সোভিয়েতরা কীভাবে হেমিংওয়েকে গুপ্তচর বানাল

হেমিংওয়ে নামটি উচ্চারণ করলেই আমাদের মনে পড়ে যায় সমুদ্রের বুক চিরে এগিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ জেলের ছবি। 'দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি'-এর সান্তিয়াগো। নিরন্তর পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়েও যিনি হাল ছাড়েন না। টানা নিরাশার পর হঠাৎ যখন তার বড় শিকার আসে, তখন শুরু হয় এক অসাধারণ সংগ্রাম। সাগরের গহিনে হাঙরেরা যখন সেই শিকার কেড়ে নিতে আসে, তখনো তিনি মরিয়া হয়ে লড়ে যান। হেমিংওয়ের কলমে সান্তিয়াগো কেবল এক জেলে নন, বরং সমগ্র মানবজাতির সংগ্রামী চেতনার প্রতিচ্ছবি। হেমিংওয়ে সেখানে লিখেছিলেন, 'মানুষ ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু পরাজিত নয়।'
এই বাক্য শুধু সমুদ্রের বুড়ো জেলের নয়; ইতিহাসের প্রতিটি প্রান্তরে, প্রতিটি যুগে, প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠে এরই প্রতিধ্বনি। এই উক্তি শুধু সাহিত্যের পাতায় নয়, বাস্তবের দুনিয়ায়ও আজ অনুরণিত হয়। বিশেষত যখন আমরা দেখি গাজার রক্তাক্ত ভূমি। যেখানে নিরীহ মানুষ ইহুদিবাদী ইসরায়েলি আগ্রাসনের গণহত্যার শিকার হচ্ছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারপরও তারা আত্মসমর্পণ করছে না। হেমিংওয়ের সেই বৃদ্ধ জেলের মতোই, গাজার মানুষও ইহুদিবাদী হাঙরদের বিরুদ্ধে টিকে থাকার সংগ্রামে অনমনীয়। ধ্বংসের ভেতর থেকেও তারা ঘোষণা করছে, তারা হয়তো পিষ্ট হচ্ছে, কিন্তু পরাজিত নয়। হেমিংওয়ের সাহিত্যজীবন তাই কেবল যুদ্ধ আর প্রকৃতির গল্প নয়, বরং মানুষের অদম্য জেদের দলিল।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, মানবতাবাদী এই লেখক, যিনি কলমের আঘাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন, জীবনের একপর্যায়ে হয়ে উঠেছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার চর। এবং তা কারও চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে নয়, বরং নিজের ইচ্ছায়। সাহিত্য আর সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটি এক চমকপ্রদ অধ্যায়। নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত রবার্ট রর্কের নিবন্ধ 'হাও দ্য সোভিয়েটস ওয়ান্স রিক্রুটেড আর্নেস্ট হেমিংওয়ে টু বি আ স্পাই'-এ বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, কীভাবে বিশ্বখ্যাত এই ঔপন্যাসিক সোভিয়েত গোয়েন্দাদের নজরে পড়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত গুপ্তচরবৃত্তির খেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
১৯৩৫ সালের এক ভয়াবহ সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে ফ্লোরিডা কিজ এলাকায় বহু মার্কিন সাবেক সেনা বা ভেটেরান নিহত হন। তখন 'দ্য সান অলসো রাইজেস' এবং 'আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস'-এর মতো বইয়ের বেস্টসেলার লেখক ও সাংবাদিককে নিয়ে তখন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে একটি তীব্র প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এই লেখাটিই তাকে সোভিয়েত গোয়েন্দাদের নজরে নিয়ে আসে।
রুজভেল্ট প্রশাসন ওই হতভাগা সাবেক সেনাদের নিয়োগ করেছিল একটি সেতু বানানোর কাজে। হেমিংওয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে অ্যাম্বুলেন্সচালক ছিলেন। হারিকেনের পর কিজ অঞ্চলের বাসিন্দা হেমিংওয়ে, নিজের নৌকা নিয়ে ঘুরতে গিয়ে সাবেক সেনাদের লাশের পর লাশ দেখতে পান।
