বদরুদ্দীন উমর: অমরত্বের সন্তান

আমার বাড়ির কাছে একটা বিশালাকার অশ্বত্থ গাছ ছিল। সেই গাছের নিচেই আক্ষরিক অর্থে আমি বড় হয়েছি। তাঁর ডালে ওঠে ঘুমিয়েছি, ছায়ার নিচে বসে ঝিমিয়েছি, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে তার নিচে এসে দাঁড়িয়েছি। গাছটা আমাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে বেশ অঙ্গাঅঙ্গিভাবেই জড়িয়ে ছিল। ফলে এই গাছকে কখনো আলাদা করে গাছ হিসেবে কখনো চেনা হয়নি। সেই গাছের শূন্যতা সেদিনই প্রথম বোঝা যায়, যেদিন গাছটা কেটে ফেলা হয়।
বদরুদ্দীন উমর আমাদের রাজনীতি ও ইতিহাসের সেই প্রবীণ অশ্বত্থ গাছ, যাকে আমরা সম্প্রতি হারিয়েছি। সম্ভবত আমাদের ইতিহাসের অন্যতম স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরটির নামটিও ছিল উমর। যেকোনো ঘটনার তুমুল মুহূর্তেও দাঁড়িয়ে যিনি নিজের অবস্থানে অটল থাকতে পারতেন বটবৃক্ষের মতো। ঝড়, বাতাস কিংবা প্রবল ঘূর্ণিপাকও যাকে নিজের অবস্থান থেকে এতটুকু নড়াতে পারেনি।
হ্যাঁ, এটা হতেই পারে যে, আপনি তাঁর সব অবস্থানের সঙ্গে একমত নন। সেটা হওয়া জরুরিও নয়। কিন্তু নিজের বিশ্বাসের ওপর ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার যে সাহস ও শক্তি সেটাই বাকিদের চেয়ে আলাদা করেছে উমরকে। প্রচণ্ড বিরুদ্ধ সময়েও উমর নিজের বিশ্বাসকে বলি দেননি। ক্ষমতার সঙ্গে আপস না করে তার উলটো দিকে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আর এই আপসহীন অবস্থানই উমরকে উমর করে তুলেছে। চরম শত্রুর কাছেও প্রাসঙ্গিক রেখেছে। যে কোনো ঘটনাকে সেটা যেমন সেভাবে বিশ্লেষণ করতে পারাই ছিল উমরের শক্তি। এসব কথার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে বা কাকে রুষ্ট করবে এসবের কখনো তোয়াক্কা করেননি।
যেমন, জুলাই আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তিনি ঘটনার সাক্ষী হয়ে বলেছিলেন, '১৯৫২ থেকে যত গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে এটিই সবচেয়ে ব্যাপক।' অথচ তখন পর্যন্ত প্রায় বুদ্ধিজীবীই মুখে তালা দিয়ে রেখেছিলেন।
তেমনি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ের নানা ঘটনা দেখে তিনি অকপটে বলতে পেরেছেন, '৫ আগস্টের পর জামায়াতে ইসলামি শক্তিশালী হয়েছে। এখন দক্ষিণপন্থীদের প্রভাব বেড়েছে। তাদের একটা উত্থান হয়েছে এখন।'এভাবে সরল বয়ান দিতে অনেকে ভীত হন, আতঙ্কিত বোধ করেন। কিন্তু উমর হন না। আপনি উমরের মতের সঙ্গে একমত হোন বা না হোন। তার কথাকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।

যে-সব আলাপ দলীয় বুদ্ধিজীবীরা আড়াল করে রাখতে চান বা ন্যারেটিভের ফাঁদে ফেলে কবর দিতে চান, উমর সেসবকে সামনে নিয়ে আসেন। এমন না যে, শুধু এই সময়ে এসে উমর কথা বলছেন। স্বাধীনতাপূর্ব থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের প্রতিটি সরকারের সময় উমর ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান থেকে শেখ হাসিনা কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। তার এই অবস্থান অবশ্য শুধুই দার্শনিক বা বুদ্ধিজীবীতার মোড়কে আটকে থাকেনি। বরং সেটা সক্রিয় রাজনৈতিক তৎপরতার ভেতর দিয়ে বারবার সামনে এসেছে।
