জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না

ফোনটা বেজে উঠল ঝনঝন করে। রিসিভার তুলে কানে ঠেকালাম। 'হ্যালো?'
'হ্যালো, ডার্লিং, আমি এমিলি।'
একটু থমকে গেলাম। 'কোন এমিলি?'
কিন্নর কণ্ঠে হেসে উঠল মেয়েটি। 'আরে ধুর! এমিলি—তোমার বউ!'
'দুঃখিত, আপনি মনে হয় ভুল নম্বরে ফোন করেছেন।' ফোনটা রেখে দিলাম। আঙুল কাঁপছিল, রিসিভার ক্রেডলে ঠিকমতো রাখতে একটু বেগ পেতে হলো।
এমিলির কাজিন মিলিসেন্ট একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। 'তোমাকে তো কাগজের মতো সাদা দেখাচ্ছে।'
আড়চোখে আয়নার দিকে তাকালাম ওর কথা শুনে।
'রঙের কথা বলিনি, অ্যালবার্ট' বলল ও। 'তোমার হাবভাবের কথা বলেছি। তোমাকে আতঙ্কিত লাগছে। ভীষণ ধাক্কা খেয়েছ যেন।'
'ফালতু কথা।'
'কে ফোন করেছিল?'
'ভুল নাম্বার।'
কফিতে চুমুক দিল মিলিসেন্ট। 'ভালো কথা, অ্যালবার্ট, গতকাল এমিলিকে শহরে দেখলাম মনে হলো। যদিও জানি, সেটা অসম্ভব।'
'অবশ্যই অসম্ভব। এমিলি এখন স্যান ফ্রান্সিসকোতে।'
'হ্যাঁ, কিন্তু স্যান ফ্রান্সিসকোর ঠিক কোথায়?'
'বলেনি। বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা করতে গেছে।'
'এমিলিকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। আমার কাছ থেকে তেমন কিছুই লুকায় না। স্যান ফ্রান্সিসকোতে ওর কোনো পরিচিত লোক নেই। ফিরবে কবে?'
'বেশ কিছুদিন থাকবে বোধহয়।'
'কতদিন?'
'ঠিক করে বলেনি।'
হাসল মিলিসেন্ট। 'অ্যালবার্ট, তুমি আগেও একবার বিয়ে করেছিলে, তাই না?'
'হ্যাঁ।'
'এমিলির সাথে যখন পরিচয় হয়, তখন তুমি বিপত্নীক ছিলে?'
'ব্যাপারটা তো আমি কখনও গোপন করিনি।'
'তোমার প্রথম স্ত্রী একটা নৌকাডুবিতে মারা যায়, না? পাঁচ বছর আগে? নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে ডুবে যায়?'
'হ্যাঁ। ও একেবারেই সাঁতার জানত না।'
'লাইফ জ্যাকেট, লাইফবেল্ট কিছুই পরা ছিল না?'
'না। ও বলত, ওসব জিনিস পরলে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না।'
'তুমি ছাড়া সেই ঘটনার সময় আর কেউ উপস্থিত ছিল না?'
'না বোধহয়। অন্তত কাউকে এগিয়ে আসতে দেখিনি।'
'ও তোমার জন্য টাকাপয়সা কিছু রেখে গিয়েছিল, অ্যালবার্ট?'
'এসব তোমার মাথা ঘামানোর বিষয় না, মিলিসেন্ট।'
সিনথিয়ার সম্পত্তির মধ্যে ছিল পঞ্চাশ হাজার ডলারের লাইফ ইনস্যুরেন্স—যার একমাত্র উত্তরাধিকারী আমি—চল্লিশ হাজার ডলারের মতো শেয়ার-বন্ড, আর একটা ছোট সেইলবোট।
চামচ দিয়ে কফি নাড়লাম। 'মিলিসেন্ট, ভাবছিলাম তোমাকেই বাড়িটা কিনে নেয়ার প্রথম সুযোগটা দিই।'
'প্রথম সুযোগ?'
'হ্যাঁ। আমরা ঠিক করেছি, বাড়িটা বেচে দেব। দুজনের জন্য বাড়িটা বেশি বড় হয়ে যায়। একটু ছোট কিছু কিনব। হয়তো একটা অ্যাপার্টমেন্ট। ভাবলাম তুমি হয়তো আগ্রহী হবে। একটা ভালো দর-দাম ঠিক হয়ে যাবে নিশ্চিত।'
চোখ পিটপিট করল মেয়েটা। 'এমিলি কখনও এই বাড়ি বেচবে না। এটা ওর ঘর। ওর মুখ থেকে শুনতে হবে আগে।'
'তার দরকার নেই। আমি ওর পাওয়ার অভ অ্যাটর্নি পেয়েছি। ব্যবসার খুঁটিনাটি ও বোঝে না, কিন্তু আমাকে চোখ বুজে বিশ্বাস করে। সবকিছু খোলাখুলি, আইনসিদ্ধ উপায়ে হবে।'
'প্রস্তাবটা ভেবে দেখব।' কাপ নামিয়ে রাখল ও। 'অ্যালবার্ট, এমিলি বা সিনথিয়ার সাথে পরিচয় আগে তুমি কী কাজ করতে?'
