বুর্জ খলিফাকে টপকের বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন হতে ৮০ তলা ছাড়িয়ে নতুন উচ্চতায় সৌদির জেদ্দা টাওয়ার
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হতে যাওয়া জেদ্দা টাওয়ারের নির্মাণকাজ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে ভবনটি প্রায় ৮০ তলা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে এবং প্রতি ৩ থেকে ৪ দিনে একটি করে নতুন তলা যোগ হচ্ছে।
গালফ নিউজ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পটি ২০২৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। সম্পূর্ণ হলে জেদ্দা টাওয়ারের উচ্চতা হবে ১ হাজার মিটারেরও বেশি, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে পরিচিত ৮২৮ মিটার উচ্চতার বুর্জ খলিফার চেয়ে প্রায় ১৭২ থেকে ১৮০ মিটার বেশি।
একসময় 'কিংডম টাওয়ার' নামে পরিচিত জেদ্দা টাওয়ারটি ২০২৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার কাছ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের খেতাব ছিনিয়ে নিতে সৌদি আরবের এই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নির্মাণ শেষ হলে এটি বিশ্বের প্রথম ভবন হিসেবে এক কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছাবে।
এছাড়া, দুই কিলোমিটার উচ্চতার একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে, যার নাম 'রাইজ টাওয়ার'।
জেদ্দা টাওয়ারের বৈশিষ্ট্য
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা হতে যাওয়া জেদ্দা টাওয়ার সৌদি আরবের 'ভিশন ২০৩০'-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এর নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয় এবং ইতোমধ্যে ভবনটি প্রায় ৮০ তলা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
জেদ্দা ইকোনমিক সিটিতে অবস্থিত এই টাওয়ারটি ১৬০ তলারও বেশি উঁচু হবে এবং বহুমুখী ব্যবহারের জন্য নির্মিত হচ্ছে। এতে থাকবে ফোর সিজনস হোটেল, বিলাসবহুল আবাসন, সার্ভিসড অ্যাপার্টমেন্ট এবং উচ্চমানের অফিস স্পেস।
এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো আকাশছোঁয়া পর্যবেক্ষণ ডেক, যেখান থেকে লোহিত সাগর ও নিচের শহরের বিস্তৃত দৃশ্য উপভোগ করা যাবে।
বুর্জ খলিফার কো-ডিজাইনার অ্যাড্রিয়ান স্মিথের নকশায় নির্মিত এই টাওয়ারে মরু জলবায়ুর উপযোগী উন্নত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা ও শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তিসহ টেকসই বিভিন্ন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
টাওয়ারটিতে প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটারেরও বেশি গতিতে চলতে সক্ষম উচ্চগতির লিফট স্থাপন করা হবে।
বুর্জ খলিফা সম্পর্কে কিছু তথ্য
আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্থাপত্যের এক বিস্ময়, বুর্জ খলিফা বর্তমানে একাধিক বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী, যেমন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন, সবচেয়ে উঁচু স্বাধীন স্থাপনা এবং সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তলা বিশিষ্ট ভবন। এতে ১৬৩ তলা রয়েছে, যার মধ্যে ১২৪, ১২৫ এবং ১৪৮ তলায় পর্যবেক্ষণ ডেক রয়েছে, যা থেকে দুবাইয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
দর্শনার্থীরা ১২২ তলায় অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ রেস্টুরেন্ট 'অ্যাট.মোসফিয়ার'-এ অভিজাত খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। ভবনের বহিরঙ্গনে ২৬ হাজারের বেশি কাঁচের প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে, যা দুবাইয়ের তীব্র তাপ সহ্য করতে সক্ষম ক্ল্যাডিং সিস্টেমে মোড়ানো।
বুর্জ খলিফার নির্মাণকাজ ২০০৪ সালে শুরু হয় এবং প্রায় ছয় বছর সময় লাগে সম্পন্ন হতে। এতে ১২ হাজারের বেশি শ্রমিক ও প্রকৌশলী কাজ করেছেন। প্রকল্পটির মোট খরচ ছিল প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল ভবন হিসেবে পরিচিত।
