বাংলাদেশের সংস্কার ও অর্থনীতি নিয়ে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক: অর্থ উপদেষ্টা

মার্কিন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথ এবং সংস্কারের অগ্রগতির ওপর দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেছে, বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অফ কমার্সের নেতাদের সাথে আলোচনার পর মার্কিন বেসরকারি খাতের মনোভাব গত বছরের তুলনায় "অনেক ভালো" বলে মনে হয়েছে, কারণ কিছু দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার চলছে।
ওয়াশিংটনে বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা যখন গতবার এসেছিলাম, তখন তাদের অনেক সমস্যা ছিল। এবার তারা বলেছে, বাস্তব উন্নতি হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'তারা বলেছে, বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন বেসরকারি খাতের মনোভাব এখন অনেক ভালো। শেভরন ও মেটলাইফের পাওনা অর্থ ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে, যা তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে।'
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল সফরকালে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও ওপেক ফান্ডের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে পূর্ববর্তী ঋণ আলোচনার অগ্রগতি এবং নতুন বাজেট সহায়তা ও উন্নয়ন অনুদানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য 'থ্রি জিরো' বা তিনটি শূন্য—দারিদ্র্য শূন্য, বেকারত্ব শূন্য এবং কার্বন নিঃসরণ শূন্য অর্জনের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বাংলাদেশ এখনও অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগতভাবে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তবে গত বছরের তুলনায় আমাদের অবস্থান এখন অনেক উন্নত—ম্যাক্রোইকোনমিক স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক মুদ্রা, রিজার্ভ ও সার্বিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।'
তিনি আরও জানান, বৈশ্বিক ঋণদাতাদের সাথে আলোচনার একটি প্রধান অংশ ছিল সরকারের রাজস্ব এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কার।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সংস্কার কোনো এককালীন কাজ নয়; এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা ইতোমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো এবং পরবর্তী পরিকল্পনাগুলোর বিস্তারিত তাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি।'
তিনি আরও বলেন, সরকার কর কাঠামো যৌক্তিক করা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রক্রিয়া সহজ করা এবং দ্বৈত কর আরোপ ও ভ্যাট ফেরতের মতো সমস্যা সমাধানে কাজ করছে, যাতে ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি পায়।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অর্থনীতিগুলোর একটি হিসেবে দেখছেন। ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও তাদের বিশাল বাজার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
সালেহউদ্দিন বলেন, 'তারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদাকে শুধু খাদ্যপণ্য নয়, অন্যান্য খাতেও বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন। এটি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি—তারা আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন।'