'চালিয়ে নিয়েছি কোনোমতে।'
মিলিসেন্ট চলে যাবার পর আমি বাড়ির পেছনের জমিটাতে গেলাম হাঁটাহাঁটি করতে। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম গাছে ছাওয়া সেই ছোট্ট উপত্যকায়। মাটিতে পড়ে থাকা গাছের গুঁড়ির ওপর বসলাম। কী শান্ত এখানটা। শুনশান। বিশ্রাম নেবার আদর্শ জায়গা। গত কয়েকদিন ধরে প্রায়ই আসছি এখানে।
মিলিসেন্ট আর এমিলি। চাচাতো বোন। পাশাপাশি বিস্তৃত জমির ওপর একইরকম দেখতে রাজকীয় দুটো বাড়ি। দেখে মনেই হয় দুজনে বুঝি একইরকম পয়সাঅলা। কিন্তু এমিলিকে বিয়ের পর বুঝলাম, ধারণাটা ভুল।
মিলিসেন্টের সম্পত্তি নিশ্চয় কোটি ছাড়িয়ে গেছে—নইলে তো আর উকিল ও আর্থিক পরামর্শদাতা অ্যামোস এবার্লিকে ফুলটাইম চাকরিতে রাখতে হয় না।
এমিলির অবস্থা একেবারে উল্টো। এই বাড়িটা আর চারপাশের জমিজমা ছাড়া ওর খুব বেশি কিছু নেই। তা-ও আবার ধারকর্জ করে সম্পত্তির দেখভাল করছে যতটা পারে। এখন মাত্র দুজন কাজের লোক রাখতে পারছে ও—ব্রুস্টার দম্পতি। খিটখিটে স্বভাবের মিসেস ব্রুস্টার রান্নাবানান আর ঝাড়পোছের কাজ সামলায়। তার স্বামী আগে ছিল বাটলার, এখন জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব কাজেই লাগানো হয় তাকে। অবশ্য বেশিরভাগ সময় কাজের চেয়ে ঢের বেশি হাঁকডাকই করে লোকটা। অথচ এই বাড়িতে অন্তত দুজন মালী দরকার দেখভালের জন্যে।
মিলিসেন্ট আর এমিলি। চাচাতো বোন। অথচ দুজনের মধ্যে কোনো মিলই নেই। না চেহারায়, না স্বভাবে।
মিলিসেন্ট লম্বা, ছিপছিপে গড়নের, দৃঢ়চেতা। নিজেকে বড় বুদ্ধিমতী ভাবে। আর সেই বুদ্ধিমত্তার দাপটে সবকিছুর ওপর, সবার ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে চায়। এমিলিও আছে তার নিয়ন্ত্রণের তালিকায়। একটা ব্যাপার খুব স্পষ্ট বুঝি। আমি যে এমিলিকে ওর খপ্পর থেকে বের করে এনেছি, এই ব্যাপারটা ও এখনও মানতে পারে না।
এমিলি। গড়পড়তা উচ্চতার চেয়ে খাটো। খানিক মোটা—পঁচিশ পাউন্ডের মতো বাড়তি ওজন। শান্ত, হাসিখুশি স্বভাবে। তাক লাগিয়ে দেয়া বুদ্ধিমত্তা নেই। সহজে মানুষের কথায় পটে যায়। তবে অবাক করার মতো একরোখা জেদ আছে ওর, একবার কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে আর টলে না।
বাড়ি ফিরে দেখি অ্যামোস এবার্লি বসে আছেন আমার অপেক্ষায়। বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই, পরনে হালকা ধূসর রঙের স্যুট।
'এমিলি কোথায়?' জানতে চাইলেন ভদ্রলোক।
'ওকল্যান্ডে।' উত্তরটা নিয়ে খানিকক্ষণ ভাবলেন তিনি।
'মানে স্যান ফ্রান্সিসকো। ওকল্যান্ড তো ঠিক ওপাশেই, সেতুর ওপারে। আসলে জায়গা দুটোকে আমি আলাদা করে দেখি না।'
ভুরু কুঁচকালেন উকিল। 'স্যান ফ্রান্সিসকোতে? কিন্তু আজ সকালেই তো শহরে দেখলাম ওকে। ভালোই দেখাচ্ছিল।'
'অসম্ভব।'
'ওকে ভালো দেখাচ্ছিল, এটা অসম্ভব?'
