Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি

বাহকের পিঠে কিংবা ঠেলাগাড়ি বা ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে রাসায়নিকের ভারী ভারী বোতল, কাচের পাতের বাক্স, কাগজ থেকে শুরু করে তাবু, ট্রাইপড, সবকিছু নিতে হতো। কথিত আছে, স্যামুয়েল বোর্ন ১৮৬৩ সালে যখন প্রথম হিমালয়ে অভিযানে গিয়ে ছবি তোলেন, তখন তাঁর সব সামগ্রী বহনের জন্য ৩০ জন কুলির প্রয়োজন পড়েছিল।
উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি

ইজেল

তারেক আজিজ
29 July, 2025, 01:20 pm
Last modified: 29 July, 2025, 01:24 pm

Related News

  • যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝ আকাশ থেকে ফেরত এলো বিমানের ঢাকা-দাম্মাম ফ্লাইট
  • উপেন্দ্রকিশোর: বাংলার আলোকচিত্রের এক অগ্রদূত
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা

উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি

বাহকের পিঠে কিংবা ঠেলাগাড়ি বা ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে রাসায়নিকের ভারী ভারী বোতল, কাচের পাতের বাক্স, কাগজ থেকে শুরু করে তাবু, ট্রাইপড, সবকিছু নিতে হতো। কথিত আছে, স্যামুয়েল বোর্ন ১৮৬৩ সালে যখন প্রথম হিমালয়ে অভিযানে গিয়ে ছবি তোলেন, তখন তাঁর সব সামগ্রী বহনের জন্য ৩০ জন কুলির প্রয়োজন পড়েছিল।
তারেক আজিজ
29 July, 2025, 01:20 pm
Last modified: 29 July, 2025, 01:24 pm

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। নিউইয়র্কে ডয়লির নিলামঘরে ক্যালোটাইপ পদ্ধতিতে ছাপানো ২৬টি ছবির এক বিশেষ সংগ্রহ নিলামে উঠল। সংগ্রহের পরিচিত লেখা এভাবে–'Collection of 26 Salted Paper Prints of Dacca (Dhaka), India (now Bangladesh) from Calotype Negatives, circa 1850s'। ছবির বাক্সটি খুলে দেখা গেল স্থাপনা, প্রতিকৃতি ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ে রাখা ছবির বেশির ভাগই ঢাকায় তোলা। এদের মাঝে কয়েকটি ছবির পরিচিতি কার্ড মাউন্টের ওপর স্পষ্ট হস্তাক্ষরে লেখা। লালবাগ দুর্গের ভেতরকার পরিবিবির সমাধির একটি ছবি পাওয়া গেল। এর পাশাপাশি ছিল স্থানীয়দের কাঁচা বাড়িঘর, মন্দিরের ছবি। ঢাকার বাইরের স্থাপনা হিসেবে নারায়ণগঞ্জের কদম রসূল মসজিদের একটি ছবি মিলল। প্রতিকৃতিগুলোর মধ্যে ছিল সস্ত্রীক ঢাকার কমিশনার চার্লস টিয়ারনি ডেভিডসনের একটি ছবি। ১৮৫০ থেকে ১৮৬০ এই প্রায় পুরো সময়কালই ডেভিডসন ছিলেন ঢাকায়। তিনি বিয়ে করেন ১৮৫২ সালের নভেম্বরের ১১ তারিখে, জেন হেরিংটন সাদারল্যান্ড নামে এক ভদ্রমহিলাকে। বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছিল লক্ষ্মীবাজারের সেন্ট থমাস গির্জায়। কাজেই ছবিটি ১৮৫২ এর শেষে কিংবা আরও পরে তোলা হয়ে থাকবে। এই লট এ আরও কয়েকজনের প্রতিকৃতি ছিল, রঙের প্রলেপ দিয়ে সেগুলোকে বর্ণিল করবার চেষ্টা করা হয়েছে। এতকাল পেরিয়ে গেলেও সংগ্রহের বেশির ভাগ ছবির অবস্থা ভালো। ঢাকার ইতিহাসের অমূল্য এই সংগ্রহ নিলাম শেষে অজানা কোনো ক্রেতা দুই হাজার মার্কিন ডলারে কিনে নেন।

ফরাসিদেশের লুই দ্যাগার এবং বিলাতের উইলিয়াম হেনরি ট্যালবট সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে ছবি তোলার প্রযুক্তি তথা ফটোগ্রাফি আবিষ্কার করেন ১৮৩৯ সালে। আলোচিত ছবিগুলো নিঃসন্দেহে ১৮৫০-এর দশকের গোড়াতে ঢাকায় ক্যামেরার উপস্থিতি প্রমাণ করে। প্রশ্ন থেকে যায়, ক্যামেরা আবিষ্কারের মাত্র এক যুগ পরে ঢাকায় তোলা ঐ ছবিগুলোর ফটোগ্রাফার কে বা কারা ছিলেন? এগুলোর বাইরে কি ঢাকার আর কোনো ছবি ঐ দশকে বা তার পূর্বে তোলা হয়েছিল? ইংরেজ উপনিবেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে অবহেলিত শহর ঢাকায় ছবি তোলার প্রসারই বা কীভাবে হয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের আগে ছবি তোলা প্রযুক্তি কীভাবে এই অঞ্চলে এল, তা জেনে নেয়াটা জরুরি।  

ঢাকার ছবিযুক্ত প্রথম পোস্টকার্ড, আলোকচিত্রী: ফ্রিৎজ ক্যাপ, ১৯০১

ভারতবর্ষে ছবি তোলার সূচনা

লুই দ্যাগারের ছবি তোলার পদ্ধতি পরিচিতি পেয়েছিল দ্যাগারোটাইপ নামে। আবিষ্কারের বছরখানেকেরও কম সময়ের ব্যবধানে দ্যাগারোটাইপ ক্যামেরা পৌঁছে যায় ভারতবর্ষে। ১৮৪০ সালের জানুয়ারি মাসে 'Friend of India' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় কলকাতার 'থ্যাকার স্পিঙ্ক অ্যান্ড কো.' এর দ্যাগেরোটাইপ ক্যামেরা আমদানির বিজ্ঞাপন। তবে প্রথম পেশাদার ফটোগ্রাফারের নাম জানতে অপেক্ষা করতে হয় আরও চার বছর। ১৮৪৪ সালের জুলাই মাসে ইংলিশম্যান পত্রিকার এক বিজ্ঞাপন থেকে মঁসিয়ে মঁতেরো নামে এক কলকাতানিবাসী ফরাসির ফটোগ্রাফি ব্যবসার কথা জানা যায়। পদ্ধতিগত জটিলতা এবং একাধিক নকল বা কপি তৈরিতে সীমাবদ্ধতা থাকায় দ্যাগেরোটাইপ তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। দ্যাগেরোটাইপের বিপরীতে ট্যালবটের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে নকল তৈরির সুবিধা ছিল। ট্যালবটের আবিষ্কার পরিচিতি পায় ট্যালবোটাইপ বা ক্যালোটাইপ নামে, তবে এর প্যাটেন্ট হয় একটু দেরিতে। ভারতবর্ষে ক্যালোটাইপ ব্যবহারের প্রথম নজির পাওয়া যায় ১৮৪৮সালে। শ্রনযোফার নামে এক ভদ্রলোক কলকাতার কিড স্ট্রিটে নিজস্ব স্টুডিও গড়ে তোলেন। তুলনামূলক সহজ প্রক্রিয়ার কারণে অল্প সময়েই ক্যালোটাইপ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৮৫১ সালে কাগজের পরিবর্তে রাসায়নিক প্রলেপযুক্ত কাচের পাত বা প্লেটকে নেগেটিভ হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। কলয়ডিয়ান বা ওয়েট প্লেট নামের এই পদ্ধতিতে এক্সপোজারের সময় হ্রাস পায় এবং ঝকঝকে ও স্পষ্ট ছবি ছাপানো সম্ভব হয়। ওয়েট প্লেটের প্রসারে পূর্বের প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার সীমিত হয়ে আসে। তবে এই পদ্ধতিতে স্টুডিওর ভেতরে ছবি তোলা সুবিধাজনক হলেও আউটডোরে বেশ ঝামেলা পোহাতে হতো। যেহেতু এক্সপোজারের পরপরই স্বল্পতম সময়ের ভেতর পুরো প্রস্ফুটনের কাজ করতে হতো; সে কারণে ক্যামেরাসহ ছবি তোলা ও প্রস্ফুটনের সকল সরঞ্জাম আউটডোরে নিয়ে যেতে হতো। বাহকের পিঠে কিংবা ঠেলাগাড়ি বা ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে রাসায়নিকের ভারী ভারী বোতল, কাচের পাতের বাক্স, কাগজ থেকে শুরু করে তাবু, ট্রাইপড, সবকিছু নিতে হতো। কথিত আছে, স্যামুয়েল বোর্ন ১৮৬৩ সালে যখন প্রথম হিমালয়ে অভিযানে গিয়ে ছবি তোলেন, তখন তাঁর সব সামগ্রী বহনের জন্য ৩০ জন কুলির প্রয়োজন পড়েছিল। পরবর্তীকালে ড্রাই প্লেট এবং আরও পরে কোডাকের আগমনে ক্যামেরা গৃহস্থালি পণ্যের মতন সহজে বহনযোগ্য হয়ে ওঠে। 

১৮৫৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিভিন্ন প্রেসিডেন্সির সার্ভেয়ারদের মাধ্যমে ভূভারতের স্থাপনাগুলোর ছবি তোলাবার একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। লন্ডনে কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলীর সভায় ফটোগ্রাফির ওপর বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করা হয়; কারণ, ছবি তোলার সুবিধা ছিল তাদের ভাষায়–'perfect accuracy, small expenditure of time, and moderate cash'। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা চলে যায় ইংরেজ সরকারের কাছে। ভারতবর্ষকে পাকাপোক্তভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের আওতায় আনতে এর বিচিত্র জনগোষ্ঠী এবং ভূপ্রকৃতির যাবতীয় তথ্য প্রামাণ্যকরণের প্রয়োজন বোধ করে ইংরেজরা। শুরু হয় ফটোগ্রাফির ব্যাপক ব্যবহার। সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে আসা ইংরেজদের যেমন এককালে ছবি আঁকা প্রশিক্ষণ দেয়া হতো, সে রকম ফটোগ্রাফি শেখানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়। এ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, জাতিভেদ, ধর্মচর্চা, পোশাক ইত্যাদির বিচিত্রতা নিয়ে এ সময় একের পর এক ফটো অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। উইলিয়াম জনসনের তোলা ভারতেবর্ষের পশ্চিমাংশের নারী, পুরুষ, শিশুর ৮৭টি ছবি নিয়ে প্রকাশিত 'Photographs of Western India. Volume I. Costumes and Characters'-এর কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। জনসন এককালে কেরানি হিসেবে কাজ করলেও ফটোগ্রাফি শিখে বোম্বেতে স্টুডিও ব্যবসা শুরু করেন। 

১৮৬০ সাল নাগাদ ভারতে ভ্রমণকারীদের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে ক্যামেরা। ১৮৬৪ সালে ব্র্যাডশের হ্যান্ডবুকে ভারতের আবহাওয়ায় ব্যবহার উপযুক্ত ক্যামেরার বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। আর্দ্র উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ভারতবর্ষে বিশেষ করে বাংলা অঞ্চলে ছবি তোলা ছিল একপ্রকার বিড়ম্বনা। ছত্রাক জমে ক্যামেরার লেন্স নষ্ট হওয়া ছিল খুব সাধারণ ঘটনা। ক্যালোটাইপের মোমঘষা কাগজের মোম যেত গলে, কলয়ডিয়ানের রাসায়নিকও নষ্ট হয়ে যেত। এসব ত্রুটি কেবল পরিস্ফুটনের পরই টের পাওয়া যেত, যখন আর কিছুই করার থাকত না। ভ্যাপসা আবহাওয়ার কারণে শৌখিনদের তো বটেই, পেশাদারদেরও এ অঞ্চলের আবহাওয়ায় ছবি তুলতে প্রচুর বেগ পেতে হতো। পেশাদার ফটোগ্রাফাররা ভারতবর্ষের প্রধান শহরগুলোতে নিজস্ব ফটোগ্রাফিক সোসাইটি গড়ে তোলেন। ছবি তোলার এত সব প্রতিকূলতাকে কীভাবে সামাল দেয়া যায়, সে অভিজ্ঞতা সকলের মাঝে জানাবার জন্য সোসাইটিগুলোর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বোম্বে, মাদ্রাজের মতন কলকাতায় গড়ে ওঠে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল। পেশাদারদের সাথে এসব সোসাইটির সদস্য হিসেবে যোগ দেন অনেক শৌখিন ফটোগ্রাফার। এদের মাঝে কয়েকজন এদেশীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরও নাম পাওয়া যায়। স্থানীয় বেশ কিছু তরুণ ভিনদেশি পেশাদার ফটোগ্রাফারের সহকারী হিসেবে থেকে ছবি তোলার কাজ শিখে নেন, এদের অনেকে পরবর্তী সময়ে ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নিজস্ব স্টুডিও চালু করেন। তবে সেসব অনেক পরের কথা। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, শত প্রতিকূলতার মাঝেও ১৮৫০ সাল অথবা এর কাছাকাছি সময়ে ভিনদেশি কোনো শৌখিন ফটোগ্রাফারের হাত ধরে ঢাকায় ফটোগ্রাফির আগমন ঘটে।

উনিশ শতকের ঢাকার ছবি: জানা-অজানা ফটোগ্রাফাররা

ঢাকায় তোলা প্রথম ছবি কোনটি? এই প্রশ্নের সোজাসাপটা উত্তর খুঁজে বের করা কঠিন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে প্রকাশিত 'আলোকচিত্রে সেকালের ঢাকা' অ্যালবামে প্রাচীনতম প্রতিকৃতি হিসেবে সংকলিত হয়েছে খাজা আলীমুল্লাহর একটি ছবি। ঢাকার খাজা পরিবারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আব্দুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ ছিলেন উনিশ শতকের ঢাকার অন্যতম সেরা ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। ১৮২৫ থেকে ১৮৪৩ সালের মধ্যে তিনি পূর্ববঙ্গের ঢাকা, কুমিল্লা, পটুয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহে বিস্তর জমিদারি কেনেন। বাকেরগঞ্জের প্রজারা তাঁকে মিয়া উপাধি দেয়। ফলে সাধারণের মাঝে তিনি আলী মিয়া নামে পরিচিতি পান। আলী মিয়া ছিলেন ইউরোপীয় রীতিনীতির অনুসারী শৌখিন মানুষ। ১৮৪০-এর দশকে তিনি ঢাকায় ঘোড়দৌড়ের প্রচলন করেন। আলী মিয়ার বাসায় নিয়মিত নাচগানের জলসা বসত; শিকারের নেশাও ছিল। হীরা-জহরত সংগ্রহের নেশায় কিনে ফেলেন সে সময়ের সেরা হীরকখণ্ড দরিয়া-ই-নূর। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৮৪০ সাল থেকে কলকাতায় ফটোগ্রাফি চর্চা শুরু হয়। তবে এ সময়ে ছবি তোলা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিষয়। প্রথাগত প্রতিকৃতি অঙ্কনের পাশাপাশি তাই ছবি তোলাও সীমাবদ্ধ ছিল বিত্তশালী ও শৌখিন লোকেদের ভেতরে। ফটোগ্রাফির প্রাথমিক যুগে আলী মিয়া নিজের ছবি তুলিয়েছিলেন। ক্যালোটাইপ পদ্ধতিতে তোলা ছবিটির একটি অনুকৃতি ছাপা হয় কলকাতার এক পত্রিকায়। ছবিটি ১৮৫৪ সালের আগে তোলা। সে বছর পরলোকগমন করেন আলী মিয়া। যে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না, তা হলো ছবিটি তোলার স্থান। ছবিটি ঢাকায় নাকি কলকাতায় তোলা, সে রহস্য অনাবৃত রয়ে যায়।

নিবন্ধের শুরুতে ছবির যে সংগ্রহ ডয়লির নিলামে বিক্রির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো তোলা হয়েছিল ১৮৫০ থেকে ১৮৬০-এর মধ্যবর্তী সময়কালে। এ সময়ে ঢাকায় কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফারের খোঁজ পাওয়া যায় না, সম্ভাবনাও নেই বললে চলে। ধারণা করা যায়, কাজের প্রয়োজনে ঢাকা এসে কোনো অপেশাদার ফটোগ্রাফার নিতান্ত শখের বশে ছবিগুলো তুলেছিলেন। শৌখিন যেসব ফটোগ্রাফার ভারতবর্ষকে ক্যামেরায় ধারণ করেন, তাঁদের অনেকেই ছিলেন সামরিক বাহিনীর কর্তাব্যক্তি; এদের কয়েকজন কাজ করেছেন বঙ্গদেশেও। তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে যার নাম উল্লেখ করতে হয়, তিনি জন ম্যাকশ। এর বাইরে আরও যাঁদের নাম জানা যায়, তাঁদের মধ্যে আছেন জন মারে, থমাস বিগস, লিনিয়াস ট্রাইপ প্রমুখ। এদের কেউ কি ঢাকার উল্লেখিত ছবিগুলো তুলেছিলেন?

পরিবিবির সমাধির সবচেয়ে প্রাচীন ছবি (১৮৫০-৬০)
ঢাকার নিকটে মন্দির (১৮৫০-৬০)
কদম রসূল মসজিদ, নারায়ণগঞ্জ (১৮৫০-৬০)
সস্ত্রীক ঢাকার কমিশনার ডেভিডসন (১৮৫০-৬০ )

জন ম্যাকশ পেশায় চিকিৎসক হলেও ছবি আঁকা এবং ফটোগ্রাফিতে তাঁর ছিল দুর্দান্ত আগ্রহ। ছবি তোলা নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন ম্যাকশ। ম্যাকশের তোলা তিন শতাধিক ছবি সংরক্ষিত আছে লন্ডনের ন্যাশনাল আর্মি মিউজিয়ামে। তবে এসব ছবির মাঝে ঢাকায় তোলা কোনো ছবির উল্লেখ পাওয়া যায় না। বার্মা অভিযানে যোগ দেবার কালে তিনি কলকাতা এবং রেঙ্গুনের বেশ কিছু ছবি তুলেছিলেন। তবে সামরিক বাহিনীর সেই যাত্রাপথে ঢাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল কি না, জানা যায় না। ম্যাকশের যেসব ছবি সংরক্ষিত হয়েছে, সেসবের ছাপানোর কায়দাও ঢাকার প্রাপ্ত ছবিগুলোর থেকে ভিন্ন। কাজেই উল্লেখিত সংগ্রহের ছবিগুলো ম্যাকশের তোলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ম্যাকশের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা আরও অনেক সামরিক ব্যক্তিকে ছবি তোলায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাঁদের একজন হলেন লিনিয়াস ট্রাইপ। জন ম্যাকশের মতন লিনিয়াস ট্রাইপও বঙ্গদেশ পেরিয়ে বার্মা পৌঁছেছিলেন, ছবি তুলেছিলেন প্রচুর। মাদ্রাজ ইনফ্যান্ট্রিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। একবার ছুটি কাটাতে বিলাত গিয়ে সেখানে ফটোগ্রাফির চর্চা শুরু করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেয়ার পরেও ছবি তোলার কাজ চালিয়ে যান। তাঁর তোলা দক্ষিণ ভারতের ছবিগুলো বিভিন্ন প্রদর্শনীতে ব্যাপক প্রশংসা পায়। লর্ড ডালহৌসির নির্দেশে বার্মা অভিযানে অংশগ্রহণকালে ট্রাইপ প্রচুর ছবি তোলেন। ছবি তোলায় দক্ষতার কারণে ১৮৫৫ সালে তাঁকে মাদ্রাজ প্রদেশের অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়; তাঁর দায়িত্ব ছিল–'To record, before they disappear, buildings, sculptures and inscriptions. Including the picturesque.' ট্রাইপ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার কারণটি ব্যাখ্যা করা যাক। ২৬টি সল্ট প্রিন্টের লটে অন্তর্গত ছবিগুলোর সবগুলো কিন্তু ঢাকার ছবি নয়। এর মধ্যে অন্তত একটিতে মাদ্রাজের  গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মহাবলিপূরমের মহীশাশুর মর্দিনী গুহা মন্দিরের ছবি দেখা যায়। ধারণা করা যায়, আদিতে যিনি এই সংগ্রহটির ফটোগ্রাফার অথবা সংগ্রাহক ছিলেন, তিনি বঙ্গদেশ ও মাদ্রাজ উভয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। সে ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফার হিসেবে স্বাভাবিকভাবে ট্রাইপের নামই আসে। ট্রাইপ বার্মা অভিযানে মাদ্রাজ থেকে কলকাতা হয়ে বাংলা পেরিয়ে রেঙ্গুন পৌঁছেছিলেন। তবে যেহেতু ছবিগুলোর সাথে ফটোগ্রাফারের নাম উল্লেখ করা নেই, তাই এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই।

এবার সে সময়কার অন্যান্য ফটোগ্রাফারের বিষয়ে খানিকটা আলোকপাত করা যাক। ১৮৫০ থেকে ১৮৬০ সময়কালে এ দেশে ফটোগ্রাফি চর্চা করেছেন এমন আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় ব্যক্তি হলেন জন জেমস গ্রে। স্কটল্যান্ডের এই নাগরিক প্রথম জীবনে কোম্পানির চাকরি নিয়ে ভারতে আসেন। পরবর্তীকালে মালদায় নীল ব্যবসায় যুক্ত হন। ফটোগ্রাফির প্রাথমিক যুগে ক্যালোটাইপ নিয়ে নানান পরীক্ষা করেন গ্রে। রুপার পয়সা অ্যাসিডে গলিয়ে তৈরি করেন প্রয়োজনীয় সিলভার নাইট্রেট, ছবিকে রঙিন করবার জন্য ব্যবহার করেন জলরং। ক্যালোটাইপ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করবার জন্য সহজ কিছু কৌশল নিয়ে গ্রে নিবন্ধ লিখেন, যা এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলের জার্নালে প্রকাশিত হয়। গৌড়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপত্য নিদর্শন তাঁর ছবির মূল বিষয় হলেও তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন বিস্তর। স্থান কিংবা স্থাপনার বাইরে কর্মজীবী মানুষের ছবি তুলেছেন প্রচুর। সেকালে শঙ্খশিল্পের জন্য ঢাকা ছিল বিখ্যাত। ১৮৫০-এর দশকে গ্রের ক্যামেরায় তোলা শঙ্খশিল্পীদের একটি ছবি পাওয়া গেছে। 

বিভিন্ন রেকর্ডে ঢাকায় অবস্থানরত কজন ইউরোপীয়র ফটোগ্রাফি চর্চার উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁদের ভেতর সবার প্রথমে নাম আসে আলেকজান্ডার ফোর্বসের। ব্রিটিশ লাইব্রেরির ইন্ডিয়া অফিস বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা গ্রাহাম শ কাজ করেছেন পূর্ববঙ্গের ছাপাখানা ও প্রকাশনার ইতিহাস নিয়ে। তিনি ১৯৮৮ সালে গবেষক অনুপম হায়াৎয়ের সাথে সাক্ষাৎকারে ঢাকা নিউজের সম্পাদক আলেকজান্ডার ফোর্বসের ফটোগ্রাফি চর্চার কথা উল্লেখ করেন। ফোর্বসের সম্পাদনায় ১৮৫৬ সালের এপ্রিল মাসে বের হয় ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা নিউজ। বিলাতে সে সময়ে ফটো অবলম্বনে লিথোগ্রাফ তৈরি করে পত্রিকায় ছবি ছাপানো শুরু হয়ে গেছে। তবে এমন কোনো সুযোগ এ দেশের পত্রিকায় তখনো তৈরি হয়নি। পত্রিকায় কাজে লাগাতে না পারলেও নিজ উদ্যোগে ফটোগ্রাফি শেখেন ফোর্বস। পেশাদার ফটোগ্রাফারদের তখন আয়রোজগার ছিল ঈর্ষণীয়। এক আলাপে ফোর্বস এই বলে আফসোস করেন যে সাংবাদিকতা না করে ফটোগ্রাফি চর্চা করলে অনেক বেশি আয় করা যেত। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর ঢাকায় অবস্থান শেষে ১৮৫৮ সালে কলকাতা ফিরে যান ফোর্বস। তাঁর তোলা কোনো ফটোর নমুনা অবশ্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকায় অবস্থানরত দ্বিতীয় যে ইউরোপীয় ব্যক্তির ফটোগ্রাফি চর্চার কথা জানা যায়, তিনি ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ উইলিয়াম ব্রেনান্ড। উনিশ শতকে ঢাকায় বসবাসকারী ইউরোপীয়দের মাঝে ব্রেনান্ড একজন উল্লেখযোগ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। সৌভাগ্যবশত তাঁর তোলা কিছু ছবির নমুনা রক্ষা পেয়েছে। ব্রেনান্ড জন্মেছিলেন ল্যাংকাশায়ারে। ১৮৫৬ সালে হুগলি কলেজ থেকে বদলি হয়ে আসেন ঢাকা কলেজে। ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত ব্রেনান্ড ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। গণিতশাস্ত্রে তাঁর দক্ষতা ছিল সর্বজনবিদিত। কলেজের ছাত্ররা ছিল তাঁর দারুণ ভক্ত। অধ্যাপনার পাশাপাশি জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে নানান গবেষণা করতেন ব্রেনান্ড। 'হিন্দু এস্ট্রোনমি' নামে এক বই ছাপানোর জন্য ছাত্ররা চাঁদা সংগ্রহ করে তাঁর হাতে চার হাজার টাকা তুলে দিয়েছিল। ফটোগ্রাফি চর্চাতেও ব্রেনান্ডের শৌখিনতার পরিচয় মেলে। তাঁর ফটোগ্রাফি চর্চার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৫৯ সালে বেঙ্গল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির এক সভায়। স্কুল পরিদর্শক উড্রোকে বৃত্তি পরীক্ষার একটি প্রশ্ন ফটোগ্রাফির মাধ্যমে কপি করবার পরামর্শ দিয়েছিলেন ব্রেনান্ড। ধারণা করা যায় যে ব্রেনান্ড তত দিনে ফটোগ্রাফিতে দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছেন। তাঁর তোলা ঢাকার একটি পথনাটকের ছবি 'হিন্দু এস্ট্রোনমি' বইতে পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরে সোনারগাঁওয়ের বেশ কিছু ছবি তোলেন ব্রেনান্ড। গ্লাস প্লেট নেগেটিভ ব্যবহার করে তোলা ছবিগুলোর মাঝে আছে পানামনগরের প্রধান সড়ক, সেতু, ধ্বংসোন্মুখ দালানকোঠা, কোম্পানির কুঠি ইত্যাদি। 

খাজা আলীমুল্লাহ (?-১৮৫৪)
লনিয়াস ট্রাইপ (১৮২২-১৯০২)

ব্রিটিশ লাইব্রেরির সাবেক প্রধান সংরক্ষক জন ফ্যালকনারের 'Under Indian Skies' বইটিতে ঢাকায় তোলা ব্রেনান্ডের দুটি ছবি স্থান পেয়েছে। মূল ছবির আকৃতি ২৩০×৩৭৫মিমি। ছবি দুটির একটি মিসেস চার্লস হিচেন্সের প্রতিকৃতি। ভদ্রমহিলার স্বামী লেফট্যানেন্ট চার্লস টথাম হিচেন্স ছিলেন একজন প্রকৌশলী, ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল নির্মাণকাজ তদারকির জন্য তিনি ১৮৫৭ সালে ঢাকা আসেন। সিপাহি বিপ্লবের দিনগুলিতে ঢাকায় তার উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্রেনান্ড ঢাকায় আসেন ১৮৫৬ সালে। সুতরাং, ঢাকা অবস্থানের শুরু থেকেই ব্রেনান্ড ছবি তোলায় নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।

 ফ্যালকনারের সংগ্রহে ব্রেনান্ডের তোলা দ্বিতীয় ছবিটির বিষয় ঢাকার ঐতিহাসিক মীর জুমলার কামান-বিবি মরিয়ম। ছবির নিচে হাতে লেখা–'Monster Gun of Dacca'। 

আঠারো শতকে এবং উনিশ শতকে ঢাকায় আগত পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল মোগল আমলে নির্মিত দুটি কামান–'কালে খাঁ' বা 'কালে জমজম' এবং 'বিবি মরিয়ম'। আঠারো শতকের শেষে ৩৬ ফুট দীর্ঘ 'কালে জমজম' কামানটি বুড়িগঙ্গায় তলিয়ে যায়। 'বিবি মরিয়ম' এককালে ছিল সোয়ারিঘাটে বড় কাটরার সামনে। ১৮৪০ সালে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াল্টার আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় মরিয়মকে তুলে এনে চকবাজারে নতুন তৈরি বেদিতে বসান। চক তখন ছিল ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র। কামানটি হয়ে ওঠে চকবাজার তথা ঢাকার প্রধান আকর্ষণ। শৌখিন ফটোগ্রাফারদের জন্য কামান কিংবা এর সাথে ছবি তোলার বিষয়টি ছিল কাক্সিক্ষত। 

১৮৫৯ সালে স্কটল্যান্ডের চিত্রশিল্পী উইলিয়াম সিম্পসন ভারতে আসেন এবং পাঞ্জাব, লক্ষ্ণৌ, কানপুর, মাদ্রাজ, হিমালয় এবং বাংলা অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। সে সময়ে বিভিন্ন ফটোগ্রাফারের তোলা ২৭৬টি ছবি নিয়ে তিনি একটি মূল্যবান সংগ্রহ গড়ে তোলেন, যা বর্তমানে 'উইলিয়াম সিম্পসন অ্যালবাম' নামে খ্যাত। এই অ্যালবামে ঢাকার বেশ কটি ছবি পাওয়া গেছে, যার মাঝে আছে ঢাকার কামান, লালবাগ দুর্গ, শহরের সাধারণ মানুষ, তাদের কুঁড়েঘর ইত্যাদি। এই ছবিগুলোর ফটোগ্রাফারের নাম জানা যায়নি। 

জন জেমস গ্রের তোলা ছবিতে শঙ্খশিল্পী (১৮৫০-৬০ )

এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে ঢাকার বাইরে গোটা পূর্ববঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে তোলা বেশ কিছু ছবির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলে চা চাষের সাথে ইংরেজদের সম্পৃক্ততার কারণে সে এলাকার বেশ কয়টি ছবির দেখা মেলে। এদের অধিকাংশই গ্রুপ ফটোগ্রাফ, অল্প কয়েকটি ছবি পাওয়া যায়, যেখানে চা চাষের বিভিন্ন ধাপকে ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে। এর বাইরে নীলকুঠিতে কর্মরত ইংরেজদেরও বেশ কিছু ছবি পাওয়া যায়। ধারণা করা যায়, এগুলো সবই শৌখিন ফটোগ্রাফারদের তোলা এবং অধিকাংশের পরিচয় অজ্ঞাত। এত সব শৌখিন ফটোগ্রাফারের পাশাপাশি সরকারি জরিপ, মিশনারি কার্যক্রম, মেডিকেল রেকর্ড, এমনকি পুলিশি কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজনে গোটা ভারতবর্ষে সে সময়ে প্রচুর ছবি তোলা হয়।

১৮৬১ সালে গঠিত 'আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া' ভারতের প্রাচীন সব স্থাপনা ও জনপদের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে রেকর্ডের ব্যবস্থা করে। সরকারি আদেশে ও অর্থায়নে তোলা হতে থাকে বিপুলসংখ্যক ছবি। এ ছবি তোলায় অংশ নেন অ্যামেচার থেকে দক্ষ সকল পর্যায়ের ফটোগ্রাফার। পূর্বে উল্লেখিত ফটোগ্রাফার অধ্যক্ষ ব্রেনান্ডের বেশ কিছু ছবি সার্ভের রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯২২ সালের ভেতরে এই 'আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া' প্রায় ৩৫ হাজার ছবির এক অমূল্য সংগ্রহ গড়ে তোলে। এর মাঝে ঢাকার বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনার ছবি, যেমন কামান মরিয়ম, লালবাগের দুর্গ, প্রাচীন মসজিদ, মন্দিরও স্থান পায়। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের পাশাপাশি 'বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া', 'জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া', 'জ্যুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া' প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জরিপ পরিচালিত হয়, যেখানে উপাত্ত রেকর্ডে ফটোগ্রাফির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। উল্লেখিত জরিপগুলোর মতন ব্যাপক আয়োজনে না হলেও উনিশ শতকে ভারতবর্ষের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রামাণ্যকরণে খ্রিষ্টান মিশনারিগুলো এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ধর্মপ্রচার এবং এ-সংক্রান্ত প্রতিকূলতা আলোচনার জন্য বাংলার খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর নিজেদের ভেতর চিঠিপত্র আদান-প্রদানের রীতি আগে থেকেই ছিল। উনিশ শতকে ফটোগ্রাফি আসবার আগে বিভিন্ন স্থাপনা ও জনপদের ছবি এঁকে তারা একে অপরকে পাঠিয়েছেন। পরবর্তীকালে কখনো নিজ ক্যামেরায় আবার কখনো স্থানীয় ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ছবি তুলে তা চিঠিপত্রের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। সাথে যুক্ত করেছেন ছবির সংক্ষিপ্ত বিবরণ। মূলত নিজেদের মিশনারি কার্যক্রমের রেকর্ড রাখবার প্রয়োজনেই তারা ক্যামেরার বহুল ব্যবহার শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে The Church Missionary Gleaner -এর ১৮৮৪ সালের এক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি ক্যামেরার বিজ্ঞাপন উল্লেখ করা যায়। 'Portable Folding Bellows Camera' নামে ক্যামেরাটির বিজ্ঞাপনে লেখা হয়–' The above is suitable for use in hot climates. Messrs. Newton & Co. have supplied several to the various missionary societies.' অপর বেশ কটি প্রতিষ্ঠানের মতন 'Newton & Co.' ও ভারতে ক্যামেরা বাজারজাত করত এবং বোঝা যায় যে খ্রিষ্টান মিশনারিগুলো ছিল তাদের অন্যতম প্রধান ক্রেতা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যামেরা জোগাড় হতো ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দানের টাকায়। 

জন জেমস গ্রে (১৮১৮-১৮৮২)

খুব স্বাভাবিকভাবে মিশনারিদের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা জীবনে প্রথমবারের মতন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিল। ক্যামেরা বিষয়ে তাদের মধ্যে ছিল নানান ভয়ভীতি, যা ছবিগুলোতে তাদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে। সাবলীল ছবির প্রয়োজনে অনেক সময় ফটোগ্রাফার লুকিয়ে থেকেও ছবি তুলেছেন। পূর্ববঙ্গের প্রচুর ছবি মিশনারি হেরাল্ড নামের পত্রিকায় স্থান পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফারের নাম ছিল অনুপস্থিত; দুজনের নাম জানা যায়–রেভারেন্ড টি আর এডওয়ার্ড এবং মিস্টার রাউজ। 

ওয়েট গ্লাস প্লেট পদ্ধতিতে অজানা ফটোগ্রাফারের তোলা ছবিতে ঢাকার লোহার পুল, ১৮৭০
টঙ্গির পুরাতন সেতু; ফটো: ‘জন্সটন অ্যান্ড হফম্যান’, ১৮৮৫

বাংলার পুলিশ অপঘাতে মৃত ব্যক্তির সুরতহাল এবং অপরাধী শনাক্তে ফটোগ্রাফির ব্যবহার শুরু করে এবং বেশ কিছু সফলতাও পায়। বিভিন্ন থানাহাজতে কয়েদিদের রেকর্ড সংরক্ষণে ফটোগ্রাফির চল শুরু হয়। ব্যয়বহুল এই পদ্ধতি কারিগরি কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে অপরাধী শনাক্তকরণে খুব সফল হয়নি। পরবর্তীকালে ১৮৯১ সালে প্রতিকৃতি ও আঙুলের ছাপের যৌথ ব্যবহার অপরাধী শনাক্তে নতুন যুগের সূচনা করে। এসব কার্যক্রমের অধিকাংশই ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক। ঢাকায় এ সময় মেডিকেল কাজে ফটোগ্রাফির এক অভিনব প্রয়োগ দেখা যায়। বাংলার উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় টিকে থাকার যুদ্ধটা ইংরেজদের জন্য ছিল নতুন অভিজ্ঞতা। এ অঞ্চলের অনেক অসুখবিসুখের সাথে তারা একদমই পরিচিত ছিলেন না। ১৮৭২ সালে জেমস ওয়াইজ ঢাকার সিভিল সার্জন নিযুক্ত হন। ঢাকা ও পূর্ববঙ্গের নানান রোগের ধরন রেকর্ড রাখবার জন্য তিনি ফটোগ্রাফির সাহায্য নিতেন। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত এক বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন মুহম্মদ ইউসুফ নামে এক রোগীর কথা, যিনি চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে এসেছিলেন। ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ছিলেন একজন ভিক্ষুক, পুরো শরীরে ছিল বেশ কটি টিউমার। স্থানীয় লোকেরা একে বলত গোদ। শল্যচিকিৎসা নিয়ে ব্যাপক কুসংস্কার ও ভয় কাজ করত তাদের মধ্যে; রোগ ধরা পড়ার পর দ্বিতীয়বার হাসপাতালে আসতে চাইত না কেউ। জেমস ওয়াইজ উল্লেখ করেছেন, 'A message was sent to this man's residence asking him to come into Dacca and have his photograph taken; but it appears that he died in April last.' ওয়াইজ ঢাকায় ছিলেন প্রায় এক দশক। তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও নানান পরিসংখ্যানসমৃদ্ধ বই 'Notes on Races, Castes and Trades of Eastern Bengal'-এ অঞ্চলের ইতিহাস সংরক্ষণে এক অনন্য সংযোজন। 

ছবি তোলার দেশীয় উদ্যোগ 

দেশীয় উদ্যোগে ছবি তোলার ক্ষেত্রে পূর্ববঙ্গে পথিকৃত ঢাকার নওয়াব পরিবার। নওয়াব খাজা আহসানউল্লাহ ছিলেন সংস্কৃতিচর্চায় নিবেদিত প্রাণ, ছবি তোলায় তাঁর দক্ষতা ছিল সর্বজনবিদিত। ১৮৬৬ সালে লেখা ক্লের ডায়েরিতেও নওয়াব আহসানউল্লাহর ফটোগ্রাফি চর্চার উল্লেখ পাওয়া যায়। সে সময়ে তাঁর বয়স উনিশ বছরও পেরোয়নি। এর আগে পূর্ববঙ্গে ছবি তোলার সাথে যাদের সম্পৃক্ততা মেলে, তারা সকলেই ইউরোপীয়। নওয়াব আহসানউল্লাহ সেকালে বাজারের সেরা ক্যামেরা সংগ্রহ করে নিজ হাতে ছবি তুলতেন। তাঁর ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন ঢাকা ভ্রমণে আসা অতিথি থেকে স্থানীয় গণ্যমান্য নাগরিক, পরিবারের সদস্য প্রমুখ। এর বাইরে নানান প্রাকৃতিক ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার ছবিও তিনি নিজ ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। ১৮৮৮ সালের ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঢাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় এক শক্তিশালী টর্নেডো। মাত্র ৩ মিনিট স্থায়ী ঐ ঝড়ের তাণ্ডবে নবনির্মিত নওয়াববাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভবনের ছাদ অনেক স্থানে উড়ে যায়। অন্দরমহলের প্রায় পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ে। টর্নেডোতে ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি ছিল যে নওয়াববাড়ি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে; পুনর্নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত সপরিবারে নওয়াবকে দিলকুশার বাগানবাড়িতে থাকতে হয়। নওয়াব এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নওয়াববাড়ির অনেকগুলো ছবি তোলেন। সকল ছবি আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত হচ্ছে। আহসানউল্লাহর পুত্র খাজা সলিমুল্লাহও ছিলেন ফটোগ্রাফির একজন বড় সমঝদার। ১৮৯০ সালে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার সদস্যতালিকায় যোগ হয় তাঁর নাম।

নওয়াব আহসানউল্লাহর ক্যামেরায় টর্নেডোয় ক্ষতিগ্রস্ত আহসান মঞ্জিল ও সংলগ্ন এলাকা, ১৮৮৮

ঢাকার নওয়াব পরিবারের বাইরে আরও যারা ফটোগ্রাফি চর্চায় স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে আছেন উপমহাদেশে চলচ্চিত্র তৈরির পথিকৃত হীরালাল সেন। হীরালাল সেন জন্মেছিলেন ১৮৬৬ সালে মানিকগঞ্জের বগজুরি গ্রামে তাঁর মাতুলালয়ে। হীরালাল সেন প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। এ সময়ে ফটোগ্রাফির প্রতি তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়। হীরালাল সেনের পিসতুতো ভাই প্রখ্যাত লোকসাহিত্য গবেষক ও সংগ্রাহক দীনেশচন্দ্র সেনের স্মৃতিকথা থেকে: 'হীরালালের প্রতিভা অনন্যসাধারণ ছিল, সে ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ফটোগ্রাফি ও বায়োস্কোপ সাহিত্যের যেরূপ চর্চা করিয়ায়ছিল, সেইরূপ সশিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিরল। সে শুধু ফটোগ্রাফি শিখিবার জন্য ১৪-১৫ হাজার টাকা ব্যয় করিয়াছিল। হীরালালের মতন ফটোগ্রাফ তুলিতে খুব অল্প ব্যক্তিই পারিবেন।' ১৮৮৭ সালে পিতার কলকাতা হাইকোর্টে বদলিসূত্রে হীরালাল চলে যান কলকাতা, সেখানে ছবি তোলার চর্চায় আরও নিয়মিত হন। এ সময় তাঁরা থাকতেন ৮৫/২ মসজিদবাড়ি স্ট্রিটে। সেই বাড়ির চিলেকোঠার একটি কক্ষকে ডার্করুম বানিয়ে ছবি তোলা চালিয়ে গেলেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বিখ্যাত স্টুডিও 'বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড'-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় হীরালালের তোলা ছবি প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে হীরালাল ছিলেন একমাত্র ভারতীয়। 

ব্রেনান্ডের ক্যামেরায় পানামনগর, ১৮৭২

বাঙালি ফটোগ্রাফারদের ছবি তোলা শেখায় ব্যাপক কাজে লাগবে, এ আশায় বই লিখেছিলেন ঢাকার আনন্দকিশোর ঘোষ। ভাওয়ালের জমিদার রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার আনন্দকিশোরের জন্ম ঢাকার কেরানীগঞ্জের পূর্ব্বদী গ্রামে। তিনি ফটোগ্রাফির শিক্ষা নিয়েছিলেন রঘুনাথ দাস ও গৌরচন্দ্র রায়ের কাছে। ভাওয়ালের জমিদার রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার আনন্দকিশোরের জন্ম ঢাকার কেরানীগঞ্জের পূর্ব্বদী গ্রামে। তিনি ফটোগ্রাফির শিক্ষা নিয়েছিলেন রঘুনাথ দাস ও গৌরচন্দ্র রায়ের কাছে। রাজেন্দ্র নারায়ণের সংগ্রহে দেশ-বিদেশের নানা ভাষার ফটোগ্রাফি চর্চার অনেক বই ছিল। সেসব বইয়ের থেকে নানা পদ্ধতি রপ্ত করেছিলেন আনন্দকিশোর, পাশাপাশি কাজে লাগিয়েছিলেন ছবি তোলার অঢেল উপকরণ। জমিদারের সাথে পাঁচ বছর কাজ করেছিলেন তিনি। এরপর নিজ অভিজ্ঞতা থেকে একটি বই লেখেন, বইয়ের নাম 'প্রভাচিত্র বা ফটোগ্রাফি-শিক্ষা'। বইটি ছাপা হয়েছিল ঢাকার 'সুদর্শন যন্ত্র' নামের প্রিন্টারে, ১৮৯৫ সালে। বইটি তিনি উৎসর্গ করেন রাজেন্দ্র নারায়ণকে। তবে আনন্দকিশোরের এই বই প্রকাশের প্রায় এক দশক আগে শরচ্চন্দ্র দেব নামে এক বাঙালি ফটোগ্রাফি শিক্ষা বিষয়ে ধারাবাহিক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। বাংলা ভাষায় ছবি তোলা শেখানোর উদ্যোগ সেটাই প্রথম। শরচ্চন্দ্র দেব ছিলেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ড্রয়িং শিক্ষক। তাঁর লেখা প্রবন্ধ 'আলোকচিত্র' প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮৬ সালে, শিল্প আলোচনার পত্রিকা 'শিল্পপুষ্পাঞ্জলি'তে। উনিশ শতকের শেষ ভাগে বিক্ষিপ্তভাবে এমন আরও কিছু দেশীয় ফটোগ্রাফারের নাম পাওয়া যায়, যারা ফটোগ্রাফি চর্চা, শিক্ষা ও ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, ঢাকার অতীতকে করেছেন লেন্সবন্দী। তবে এ দেশে ফটোগ্রাফির বহুল প্রচলনে ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফারদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। 

নওয়াব খাজা আহসানউল্লাহ (১৮৪৬-১৯০১)

পেশাদার ফটোগ্রাফাররা

নিবন্ধের শেষে এসে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে পাঠকের মনে আসবে, ছবি তোলার প্রাথমিক যুগে কি কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফার ঢাকায় আসেননি? অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে আসায় তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধান শহর ঢাকায় আসবার আগ্রহ বোধ করেছেন এমন ফটোগ্রাফারের সংখ্যা খুবই কম। এদের ভেতর প্রথম যার নাম জানা যায়, তিনি লুই রুশো। ফরাসি লুই মাত্র আঠারো বছর বয়সে ভারতে আসেন, এখানে অবস্থান করেছিলেন প্রায় পাঁচ বছর। ঘুরে ঘুরে গোটা ভারতবর্ষকে লুই নিজ ক্যামেরায় ধারণ করেন। তাঁর ঢাকা ভ্রমণের বিবরণ পাওয়া যায় খব ঞড়ঁৎ ফঁ গড়হফব পত্রিকার এক সংখ্যায়। তবে ঢাকা তাঁকে হতাশ করেছিল। ধ্বংসোন্মুখ কিছু দালানকোঠা ছাড়া এখানে আরে তেমন কিছু ছিল না। তাঁর ক্যামেরায় তোলা ঢাকার কোনো স্থাপনার ছবি পাওয়া যায় না। লুই ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন ১৮৬৮ সালে। উচ্চপদস্থ কোনো ব্যক্তির সফরসঙ্গী হয়ে ঢাকা এসেছেন এমন কয়েকজন ফটোগ্রাফারের নাম জানা যায়। পেশাদার ফটোগ্রাফার হিসেবে এ শহরে প্রথম বড় আকারে কাজ করে কলকাতার স্টুডিও 'জন্সটন অ্যান্ড হফম্যান', তবে তা ১৮৮২ সালে। সে বছরের আগস্ট মাসে বাংলার ছোট লাট স্যার অগাস্টাস রিভারস থমসনের সফরসঙ্গী হয়ে প্রথমবারের মতো ঢাকা আসেন হফম্যান। সেই সফরে ছোট লাটের সরকারি সব অনুষ্ঠানের ছবির পাশাপাশি ঢাকার ল্যান্ডস্কেপ, দালানকোঠা আর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকের পোর্ট্রেট নিজ ক্যামেরায় ধারণ করেন হফম্যান। এই সময়ে তোলা ছবিগুলোর থেকে তেরোটি নিয়ে ১৮৮৫ সালে বের হয় 'Architectural Views of Dacca' নামে ঢাকার আলোকচিত্রের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম। সেবার ঢাকায় বেশ কিছু পোর্ট্রেট তুলেছিলেন হফম্যান; তবে সেসব ছবি অ্যালবাম আকারে বের হয় ১৮৯০ সালের পরে।

ঢাকার স্টুডিওতে ক্যাপের তোলা ছবিতে জনৈক ইউরোপীয় শিশু

উনিশ শতকের শেষে এসে ঢাকায় প্রথম পেশাদার ফটো স্টুডিও চালু হয়। জার্মান ফটোগ্রাফার ফ্রিৎজ ক্যাপের এই স্টুডিওটি ছিল ঢাকার ওয়াইজঘাটে। ঢাকার নওয়াব পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯০০ সাল বা তার অব্যবহিত আগে চালু হওয়া ঐ স্টুডিওর ব্যবসা টিকেছিল ১৯১৫ সাল পর্যন্ত। ফ্রিৎজ ক্যাপের দক্ষ হাতে ক্যামেরাবন্দী হয় ঢাকার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। 'থ্যাকার্স ইন্ডিয়ান ডিরেক্টরি'তে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত ফ্রিৎজ ক্যাপেরটি ছাড়া ঢাকার আর কোনো স্টুডিওর নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। তবে অন্যান্য সূত্রে স্থানীয় মালিকানায় ঢাকায় দুটি স্টুডিওর খোঁজ পাওয়া যায়, সেগুলো হলো চারুচন্দ্র গুহর স্টুডিও এবং পি মুখার্জির বেঙ্গল স্টুডিও। এ দুটিই ব্যবসা শুরু করেছিল ক্যাপের স্টুডিও প্রতিষ্ঠার বেশ কয়েক বছর পরে। বিশ শতকের সে আলাপ বর্তমান নিবন্ধের পরিধির বাইরে। 

Related Topics

টপ নিউজ

উনিশ শতক / আলোকচিত্র / ইজেল / ঢাকা / ফটোগ্রাফি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন: যেভাবে টেলিগ্রামে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ দিতে চাঁদাবাজি করছে আ.লীগ
  • আরও শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট; টানা চার বছর র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি
  • আলিয়া মাদ্রাসার গ্রন্থাগার, বকশিবাজারে লুকিয়ে থাকা এক রত্নভান্ডার!
  • সিডনিতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ, মাহফুজ ও তার ভাই বললেন 'গুজব'
  • টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর নারীর মরদেহ উদ্ধার
  • ৭৩১ কোটি টাকা ঋণখেলাপি: এস আলম-সংশ্লিষ্ট ইউনিটেক্স গ্রুপের ১৩,৭৩২ শতক সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা

Related News

  • যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝ আকাশ থেকে ফেরত এলো বিমানের ঢাকা-দাম্মাম ফ্লাইট
  • উপেন্দ্রকিশোর: বাংলার আলোকচিত্রের এক অগ্রদূত
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা

Most Read

1
বাংলাদেশ

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন: যেভাবে টেলিগ্রামে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ দিতে চাঁদাবাজি করছে আ.লীগ

2
বাংলাদেশ

আরও শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট; টানা চার বছর র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি

3
ফিচার

আলিয়া মাদ্রাসার গ্রন্থাগার, বকশিবাজারে লুকিয়ে থাকা এক রত্নভান্ডার!

4
বাংলাদেশ

সিডনিতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ, মাহফুজ ও তার ভাই বললেন 'গুজব'

5
বাংলাদেশ

টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর নারীর মরদেহ উদ্ধার

6
বাংলাদেশ

৭৩১ কোটি টাকা ঋণখেলাপি: এস আলম-সংশ্লিষ্ট ইউনিটেক্স গ্রুপের ১৩,৭৩২ শতক সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab