নিরাপত্তা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে যেভাবে পালালেন হাদির হত্যাচেষ্টাকারী
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা করা দুই সন্দেহভাজন স্থলপথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সন্দেহভাজনদের শনাক্ত, পাসপোর্ট ব্লক, সীমান্তে নড়জদারি বাড়ানোসহ একাধিক অভিযানের পরও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে কিভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তাদের পালানোর কথা স্বীকার করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের মতে, হামলার মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ও মো. আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের একটি দুর্গম সীমান্তপথ পাড়ি দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ফয়সাল খুব কাছ থেকে হাদিকে মাথায় গুলি করেন, আর সেই সময় মোটরসাইকেল চালান আলমগীর শেখ।
হামলাকারীরা যেভাবে পালালেন
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের ভাষ্যমতে, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে হাদিকে গুলি করার পর সন্দেহভাজন ওই দুইজন বিজয়নগরের বক্স কার্লভার্ট রোড থেকে বের হয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে নয়াপল্টন, শাহবাগ, বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, আগারগাঁও হয়ে মিরপুরে পৌঁছান। সেখানে মোটরসাইকেল রেখে একটি প্রাইভেট কারে করে বেঁড়িবাধের রাস্তা ধরে আশুলিয়া হয়ে গাজীপুরে দিয়ে ময়মনসিংহে যান।
ময়মনসিংহে পৌঁছে তারা ওই গাড়িটি ছেড়ে আরেকটি প্রাইভেট কারে ওঠেন। পরে সেই গাড়িতে করে সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রোল পাম্পে গিয়ে ফের বাহন পাল্টান। সেখান থেকে তাদের দুটি মোটরসাইকেলে করে ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান তিন যুবক। রাত আড়াইটার পর ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা মানবপাচারকারী চক্রের সহায়তায় ভারতে পালিয়ে যান।
তদন্তকারী আরেকটি সূত্রের ভাষ্যমতে, হাদিকে গুলি করার পর ফয়সাল ও আলমগীর মোটরসাইকেলে করে মোহাম্মদপুর ও উত্তরা হয়ে সাভারের হেমায়েতপুর যান। সেখানে মোটরসাইকেল রেখে প্রাইভেট কারে করে ময়মনসিংহে যান। সেখানে তারা পোশাক পরিবর্তনের জন্য একটি রিসোর্টে ৩০ মিনিট ছিলেন। পরে রাত ১১টার দিকে তারা সেখান থেকে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা লোকের মাধ্যমে তারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের তথ্যমতে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ফয়সাল ও আলমগীর সীমান্ত অতিক্রমের সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। হাদিকে গুলি করার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হালুয়াঘাট সীমান্তে পৌঁছান। সেখানে গারো সম্প্রদায়ের ফিলিপ স্নাল নামে এক মানবপাচারকারী তাদের সীমান্ত পার করে দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালালেও সন্দেহভাজন বা ফিলিপ স্নাল—কাউকেই আটক করতে পারেনি। তদন্তকারীদের ধারণা, ফিলিপ স্নালও হয়তো তাদের সঙ্গে ভারতে পালিয়েছেন।
আটক চার
ফয়সাল, আলমগীর ও ফিলিপ স্নাল ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও সীমান্ত পারাপারে সহায়তার অভিযোগে পুলিশ ও বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এর মধ্যে সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরুন দিও নামে দুজনকে শনিবার রাত ১১টার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের একটি দল। পরে তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এর আগে ওই দলটি হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় চিসিম তদন্তকারীদের জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে তিনি দুজন বাংলাদেশিকে ভারতে পাচার করতে সহায়তা করেছিলেন। ওই দুই ব্যক্তি বর্তমানে ফিলিপ স্নাল ও তার সহযোগীদের সঙ্গে রয়েছেন।
এদিকে গতকাল বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এক খুদে বার্তায় জানান, মানবপাচারে সহায়তার অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে ফিলিপের আরও দুই সহযোগীকে—বেঞ্জামিন চিরাং (৪৫) ও শিশাল (২৮)—আটক করেছে বিজিবি। ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার পর সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তদন্তকারীরা হামলাকারীরা ভারতে পালিয়েছে বলে মনে করলেও, ডিএমপি বলেছে তারা এখনও বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না।