'ওকে দেখা অসম্ভব। ও তো এখনও স্যান ফ্রান্সিসকোতেই আছে।'
ড্রিঙ্কে চুমুক দিলেন ভদ্রলোক। 'এমিলিকে দেখলে চিনতে পারব আমি। ওর পরনে ছিল হালকা বেগুনি একটা জামা, বেল্টঅলা। গলায় এক ধরনের হালকা নীল স্কার্ফ।'
'ভুল দেখেছেন। তাছাড়া আজকালকার মেয়েরা এরকম হালকা নীল রঙের স্কার্ফ পরে না।'
'এমিলি পরেছিল। কে জানে, হয়তো তোমাকে না জানিয়ে চুপি চুপি ফিরে এসেছে। হতে পারে না এমন?'
'না।'
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাকে নিরিখ করলেন এবার্লি। 'অ্যালবার্ট, তুমি অসুস্থ নাকি? হাত তো কাঁপছে দেখছি।'
'হালকা ফ্লু,' হড়বড় করে বললাম। 'গা ম্যাজম্যাজ করে। তা আপনি কি কোনো দরকারে এসেছিলেন, অ্যামোস?'
'এমনিই। এদিকেই কাজ ছিল, ভাবলাম এমিলির সাথে দেখা করে যাই।'
'বললামই তো, ও নেই।'
'ঠিক আছে, অ্যালবার্ট,' গলা নরম করে বললেন উকিল। 'তোমাকে সন্দেহ করব কেন? তুমি যদি বলো ও নেই, তাহলে নেই।'
মঙ্গলবার আর বিষ্যুদবার আমি বাজার করি। যখন বুঝলাম মিসেস ব্রুস্টারের অঙ্কে গণ্ডগোল আছে, তখন থেকেই এই দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছি।
বরাবরের মতো সেদিনও সুপারমার্কেটের লটে গাড়ি পার্ক করে তালা মেরে ঘুরে দাঁড়াতেই চোখ গেল রাস্তার ওপারে। হালকা পৃথুলা গড়নের, বেঁটেখাটো এক মহিলা হাঁটছে ব্লকের একদম শেষ মাথা ধরে। পরনে বেগুনি জামা, গলায় হালকা নীল স্কার্ফ। গত দশ দিনের মধ্যে এই নিয়ে চারবার দেখলাম তাকে।
রাস্তা পার হয়ে ওদিকে ছুটে গেলাম আমি। মহিলা তখনও আমার চেয়ে অন্তত সত্তর গজ সামনে। ঠিক সেই সময় মোড় ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেল সে।
প্রাণপণে মহিলাকে চেঁচিয়ে ডাকার ইচ্ছেটা দমালাম। হালকা দৌড়ে এগোলাম।
রাস্তার মোড়ে পৌঁছে দেখি, কোথাও নেই সে। অন্তত এক ডজন দোকানের দরজা খোলা আশপাশে, যেকোনো একটায় ঢুকে পড়তে পারে।
ওখানে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছি, এমন সময় একটা গাড়ি এসে থামল রাস্তার ধারে। মিলিসেন্ট।
'অ্যালবার্ট, তুমি?'
'হ্যাঁ,' নিরাসক্ত কণ্ঠে জবাব দিলাম।
'কী করছ? তোমাকে দৌড়াতে দেখলাম—আগে তো কখনও দৌড়াতে দেখিনি।'
'দৌড়াইনি। একটু জগিং করছিলাম; রক্ত চলাচল ভালো হয়। শোনোনি, হালকা জগিং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?'
ওকে বিদায় জানিয়ে ফিরে চললাম সুপারমার্কেটের দিকে।
পরদিন সকালে ছোট উপত্যকায় হাঁটাহাঁটি করে বাড়ি ফিরে দেখি, মিলিসেন্ট বসে আছে ড্রইংরুমে। কফি ঢালছে নিজের হাতে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, যেন নিজের বাড়িতেই আছে। এই অভ্যাস ওর বহু দিনের, এমিলি যখন একা থাকত, তখন থেকেই।
'ওপরতলায় উঠে এমিলির ওয়ারড্রোবটা একটু ঘেঁটে এলাম,' জানাল মিলিসেন্ট। 'কাপড়চোপড় তো কম দেখলাম না।'
'কম থাকবে কেন? চোর ঢুকেছিল নাকি বাড়িতে? আর তুমি কি ওর ওয়ারড্রবের সব জামাকাপড়ের হিসেব রাখো?'
'পুরোপুরি না হলেও, মোটামুটি রাখি বলা যা। আর জামাকাপড় তো তেমন কিছুই কমেনি মনে হচ্ছে। আবার বলে বোসো না, এমিলি কোনো জিনিসপত্র না নিয়েই স্যান ফ্রান্সিসকো গেছে।'
'জিনিসপত্র নিয়েছে। তবে খুব বেশি নেয়নি।'
'যাওয়ার সময় ওর পরনে কী ছিল?'
একই প্রশ্ন আগেও করেছে মিলিসেন্ট। এবার বললাম, 'মনে নেই।'
ভুরু উঁচিয়ে ফেলল মেয়েটা। 'মনে নেই?' হাতের কাপটা নামিয়ে রাখল টেবিলে। 'অ্যালবার্ট, আজ রাতে আমার বাসায় প্রেতচক্রের আয়োজন করছি। ভাবলাম, তুমি যদি আসতে চাও।'
'আমি ওসব প্রেতচক্রে-টক্রে যাব না।'
'মারা যাওয়া প্রিয়জনদের সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই তোমার?'
'আমি বিশ্বাস করি, মৃতদের শান্তিতে থাকতে দেয়া উচিত। দিন-দুনিয়ার ছোটখাটো খবর নিয়ে ওদের বিরক্ত করার মানে হয় না।'
'তোমার প্রথম স্ত্রীর সাথেও কথা বলতে চাও না?'
'সিনথিয়ার সাথে কেন কথা বলতে চাইব? আমার তো ওর সাথে কোনো আলাপ বাকি নেই।'
'কিন্তু কে জানে, ওর হয়তো কিছু বলার আছে।'
কপাল মুছলাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে। 'তোমার এই ফালতু প্রেতচক্রে যাব না আমি, ব্যস।'
সেসিন রাতে শুতে যাবার আগে এমিলির ওয়ারড্রোব খুলে দেখলাম। এত জামাকাপড়—কী করব এসব দিয়ে? কোনো দরিদ্রদের সংগঠনে দান করে দেয়া যায়।
রাত দুটোর দিকে ঘুম ভেঙে গেল, সংগীতের শব্দে।
উৎকর্ণ হয়ে শুনতে লাগলাম আমি। হ্যাঁ, স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, এমিলির প্রিয় সুর বাজছে নিচতলার পিয়ানোতে।
পায়ে জুতো গলিয়ে, ড্রেসিং গাউন গায়ে চাপালাম। হলঘরে এসে সুইচ টিপে আলো জ্বালালাম।
সিঁড়ি অর্ধেক নামতেই থেমে গেল পিয়ানোর সুর। নিচে নেমে এসে দাঁড়ালাম মিউজিক রুমের দরজার সামনে। কানে ঠেকালাম একটা দরজায়। পিনপতন নিস্তব্ধতা। ধীরে ধীরে দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম ভেতরে।
কেউ নেই পিয়ানোর সামনে। তবে পিয়ানোর ওপর রাখা দুটো মোমদানিতে মোম জ্বলছে। ঘরটা ঠান্ডা। অস্বাভাবিক ঠান্ডা।
টেরেসে যাওয়ার ফ্রেঞ্চ ডোরগুলো আধখোলা পেলাম। টান মেরে লাগিয়ে দিলাম চট করে। ফুঁ দিয়ে মোম দুটো নিভিয়ে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে।
সিঁড়ির মাথায় দেখা হলো ব্রুস্টারের সঙ্গে।
'পিয়ানো বাজাতে শুনলাম যেন কাউকে, স্যার,' বলল লোকটা। 'আপনি বাজাচ্ছিলেন?'
পরনের গাউনে হাত মুছলাম। 'হ্যাঁ।'
'আপনি যে পিয়ানো বাজাতে জানেন, সেটা তো জানতাম না, স্যার।'
'ব্রুস্টার, আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানো না তুমি। আর কখনও জানবেও না।'
ঘরে ফিরে আধঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর ধীরে জামা পরলাম। বাইরে চাঁদের আলো ঝলমল করছে। সেই আলোতে নিঃশব্দে এগিয়ে গেলাম বাগানের টুল-শেডের দিকে। দরজার হুড়কো খুলে ঢুকে পড়লাম ভেতরে। লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম চারপাশটা—বাগান করার সরঞ্জামে ঠাসা। চোখ চলে গেল দেয়ালের র্যাকে টাঙানো যন্ত্রগুলোর দিকে।
লম্বা হাতললা একটা সেচের কোদাল নামিয়ে আনলাম র্যাক থেকে। ওটার ডগায় লেগে থাকা শুকনো মাটি ঝেড়ে ফেললাম টোকা দিয়ে। তারপর কোদলাটা কাঁধে ফেলে হাঁটা ধরলাম ছোট্ট উপত্যকার দিকে।
প্রায় পৌঁছে গেছি, এমন সময় হুট করে থেমে গেলাম। লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বুক চিরে। মাথা নাড়লাম ধীরে ধীরে, তারপর ফিরে এলাম টুল-শেডে। কোদালটা তুলে রাখলাম আগের জায়গায়। তারপর আলো নিভিয়ে ঘরে ফিরে বিছানায় উঠে পড়লাম।
পরদিন সকালে নাশতা করতে বসেছি, এমন সময় হাজির মিলিসেন্ট।
'আজ কেমন আছ, অ্যালবার্ট?'
