৫ মাসে ৫০০ আবেদন: সরকারের শেষ সময়ে গাড়ি কেনার জোর চেষ্টা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য ২০১৫ সালে একটি পাজেরো জিপ কেনা হয়েছিল। ওই সময়ে কেনা হলেও গাড়িটি ব্যবহার হয়েছে মাত্র ৮ বছর। অথচ গাড়িটিকে অকেজো ঘোষণা করে একটি নতুন জীজিপ কেনার অনুমোদন চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্কৃত মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শুধু সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ই নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শেষ সময়ে এসে গাড়ি কেনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকারি অন্যান্য দপ্তর ও সংস্থাও।
তারা আরও জানান, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থা থেকে প্রায় ৫০০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব এসেছে। যদিও এর বেশিরভাগ প্রস্তাব ১০ বছরের বেশি ব্যবহার হয়েছে এমন গাড়ি প্রতিস্থাপনের।
ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে সব ধরনের যানবাহন কেনায় বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ রেখেছে সরকার। তবে ১০ বছরের বেশি পুরানো গাড়ি প্রতিস্থাপনের জন্য সরকারি দপ্তরগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। এই সুযোগে অনেক সরকারি দপ্তর ১০ বছরের কম ব্যবহার হয়েছে এমন গাড়িও প্রতিস্থাপন করতে চাচ্ছে, অনেক সংস্থা নতুন গাড়িও কেনার প্রস্তাব করেছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রতিদিনই সরকারের কোনো না কোনো দপ্তর থেকে গাড়ির কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদন আসছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। কোনো কোনো সংস্থা নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব করছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পুরানো গাড়ি পরিবর্তনের অনুমোদন চাচ্ছে। রয়েছে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাবও।
'এছাড়া কয়েকজন বিচারপতি তাদের গাড়ির মেরামত ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিলিংয়ের বেশি হওয়ায় বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় গাড়ি মেরামত বাবদ সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা সংস্থাকে অনুমোদন করার ক্ষমতা দিয়েছে,' বলেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা) তৌফিকুল ইসলাম খান টিবিএসকে বলেন, বর্তমানে সরকারের আর্থিক সক্ষমতা খুবই সীমিত।
'রাজস্ব আয় ব্যয়ের তুলনায় কম। অন্যদিকে ঋণ পরিষেবার ব্যয় বেড়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে গাড়ি কেনার ব্যয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই যথেষ্ট পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জরুরি বিবেচনায় কিনতে হলে সেক্ষেত্রেও যতটা সাশ্রয়ী হওয়া যায়, সেটা চেষ্টা করতে হবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি না কেনাই ভালো,' বলেন তিনি।
জুলাই-নভেম্বরে ৫০০ প্রস্তাব
কর্মকর্তারা বলেন, গত মাসে তথ্য অধিদপ্তর একটি নতুন মাইক্রোবাস কিনতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব তহবিল থেকে ৮টি গাড়ি কেনার অনুমোদন চেয়েছে। সিটি কর্পোরেশন অবশ্য জানিয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংস্থাটির ৮টি গাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে, যেগুলোকে ইতিমধ্যে অকেজো ঘোষণা করা হয়েছে। এই গাড়িগুলো না থাকায় তাদের দাপ্তরিক কাজে বিঘ্ন হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশ রাবার বোর্ড নতুন একটি মাইক্রোবাস কেনার জন্য ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে একটি জিপ ও একটি সেডান কার কেনার অনুমোদন চেয়েছে। জিপ কিনতে সংস্থাটি ১.৬৭ কোটি ও সেডান কার কিনতে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের অনুরোধ করেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি মাইক্রোবাস কেনার জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, রাজশাহী একটি কার ও দুটি মাইক্রোবাস ভাড়ায় নেওয়ার অনুমোদন চেয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিতে চায়। এজন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তিন পাজেরো জিপের প্রতিস্থাপন চেয়ে আবেদন করেছে। ট্রাইবুনাল জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা তিনটি জীপ ১০ বছরের বেশি পুরানো। এজন্য তারা ৫.১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে।
