Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 

জাপানে ‘ইনেমুরি’ নামে একটি বিশেষ ধরনের ঘুম আছে, যার অর্থ ‘উপস্থিত থাকাকালীন ঘুমানো’। এটি এমন একটি নিদ্রা, যেখানে একজন ব্যক্তি এমন জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ে, যেটি ঘুমের জন্য নয়―যেমন সাবওয়ে, ডিনার পার্টি বা এমনকি অফিসে।
ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 

ইজেল

সৈয়দ মূসা রেজা
25 July, 2025, 01:00 pm
Last modified: 25 July, 2025, 01:04 pm

Related News

  • উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা
  • মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন

ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 

জাপানে ‘ইনেমুরি’ নামে একটি বিশেষ ধরনের ঘুম আছে, যার অর্থ ‘উপস্থিত থাকাকালীন ঘুমানো’। এটি এমন একটি নিদ্রা, যেখানে একজন ব্যক্তি এমন জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ে, যেটি ঘুমের জন্য নয়―যেমন সাবওয়ে, ডিনার পার্টি বা এমনকি অফিসে।
সৈয়দ মূসা রেজা
25 July, 2025, 01:00 pm
Last modified: 25 July, 2025, 01:04 pm

ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি ছড়াটির আধুনিক রূপটির হয়তো দেখে থাকতে পারেন। 
ঘুম পাড়ানি আন্টিরা সব দল বেঁধে এসো
ডিভান-শোফা বাদ দিয়ে 'হানির' চোখে বসো!
বোতল বোতল ড্রিংকস দেব মন ভরে খেয়ো
'হানি'কে সুইট স্লিপ দিয়ে যেয়ো!

সে যুগের মাসিপিসি খালাফুফু কিংবা এ যুগের আন্টি কিংবা আরও সোহাগ ভরে আন্টিমণিরা ঘুম বিলিয়ে বেলায় কি জানার উপায় কী আছে? ঘুমের পথ চলার খোঁজ হয়তো অন্তহীন। 

টমাস আলফা এডিসনের আবিষ্কার বিদ্যুৎ-বাতি মানুষের রাতগুলোকে স্থায়ীভাবেই বদলে দিয়েছে। তার এই আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় আমাদের আধুনিক সমাজে আলোর ঝলকানি কখনো থামে না। পাশাপাশি ঘুমের অভাবকে একটি জীবনধারায় পরিণত করেছে। কিন্তু আমরা এখন ঘুম সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশি জানি। জানি, কীভাবে ঘুম আমাদের সুস্থ রাখে। 'হোয়াইল উই স্লিপ, আওয়ার মাইন্ড গোস অন অ্যামাজিং জার্নি' শীর্ষক ন্যাশনাল জিওগ্রাফির নিবন্ধে মাইকেল কিনকেলের এই লেখা পড়ে অনেক কিছুই জানা যায়।

এমন অনেকে আছেন রাতের শিফটে কাজ করেন। সারা রাত জেগে থাকতে হয়। অনেক গাড়ি চালক আছেন বছরের পর বছর রাতে গাড়ি চালান। মাল বোঝাই ট্রাক নিয়ে দেশের দূর-দূরান্তে চলে যাচ্ছেন রাতের ট্রিপে, ৭৬ বছর বয়সী একজন ট্রাক চালকের একটা কথা উল্লেখ করা যায়, ২০ বছর ধরে রাতভর গাড়ি চালিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, 'এমন কাজের পর এতটাই ক্লান্তি আসে যে ঘুমই আসে না।' বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) বলেছে, রাতের পালায় কাজ, সম্ভবত মানুষের জন্য ক্যানসার সৃষ্টিকারী।

প্রতি রাতে, আমাদের জীবনে একটি বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটে। আমাদের মস্তিষ্ক তার আচরণ ও উদ্দেশ্যে আমূল পরিবর্তন আনে, আমাদের চেতনাকে ম্লান করে দেয়। কিছুক্ষণের জন্য আমরা প্রায় সম্পূর্ণভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ি, এমনকি কোনো কাঁপনও থাকে না বলা যায়। তবে আমাদের চোখ, বন্ধ পাতার পিছনে, মাঝে মাঝে দ্রুত নড়াচড়া করে, যেন কিছু দেখছে। আমাদের মধ্যকর্ণের ক্ষুদ্র পেশিগুলো নিস্তব্ধতার মধ্যেও শব্দ শোনার মতো নড়ে। আমরা যৌন উত্তেজনা অনুভব করি, পুরুষ ও নারী উভয়ই, বারবার। কখনো আমরা মনে করি আমরা উড়তে পারি। কখনো আমরা মৃত্যুর সীমান্তে পৌঁছে যাই। এই সবই ঘটে আমাদের ঘুমের সময়।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ সালের দিকে, দার্শনিক অ্যারিস্টটল 'অন স্লিপ অ্যান্ড স্লিপলেসনেস' নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এ প্রবন্ধে তিনি ভেবেছিলেন আমরা ঘুমের সময় কী করি এবং কেন করি। এরপরের ২,৩০০ বছর ধরে কেউই এর সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। ১৯২৪ সালে জার্মান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হান্স বার্গার ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফ, সংক্ষেপে ইইজি আবিষ্কার করেন। এ দিয়ে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ ধরা যায়। ফলে ঘুম গবেষণা কেবল দর্শন বিষয় হয়ে থাকে না। বিজ্ঞান হয়ে ওঠে। তবে গত কয়েক দশকে ইমেজিং মেশিনের মাধ্যমে মস্তিষ্কের গভীর কার্যকারিতা দেখার সুযোগ পাওয়া সম্ভব। এইসব যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা এখন ঘুমের সময় মস্তিষ্কের ভেতরে কী ঘটে, সেটা আরও গভীরভাবে বুঝতে পারছেন। আমরা অ্যারিস্টটলের খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ সালে উত্থাপিত প্রশ্নের একটি বিশ্বাসযোগ্য উত্তরের কাছাকাছি পৌঁছেছি, অন্তত এমনটাই মনে করছেন অনেকে। 

ঘুম সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এই শিক্ষা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ঘুমের গুরুত্বকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। আমাদের ঘুম-জাগরণের ধরন মানুষের জীববিজ্ঞানের একটি কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য―এটি আমাদের ঘূর্ণমান গ্রহে দিন ও রাতের চক্রের সঙ্গে অভিযোজন। ২০১৭ সালে নোবেল পুরস্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিন বিজ্ঞানীকে দেওয়া হয়। এই তিন বিজ্ঞানী ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে আমাদের কোষের ভেতরে মলিকিউলার ক্লক (আণবিক ঘড়ি) আবিষ্কার করেন। এই দেহঘড়ি আমাদের সূর্যের সঙ্গে সিঙ্ক্রোনাইজ রাখার চেষ্টা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন এই সার্কাডিয়ান রিদমের (দৈনিক ছন্দ) ছন্দে পতন ঘটে যায়, তখন আমাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বোস্টনের ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন্স হসপিটালে স্টিভেন লকলির গবেষণাগারে আলোর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হয়, এখানে সেটা একটু উল্লেখ করি। আলো, বিশেষ করে এর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য, আমাদের চোখে পড়লে আমাদের মস্তিষ্ক, আচরণ এবং শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, এটি আমাদের ২৪ ঘণ্টার সার্কাডিয়ান ক্লককে রিসেট করতে পারে। লকলি বলেন, নীল তরঙ্গদৈর্ঘ্যসমৃদ্ধ আলো দিনের বেলায় সজাগ রাখতে সাহায্য করে। দিনের জন্য ভালো। কিন্তু রাতে লালচে আলো ভালো; কারণ, এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করতে বা জৈবিক ঘড়ির ওপর কম প্রভাব ফেলে। রিসেট করতে কম শক্তি লাগে।

কিন্তু আমাদের জীবনধারা এবং সূর্যের চক্রের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা এখন বিশ্বমারির রূপ নিয়েছে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সেন্টার ফর স্লিপ অ্যান্ড কগনিশনের পরিচালক রবার্ট স্টিকগোল্ড মন্তব্য এখানে বলা যায়: 'সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আমরা যেন এখন বিশ্বব্যাপী নিদ্রা ঘাটতিজনিত নেতিবাচক পরিণতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে বসবাস করছি।' আজকের দিনে আমেরিকানরা গড়ে সাত ঘণ্টারও কম সময় ঘুমায়।  মাত্র এক শতাব্দী আগে ঘুমাত নয় ঘণ্টা। সে তুলনায় প্রায় দুই ঘণ্টা কম। এর প্রধান কারণ বৈদ্যুতিক আলোর বিস্তার। তারপর টেলিভিশন, কম্পিউটার এবং স্মার্টফোন তো রয়েছেই। আমাদের ব্যস্ত, আলোকিত সমাজে ঘুমকে আমরা প্রায়ই একটি শত্রু মনে করি। আমাদের ভাবনায় ঘুম আমাদের উৎপাদনশীলতা ও বিনোদন থেকে বঞ্চিত করে। দুনিয়ার মানুষকে বিদ্যুৎ-বাতি দেন টমাস এডিসন। তার ধারণায়, 'ঘুম অযৌক্তিক এক ব্যাপার, একটি বদ অভ্যাস।' তিনি বিশ্বাস করতেন, আমরা একদিন ঘুম থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাব।

গোটা এক রাত পুরো ঘুমিয়ে কাটানো এখন হাতে লেখা চিঠির মতোই বিরল ও পুরোনো দিনের জিনিস বলেই মনে হয়। আমরা সবাই যেন একযোগে কোণঠাসা করে ঘুমের সময় কমিয়ে দিই। নিদ্রাহীনতা কাটাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে, কফি গিলে হাই তাড়িয়ে, প্রতি সন্ধ্যায় আমাদের জন্য নির্ধারিত জটিল যাত্রাকে উপেক্ষা করি। একটি ভালো রাতে, আমরা চার থেকে পাঁচবার ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে চক্রাকারে যাত্রা করি, প্রতি পর্যায়ের নিজস্ব গুণ ও উদ্দেশ্য রয়েছে―একটি সর্পিল, স্বপ্নময় অবতরণের বিকল্প এক জগতে।

অনেক বাসায় সাত-আট বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা, আইপ্যাডে, ট্যাবে কার্টুন দেখে―এটি কারও কারও জন্য আধুনিক শোবার আগের রীতি। এই উদ্দীপনা ঘুম তাড়াতে পারে, কিন্তু পেছনের আলোকিত স্ক্রিনও তা-ই করে। আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যে হরমোন মেলাটোনিন, রাতে আলো তাই উৎপাদনকে বাধা দেয়।

আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি, আমাদের মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং একটি সম্পাদনা প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে―কোন স্মৃতি রাখবে। কোনটি ফেলে দেবে সে সিদ্ধান্ত নেয়। এই রূপান্তর দ্রুত ঘটে। মানুষের শরীর হয় জাগ্রত, নয় ঘুমন্ত―এই দুই অবস্থার মাঝে থমকে থাকতে পছন্দ করে না। তাই আমরা আলো নিভিয়ে বিছানায় শুই, চোখ বন্ধ করি। যদি আমাদের সার্কাডিয়ান রিদম দিনের আলো ও অন্ধকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, যদি আমাদের মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্ল্যান্ড মেলাটোনিন নিঃসরণ করে, রাতের সংকেত দেয় এবং যদি আমাদের শরীরের অন্যান্য সিস্টেম জোটবন্ধ থাকে, তবে আমাদের নিউরনগুলো দ্রুত তাল মেলায়।

নিউরন, প্রায় ৮৬ বিলিয়ন, মস্তিষ্কের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব গঠন করে। বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরা যখন পুরোপুরি জেগে থাকি, নিউরনগুলো একটি জটিল ভিড়ের মতো কাজ করে, যেন একটি সেলুলার বিদ্যুৎ ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু যখন তারা সমানভাবে ও ছন্দময়ভাবে সংকেত দেয়, ইইজিতে নিয়মিত তরঙ্গ হিসেবে প্রকাশ পায়, তখন এটি ইঙ্গিত দেয় যে মস্তিষ্ক ভেতরের দিকে মনোযোগ দিয়েছে, জাগ্রত জীবনের বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে সরে গেছে। একই সময়ে আমাদের সংবেদনশীল রিসেপ্টরগুলো নীরব হয়ে যায় এবং শিগগিরই আমরা ঘুমিয়ে হারিয়ে যাই।