'১৯১৮ সালের পর এত মৃতদেহ একসাথে তিনি আর দেখেননি,' লিখেছেন নিকোলাস রেনল্ডস তার নতুন বই 'রাইটার, সেলার, সোলজার, স্পাই'-এ। মৃতদেহগুলো যেভাবে পানিতে পচেগলে পড়ে ছিল, তাতে হেমিংওয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। নিউ মাসেস নামের এক ক্ষুদ্র মার্ক্সবাদী সাময়িকীতে তিনি কড়া ভাষায় প্রবন্ধ লিখলেন। সোভিয়েত গোয়েন্দারা যে সময় কমিউনিস্টদের প্রতি সম্ভাব্য সহানুভূতিশীল বিদেশিদের নজরে রাখছিল। লেখাটি দেখে হেমিংওয়ের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ আরও বাড়ে।

রেনল্ডস লিখেছেন, এই ঘটনা হেমিংওয়ের জীবনে একধরনের 'রূপান্তর অভিজ্ঞতা' তৈরি করে। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত তিনি নিপীড়িতদের কণ্ঠ হয়ে উঠলেন। তার লেখক-সাংবাদিক খ্যাতিকে কাজে লাগালেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। এই অবস্থান তাকে সোভিয়েত গুপ্তচরবৃত্তি এবং আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সমান আকর্ষণীয় করে তোলে। আর হেমিংওয়ে নিজেকে সব সময় স্বাধীন এজেন্ট ভেবে দুই পক্ষের সঙ্গেই খেললেন।
অবশেষে তিনি সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির পূর্বসূরি এনকেভিডির নজরে পড়েন। 'এনকেভিডি ছিল সোভিয়েত সিক্রেট সার্ভিস—মানে সিআইএ আর এফবিআই মিলেমিশে এক,' বলছেন রেনল্ডস।
১৯৩৭ সালে স্প্যানিশ সিভিল ওয়ার কাভার করতে নর্থ আমেরিকান নিউজপেপার অ্যালায়েন্সের হয়ে হেমিংওয়ে যখন স্পেনে গেলেন। এ যাত্রায় দ্বিতীয় স্ত্রী পলিনকে রেখে গেলেন। সঙ্গে নিলেন নতুন প্রেমিকা সাংবাদিক মার্থা গেলহর্নকে। মাদ্রিদের গেলর্ড হোটেলে তিনি প্রকাশ্যে সোভিয়েত ব্যক্তিত্ব, কমিউনিস্ট কমান্ডার, সাংবাদিক আর গুপ্তচরদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন।
'তিনি দারুণ উপভোগ করতেন যে অন্য সাংবাদিকদের নাগালের বাইরে থাকা এক বিশেষ সুবিধা ও সুযোগ তার আছে,' বলছেন রেনল্ডস। 'তিনি তখন আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সেরা ব্যক্তিদের সঙ্গেই দহরম-মহরম করছিলেন।'
হেমিংওয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী উন্মাদনা যত বাড়তে লাগল, তিনি কমিউনিস্টদের কাছে তত বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠলেন। এর সঙ্গে স্পেনে সবচেয়ে আলোচিত সাংবাদিক হিসেবে তারকাখ্যাতি তাকে আরও মূল্যবান করে তুলল।
রেনল্ডসের মতে, সেই সময় হেমিংওয়ে সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশ জেনারেল আলেকজান্ডার অরলভের সঙ্গে বেনিমামেত এলাকায় যান। ওই এলাকা ছিল এনকেভিডির নিয়ন্ত্রণাধীন এক গোপন গেরিলা ক্যাম্প। সেখানে তারা সোভিয়েত অস্ত্র চালান আর দুপুরে ভদকা পান করেন।
এই সফল ভ্রমণ তাকে কমিউনিস্ট গেরিলাদের সঙ্গে চার দিন কাটানোর সুযোগ করে দেয়। এখানেই তিনি ন্যাশনালিস্টদের একটি ট্রেন আক্রমণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। এই অভিজ্ঞতাই পরে তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস 'ফর হুম দ্য বেল টোলস'-এর (১৯৪০) কাহিনিকে অনুপ্রাণিত করে।
১৯৩৯ সালের জানুয়ারিতে ফ্রাঙ্কোর হাতে বার্সেলোনা পতনের পর মার্চে হেমিংওয়ে গেলহর্নকে নিয়ে কিউবায় চলে আসেন এবং বইটি শেষ করতে মন দেন। একই সময়ে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে হেমিংওয়ে তালাক সম্পন্ন করেন। আর ১৯৪০ সালের নভেম্বরে গেলহর্নকে বিয়ে করেন।
এই সময়েই মস্কোর নির্দেশে সোভিয়েত বোলশেভিক নেতা ইয়াকভ গোলস তাকে এনকেভিডির হয়ে দলে ভেড়ানোর তৎপরতা চালান।
ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানের কারণে হেমিংওয়েকে প্রো-সোভিয়েত ধরা হচ্ছিল, তাকে তথ্য সংগ্রাহক বা নতুন সদস্য নিয়োগকারী হিসেবে আদর্শ প্রার্থী মনে করা হচ্ছিল। তাকে কোডনেম দেওয়া হয় আরগো—যে গ্রিক পুরাণে জেসন আর আর্গোনটদের জাহাজের নাম। মস্কোর ফাইলে তার বই 'ফর হুম দ্য বেল টোলস'-এর একটি কপিও রাখা হয়।
হানিমুনে গেলহর্ন কলিয়ার্স ম্যাগাজিনের হয়ে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ কাভার করতে নিউইয়র্ক থেকে যাত্রা করেন। হেমিংওয়েও বামপন্থী ট্যাবলয়েড পিএমের হয়ে নিজের জন্য কাজ জোগাড় করে নেন। এই সময়ে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি হেনরি মরগেনথাউ জুনিয়র তাকে চীনা নেতৃত্ব সম্পর্কে সাধারণ পর্যবেক্ষণ পাঠাতে বলেন।
রেনল্ডস লিখেছেন, 'এটাই সেই স্বীকৃতি, যা হেমিংওয়ে চাইতেন। তার মনে হচ্ছিল, তিনি শুধু লেখক নন, তিনি বিশ্বরাজনীতি বোঝেন এবং নিজের বোঝাপড়াকে কাজে লাগিয়ে ঘটনাপ্রবাহ বদলাতে পারেন।'
চীনে তার তারকাখ্যাতি তাকে উচ্চপর্যায়ের সমাজে প্রবেশের সুযোগ দেয়। তবে রেনল্ডস জোর দিয়ে বলেছেন, হেমিংওয়ে সেখানে প্রকৃতপক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেননি। 'কেউ কোনো রাষ্ট্রীয় গোপন নথি দেয়নি, চুরি করেনি বা কিনেও নেয়নি,' তিনি লিখেছেন। 'কমিউনিস্ট আর ন্যাশনালিস্ট উভয় পক্ষই তাকে ব্যবহার করেছে আমেরিকান জনতা ও সরকারকে বার্তা পৌঁছাতে, আর মরগেনথাউ পেয়েছিলেন ব্যক্তিগত ব্রিফিং।'
কিন্তু এভাবেই দ্বিধা দেখা দিল। তার আন্তর্জাতিক প্রভাব ছিল লেখক হিসেবে; গোপনে গুপ্তচর হয়ে কীভাবে কাজ করবেন? 'প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার মনে অনুতাপ এল,' বলেন রেনল্ডস। 'আমার আসল কাজ তো মহৎ আমেরিকান লেখক হওয়া—এই ভেবে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলেন।'
তবু মার্কিন সরকার স্পেনের গৃহযুদ্ধে বিষয়ে তাকে উপেক্ষা করার পর আবার তার মতামত চাইছিল, এটাই তাকে সন্তুষ্ট করেছিল। বিশেষ করে তিনি সুপারিশ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন চীনের গৃহযুদ্ধ অর্থায়ন না করে।
১৯৪১ সালে সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যাচেসলাভ মলটোভ তাকে মস্কো ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান। এ সফরের কথিত উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়, বই বিক্রির রয়্যালটি বাবদ 'অনেক রুবল' সংগ্রহ করা। কিন্তু রেনল্ডসের মতে, আসল উদ্দেশ্য ছিল এনকেভিডির প্রশিক্ষণে হেমিংওয়কে আরও সময় দেওয়া।
কিন্তু তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে আর যেতে পারেননি। কারণ, ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে জাপানি হামলার পর সব হিসাব বদলে গেল। 'এখন যুক্তরাষ্ট্রও ফ্যাসিবাদবিরোধী দলে,' বলেন রেনল্ডস। 'হেমিংওয়ে দেখলেন, এবার তিনি আমেরিকার জন্যও কিছু করতে পারেন।'