'ভালোই।'
টেবিলে বসে পড়ল সে। মিসেস ব্রুস্টার এসে কফির কাপ ধরিয়ে দিল ওর হাতে।
সকালের ডাকও নিয়ে এল মিসেস ব্রুস্টার। কিছু বিজ্ঞাপনী লিফলেট, ক'টা বিল, আর একটা ছোট নীল খাম—আমার নামে।
খামটা তুলে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখলাম। হাতের লেখাটা চেনা চেনা লাগল। গন্ধটাও চেনা। পোস্টমার্ক আমাদের শহরের।
খামটা ছিঁড়ে ভেতর থেকে বের করলাম একটামাত্র পৃষ্ঠা।
ডিয়ার অ্যালবার্ট,
কল্পনাও করতে পারবে না, তোমাকে কতটা মিস করছি। খুব শিগগিরই বাড়ি ফিরছি, অ্যালবার্ট। খুব শিগগির।
— এমিলি
চিঠিখানা খামে ঢুকিয়ে পকেটে রেখে দিলাম।
'কী খবর?' জানতে চাইল মিলিসেন্ট।
'কীসের কী খবর?'
'খামের তো এমিলির হাতের লেখা দেখলাম মনে হলো। ও কবে ফিরবে, লিখেছে কিছু?'
'ওটা এমিলির হাতের লেখা না। শিকাগোতে আমার এক খালা আছেন—ওনার চিঠি।'
'শিকাগোতে তোমার খালা আছে, জানতাম না তো।'
'এখন জানলে। মিলিসেন্ট, নিশ্চিন্ত হও, শিকাগোতে সত্যিই একজন খালা আছে আমার।'
সেদিন রাতে বিছানায় শোবার পর অনেকক্ষণ এপাশ-ওপাশ করেও ঘুম এল না। হঠাৎই বেজে উঠল বেডসাইড টেলিফোন। রিসিভার তুললাম।
'হ্যালো, ডার্লিং, আমি এমিলি।'
পাঁচ সেকেন্ড চুপ করে রইলাম। 'তুমি এমিলি নও। তুমি ধাপ্পাবাজ।'
'অ্যালবার্ট, এমন করছ কেন? আমি তো এমিলিই। চিনছ না?'
'তুমি এমিলি হতে পারো না।'
'কেন পারি না?'
'কারণৃ'
'কী কারণ?'
'তুমি কোথা থেকে ফোন করছ?'
হেসে উঠল সে। 'জানলে চমকে যাবে।'
'তুমি এমিলি না। আমি জানি ও কোথায়। এত রাতে শুধু হ্যালো বলার জন্যে ও ফোন করতে পারবে না—করবে না। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে।'
'তোমার ধারণা, আমি কোথায় আছি সেটা তুমি জানো, অ্যালবার্ট? না, এখন আর ওখানে নেই আমি। খুব অস্বস্তিকর ছিল জায়গাটা। খুব। তাই চলে এসেছি, অ্যালবার্ট। একেবারে চলে এসেছি।'
গলা চড়ালাম এবার। 'বাজে বকো না। আমি প্রমাণ করতে পারব, তুমি এখনও ওখানেই আছ।'
হেসে উঠল সে। 'প্রমাণ? এমন একটা ব্যাপার কীভাবে প্রমাণ করবে, অ্যালবার্ট? গুড নাইট।' ফোনটা কেটে গেল।
বিছানা থেকে নেমে জামা পরলাম। নিচতলায় নেমে ঢুকে গেলাম স্টাডিতে। এক গ্লাস ড্রিঙ্ক বানিয়ে আস্তে আস্তে খেয়ে ফেললাম ওটা। তারপর আরেক গ্লাস।
ড্রিঙ্ক শেষে ঘড়ি দেখলাম—রাত প্রায় একটা। একটা হালকা জ্যাকেট গায়ে চাপালাম, বাইরে রাতের হিম পড়েছে। বাগানের শেডে গিয়ে দরজা খুললাম, আলো জ্বালালাম। লম্বা হাতলের কোদালটা নামিয়ে নিলাম র্যাক থেকে।
এবার আর পিছপা হলাম না, সোজা চলে গেলাম ছোট উপত্যকা পর্যন্ত। একটা পুরনো ওকের গাছের পাশে থামলাম। চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে সবকিছু।
পা ফেলে কদম গুনতে শুরু করলাম—'এক, দুই, তিন, চার...' ষোলোয় এসে থামলাম। ডানদিকে নব্বই ডিগ্রি ঘুরে এগোলাম আরও আঠারো পা।
মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম এবার।
পাঁচ মিনিটও কাটেনি, আচমকা কানে এক তীক্ষ্ণ হুইসেলের শব্দ। মুহূর্তে আলোয় ঝলমলিয়ে উঠল চারদিক। ডজনখানেক টর্চলাইট তাক করা আমার দিকে। অনেকগুলো কণ্ঠ ভেসে আসছে একসাথে।