উমরের এই অনড় অবস্থান ফুটে উঠেছে তাঁর ইতিহাসের বয়ানেও। বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাঁর মহাকাব্যিক কাজটার কথা না বললেই নয়। ইতিহাসের লেখার সময় যে নির্মোহ অবস্থান নিতে হয়, সেটা উমর ছাড়া খুব কম জনই নিতে পেরেছেন। প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক অবস্থান দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বা অসৎ ভূমিকা নিয়েছেন। ফলে উৎপাদিত হয়েছে ইতিহাস নামের অসংখ্য আবর্জনা। যা কালের পরিক্রমায় এখন ভাগাড়ে গিয়ে পড়েছে। এইসব ইতিহাস লেখকদের নিয়ে উমর নিজেও বেশ বিরক্ত ছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'এখানে ইতিহাস কীভাবে লিখতে হয় তা জানে না। ইতিহাসের নামে যা লেখে এগুলো একেবারেই কিছু জানে না। খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার।' পরবর্তী ইতিহাস লেখকদের জন্যও উমর তাই সব সময় একজন দৃষ্টান্ত হিসেবে হাজির থাকবেন।
উমর মারা গেছেন ৯৪ বছর বয়সে। দীর্ঘ এক জীবন! দুই বছর আগে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান আমার খুবই প্রিয় লেখকদের একজন মিলান কুন্দেরা। মতাদর্শিকভাবে দুজনের অবস্থানে ভিন্নতা থাকলেও আমার এই মুহূর্তে কুন্দেরাকে নিয়ে কিছু লাইন মনে পড়ছে, যা আমি উমরের জন্যও বলতে চাই। আমি লিখেছিলাম, '৯৪ বছর! যেকোনো বিবেচনায় বাঁচার জন্য যথেষ্ট বয়স। এত দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকাটাও কখনো কখনো ক্লান্তির বিষয় হতে পারে। হতে পারে বলছি, কারণ আমার তো আর অত বছর বাঁচার অভিজ্ঞতা নেই। আশপাশেও ওই বয়সী কেউ নেই যাকে জিজ্ঞেস করে নেব, এত লম্বা সময় বাঁচার অভিজ্ঞতা কেমন? মিলান কুন্ডেরার (উমরের) জন্য কেমন ছিল এত বছর বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা?'
তাঁর অভিজ্ঞতার সন্ধান না করেই বলতে পারি, এ এক আশ্চর্য জীবন! এমন দীর্ঘ অথচ সক্রিয় জীবন খুব অল্প মানুষের জোটে। উমর সে বিরল মানুষদেরই একজন হতে পেরেছেন।
কিন্তু এমন মানুষ তো সবার জন্য ঠিক সুবিধার হন না। এমন মানুষ কাউকে স্বস্তিতেও থাকতে দেন না। বিশেষ করে ক্ষমতা ও এস্টাবলিশমেন্টের মুখের ওপর রীতিমতো আঙুল তুলে দাঁড়িয়ে থাকেন, যা বেশ বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর। ফলে এস্টাবলিশমেন্টের সত্য গোপন রেখে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্ক্ষা তার ভিত বারবার নড়ে উঠে। তাকে অনেক সময় পিছুও হটতে হয়। কারণ, প্রতিপক্ষ এমনই চরিত্র যে যাকে কেনা যায় না, টলানো যায় না। তবে কিছু কলঙ্ক তো দেওয়া যায়। দেওয়া হয়ও। উমরের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু উমর সেদিকে ফিরেও তাকাননি।
নিজের বিশ্বাস ও আদর্শের ওপর আস্থা না থাকলে এই কাজ কখনোই সম্ভব না। সাধারণ চোখে মনে হতে পারে এ আর এমন কি! কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা এই কাজ করতে যান, হয় দুর্বল হয়ে পড়ে অথবা বিক্রি হয়ে যান কিংবা উদ্যম হারিয়ে নিজেকে আড়াল করে নেন। কিন্তু উমরকে কেনা যায় না, উমর বিক্রি হন না এবং উমর হালও ছাড়েন না। এটাই মূলত তার শক্তি যা তাকে ৯৪ বছর পর্যন্ত নিজের বিশ্বাসে অটল রেখেছে। আর সেই শক্তিই আমাদের বারবার উমরের কাছে ফিরিয়ে আনে।
এবার একটু নিজের প্রসঙ্গে বলি। বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে আমার কখনো সরাসরি দেখা হয়নি। একবার দেখা হওয়ার কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত হয়নি। তখন পত্রিকায় চাকরি নিয়ে নতুন নতুন ঢাকায় এসেছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকদের নিয়ে একটা ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার নেওয়ার কাজ শুরু করি। এক পর্যায়ে তাঁর একটা সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য আমাকে বলা হয়। আমি মনে মনে