তিনি হাভানায় মার্কিন কূটনীতিক রবার্ট জয়েসকে প্রস্তাব দিলেন একটি পাল্টা গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার। জয়েসের বস, মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্প্রুইল ব্রাডেনও সম্ভাবনা দেখলেন। হেমিংওয়ে যে 'তথ্যদাতা নেটওয়ার্ক' বানাতে চাইছিলেন, সেখানে থাকবেন বারটেন্ডার, বন্দরশ্রমিক, অচল পায়লোটা খেলোয়াড়, সাবেক বুলফাইটার, বাস্ক পুরোহিত। নানা পেশা-শ্রেণির মানুষকে নিয়ে এক বিচিত্র দল।
এটি ক্রুক ফ্যাক্টরি নামে পরিচিত। ১৯৪২ সালে মাসে ৫০০ ডলার বাজেটে তারা কাজ শুরু করে। ওয়াশিংটনের পেশাদার গোয়েন্দারা ক্রক ফ্যাক্টরির তৎপরতা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহে দুলছিলেন। যা-ই হোক ব্রাডেন সমর্থন দিলেন। আর শেষ পর্যন্ত এই জুয়া সার্থক হয়।

১৯৪২ সালের ৯ ডিসেম্বর হেমিংওয়ে একটি জার্মান ইউ-বোটের অবস্থান জানান, আর নৌবাহিনী এতটাই গুরুত্ব দেয় যে বহরের কাছে পুনরায় প্রেরণ করে। শুধু তা-ই না, হেমিংওয়ে এবং তার দলবলকে প্রশংসা জানায়। রেনল্ডসের মতে, ব্রাডেন বিশ্বাস করতেন, 'হেমিংওয়ে যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সত্যিকারের অবদান রেখেছেন।'
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি এক 'স্বনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র'-এর মতো হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সঙ্গে রিপোর্টার হিসেবে ঘুরে বেড়ান, অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেসের (ওএসএস) ইউরোপীয় কমান্ডার কর্নেল ডেভিড কে ই ব্রুসের সঙ্গে জার্মানদের ফাঁকি দেন। এমনকি তরুণ অ্যান্ডি রুনি, যিনি পরে সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানের বিখ্যাত সাংবাদিক হন, তার প্রাণও রক্ষা করেন। ১৯৪৭ সালে হেমিংওয়ে পান ব্রোঞ্জ স্টার পদক।
স্প্যানিশ সিভিল ওয়ার থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত হেমিংওয়ে ছিলেন অগ্নিমুখর ইতিহাসের এক সরব সাক্ষী। তিনি শুধু সাংবাদিক নন, ছিলেন সৈনিকের মতো ঝুঁকিপূর্ণ যোদ্ধা, কখনো জার্মান নৌকার খোঁজে সমুদ্র টহল দিয়েছেন, কখনো গেরিলা সংগঠিত করেছেন। মস্কোও তাকে নিজের কাতারে টানতে চেয়েছিল। লেখক, সৈনিক, গুপ্তচর—সব পরিচয় মিলেমিশে হেমিংওয়েকে দাঁড় করিয়েছিল এক অদ্ভুত দ্বিধা-বিভক্ত অস্তিত্বে।
যুদ্ধ শেষে কিউবায় ফিরে তিনি তার নিকটতম সেনা বন্ধু কর্নেল চার্লস টি ল্যানহ্যামকে লিখলেন, তিনি 'রেজিমেন্টের জন্য অশেষ বিরহে ভুগছেন।' চিঠিতে স্থলযুদ্ধকে বললেন জীবনের 'চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা।'
'এটি বলা পাপ হতে পারে, কিন্তু এটি সেই জিনিস, যা আমি সবচেয়ে ভালোবাসি...' লেখক, নাবিক, সৈনিক, গুপ্তচরের কাছে আসল বিষয় ছিল লড়াই।
রেনল্ডস লিখেছেন, 'তিনি সবচেয়ে জীবন্ত অনুভব করতেন, যখন জীবন বাজি রাখতেন, সব ইন্দ্রিয় সচল থাকত, যুদ্ধক্ষেত্রে দক্ষতাকে কাজে লাগাতেন আর অগত্যা ফ্যাসিস্টদের হত্যা করতেন।'
হেমিংওয়ের গল্প তাই কেবল একজন সাহিত্যিকের নয়; এটি মানুষের এক চিরন্তন অবস্থান—যুদ্ধ আর ধ্বংসযজ্ঞের ভেতরেও সংগ্রামী থাকা। গাজার জনপদ আজ রক্তে ভেসে যাচ্ছে, অথচ সেই বুড়ো জেলের মতো সাধারণ মানুষ লড়াই করে যাচ্ছে টিকে থাকার জন্য। তাদের দেহ হয়তো ভেঙে যাবে, ঘরবাড়ি ভস্ম হবে, কিন্তু হেমিংওয়ের সেই সত্য আজও প্রতিধ্বনিত হয়, মানুষ ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু কখনো পরাজিত নয়।