চোখে হাত ঠেকিয়ে আলো ঠেকালাম। মিলিসেন্টকে দেখতে পেলাম সেই ফাঁকে।
'কী হচ্ছে এসব?' গলা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
দাঁত বের করে হেসে উঠল মেয়েটা। 'তুমি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলে এমিলি সত্যিই মরেছে কি না। তাই না, অ্যালবার্ট? আর নিশ্চিত হওয়ার একমাত্র উপায় ওর কবর খুঁড়ে দেখা।'
সিধে হয়ে দাঁড়ালাম। 'আমি ইন্ডিয়ানদের তিরের ফলা খুঁজছিলাম। প্রাচীন কুসংস্কার আছে, চাঁদের আলোয় পাওয়া ইন্ডিয়ান তির সৌভাগ্য নিয়ে আসে।'
আমার চারপাশে জড়ো হওয়া মানুষগুলোর পরিচয় দিল মিলিসেন্ট। 'যেদিন থেকে সন্দেহ করতে শুরু করলাম এমিলির ভাগ্যে কী ঘটেছে, সেদিন থেকেই তুমি চব্বিশ ঘণ্টা প্রাইভেট ডিটেকটিভদের নজরদারিতে আছ।'
মানুষগুলোর দিকে ইশারা করল ও। 'ইনি মিস পিটার্স। দারুণ অনুকরণ করতে পারেন; ফোনে ওঁর কণ্ঠই শুনেছিলে। পিয়ানোও বাজাতে পারেন। আর উনি মিসেস ম্যাকমিলান। এমিলির হাতের লেখা হুবহু নকল করেছেন; উনিই ওই বেগুনি জামা আর নীল স্কার্ফ পরা মহিলা।'
মিলিসেন্টের বাড়ির প্রায় সব কাজের লোকই বোধহয় হাজির। অ্যামোস এবার্লিকেও দেখতে পেলাম। ব্রুস্টার দম্পতিও হাজির হয়ে গেছে দেখছি—কালই ওদের চাকরি খেয়ে দেব।
গোয়েন্দারা কোদাল আর বেলচা নিয়ে এসেছে সঙ্গে। দুজন নেমে পড়ল আমার খোঁড়া অগভীর গর্তে। ফের খোঁড়া শুরু হলো।
'দেখুন,' রাগী গলায় বলে উঠলাম, 'কাজটা করার কোনো অধিকার আপনাদের নেই। জায়গাটা আমার। অন্তত একটা সার্চ ওয়ারেন্ট লাগবে আপনাদের।'
আমার কথায় মজা পেল মিলিসেন্ট। 'এটা তোমার জায়গা না, অ্যালবার্ট। আমার। তোমাদের জমির সীমানা ছয় কদম পেছনে ফেলে এসেছ।'
কপাল মুছলাম। 'আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।'
'তোমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অ্যালবার্ট।'
'বাজে বোকো না তো, মিলিসেন্ট। এখানে কোনো ইউনিফর্ম পরা পুলিশ নেই। আর এই স্টেটে প্রাইভেট ডিটেকটিভদের কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই।'
মুহূর্তের জন্য থমকে গেল যেন ও; কিন্তু পরক্ষণেই আশার আলো জ্বলে উঠল চোখে। 'সিটিজেনস অ্যারেস্ট, অ্যালবার্ট। একজন নাগরিক আরেকজন নাগরিককে গ্রেপ্তার করতে পারে। আর আমি তো নাগরিক। তোমাকে সিটিজেনস অ্যারেস্ট করা হলো।'
চেইনে ঝোলানো বাঁশিটা ঘোরাল সে। 'আমরা জানতাম, তোমাকে আমরা নড়িয়ে দিয়েছি, অ্যালবার্ট। যেকোনো মুহূর্তে ব্যাগে পেয়ে যাব তোমাকে। কাল রাতেই তো ওর কবর খুঁড়তে যাচ্ছিলে, তাই না? কিন্তু শেষ মুহূর্তে মন বদলে ফেললে। ভালোই করেছিলে। কাল রাতে এত সাক্ষী জোগাড় করতে পারতাম না। আজ আমরা তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছিলাম।'
মিনিট পনেরোর খোঁড়ার পর বিশ্রামের জন্য থামল গোয়েন্দারা। একজন চোখ কুঁচকে বলল, 'মাটি দেখে মনে হচ্ছে, এখানে কোনোদিন কিছু পোঁতা হয়নি।'
ফের কাজ শুরু করল তারা। এবার প্রায় ছয় ফুট খোঁড়ার পর থামল। একজন কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠে পড়ল সদ্য খোঁড়া গর্তটা থেকে। 'দুত্তোর, কিচ্ছু নেই এখানে। শুধু একটা ইন্ডিয়ান তিরের ফলা পেয়েছি।'
গত আধঘণ্টা ধরে মিলিসেন্ট একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।
হেসে ফেললাম আমি। 'একটা কথা বলো তো, মিলিসেন্ট। তোমার কেন মনে হলো, আমি এমিলিকে খুন করে এখানে পুঁতে রেখেছি?'
ওদের ওখানে রেখে বাড়িতে ফিরে এলাম।
কবে প্রথম বুঝেছিলাম মিলিসেন্ট আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছে, চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি আর ফাঁদ পাতার খেলা শুরু করেছে? প্রায় শুরু থেকেই বোধহয়। এসব একটু তাড়াতাড়িই ধরতে পারি আমি।
কী চেয়েছিল মিলিসেন্ট? হয়তো ভেবেছিল, আতঙ্কে একসময় আমি ভেঙে পড়ব, মুখ ফসকে স্বীকার করে বসব এমিলিকে খুন করার কথা।
সত্যি বলতে কী, ওর এই কৌশল যে কাজ করবে, এমনটা আমি কখনোই আশা করিনি। বরং যখন বুঝলাম মিলিসেন্ট কী খেলায় নেমেছে, আমিও নামলাম খেলায়।
নাটকের শুরুটা হয়তো মিলিসেন্ট করেছিল, কিন্তু ওকে ছোট্ট উপত্যকা পর্যন্ত টেনে এনেছি আমি।
একেক সময় মনে হতো, একটু বেশি বেশিই করে ফেলছি বোধহয়। এই যেমন, ঘাম না হলেও কপাল মোছা, বেগুনি জামার মেয়েটার পেছনে ছোটাছুটি। কিন্তু আবার ভাবি, আমার আসলে এমন আচরণ করাই স্বাভাবিক ছিল। আগ্রহী টিকটিকিদের হতাশ করা ঠিক হতো না।
চেহারায় দুশ্চিন্তা ফুটিয়ে উপত্যকার দিকে যাওয়ার ব্যাপারটাও ভালো কৌশল ছিল। আর আগের রাতের কোদাল কাঁধে মাঝপথ অবধি গিয়ে ফিরে আসাটাও ছিল পরিকল্পনার অংশ—শেষ দৃশ্যের অবতারণা করার আগে আবহ তৈরির জন্য করা কাজটা। চব্বিশ ঘণ্টা পরের নাটকটা যেন ঠিকমতো জমে ওঠে।
গুনে দেখেছি, মিলিসেন্ট বাদে সাক্ষীর সংখ্যা ছিল আঠারো।
ভাবলাম, কীসের মামলা দেয়া যায়। চরিত্র হনন? মিথ্যা অপবাদ? ষড়যন্ত্র? ভুয়া গ্রেপ্তার? আরও বেশ ক'টা অভিযোগ আনা যাবে বোধহয়।
বিশাল, অবাস্তব একটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ মামলার হুমকি তো আমি দেবই। সেটাই তো হালফ্যাশন, তাই না? বিশ মিলিয়ন ডলার? টাকার অঙ্কটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ বিষয়টা আদৌ আদালত পর্যন্ত গড়াবে কি না, সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
না, এই ঘটনা লোকজানাজানি হলে মিলিসেন্ট সহ্য করতে পারবে না। গোটা দুনিয়াকে নিজের এই হাস্যকর ব্যর্থতার কথা জানতে দেবে না ও। সমাজের চোখে হাসির খোরাক হওয়া মেনে নেয়ার মতো মেয়েই নয় মিলিসেন্ট।
তাই ও চুপচাপ পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। দু-চারজন সাক্ষীকে আলাদা করে কিছু পয়সা খাইয়ে মুখ বন্ধ করতে চাইবে। কিন্তু আঠারোটা আলাদা মানুষের মুখ একসাথে বন্ধ রাখার আশা কি আদতে করা যায়? খুব সম্ভব, না। তবে গুজব যখন চাউর হয়ে যাবে, তখন মিলিসেন্টের জন্যে সবচেয়ে বড় সাহায্য হবে যদি নাটকের মূল চরিত্র ওর সাথে গলা মিলিয়ে বলে যে এমন কোনো ঘটনা ঘটেইনি।
আর মিলিসেন্টের পক্ষে কাজটা আমি করব। তার জন্যে বিনিময় মূল্য নেব। মোটা অঙ্কের বিনিময় মূল্য।
সপ্তাহ শেষে ফোনটা বেজে উঠল।
'আমি এমিলি। বাড়ি ফিরছি, ডার্লিং।'
'দারুণ।'
'আমাকে কেউ মিস করেছে?'
