সিডনিতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ, মাহফুজ ও তার ভাই বললেন 'গুজব'

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও তার ভাই জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন বনি আমিন নামের এক অনলাইন এক্টিভিস্ট। বিষয়টি নিয়ে এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তবে মাহফুজ ও তার ভাই দুজনই ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
সোমবার (২৮ জুলাই) এক ফেসবুক পোস্টে বনি আমিন দাবি করেন, মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলমের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাংক একাউন্টে সাড়ে ৬ কোটি টাকার একটি লেনদেন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা (অস্ট্রেলিয়ান ট্রানজেকশন রিপোর্টস অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টার) তদন্ত শুরু করেছে। এই অর্থ কিছু লবিং ও ফাইলিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া 'কমিশন ভিত্তিক হিস্যা' বলে দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে তার অভিযোগ, মাহফুজ আলম রাষ্ট্রীয় প্রজেক্টে প্রভাব খাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ভাইয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করছেন।
তবে এমন অভিযোগকে গুজব উল্লেখ করে মাহবুব আলম মাহি সোমবার দিবাগত রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লেখেন, 'একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার একাউন্টে গত ৬ মাসের বিবরণী এখানে দেয়া হল। আমার একাউন্টটি এখনো সচল আছে। বনি আমিন নামক ব্যক্তি ও কিছু মিডিয়ার প্রচারিত তথ্য আসলে মিথ্যা বৈ কিছু নয়। আমি অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার একাউন্টটি ২৩ সাল থেকে খোলা।'
তিনি বলেন, 'আমার ভাই মাহফুজ আলমের পক্ষ থেকে কোন তদবিরের কাজ আমি করিনি। কাউকে সে আজ পর্যন্ত করতেও দেয়নি। আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসায় বাদে আমার কিংবা আমাদের পরিবারের কোন আর্থিক লেনদেনের ইতিহাস নেই। আমাদের পরিবার গত ৩০ বছর ধরে ব্যবসায় জড়িত। আমার বাবা গত ১৬ বছর লীগের নিপীড়নের কারণে ঠিকমত ব্যবসায় করতেই পারেননি।'
নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে মাহবুব আলম মাহি লেখেন, 'আমার বাবার ও মাহফুজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো আমি ও আমার বাবা পরিচালনা করছি। এখানে কোন অস্পষ্টতা নাই। সবই বাংলাদেশের আইন দ্বারা সিদ্ধ এবং পাবলিক ইনফরমেশন।'
তিনি আরও বলেন, 'গত নভেম্বরে দেশে ফিরে আসার পর থেকে অনেক তদবির আসলেও মাহফুজ কোনো কাজই করেনি। বরং, আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের স্পষ্ট নিষেধ করা আছে, যাতে কোনো তদবির তাকে না করা হয়। তার বা আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা তদবির বাণিজ্যের কোনো প্রমাণ আজও কেউ দিতে পারেনি, পারবেও না। কারণ, আমরা করিনি।'
বনি আমিনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে উল্লেখ করে মাহবুব আলম বলেন, 'আমি অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবীদের সাথে কথা বলছি। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নিব।'
টাকা লেনদেনের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও। ভাইয়ের পোস্ট শেয়ার করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে তিনি লেখেন, 'তদবিরের কথা উঠলো যখন, একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন ব্যক্তিকে আমার ভাইয়ার সাথে দেখা করায়। বিটিভির একটা টেন্ডারের কাজ করে দিলে তারা পার্সেন্টেজ দিবে এবং জুলাই নিয়ে কয়েকটা দেশে প্রোগ্রামের জন্য হেল্প করবে। আমি জানার পর এটা নিষেধ করে দেই। সদুদ্দেশ্যে হলেও রাষ্ট্রের আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পরবর্তীতে সে টেন্ডারের কাজ ও স্থগিত হয়।
তিনি বলেন, 'সে ব্যক্তি কনভার্সেশন রেকর্ড করে একজন সাংবাদিককে পাঠায়। সে সাংবাদিক যোগাযোগ করলে আমি বলে দিই, ভাই আমরা একাজ করতে দেইনি। আর, ঐ লোক ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই জুলাইয়ের প্রোগ্রামের কথা বলে একাজ করেছে। উনি আমার কথা বিশ্বাস করে আর রেকর্ডটি পাবলিক করেননি।'
'আজকাল অনেকের লেজকাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। বিভিন্ন দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সব ষড়যন্ত্রই প্রকাশ পাবে', যোগ করেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, 'পুনশ্চঃ আমার নিকৃষ্ট শত্রুরাও গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ করলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ করেনি। বিভিন্ন দলের মহারথীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে তাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। হাজারকোটি টাকার চাইতেও ইজ্জত ও রাষ্ট্রের আমানত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'
কয়েকটি বাক্য নিয়ে অযথাই জলঘোলা হওয়ায় পোস্টটি এডিট করেছেন বলে জানিয়েছেন মাহফুজ আলম। তিনি সবশেষে লেখেন, 'জুলাই কতিপয় লোকের কাছে পলিটিকাল মবিলিটির ল্যডার। একটা না কয়েকটা দলের মহারথীরাই আমার/ আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কিন্তু, সবার এখন গুজববাজ আর সুবিধাবাদী বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।'