ছবি: সংগৃহীত

ঘুমকে জীবনের বাধা হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু প্রকৃত অভিশাপ হলো দীর্ঘস্থায়ী ঘুমহীনতা। জাপানে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ রাতে ছয় ঘণ্টারও কম ঘুমায়। টোকিওর একটি সারা রাত খোলা ডিনারে জনসমক্ষে ঘুমিয়ে পড়া সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। বিজ্ঞানীরা এই পর্যায়কে স্টেজ ১ বলে, যা ঘুমের অগভীর অংশ, এটি প্রায় পাঁচ মিনিট স্থায়ী হয়। তারপর মস্তিষ্কের গভীর থেকে আসে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের একটি ধারা, যা আমাদের সেরিব্রাল কর্টেক্সে আঘাত করে। এই কর্টেক্স হলো মস্তিষ্কের বাইরের ধূসর স্তর, যেখানে ভাষা ও চেতনা বাস করে। এই আধা সেকেন্ডের স্ফুরণ, যাকে স্পিন্ডল বলা হয়, ইঙ্গিত দেয় যে আমরা স্টেজ ২-এ প্রবেশ করেছি।

ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক কম সক্রিয় নয়, বরং ভিন্নভাবে সক্রিয়। স্পিন্ডলগুলো তত্ত্ব অনুসারে কর্টেক্সকে এমনভাবে উদ্দীপিত করে, যাতে সম্প্রতি অর্জিত তথ্য সংরক্ষণ করা যায় এবং সম্ভবত এটিকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতির সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। নিদ্রাসংক্রান্ত গবেষণাগারে দেখা গেছে, যখন মানুষকে নতুন কাজ―মানসিক বা শারীরিক শেখানো হয়, সেই রাতে তাদের স্পিন্ডলের ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যায়। যত বেশি স্পিন্ডল, পরের দিন তারা সেই কাজে তত ভালো পারফর্ম করে।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, রাতের স্পিন্ডলের শক্তি সাধারণ বুদ্ধিমত্তার একটি পূর্বাভাস হতে পারে। ঘুম সত্যিই এমন সংযোগ তৈরি করে, যা আমরা সচেতনভাবে কখনোই তৈরি করতেই পারতাম না। কেউ কখনো বলে না, 'আমি আমার সমস্যাকে খাব।' বরং আমরা সব সময় বলি, 'আমি সমস্যা নিয়ে ঘুমাই।'

জাপানে 'ইনেমুরি' নামে একটি বিশেষ ধরনের ঘুম আছে, যার অর্থ 'উপস্থিত থাকাকালীন ঘুমানো'। এটি এমন একটি নিদ্রা, যেখানে একজন ব্যক্তি এমন জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ে, যেটি ঘুমের জন্য নয়―যেমন সাবওয়ে, ডিনার পার্টি বা এমনকি অফিসে। একজন জাপান বিশেষজ্ঞ ব্রিজিট স্টেগার বলেন, যেহেতু আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘুমাচ্ছেন না, এটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। জাগ্রত মস্তিষ্ক বাইরের উদ্দীপনা সংগ্রহের জন্য অপ্টিমাইজড, কিন্তু ঘুমন্ত মস্তিষ্ক সেই তথ্যগুলোকে একত্র করার কাজটি করে। রাতে আমরা রেকর্ডিং থেকে আণবিক স্তরে সম্পাদনার দিকে চলে যায়। আমরা কেবল চিন্তাগুলো ফাইল করি না―ঘুমন্ত মস্তিষ্ক সক্রিয়ভাবে নির্বাচন করে―কোন স্মৃতি রাখবে এবং কোনটি ফেলে দেবে।

এই নির্বাচন সব সময় বুদ্ধিমানের সঙ্গে হয় না। ঘুম আমাদের স্মৃতিকে এত জোরালোভাবে শক্তিশালী করে―কেবল স্টেজ ২-এ নয়, বরং পুরো রাতের চক্রাকার যাত্রায়―উদাহরণস্বরূপ, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা ক্লান্ত সৈন্যদের জন্য সরাসরি ঘুমিয়ে পড়া ভালো না-ও হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট গিনা পো বলেন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) রোধ করতে, সৈন্যদের ছয় থেকে আট ঘণ্টা জেগে থাকা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো বড় ঘটনার পরপরই ঘুমিয়ে পড়লে মানসিকভাবে সমাধান না হওয়া অভিজ্ঞতাগুলো দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি হয়ে ওঠার আশঙ্কা বেশি।

স্টেজ ২ প্রথম ৯০ মিনিটের ঘুমের চক্র ৫০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। পরবর্তী ঘুম চক্রগুলোতে এ অবস্থা সাধারণত কম সময় নেয়। স্পিন্ডলগুলো কয়েক সেকেন্ড পরপর আসতে পারে, কিন্তু যখন এই স্ফুরণ কমে যায়, আমাদের হৃৎস্পন্দন ধীর হয়। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমে। বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে অবশিষ্ট যেকোনো সচেতনতা অদৃশ্য হয়ে যায়। আমরা স্টেজ ৩ এবং ৪-এর গভীর ঘুমের দিকে দীর্ঘ ডুব দিই।

গভীর ঘুম: স্টেজ ৩ এবং ৪

আমরা একটি গভীর, কোমার মতো ঘুমে প্রবেশ করি, যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খাদ্যের মতোই অপরিহার্য। এটি স্বপ্ন দেখার সময় নয়। বরং শারীরবৃত্তীয় রক্ষণাবেক্ষণের সময়।

প্রতিটি প্রাণী, ব্যতিক্রম ছাড়াই ঘুমের অন্তত একটি আদিম রূপ প্রদর্শন করে। তিন আঙুলের শ্লথ প্রাণীটি দিনে প্রায় ১০ ঘণ্টা ঘুমায়। একে অলসতার একটি হতাশাজনক প্রদর্শন বলে ধরা হয়। কিন্তু কিছু ফলখেকো বাদুড় ১৫ ঘণ্টা এবং ছোট বাদামি বাদুড় ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায়। জিরাফরা পাঁচ ঘণ্টারও কম সময় ঘুমায়। ঘোড়ারা রাতের কিছু সময় দাঁড়িয়ে এবং কিছু সময় শুয়ে ঘুমায়। ডলফিন মস্তিষ্কের অর্ধেক একবারে ঘুমায়। বাকি অর্ধেক মস্তিষ্ক জেগে থাকে। এরই গুণে ডলফিন অবিরাম সাঁতার কাটে। গ্রেট ফ্রিগেটবার্ডরা ডানা না ঝাপটিয়ে ভেসে বেড়ানো বা গ্লাইডিংয়ের সময় ঘুমাতে পারে। অন্যান্য পাখিও তাই করতে পারে। নার্স শার্করা সমুদ্রতলের একটি গাদায় বিশ্রাম নেয়। তেলাপোকারা নিদ্রার সময় তাদের শুঁড় নামিয়ে রাখে। এই প্রাণী ক্যাফেইনের প্রতিও সংবেদনশীল।

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

ঘুমকে এমন একটি আচরণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যেখানে সংবেদনশীলতা ও গতিশীলতা হ্রাস পায়, কিন্তু ঘুম থেকে দ্রুত জেগে উঠা কখনও ব্যাহত হতে পারে। শীত বা হিমনিদ্রা বা হাইবারনেশন কিংবা গভীরভাবে চেতনা হারানো বা কোমার মতো নয় ঘুম। এমনকি মস্তিষ্কবিহীন প্রাণীরাও ঘুমায়। জেলিফিশ ঘুমায়। সে সময় তাদের শরীরের স্পন্দন লক্ষণীয়ভাবে ধীরগতির হয়ে যায়। এককোষী জীব, যেম প্ল্যাঙ্কটন এবং ইস্টের সুস্পষ্ট কর্ম ও বিশ্রাম চক্র রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, ঘুম প্রাচীন এবং এর মূল ও সর্বজনীন কাজ স্মৃতি সংগঠন বা শিক্ষার প্রচার নয়, জীবনের সংরক্ষণ। এটি একটি প্রাকৃতিক নিয়ম―যেকোনো প্রাণী, আকার যা-ই হোক না কেন, ২৪ ঘণ্টা পুরোদমে চলতে পারে না।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের নিউরোলজি প্রফেসর থমাস স্ক্যামেল বলেন, 'জাগ্রত থাকা কঠিন। আপনাকে বাইরে গিয়ে অন্য সব জীবের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বেঁচে থাকতে হয় এবং তার পরিণতি হলো আপনার কোষগুলোকে কর্মতৎপরতা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্রামের সময় প্রয়োজন।' 

মানুষের বেলায় এমন ঘটনা প্রধানত গভীর ঘুমের পর্বে ঘটে। স্টেজ ৩ এবং ৪-এ, যেখানে মস্তিষ্কের কার্যকলাপের শতকরা হারে বড়, ঢেউয়ের মতো ডেল্টা তরঙ্গ দ্বারা গঠিত হয়, যা ইইজিতে পরিমাপ করা যায়। স্টেজ ৩-এ ডেল্টা তরঙ্গ অর্ধেকেরও কম সময় থাকে; স্টেজ ৪-এ অর্ধেকের বেশি। কোনো কোনো বিজ্ঞানী এই দুটিকে একক গভীর ঘুমের পর্যায় হিসেবে বিবেচনা করেন। গভীর ঘুমে আমাদের কোষগুলো সবচেয়ে বেশি গ্রোথ হরমোন উৎপন্ন করে। এই হরমোন জীবনভর হাড় ও পেশি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন।

আরও প্রমাণ রয়েছে যে ঘুম সুস্থ দেহপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম, শরীরের তাপমাত্রা এবং রক্তচাপ বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। ভালো ঘুম ছাড়া আমরা আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না বা আঘাত থেকে দ্রুত সেরে উঠতে পারি না। বোস্টনের ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন্স হসপিটালের স্টিভেন লকলি বলেন, ঘুম সম্ভবত খাদ্যের চেয়েও বেশি অপরিহার্য। প্রাণীরা না খেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি দিন বাঁচতে পারে। কিন্তু না ঘুমিয়ে সে তুলনায় আগে মারা যায়।

ভালো ঘুম সম্ভবত ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়। নিউইয়র্কের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেন নেডারগার্ডের একটি গবেষণায় ইঁদুরের উপর দেখা গেছে, জাগ্রত অবস্থায় আমাদের নিউরনগুলো শক্তভাবে জড়ো থাকে, কিন্তু ঘুমের সময় কিছু মস্তিষ্কের কোষ ৬০ শতাংশ সংকুচিত হয়, তাদের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত করে। এই আন্তকোষীয় স্থানগুলো কোষের বিপাকীয় বর্জ্য জমা করার স্থান, ময়লা ফেলার ভাগাড় বা ডাম্পিং গ্রাউন্ড। বিশেষ করে বিটা-অ্যামিলয়েড নামক উপাদান। এই উপাদান নিউরনের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করে এবং আলঝেইমারের রোগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। কেবল ঘুমের সময়ই মেরুদণ্ডের তরল এই প্রশস্ত পথ দিয়ে ডিটারজেন্টের মতো প্রবাহিত হয়, বিটা-অ্যামিলয়েডকে ধুয়ে ফেলে।

ঘুম শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এই সময়ে সবচেয়ে বেশি গ্রোথ হরমোন এবং সংক্রমণপ্রতিরোধী প্রোটিন নিঃসৃত হয়। ওয়াশিংটন ডিসির চিলড্রেন্স ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেমে আট বছর বয়সী মাইকেল বোসাকের মতো শিশুদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এই সব রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের সময় আমাদের পেশিগুলো সম্পূর্ণ শিথিল থাকে। মানসিক কার্যকলাপ ন্যূনতম হয়: স্টেজ ৪-এর তরঙ্গগুলো কোমা রোগীদের তরঙ্গের মতো। আমরা সাধারণত স্টেজ ৪-এ স্বপ্ন দেখি না; এমনকি ব্যথাও অনুভব করতে পারি না। গ্রিক পুরাণে ঘুমের দেবতা হিপনোস এবং মৃত্যুর দেবতা থানাটোস যমজ ভাই। গ্রিকরা হয়তো ঠিকই বলেছিল।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিহেভিয়ারাল স্লিপ মেডিসিন প্রোগ্রামের পরিচালক মাইকেল পার্লিসের একটা বক্তব্য আছে: 'আপনি এমন একটি মস্তিষ্কের নিষ্ক্রিয়তার কথা বলছেন, যা সত্যিই তীব্র। স্টেজ ৪ ঘুম কোমা বা মস্তিষ্কের মৃত্যু থেকে খুব বেশি দূরে নয়। যদিও এটি পুনরুদ্ধারকারী এবং পুনরুজ্জীবনকারী, তবে এটি এমন কিছু নয়, যা অতি মাত্রায় আপনি নিতে চাইবেন।'

