ভূত কোথায়?' হেসে উঠল জার্মান লোকটা, 'এমন একটা ঘটনা আমারও আছে। শুনুন তবে আপনারা। মজা পাবেন।'

এই ঘটনাও একজন ইংরেজ ভদ্রলোকের। ভদ্রলোক বেশ বয়স্ক, এই ধরুন ষাটের কাছাকাছি বয়স হবে... কিন্তু বিয়ে করেননি। উনার জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে আমাদের মহান পিতৃভূমিতে, ইংল্যান্ড খুব একটা ভালো লাগত না তার। জার্মান ভাষাও বেশ ভালোই বলতে পারতেন। পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী, নেশা ছিল ভ্রমণ। আমায় নিয়ে মাঝে মাঝেই বনবাদাড়ে ঘুরতে যেতেন।

ভদ্রলোকের নাম মি. জেমস। উনার একজন যমজ ভাই ছিল, মি. জন; তিনিও বিয়ে করেননি। গুডম্যানস ফিল্ডে উনাদের পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দুজন দুজনকে খুবই ভালোবাসতেন। কিন্তু কোনো একটা কারণে দুজন একসাথে থাকতেন না। জেমস থাকতেন পোল্যান্ড স্ট্রিটে, অক্সফোর্ড স্ট্রিটের কাছেই জায়গাটা। জনের বাড়ি এপিং ফরেস্টে।

আমি তখন সব সময় মি. জেমসের বাড়িতেই থাকতাম।

তো একবার আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি জার্মানি যাওয়ার, এক সপ্তাহ পরেই রওনা দেওয়ার ইচ্ছা। ঠিক তখনই মি. জন এলেন পোল্যান্ড স্ট্রিটে। জানালেন আমাদের সাথে কয়েক দিন থাকবেন।

খানিকটা বিপদে পড়ে গেলাম, এক সপ্তাহ পর জার্মানিতে যাব আর এই সময়ে মেহমান!

একটা দিন গেল।

পরের দিন সকালে উঠেই মি. জন আমার মনিবকে বললেন, 'জেমস, আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। হয়তো এখানকার খাবারদাবারের কারণে সমস্যা হচ্ছে। আমি বাড়ি যাচ্ছি, ওখানে খানসামা সব সামলে নেবে।'

'আরে শোনো জন, 'বললেন আমার মনিব, 'কষ্ট করে কয়েকটা দিন থেকেই যাও না? আমরা জার্মানি যাব সামনের সপ্তাহে। একসাথেই রওনা দিতাম? যাওয়ার পথে তোমাকে বাড়িতে নামিয়ে দেব? কবে যে ফিরব তার ঠিক নেই! এই কদিন থাকো না আমার সাথে...'

'সামনের সপ্তাহে তুমি যাচ্ছ, তা-ই না? বেশ, আরেকবার তোমার সাথে দেখা করে যাব আমি।'

চলে গেলেন উনি। তারপর কেটে গেল আরও দুদিন। তৃতীয় দিন রাত আনুমানিক তিনটার দিকে ঘটল ঘটনাটা।

আমাকে হুট করেই ঘুম থেকে ডেকে তুললেন মনিব।

উঠে দেখি বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। চুলগুলো এলোমেলো, মুখটা ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে আছে।

'মি. জেমস,' কোনোমতে বললাম আমি, 'আপনি ঠিক আছেন তো?'

'ভিলহেম,' আমার হাত ধরলেন উনি, 'তোমার কি মনে হয়, আমি মানসিকভাবে সুস্থ?'

'অবশ্যই স্যার! সন্ধ্যাতেও আমরা কত আড্ডা দিলাম...'

'হুম, একটু আগে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। তোমাকে সেটা খুলে বলতে কোনো সমস্যা নেই... কারণ, তোমার দেশের লোকেরা এসব নিয়ে হাসি-মজা করে না! ইংরেজদের সমস্যা হয়েছে কী জানো? আমরা এই বিষয়গুলো হেসে উড়িয়ে দিই,' রীতিমতো কাঁপতে লাগলেন তিনি।

'স্যার, আপনি বসুন... খুলে বলুন তো, হয়েছে কী?'

'আজ কেন যেন ঘুম আসছিল না। তাই মধ্যরাতের পর টেবিলে হিসাবপত্র নিয়ে বসলাম। হুট করেই অদ্ভুত এক অনুভূতি ঘিরে ধরল আমায়! পিছে তাকিয়ে দেখি বিছানার পাশে জন দাঁড়িয়ে আছে! ফ্যাকাশে চেহারা... পুরো শরীরটা কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া... আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল ও। তারপর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল! আমিও তাড়াতাড়ি বারান্দায় এলাম... সদর দরজা বন্ধ! তাহলে? ওটা কে ছিল? জন এত রাতে আমার বাড়ি আসবে? আমার মনে হয় ওটা একটা ভূত ছিল!'

'স্যার... হয়তো আপনার চোখের ভুল!'

'ধুর! এমন ভুল আমার কখনো হয় না! ওটা একটা ভূত! হয়তো আমার ভয়ংকর কোনো অসুখ হবে... সেটারই সংকেত দিতে এসেছিল। ভিলহেম, জার্মানিতে যাওয়ার আগে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নেব?'

'অবশ্যই স্যার।'

সেই রাতটা কোনোমতে কাটিয়ে দিলাম আমরা।

পরদিন দুপুরবেলার ঘটনা। আমি থাকতাম চিলেকোঠার একটা ঘরে। আর মি. জেমস তিনতলাতে। হুট করেই কে যেন দরজা নক করল। 

আমিই সাধারণত নিচে নেমে দরজা খুলে দিই। তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে দরজা খুলে দেখি মধ্যবয়স্ক একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।

'এটা কি মি. জেমসের বাড়ি?' বলল সে।

'হ্যাঁ, আমিই জেমস,' ততক্ষণে মনিবও নিচে নেমে এসেছেন, 'তুমি রবার্ট, তাই না? আমার ভাইয়ের খানসামা?'