'তুমি ভাবতেও পারবে না।'
'এই চার সপ্তায় তুমি কাউকে কিছু বলোনি তো, অ্যালবার্ট? বিশেষ করে মিলিসেন্টকে?'
'বিশেষ করে মিলিসেন্টকে কিচ্ছুটি বলিনি।'
'ওকে কী বলেছ?'
'বলেছি, তুমি স্যান ফ্রান্সিসকোতে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেছ।'
'আহা! স্যান ফ্রান্সিসকোতে তো আমার পরিচিত কেউ নেই। তোমার কি মনে হয়, ওর সন্দেহ হয়েছে?'
'সামান্য সন্দেহ হয়েছে হয়তো।'
'ও ভাবে আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাশক্তি নেই। কিন্তু আছে, অ্যালবার্ট। সত্যিই আছে। তবু ভেবেছিলাম, শেষপর্যন্ত যদি থাকতে না পারি, তাহলে ও আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। ব্যাপারটা আমার পছন্দ হতো না। জানো, এই হেলথ ফার্মে আসাটা খানিকটা প্রতারণাই হয়ে গেল। মানে, খাবারদাবার তো সব ওরাই নিয়ন্ত্রণ করে। তাই চাইলেও নিজের পছন্দের কিছু করার ছিল না। কিন্তু এখানে না এলেও আমি কাজটা ঠিক ঠিক করতাম। তাছাড়া চাইলে যেকোনো সময় বেরিয়ে আসতে পারতাম এখান থেকে। কিন্তু আমি থেকে গেছি।'
'তোমার ইচ্ছাশক্তি দুর্দান্ত, এমিলি।'
'আমি তিরিশ পাউন্ড ওজন ঝরিয়েছি, অ্যালবার্ট! এই ওজন আর বাড়বে না। বাজি ধরে বলতে পারি—এখন আমি সিনথিয়ার মতোই ছিপছিপে।'
দীর্ঘশ্বাস ফেললাম একটা। আমার প্রথম স্ত্রীর সাথে এই তুলনাটা করার কোনো দরকারই ছিল না এমিলির। এই তুলনা করার অভ্যাসটা ওর গেলই না। সিনথিয়া আর এমিলি সম্পূর্ণ আলাদা দুজন মানুষ। আমার মনে ওদের দুজনের জন্যে ভালোবাসাটাও তাই আলাদা, নিরাপদ।
বেচারি সিনথিয়া। জেদ করে একাই উঠেছিল সেই ছোট্ট নৌকায়। আমি তখন ইয়ট ক্লাবের জানালার পাশে বসে মার্টিনিতে চুমুক দিচ্ছি ধূসর, ঠান্ডা বন্দর দেখতে দেখতে।
সেদিন আবহাওয়াটা বিশেষ সুবিধের ছিল না। তাই পানিতে অন্য কোনো নৌকাও ছিল না বললেই চলে। হঠাৎ এক দমকা হাওয়া এল। আমি দেখলাম, নৌকাটা বিপজ্জনকভাবে কাত হয়ে গেল, আর সিনথিয়া ছিটকে পড়ল পানিতে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে জানালাম। কিন্তু যতক্ষণে ওর কাছে পৌঁছুলাম, অনেক দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে।
ফোনের ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল এমিলি। 'আমার পুরো ওয়ারড্রোবই বোধহয় পাল্টাতে হবে। এই খরচের ধাক্কাটা আমরা সামলাতে পারব তো, অ্যালবার্ট?'
হ্যাঁ, এখন পারব। কাজটা করার পরও বাড়তি বেশ কিছু টাকা থেকে যাবে হাতে।