জাপানের চল্লিশ শতাংশ মানুষ ছয় ঘণ্টার কম ঘুমায়। অল নাইট ডিনার টোকিও, খাওয়ার পাশাপাশি ঘুম।

আমরা সর্বাধিক ৩০ মিনিট স্টেজ ৪-এ থাকতে পারি, তারপর মস্তিষ্ক নিজেকে বাইরে ঠেলে দেয়। ঘুমের মধ্যে হাঁটার ক্ষেত্রে, এই স্থানান্তর শরীরের ঝাঁকুনির সঙ্গে হতে পারে। আমরা প্রায়ই স্টেজ ৩, ২ এবং ১-এর মধ্য দিয়ে সরাসরি জাগ্রত অবস্থায় চলে যাই।

এমনকি সুস্থ ঘুমন্ত মানুষ রাতে বেশ কয়েক দফা জেগে ওঠে। যদিও বেশির ভাগ মানুষই এ বিষয় লক্ষ করে না। আমরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু এই মুহূর্তে আবার পর্যায়গুলো পুনরাবৃত্তি না করে মস্তিষ্ক নিজেকে সম্পূর্ণ নতুন কিছুর জন্য প্রস্তুত করে―একটি সত্যিকারের অদ্ভুত যাত্রাপথ।

আমরা কতটা সতেজ বোধ করি, তা দুটি প্রক্রিয়ার পারস্পরিক ক্রিয়া বা মিথস্ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে: 'ঘুমের চাপ', যা জাগ্রত অবস্থায় মস্তিষ্কে জমা হওয়া ঘুম-উৎসাহী পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট বলে মনে করা হয়, এবং আমাদের সার্কাডিয়ান রিদম, অভ্যন্তরীণ ঘড়ি যা মস্তিষ্ক ও শরীরকে সূর্যের সঙ্গে সিঙ্ক্রোনাইজ রাখে। এই ঘড়ি আলোর মাধ্যমে পিছিয়ে বা এগিয়ে সেট করা যায়। আমরা বিশেষ করে নীল, ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য, আলোর প্রতি সংবেদনশীল, যা মধ্যাহ্নের সূর্যালোক এবং আমাদের কম্পিউটার স্ক্রিনে থাকে, কিন্তু রাতে এটি আমাদের চক্রকে ব্যাহত করতে পারে―বিশেষ করে যখন আমাদের ঘুমের জন্য অন্ধকার প্রয়োজন।

কিছু অন্ধ মানুষ, যাদের মস্তিষ্কে কোনো আলোর তথ্য পৌঁছায় না, তারা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মেলাটোনিন পণ্য ব্যবহার করে সিঙ্ক্রোনাইজ থাকার চেষ্টা করেন।

ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, ৮০ মিলিয়নের বেশি আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্ক দীর্ঘস্থায়ীভাবে ঘুমের অভাবঘটিত রোগে ভোগেন। অর্থাৎ তারা প্রস্তাবিত সাত ঘণ্টার কম ঘুমান। ঘুমহীন ক্লান্তি প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ, পাশাপাশি চিকিৎসা ত্রুটির একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যার জন্য দায়ী। এমনকি ঘুমের ছোটখাটো পরিবর্তনও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ডেলাইট সেভিং টাইম পরিবর্তনের পরের সোমবার, অন্যান্য সোমবারের তুলনায় হার্ট অ্যাটাক ২৪ শতাংশ বেড়ে যায় এবং মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনাও বৃদ্ধি পায়। ইউরোপেও ডেলাইট সেভিং টাইম অনুসরণ করা হয় অনেক দেশে, সেখানেও তথ্য নিলে দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের মতোই ঘটনা ঘটে।

আমাদের জীবদ্দশায়, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অন্তত একটি নির্ণয়যোগ্য ঘুমের ব্যাধিতে ভুগবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা, স্লিপ অ্যাপনিয়া, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম এবং আরও বিরল ও অদ্ভুত অবস্থা। 'এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম'-এ মনে হয় ঘুমানোর চেষ্টাকালে মস্তিষ্কে গর্জনের শব্দ হচ্ছে। হার্ভার্ডের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্লিপ প্যারালাইসিস―স্বপ্ন থেকে জাগার পর কয়েক মিনিটের জন্য নড়তে না পারা―অনেক এলিয়েন অপহরণের গল্পের উৎস। ক্লেইন-লেভিন সিনড্রোমে আক্রান্তরা প্রতি কয়েক বছরে এক বা দুই সপ্তাহ প্রায় অবিরাম ঘুমান। তারা কোনো লক্ষণীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই স্বাভাবিক চেতনায় ফিরে আসেন।

অনিদ্রা সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কদের যেকোনো মাসে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার প্রধান কারণ। অনিদ্রায় আক্রান্তরা সাধারণত ঘুমিয়ে পড়তে বেশি সময় নেন, রাতে দীর্ঘ সময় জেগে থাকেন বা উভয়টিই ঘটে। ঘুম যদি এত সর্বজনীন প্রাকৃতিক ঘটনা হয়, যুগ যুগ ধরে পরিশীলিত, তবে এত মানুষের এতে সমস্যা হয় কেন? এর জন্য দায়ী করা যায় বিবর্তনকে, আধুনিক বিশ্বকে বা এই দুয়ের মধ্যে অমিলকে।

ঘুমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল যখন ইনক্যান্ডেসেন্ট বাল্ব প্রথম রাতকে বিতাড়িত করা সহজ করে দিয়েছিল। টোকিওর মতো বড় শহরগুলো এখন প্রায়ই এলইডি বাল্ব দিয়ে আলোকিত। এগুলো বেশি শক্তি-দক্ষ, কিন্তু এগুলো আমাদের প্রাকৃতিক আলো-অন্ধকার চক্রকে ব্যাহত করে। টোকিওর রাতের রাস্তায় নিয়ন সাইনের পরিবেষ্টিত আলোয় তোলা প্রতিকৃতি দেখায়, রঙের ঝলকানি আমাদের উদ্দীপিত বা শিথিল করতে পারে, যা আমাদের শরীরের লক্ষ লক্ষ বছরের অভিযোজনকে উল্টে দিচ্ছে।