বেশ উত্তেজনাও বোধ করি। কিন্তু কোনো এক কারণে সাক্ষাৎকারটি শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। হয়তো কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি ছিল তাকে নিয়ে বা অন্য কিছু। এতে আমার ভীষণ মন খারাপ হলো। সে সময় আরও আরও কারও কারও সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা ছিল। নানা কারণে কয়েকজনের নেওয়া যায়নি। কিন্তু আর কারওটা নিয়ে আমার এত মন খারাপ হয়নি। ফলে সেই আক্ষেপটা আমার সব সময় থাকবে। এরপর নিজের অন্তর্মুখী স্বভাব এবং পেশাগতভাবে দিক পরিবর্তনের কারণে আর কখনো সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।

তবে এমন মানুষকে দূর থেকে দেখারও একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। মানুষের কাছাকাছি গিয়ে তাঁকে দেখার অভিজ্ঞতা একরকম। কিন্তু কাছাকাছি না গিয়েও তাঁকে দেখা যেতে পারে। তাঁর কাজ কিংবা নানা ধরনের কর্মযজ্ঞের ভেতর দিয়ে তাঁর সঙ্গে একটা যাত্রা সম্পন্ন করা যায়।
উমরের লেখা প্রথম পড়ি এক বন্ধুর বাবার ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে ধার নিয়ে। তখন আমাদের নতুন নতুন ছাত্ররাজনীতি করার দিন। খুব সম্ভবত বইটা ছিল 'সাম্প্রদায়িকতা'। এরপর 'সংস্কৃতির সংকট'সহ আরও কিছু বই একটানা পড়ে ফেলি। গতানুগতিক চিন্তা বা পাঠের বাইরে পা রাখতে গিয়ে এই বইগুলো তখন আমাদের জন্য ধাক্কার মতো ছিল। মনস্তাত্ত্বিক দিক পরিবর্তনের ধারায় শুরুর দিকে উমর এবং আহমদ ছফা না পড়লে অনেকগুলো দ্বার হয়তো বন্ধই থেকে যেত। একই সময় এক উমর ভক্ত বড় ভাই ও কবি তাঁর সম্পাদিত 'সংস্কৃতি'র বেশ কিছু সংখ্যা দিয়েছিলেন। সেগুলোও বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ে শেষ করেছিলাম। অনেক নুড়ি পাথরও সেখান থেকে কুড়িয়ে নিয়েছিলাম।
উমরের কর্মযজ্ঞ অবশ্য বিশাল। সেই বিশাল কর্মযজ্ঞের এত অলিগলি যে একজনের পক্ষে সবকিছুর হদিস পাওয়াও প্রায় অসম্ভব। সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতি, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও সংস্কৃতির নানাবিধ ন্যারেটিভের স্বরূপ তিনি উন্মোচিত করেছেন।
আমি উমরের মতাদর্শিক স্কুলের সরাসরি ছাত্র না। ছাত্রত্বের ধারণা থেকে সরেও এসেছি অনেক আগে। ফলে এখন যেখানে যা কিছু নিজের জন্য এবং নিজের কাজের জন্য ভালো মনে হয় সেসব কুড়িয়ে নিই। আর সেই কুড়িয়ে নেওয়ার পথে আমাকে প্রায় ফিরতে হয় উমরের কাছে।
ব্যক্তিগতভাবে উমরের বেশ কিছু বই আমার খুব পছন্দের। তবে এখানে আমি একটি বইয়ের কথা আলাদাভাবে বলতে চাই, সেটি অবশ্য তাঁর রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক বা দার্শনিক কোনো আখ্যান নয়, বরং সেটি তার স্মৃতিকথা 'আমার জীবন'।
বইটা প্রথমে ধার করে পড়েছিলাম। এই বই আমাকে এতটাই আন্দোলিত করেছিল যে পরে বইটা সংগ্রহও করি। এই বইয়ের একটা নিস্তরঙ্গ বয়ে যাওয়ার ব্যাপার আছে, যা আমার ভীষণ পছন্দের। রুশ কবি ইয়েভতুশেঙ্কোর আত্মজীবনী 'ইঁচড়ে পাকা'র কথা উল্লেখ করে শুরু করা এই বইয়ের প্রথম খণ্ডের মুখবন্ধটাই অনেক ভালো লাগার। তিন পৃষ্ঠার লেখাটা যেন আত্মজীবনীর গভীর এক ইতিহাস পাঠ। প্রচণ্ড রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক হওয়ার পরও এই বইয়ের একটা কোমল প্রবাহ আছে। আর ঘটনাগুলো এখানে যেন আঙুল তুলে দেখিয়ে দেওয়া হয়। এই বইয়ের আরেকটা বিষয় আমার খুব ভালো লাগে তা হলো এর নিখুঁত ডিটেইলিং। যেমন উমরের বাবার সঙ্গে কাজ করা সিদ্দিক নামের এক ছেলের কথা এতই গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে যে বর্ণনাগুলো মনে গেঁথে যায়। আবার উমর যখন পারিবারিক আবহ ও পরিবেশের বর্ণনা দেন তখন তিনি যেন রীতিমতো ফিকশন লেখক। রক্ষণশীল পরিবেশের ভেতর কীভাবে উদারনৈতিকতার শিক্ষা পেয়েছেন, প্রথম সিগারেট খাওয়ার রোমাঞ্চ কিংবা ভগ্নিপতির বইয়ের সংগ্রহ থেকে বই পড়ার কথা বলতে গিয়ে যেভাবে তার পরিচয়কে তুলে ধরেছেন সেটাও যেন কোনো ফিকশন লেখকের বয়ান।
