বিধিনিষেধ শিথিল: রিয়াদের পর এবার জেদ্দা ও দাহরানে মদের দোকান খুলছে সৌদি আরব
সৌদি আরব আরও দুটি নতুন মদের দোকান খোলার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে একটি দোকান দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর অমুসলিম ও বিদেশি কর্মীদের সেবা দেওয়ার জন্য চালু করা হবে। বিধিনিষেধ আরও শিথিল করার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দাহরানে এবং বন্দরনগরী জেদ্দায় কূটনীতিকদের জন্য এই আউটলেটগুলো চালু করা হবে। এটিকে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সৌদি আরবকে বহির্বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করার প্রচেষ্টার আরেকটি নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসলামের জন্মভূমি সৌদি আরব গত বছর রাজধানী রিয়াদে অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য একটি মদের দোকান চালু করেছিল। ৭৩ বছর আগে দেশটিতে মদ নিষিদ্ধ করার পর সেটিই ছিল এ ধরনের প্রথম কোনো বৈধ আউটলেট।
আরামকো কম্পাউন্ডে দোকানের পরিকল্পনা
রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা তিনটি সূত্রের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, দাহরানের নতুন দোকানটি আরামকোর মালিকানাধীন একটি কম্পাউন্ডে স্থাপন করা হবে। সূত্রটি আরও জানায়, এই দোকানটি আরামকোতে কর্মরত অমুসলিমদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
অন্য দুটি সূত্র জানিয়েছে, জেদ্দায় অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য তৃতীয় একটি মদের দোকান খোলার কাজ চলছে। জেদ্দায় অনেক বিদেশি দেশের কনস্যুলেট রয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, দুটি দোকানই ২০২৬ সালের মধ্যে চালু হওয়ার আশা করা হচ্ছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা প্রকাশ করা হয়নি। এই দুই স্থানে মদের দোকান খোলার পরিকল্পনা আগে প্রকাশিত হয়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সরকারের মিডিয়া অফিস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উত্তর দেয়নি। আরামকোও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
বিধিনিষেধ ও গ্রাহক তালিকায় পরিবর্তন
রিয়াদের কূটনৈতিক এলাকায় একটি সাধারণ ভবনে প্রথম মদের দোকানটি খোলার পর সরকারি বিধিমালার কোনো আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন ঘোষণা করা হয়নি। কিছু কূটনীতিকের কাছে ওই ভবনটি 'বুজ বাঙ্কার' নামে পরিচিত।
দুটি সূত্র জানিয়েছে, রিয়াদের ওই দোকানের গ্রাহক তালিকা সম্প্রতি হালনাগাদ করা হয়েছে। এখন সেখানে 'সৌদি প্রিমিয়াম রেসিডেন্সি' হোল্ডার বা বিশেষ ভিসাধারী অমুসলিমরাও প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। এই বিশেষ রেসিডেন্সি সাধারণত উদ্যোক্তা, বড় বিনিয়োগকারী এবং বিশেষ প্রতিভাবান ব্যক্তিদের দেওয়া হয়।
রিয়াদের দোকানটি চালুর আগে সৌদি আরবে মদ মূলত কূটনৈতিক মেইল, কালোবাজারের মাধ্যমেই পাওয়া যেত। কুয়েত ছাড়া উপসাগরীয় অন্যান্য দেশগুলোতে কিছু বিধিনিষেধ মেনে মদ পাওয়া যায়।
সংস্কার এবং পর্যটন পরিকল্পনা
যদিও দেশটির জনসংখ্যার বিশাল অংশের জন্য মদ্যপান এখনো নিষিদ্ধ, তবুও বিন সালমানের সংস্কারের অধীনে সৌদি নাগরিক এবং বিদেশিরা এখন কনসার্টে নাচ বা সিনেমা হলে যাওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন, যা একসময় অকল্পনীয় ছিল। ২০১৭ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া, জনসমাগমস্থলে নারী-পুরুষের মেলামেশার কঠোর নিয়ম শিথিল করা এবং ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করাও এই সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত।
তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে এবং পর্যটক ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার প্রসারে সৌদি আরব ক্রমাগত বিধিনিষেধ শিথিল করছে।
গত মে মাসে একটি ওয়াইন ব্লগের বরাতে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল যে, ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মদ বিক্রির অনুমতি দিতে পারে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তখন সৌদি কর্মকর্তারা সেই খবর অস্বীকার করেছিলেন।
বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে মদের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না—চলতি মাসে রয়টার্সের এমন প্রশ্নের জবাবে সৌদি পর্যটন মন্ত্রী আহমেদ আল-খতিব বলেন, 'আমরা বুঝতে পারি যে কিছু আন্তর্জাতিক পর্যটক সৌদি গন্তব্যগুলোতে ভ্রমণের সময় মদ্যপান করতে চান, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন আসেনি।'
'এখন পর্যন্ত' বলতে শীঘ্রই পরিবর্তন আসতে পারে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন, তা আমি আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি।'
