কর্মসংস্থান একটা বড় চ্যালেঞ্জ: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে বেকারের সংখ্যা ভয়ংকর আকার ধারণ করেনি। তবে কর্মসংস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ কর্মসংস্থান হয় বেসরকারি খাতে। ব্যবসা বাণিজ্য যদি একটু মন্থর হয়ে যায় সেটা অবশ্যই প্রভাব পড়ে। সেটা নির্ভর করে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য কতটুকু সহায়তা দিচ্ছি। ব্যবসাটা মাঝখানে একটু মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো হয়েছে।'
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন, এলএনজি আমদানি এবং এমওপি ও ইউরিয়া সার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, 'জেনারেশন যাই হোক, উপকেন্দ্রগুলো ফল্টি হলে সিস্টেম ডিস্ট্রিবিউশনের কারণেই হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন উপকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমদানি শুল্ক বাড়ানো না বাড়ানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে। বর্তমানে ঘাটতির অবস্থান মোটামুটি স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে আছে। আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৭.৮ বিলিয়ন, যেখানে ভিয়েতনামের ছিল ১২৫ বিলিয়ন।'
আমেরিকা থেকে পণ্য আনলে ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি খরচ হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কিছুটা তো হবেই। যেমন, আমরা গমের বিষয় বলেছি, এতে আমদানি মূল্য বেশি হবে কিন্তু মানটা অনেক ভালো। আমরা ট্যারিফ এভোয়েড করতে চাচ্ছি, ঘাটতি কমাতে চাইছি।'
ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'না, ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। আমরা ভোক্তাদের জন্য টিসিবিসহ নানা খাতে ভর্তুকি দিচ্ছি। বাস্তবায়নটা কীভাবে হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।'
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়ায় এখনও তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে অস্বাভাবিকতা আছে। তার ভাষায়, 'আমাদের দেশে পাইকারি ও খুচরা বাজার অর্থনীতির ধারাকে ছাড়িয়ে গেছে, যা অন্যান্য দেশে সচরাচর হয় না। তবে সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রয়েছে। সম্প্রতি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমেছে।'
কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এটা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যবসা-বাণিজ্য যদি মন্থর হয়, তার প্রভাব কর্মসংস্থানে পড়ে। তবে বর্তমানে ব্যবসা কিছুটা ভালো অবস্থায় ফিরেছে। এনবিআরের ট্যাক্স রাজস্ব বাড়ছে এবং কর ফাঁকি দেওয়া অর্থও উদ্ধার করা হচ্ছে।'
সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি জানান, স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যেখানে হাইটেক প্রযুক্তি ব্যবহার না করে রাস্তা প্রশস্ত করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এলএনজি আমদানিতে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোম্পানিকে প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, 'আমরা আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করি। আমেরিকা, সৌদি আরব, চীন, সিঙ্গাপুর—সব বাজারই তুলনা করি। এতো সহজ নয় যে, আমেরিকার হাতে ছেড়ে দেবো। পিটার হাসের কোম্পানি সম্পর্কেও আমরা তেমন জানি না।'
সার আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টা দেখছি। তবে কোনো অভিযোগ উঠলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয় সার আমদানির মূল দায়িত্বে থাকে। আমরা বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখবো।'
রাজনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ক্রয় কমিটিতে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয় না। তবে অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। আমরা অর্থনীতিকে সামগ্রিকভাবে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।'