মানুষ কীভাবে রাতের আকাশ পরিবর্তন করছে, তা পরিষ্কারভাবে দেখতে, নাসা পৃথিবীর সম্পূর্ণ রাতের সময়ে স্যাটেলাইট চিত্র তৈরি করেছে। 'টার্নিং অব দ্য মুন' নামে একটি কৌশল ব্যবহার করে, নাসার বিজ্ঞানীরা আগুন, অরোরা, মেঘ এবং তুষার ও বরফের মতো প্রাকৃতিক আলোর উৎস ও শোষক ফিল্টার করে। ফলাফলগুলো নিয়মিত আপডেট করা, মানুষের বসতির ক্রমবর্ধমান প্যাটার্ন এবং আমাদের রাতকে আলোকিত করার অবিরাম প্রচেষ্টার সেরা চিত্র দেয়।

বিবর্তন আমাদের অন্যান্য প্রাণীর মতো এমন ঘুম দিয়েছে, যা সময়ের দিক থেকে নমনীয় এবং সহজেই বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যাতে এটি জরুরি অবস্থার কাছে অধীন হয়। মস্তিষ্কের একটি ওভাররাইড সিস্টেম রয়েছে, যা সব ঘুমের পর্যায়ে কাজ করে, যা শিশুর কান্না বা কাছাকাছি শিকারির পায়ের শব্দের মতো জরুরি পরিস্থিতি শনাক্ত করলে আমাদের জাগিয়ে তুলতে পারে।

সমস্যা হলো, আধুনিক বিশ্বে আমাদের প্রাচীন জাগরণের ডাক প্রায়ই জীবন-হুমকির নয় এমন পরিস্থিতিতে―যেমন পরীক্ষার আগে উদ্বেগ, আর্থিক চিন্তা বা পাড়ার প্রতিটি গাড়ির অ্যালার্ম থেকে সৃষ্টি হয়। শিল্পবিপ্লব আমাদের অ্যালার্ম ঘড়ি ও নির্দিষ্ট কাজের সময়সূচি দিয়েছে। আগে আমরা প্রায়ই অনিদ্রার প্রতিকার হিসেবে বেশি সময় ঘুমাতে পারতাম। এখন আর সম্ভব নয়। আপনি যদি এমন একজন হন, যিনি গর্ব করেন যে তারা যেকোনো জায়গায় দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারেন, বিশেষ করে ৪০ বছরের কম বয়সী হলে, আপনি গর্ব করা বন্ধ করতে পারেন―এটি ঘুমের তীব্র ঘাটতির স্পষ্ট লক্ষণ। 
যখন আমরা পর্যাপ্ত ঘুম দিতে পারি না, তখন মস্তিষ্কের প্রথম অংশ যা কার্যক্ষমতা হারায়, তা হলো প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের কেন্দ্র। ঘুমের অভাবে মানুষ বেশি খিটখিটে, মুডি এবং অযৌক্তিক হয়ে ওঠে। উইসকনসিন ইনস্টিটিউট ফর স্লিপ অ্যান্ড কনশাসনেসের নিউরোসায়েন্টিস্ট চিয়ারা চিরেলির কথা ধার করা যায়: 'প্রতিটি জ্ঞানীয় কার্যকলাপ কিছুটা হলেও ঘুমের ক্ষতির দ্বারা প্রভাবিত হয়।' পুলিশের হেফাজতে থাকা ঘুমবঞ্চিত সন্দেহভাজনরা বিশ্রামের বিনিময়ে যেকোনো কিছু স্বীকার করে নেয়।

যারা নিয়মিত ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের বিষণ্নতা, সাইকোসিস এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঘুমের অভাব সরাসরি স্থূলতার সঙ্গে যুক্ত হয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে পাকস্থলী এবং অন্যান্য অঙ্গ ক্ষুধা হরমোন গ্রেলিন বেশি বেশি উৎপন্ন করে। ফলে আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাই। এই ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণ করা কঠিন। এ জন্য মানুষের উপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা যায় না। কারণ, ভালোভাবে খুঁজে বের করাও যায় না, তবে এটা স্পষ্ট যে নিদ্রাহীনতা পুরো শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

পাওয়ার ন্যাপ বা ওষুধ সমস্যার সমাধান করে না। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ সায়েন্টিস্ট জেফ্রি এলেনবোগেন, যিনি সাউন্ড স্লিপ প্রজেক্ট পরিচালনা করেন, তিনি বলেন, 'ঘুম একক কিছু নয়। এটি একটি ম্যারাথন নয়; এটি একটি ডেকাথলনের মতো। এটি হাজার রকমের জিনিস। ওষুধ বা ডিভাইস দিয়ে ঘুম নিয়ন্ত্রণ করা লোভনীয়, কিন্তু আমরা এখনো ঘুমকে এত জানাশোনা নেই বা এতটা বুঝি না যে এর অংশগুলো কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ঝুঁকি নিতে পারি।'

স্বপ্নগুলো, যদিও প্রায়ই ভুলভাবে বলা হয় যে এগুলো ক্ষণস্থায়ী, বরং আরইএম ঘুমের প্রায় পুরো সময়জুড়ে থাকে বলে মনে করা হয়। এটি প্রতি রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়, যদিও বয়স বাড়ার সঙ্গে এটি কমে যায়―সম্ভবত কারণ আমাদের কম নমনীয় মস্তিষ্ক জাগ্রত অবস্থায় ততটা শিখছে না এবং ঘুমের সময় প্রক্রিয়া করার জন্য কম নতুন স্মৃতি রয়েছে। নবজাতক শিশুরা দিনে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায় এবং এর প্রায় অর্ধেক সময় একটি সক্রিয়, আরইএমের মতো অবস্থায় কাটায়। গর্ভে প্রায় এক মাস, গর্ভধারণের ২৬তম সপ্তাহ থেকে শুরু করে, ভ্রুণরা প্রায় অবিরাম একটি আরইএমর মতো অবস্থায় থাকে বলে মনে হয়। এই সমস্ত আরইএম সময় তত্ত্ব অনুসারে মস্তিষ্কের সফটওয়্যার পরীক্ষার সমতুল্য, যা পুরোপুরি চালু হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় টেলেনসেফালাইজেশন। এটি মনের উন্মোচন ছাড়া আর কিছুই নয়।