তবে এটাকে শুধু স্মৃতিকথা বা ভাষার ধোঁয়াশার মধ্যে দেখাটাও অন্যায়। এটাকে একই সঙ্গে আপনি চাইলে ইতিহাস, রাজনীতি ও মতাদর্শের ফ্রেমের ভেতর রেখেও পাঠ করতে পারেন। তবে পাঠের লেন্স যেটাই হোক, এই বই আপনাকে অদ্ভুত একটা জার্নি দেবে। পাশাপাশি এমন কিছু অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ও ঘটনার মুখোমুখি করাবে যা আপনাকে খানিকটা বিব্রতও করতে পারে। যেমন এই বইয়ে উল্লেখিত একটা ঘটনার কথা বলা যায়, যা মনে বেশ দাগ কেটেছিল।
একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের ওপর আলোচনা সভায় সুফিয়া কামাল উমরের বাবা আবুল হাশিমকে সভাপতির প্রস্তাব করায় বেশ অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যান। এর কারণ ছিল, তাঁর বাবার রাজনৈতিক পরিচয় ও আইয়ুব খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু একই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে ওঠা মুনির চৌধুরীরকে দালাল ও সুবিধাবাদী বলে গালাগাল করে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর কারণ ছিল, পাকিস্তানের কুখ্যাত তথ্য সচিব আলতাফ গওহরের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্কসহ আরও কিছু সুবিধা নেওয়ার ঘটনা। এই ঘটনা উমরের মতো আমাকেও বেশ বিস্মিত করে। তবে আমাকে আরও বিস্মিত করে বিনা দ্বিধায় উমরের এই স্পষ্ট বর্ণনাভঙ্গি। কোনো আড়াল নেই।

এটাই অবশ্য ক্লাসিক্যাল উমর। এটা জীবনের শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন তিনি। কোনো প্রলোভনই তাঁকে নিজের অবস্থান থেকে নড়াতে পারেনি। এমনকি কখনো কোনো পুরস্কারও নেননি তিনি। 'বামপন্থার সুরতহাল' বইয়ে মহিউদ্দিন আহমদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের পুরস্কার না নেওয়ার অবস্থানকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, 'আমি নিজের তাগিদে, নিজের আনন্দে বই লিখি। এর জন্য কেউ আমাকে পুরস্কার দেবে, এটা আমি গ্রহণ করতে পারব না। এটা এক ধরনের ইগো বলতে পারেন। হ্যাঁ, স্বীকৃতির বিষয় যেটা হচ্ছে, আমার বইয়ের ওপর আলোচনা হোক, লেখালেখি হোক। এটা ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে পুরস্কার দেবে টাকা দিয়ে এটা ত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, আমি নিজের তাগিদে, নিজের আনন্দে বই লিখছি। কোনো পুরস্কারই সে জন্য আমি নিইনি।'
শুনতে সরল মনে হলেও দীর্ঘ জীবনে এই নৈতিক অবস্থানে স্থির থাকা সহজ ব্যাপার না। এইটা মূলত ব্যক্তির সাহসী এবং জেদি অবস্থান, এটা একজন মানুষের হয়ে ওঠার ব্যাপার। এমন সিদ্ধান্ত হয়তো আপনাকে তাৎক্ষণিক অনেক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবে, কিন্তু একসময় এই অবস্থানটাই ঐতিহাসিক ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। যা কোটি পুরস্কারেও কখনো পাওয়া যায় না। যা উমরের ক্ষেত্রেও হয়েছে। কিন্তু আফসোস হচ্ছে বদরুদ্দীন উমরের মতো খুব অল্প সংখ্যক লোকজনই এ সত্য অনুধাবন করতে পারেন এবং মানতে পারেন। এই উপলব্ধির জন্য অবশ্য অমরত্বের সন্তানও হতে হয়। উমর আমাদের ইতিহাসে তেমনই একজন।