'আপনি আমাকে চিনলেন কী করে স্যার? যা-ই হোক... মি. জন খুব অসুস্থ। উনার অবস্থা... ভালো না... আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। দয়া করে আসুন! আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি! দেরি করবেন না...' লোকটা কাঁপছিল।

'অদ্ভুত ব্যাপার,' আমার দিকে তাকালেন মনিব, 'ভিলহেম, তুমিও চলো আমার সাথে।' 

গাড়িতে উঠে পড়লাম আমরা। পোল্যান্ড স্ট্রিট থেকে এপিং ফরেস্টে খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছে গেলাম আমরা।

এরপর মি. জনের বাড়িতে যে ঘটনা ঘটেছিল, তা এখনো অসংজ্ঞায়িত!

ততক্ষণে প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। মি. জন বিছানায় শুয়ে, পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুজন ঝি আর একজন চাকর। ভদ্রলোকের পরনে এখনো রাতের পোশাক। অবস্থা তো দেখি বেজায় খারাপ!

মি. জেমস ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বসলেন ভাইয়ের পাশে। সাথে অদ্ভুত এক স্বরে মি. জন বলে উঠলেন, 'জেমস, বলেছিলাম না তোমার বাড়িতে আরেকবার যাব? গেছিলাম কিন্তু... রাতে দেখেছ তুমি আমায়, তাই না?' তারপর বিছানায় লুটিয়ে পড়লেন।

এটাই ছিল উনার শেষ কথা। মারা গেলেন ভদ্রলোক।  

এতক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে লোকগুলোর গল্প শুনছিলাম। জার্মান লোকটার গল্প শেষ হওয়ার পর সব চুপচাপ... কেউ কোনো কথা বলছে না কেন?

পেছন ফিরে দেখি, ওরা কেউ নেই! সবাই চলে গেছে? এত তাড়াতাড়ি গেল কী করে? পায়ের শব্দও পেলাম না! যা-ই হোক, এই নিঃস্তব্ধ পাহাড়ের ওপর কখন যে কী হয়... কে জানে?

ঠান্ডা বাতাস আরও জোরে শুরু করল, আমারও বাইরে বসে থাকতে কেমন যেন ভয় লাগছিল। তাড়াতাড়ি আশ্রমের ভেতর চলে গেলাম। সেই আমেরিকান ভদ্রলোক এখনো ফায়ারপ্লেসের সামনে বসে রয়েছেন। উনার হাতে একটা বই।

জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম আমি। ধীরে ধীরে আঁধার নেমে আসছে। গোধূলির লাল আলো হারিয়ে যাচ্ছে বরফের মাঝে...

আসলে গোধূলির সময়েই অলৌকিক গল্পগুলো পড়তে মজা লাগে, শুনতেও ভালো লাগে।

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল / চার্লস ডিকেন্স / অনুবাদ / গোধূলিবেলায়

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বাবার এজেন্ট ব্যাংকের টাকার জন্য ছেলেকে ইসলামী ব্যাংকে হাতুড়ি পেটা, নখ তোলার চেষ্টা; গ্রেপ্তার ৩
  • ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না এমন ব্যাংকগুলোকে মার্জারের আওতায় আনা হবে: আহসান এইচ মনসুর
  • যুগের পর যুগ পেরিয়ে ঢাকার যে ৫ পুরোনো খাবার হোটেল এখনও জনপ্রিয়!
  • সীমান্তে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার প্রাণঘাতী লড়াইয়ের কারণ কী?
  • অতিরিক্ত ভাড়া, ভুতুড়ে ফ্লোর, অগ্রিম ২২০ কোটি: প্রিমিয়ার ব্যাংকের টাকায় যেভাবে পকেট ভরেছে ইকবাল পরিবার
  • এস আলমের বেনামি ঋণ ও শেয়ারের প্রকৃত মালিকানা রাজসাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করা হবে: গভর্নর

Related News

  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা
  • ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 
  • মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন
  • নিদ্রাহারা রাতের এ গান
  • বুনো বিড়াল থেকে পোষা বিড়াল: রহস্যময় রূপান্তরের অজানা ইতিহাস

Most Read

1
বাংলাদেশ

বাবার এজেন্ট ব্যাংকের টাকার জন্য ছেলেকে ইসলামী ব্যাংকে হাতুড়ি পেটা, নখ তোলার চেষ্টা; গ্রেপ্তার ৩

2
অর্থনীতি

ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না এমন ব্যাংকগুলোকে মার্জারের আওতায় আনা হবে: আহসান এইচ মনসুর

3
ফিচার

যুগের পর যুগ পেরিয়ে ঢাকার যে ৫ পুরোনো খাবার হোটেল এখনও জনপ্রিয়!

4
আন্তর্জাতিক

সীমান্তে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার প্রাণঘাতী লড়াইয়ের কারণ কী?

5
অর্থনীতি

অতিরিক্ত ভাড়া, ভুতুড়ে ফ্লোর, অগ্রিম ২২০ কোটি: প্রিমিয়ার ব্যাংকের টাকায় যেভাবে পকেট ভরেছে ইকবাল পরিবার

6
অর্থনীতি

এস আলমের বেনামি ঋণ ও শেয়ারের প্রকৃত মালিকানা রাজসাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করা হবে: গভর্নর

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net