১৯৫৩ সালে র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে দ্রুত চোখের নড়াচড়া পর্ব আবিষ্কৃত হয়। এটি আবিষ্কার করেন ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর বিজ্ঞানী ইউজিন আসেরিনস্কি এবং নাথানিয়েল ক্লেইটম্যান। এর আগে ঘুমের প্রথম চারটি ধাপ (পর্যায় ১ থেকে ৪) প্রায় ১৫ বছর আগেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে আরইএম পর্বটি দীর্ঘদিন ধরে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়নি। কারণ, প্রাথমিক ইইজি বা মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যক্রম পরিমাপক যন্ত্র পরীক্ষায় এর কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়নি। বরং এটি তখন ধরা হতো প্রথম ধাপের (স্টেজ ১) একটি ভিন্নধর্মী উপপ্রকার বা ধারা হিসেবে, যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নয়।

তবে যখন গবেষকেরা এই পর্বে মানুষের চোখের বিশেষ ধরনের দ্রুত নড়াচড়া শনাক্ত করলেন এবং দেখলেন, এই সময় যৌনাঙ্গগুলোতে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়―এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মানুষের প্রায় সব রকমের জীবন্ত ও প্রাণবন্ত স্বপ্ন এই পর্বে ঘটে। এতে ঘুমসংক্রান্ত বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণভাবে বদলে যায়।

আরইএম পর্বের এই বৈশিষ্ট্যগুলো আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে এটি মানুষের ঘুমের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি শুধু স্বপ্ন দেখার জন্য নয়, বরং মস্তিষ্কের কার্যক্রম এবং দেহের সামগ্রিক শারীরবৃত্তীয় অবস্থার জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আরইএম পর্বের আবিষ্কার ঘুমের বিজ্ঞানের জন্য এক নয়া দিগন্তে খুলে দেয়।

আরইএম ঘুমের সময় শরীর তাপ নিয়ন্ত্রণ করে না; আমাদের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা তার সর্বনিম্ন সেটিংয়ে থাকে। আমরা সত্যিই ঠান্ডা হয়ে যাই। আমাদের হৃৎস্পন্দন অন্যান্য ঘুমের পর্যায়ের তুলনায় বেড়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়। আমাদের পেশিগুলো, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়াচোখ, কান, হৃৎপিণ্ড, ডায়াফ্রাম সম্পূর্ণ স্থির থাকে। দুঃখজনকভাবে এটি আমাদের কাউকে নাক ডাকা থেকে রক্ষা করে না; এই বিছানার সঙ্গীর অভিশাপ, শত শত নাক ডাকা বন্ধ করতে যন্ত্র তৈরির প্রেরণা দেয়। শ্বাসনালি বা নাকের শিথিল টিস্যুগুলোর কম্পনের কারণে নাক ডাকার ঘটনা ঘটে। এটি স্টেজ ৩ এবং ৪-এ সাধারণ। আরইএম ঘুমে, নাক ডাকুন বা না ডাকুন, আমরা সম্পূর্ণভাবে শারীরিক প্রতিক্রিয়াহীন, মুখ হাঁ করে, এমনকি আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও অক্ষম। তবুও আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের বিশ্বাস করাতে পারে যে আমরা মেঘের উপর পদচারণ করছি বা দানবের সঙ্গে লড়ছি।

প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা থেকে শুরু করে সিগমুন্ড ফ্রয়েড কিংবা কানা গলির ভবিষ্যৎ গণনাকারীদের কাছে স্বপ্ন বরাবরই রহস্য এবং মুগ্ধতার এক অসীম উৎস ছিল। কখনো এটি দেবতাদের বার্তা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, আবার কখনো মানুষের অবচেতন মনের প্রতিফলন হিসেবে। 

তবে আজকের দিনে অনেক ঘুম বিশেষজ্ঞ স্বপ্নের নির্দিষ্ট চিত্র বা ঘটনার প্রতি তেমন আগ্রহী নন। তাদের মতে, স্বপ্ন মূলত মস্তিষ্কের নিউরনের এলোমেলো সক্রিয়তার ফলাফল। যদিও এই স্বপ্নগুলোতে আবেগের ছোঁয়া থাকতে পারে, তবে এগুলোকে গভীর অর্থপূর্ণ বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আমাদের ঘুম ভাঙার পরই সচেতন মস্তিষ্ক সেই এলোমেলো এবং অসংগঠিত চিত্র ও ঘটনার টুকরোগুলোকে অর্থ খুঁজে দেয়ার জন্য দ্রুত একত্র করে একটি নিরবচ্ছিন্ন গল্প বানিয়ে ফেলে। 

এখানেই মূল বিষয়টি। স্বপ্নের ভেতরে থাকা ঘটনাগুলো যতই বিশৃঙ্খল হোক না কেন, জেগে ওঠার পর আমাদের মস্তিষ্ক সেই বিশৃঙ্খলাকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। এটি আসলে মস্তিষ্কের অর্থ খোঁজার প্রবণতারই একটি প্রমাণ। স্বপ্নের এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমাদের বোঝায়, স্বপ্ন যতই রহস্যময় মনে হোক না কেন, তা বাস্তবিকভাবে আমাদের মস্তিষ্কের জটিল কার্যক্রমের একটি অংশ।

সুইডেনে যেসব অভিবাসী শিশুদের পরিবার নির্বাসনের মুখোমুখি, তাদের মধ্যে শত শত শিশু রেজিগনেশন সিনড্রোম নামে একটি বিস্ময়কর ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে। এতে শিশু বিশ্ব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, এমনকি বেদনাদায়ক উদ্দীপনায়ও প্রতিক্রিয়া দেখায় না এবং বছরের পর বছর ফিডিং টিউবের মাধ্যমে পুষ্টি নিতে হয়।

অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটে; কারণ, আরইএম ঘুমে মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ যুক্তি কেন্দ্র এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল থেকে সরে যায়। দুটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক, সেরোটোনিন এবং নোরেপিনেফ্রিন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এই দুটি নিউরোট্রান্সমিটার মস্তিষ্কের কোষগুলোর যোগাযোগের জন্য অপরিহার্য। এগুলো ছাড়া আমাদের শেখার ও মনে রাখার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা একটি রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত চেতনার অবস্থায় থাকি। কিন্তু এটি স্টেজ ৪-এর মতো কোমার মতো অবস্থা নয়। আরইএম ঘুমে আমাদের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সক্রিয়, জাগ্রত অবস্থার মতোই শক্তি গ্রাস করে।

আরইএমকে ঘুম লিম্বিক সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্কের গভীর অঞ্চল, মনের অসভ্য জঙ্গল, যেখানে আমাদের সবচেয়ে প্রাচীন ও মৌলিক প্রবৃত্তি উৎপন্ন হয়। ফ্রয়েড ঠিকই বলেছিলেন যে স্বপ্ন আমাদের আদিম আবেগকে স্পর্শ করে। লিম্বিক সিস্টেম আমাদের যৌন প্রবৃত্তি, আগ্রাসন এবং ভয়ের আবাস, যদিও এটি আমাদের উল্লাস, আনন্দ এবং ভালোবাসা অনুভব করতেও দেয়। যদিও মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের দুঃস্বপ্ন সুখকর স্বপ্নের চেয়ে বেশি, এটি সম্ভবত সত্য নয়। ভয়ংকর স্বপ্নগুলো কেবল আমাদের ওভাররাইড সিস্টেমকে ট্রিগার করে আমাদের জাগিয়ে তোলার সহায়তা করে। 

জাপানের সাবওয়েতে ‘ইনিমুরি’ এও এক ধরনের ঘুম। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে অনেক ঘুমবিজ্ঞানী এই ধারণার সঙ্গে একেবারেই দ্বিমত পোষণ করেন। হার্ভার্ডের স্টিকগোল্ড বলেন, 'স্বপ্নের বিষয়বস্তু আসলে একটি বিবর্তিত প্রক্রিয়ার অংশ, যা নতুন স্মৃতির গভীর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে এবং ভবিষ্যতে সেগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে, তা বোঝার জন্য তৈরি হয়েছে।'

এখানে স্টিকগোল্ডের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে স্বপ্ন শুধু এলোমেলো নিউরনের সক্রিয়তার ফল নয়। বরং এটি আমাদের মস্তিষ্কের একটি অত্যন্ত জটিল এবং প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় নতুন অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিগুলোকে বিশ্লেষণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করে। এগুলোকে ব্যবহারযোগ্য জ্ঞান বা অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত করে।

এ ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, স্বপ্ন কেবল আবেগ বা কল্পনার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং মানব বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি আমাদের মস্তিষ্কের সেই ক্ষমতা প্রকাশ করে, যা নতুন অভিজ্ঞতাকে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। তাই স্বপ্নকে গুরুত্বহীন ভাবার পরিবর্তে এর অন্তর্নিহিত বৈজ্ঞানিক ও বিবর্তনমূলক দিকগুলোকে বোঝা প্রয়োজন।

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের স্বপ্নের কথা শুনি সবশেষে। 

এক ধনী ব্যক্তি মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কাছে এলেন। একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে তিনি বেশ চিন্তিত ছিলেন। ধনী ব্যক্তিটি বললেন, 'হোজ্জা, আমি স্বপ্নে দেখেছি আমার সমস্ত সম্পদ হারিয়ে আমি ভিখারি হয়ে রাস্তার ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এর অর্থ কী হতে পারে?'

মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনে হোজ্জা বললেন, 'চিন্তা করবেন না। স্বপ্নে আমরা যা দেখি, সব সময় তা সত্যি হয় না।' 

ধনী ব্যক্তির উৎকণ্ঠা তখনো কমেনি। তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'কিন্তু আপনি এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? আর আমার এখন কী করা উচিত?' 

একটু থেমে হোজ্জা বললেন, 'এই স্বপ্নটি একটি সতর্কবার্তা। সম্পদ মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে, তাই সম্পদের প্রতি আসক্ত না হয়ে আমাদের ভালো কাজ করা উচিত এবং অন্যদের সাহায্য করা উচিত। এই কাজগুলোই সারা জীবন আমাদের সাথে থাকবে।' 

ধনী ব্যক্তি কিছুটা স্বস্তি পেলেও তার উদ্বেগ পুরোপুরি গেল না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, 'কিন্তু হোজ্জা, আমি যদি স্বপ্ন দেখি আমার আরও সম্পদ হয়েছে তাহলে?' 

হেসে ফেলে হোজ্জা বললেন, 'তাহলে আপনার দ্রুত জেগে ওঠা উচিত; কারণ, বেশি স্বপ্ন দেখলে আপনি বাস্তব জগৎ ভুলে যাবেন, যেখানে প্রকৃত সম্পদ হলো আমাদের উদারতা এবং অর্জিত জ্ঞান।' 

হোজ্জার কথার অর্থ প্রথমে বুঝতে না পেরে ধনী ব্যক্তি সেখান থেকে চলে গেলেন। যেতে যেতে তিনি হোজ্জার কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলেন। অবশেষে তিনি বুঝতে পারলেন, স্বপ্ন যতই রহস্যময় হোক না কেন, তা আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ এবং মূল্যবোধের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

Related Topics

টপ নিউজ

ঘুম / স্বপ্ন / সৈয়দ মূসা রেজা / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • শুল্ক ছাড়ের আড়ালের ‘গোপন’ শর্ত জনগণ জানতে পারল না: আলতাফ পারভেজ
  • মার্কিন শুল্ক আলোচনায় কীভাবে সফল হলো বাংলাদেশ
  • বাংলাদেশের উপর ট্রাম্পের শুল্ক কমানোর পর ভারতের টেক্সটাইল শেয়ার দর কমল ৭% পর্যন্ত
  • এফিডেভিট কী, কেন ও কীভাবে করবেন?
  • ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ৭ দিন পরে বাংলাদেশি পণ্যে সংশোধিত মার্কিন শুল্ক কার্যকর হবে
  • প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ স্বাভাবিক অবস্থানে আছে: মার্কিন শুল্ক প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি

Related News

  • উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা
  • মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন

Most Read

1
মতামত

শুল্ক ছাড়ের আড়ালের ‘গোপন’ শর্ত জনগণ জানতে পারল না: আলতাফ পারভেজ

2
অর্থনীতি

মার্কিন শুল্ক আলোচনায় কীভাবে সফল হলো বাংলাদেশ

3
আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের উপর ট্রাম্পের শুল্ক কমানোর পর ভারতের টেক্সটাইল শেয়ার দর কমল ৭% পর্যন্ত

4
মতামত

এফিডেভিট কী, কেন ও কীভাবে করবেন?

5
অর্থনীতি

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ৭ দিন পরে বাংলাদেশি পণ্যে সংশোধিত মার্কিন শুল্ক কার্যকর হবে

6
বাংলাদেশ

প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ স্বাভাবিক অবস্থানে আছে: মার্কিন শুল্ক প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab