বদরুদ্দীন উমর: কেন তাঁকে আমাদের মনে রাখতে হবে

মানুষ বা যে-কোনো প্রাণীরই দৈহিক অস্তিত্ব নশ্বর। চুরানব্বই বছর বয়সে বদরুদ্দীন উমরের জীবনাবসানকে কিছুতেই অকালমৃত্যু বলা যাবে না। অন্তত এই অর্থে যে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর চেয়ে অনেক বেশিদিন তিনি বেঁচেছিলেন। তারপরও তাঁর ভক্ত-অনুরাগী কিংবা বিরোধী কেউই মনে হয় এ সময়ে তাঁর বিদায়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি নিজেও জীবনের শেষদিক অবধি নিজেকে সক্রিয় রেখেছিলেন। লেখালেখিতে যতটা না তার চেয়ে বেশি বক্তৃতা-বিবৃতি ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। তাঁর ভক্ত-অনুসারীদের যেমন তেমনি সমালোচকদেরও যা তর্ক-বিতর্কের খোরাক যুগিয়েছে। রাজনৈতিক আদর্শের দিক থেকে সমমতাবলম্বী না হয়েও কেবল পছন্দসই হওয়ায় অনেকে এ সময় তাঁর কিছু কিছু বক্তব্যকে লুফে নিয়েছে।
তাঁকে আমি প্রথম দেখি ১৯৬৮ সালে। আমি তখন নবম বা দশম শ্রেণির ছাত্র। ম্যাক্সিম গোর্কির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তৎকালীন পাক-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে সেখানকার মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত এক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিভক্তির প্রভাবে ততদিনে এদেশেও গোপন কমিউনিস্ট পার্টি এবং তার প্রকাশ্য গণসংগঠনগুলো স্পষ্ট দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একদল সোভিয়েতপন্থী ও অপর দল চীনপন্থী।
বদরুদ্দীন উমর কিন্তু তখনও সোভিয়েতপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া) বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে অতিথি হন, মাঝে মাঝে দৈনিক সংবাদ-এ কলাম লেখেন। মনে আছে এমন একটি কলামে তিনি ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ছয় দফার সমর্থনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে তেজগাঁ ও নারায়ণগঞ্জে কারখানা শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের উল্লেখ করে লিখেছিলেন, সে আন্দোলনের বিপ্লবী সম্ভাবনা কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের শ্রেণিগত চরিত্র ও আপোসকামিতার কারণে ব্যর্থ হয়। যেভাবে পরেও তিনি মনে করেছেন ১৯৭১ এর ৭ মার্চ মুজিব যদি রেসকোর্সে সমবেত জনতার মিছিল নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট অবরোধ করতেন তবে সেদিনই এদেশে পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটতো (তাঁর এ ভাবনাটি যে কেন ও কতখানি অবাস্তব ছিল সে বিষয়ে আমি অন্যত্র লিখেছি)। মস্কোপন্থী বামদের সঙ্গে উমর তাঁর সম্পর্কচ্ছেদ ঘটান সম্ভবত ১৯৬৯-এ যখন তারা জামায়াত-নেজামসহ পাকিস্তানের দক্ষিণপন্থী দলগুলোর সঙ্গে আইয়ুব-বিরোধী ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়। যা পরিণতি লাভ করে 'ড্যাক' গঠনে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী হিসেবে মুজিব তখন কারাগারে। তবে নিশ্চয় তাঁর সম্মতি নিয়েই আওয়ামী লীগও এই জোটে যোগ দেয়।
ভাসানী-ন্যাপ ও ভুট্টোর পিপলস পার্টি এই জোটে শরিক হয়নি। আমি যদি স্মরণ করতে ভুল না করি, তবে সে সময় থেকেই উমর সাহেব আওয়ামী লীগের পাশাপশি মস্কোপন্থীদের বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। প্রথমদিকে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করার বিষয়টিই তাঁর সমালোচনায় প্রাধান্য পায়। সাম্প্রদায়িকতা ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতার মতো বইয়ের লেখকের পক্ষে যে-অবস্থানটা তখন খুবই স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল।
গোর্কি জন্মশতবর্ষের সেই আলোচনাসভায় বদরুদ্দীন উমরের বক্তব্য আমাকে এবং সম্ভবত উপস্থিত অনেককেই মুগ্ধ করেছিল। এর বছর তিন আগে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়ে গেছে। যুদ্ধ চলাকালে এবং তার পরও বেশ কিছুদিন আমাদের পত্রপত্রিকায় পাকিস্তানি বাহিনীর যেসব বীরত্বগাথা প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যেত কোনো কোনো রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে ফেরেশতারাও যুদ্ধ করেছেন। সে প্রসঙ্গ টেনে উমর প্রশ্ন করেছিলেন, তবে বদর-ওহুদের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে সাহায্য করতে আসমান থেকে ফেরেশতারা নেমে এলেন না কেন? সেদিনের আলোচনাসভায় পূর্ববর্তী এক বক্তা মমতাজউদ্দীন আহমদ (তিনি তখন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষক) গোর্কির মা উপন্যাসটির শিল্পমূল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন।
তাঁর মতে এর সার্থকতা যতটা না উপন্যাস হিসেবে তার চেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডা লিটারেচার হিসেবে। বলেছিলেন, মা-র চেয়ে গোর্কির ক্লিম সামাগিনের জীবন উপন্যাস হিসেবে অনেক বেশি সার্থক (পরে আবিষ্কার করেছি, ট্রটস্কিসহ কেউ কেউ এমন মত প্রকাশ করেছেন)। তখন পর্যন্ত মা ছাড়া গোর্কির আর কোনো রচনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি (ওই বয়সে সে উপন্যাসটিরই বা কতটা কী বুঝেছিলাম?)। ফলে উমর সাহেব যখন তাঁর বক্তৃতায় মা-র পক্ষে দাঁড়িয়ে মমতাজউদ্দীন আহমদকে রীতিমতো তুলোধুনো করেন, আমিও সবার সঙ্গে বোধহয় রাজনৈতিক দায়িত্বজ্ঞানে তুমুল করতালিতে তাঁকে অভিনন্দিত করেছিলাম। সময়ের ব্যবধানে আজ নির্দ্বিধায় বলতে পারি, মা-র সঙ্গে তুলনায় গোর্কির বেশকিছু গল্প, দু-একটি নাটক এবং আত্মজৈবনিক উপন্যাসত্রয়ী অধিক শিল্প-সফল রচনা।
শিল্প-সাহিত্য বিচারে উমরের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় সমসময়ে সুকান্ত সমগ্র-এর ভুমিকা হিসেবে লিখিত তাঁর একটি ক্ষুদ্র রচনায়ও। সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর সম্পাদিত সুকান্ত সমগ্র-এর ভুমিকায় কয়েকবারই সুকান্তের একুশ বছরের স্বল্পায়ু জীবনের উল্লেখ করায় এতে তিনি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে একহাত নিয়েছেন। তাঁর মতে এর দ্বারা সুকান্ত প্রতিভার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যদিও সুকান্ত সমগ্র-এর এদেশীয় যে-সংস্করণটির ভূমিকা হিসেবে উমর তাঁর লেখাটি লিখেছিলেন তা ছিল প্রকৃতপক্ষে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত সুকান্ত সমগ্র-এরই পুনর্মুদ্রণ।

বদরুদ্দীন উমর তাঁর ভূমিকায় লিখেছেন, "নজরুল ইসলাম সহ অন্যান্য যে সমস্ত কবি সামাজিক শোষণের উপর কবিতা রচনা করেছেন ... তাঁরা কেউই যথার্থভাবে শ্রেণী সচেতন ছিলেন না। তাঁরা কেউই শোষিত জনতার সাথে উপযুক্তভাবে একাত্মতা বোধ করেননি। দ্বিতীয়ত এই কারণেই তাঁদের এ জাতীয় রচনা তাঁদের সামগ্রিক রচনার মধ্যে একটা ক্ষুদ্র অংশ অধিকার করে ছিল। সুকান্তর সমগ্র কাব্য প্রচেষ্টাই কিন্তু শ্রেণী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ। তিনি শ্রেণী সংগ্রামেরই কবি। ... এখানে সুকান্ত নিজের স্বাতন্ত্র্যে এমন উজ্জ্বল যে তার গৌরব বৃদ্ধি করা অথবা তার অসম্পূর্ণতা সম্পর্কে পাঠকদের কাছে তার একুশ বছরের উল্লেখ সবদিক দিয়েই সম্পূর্ণ নিষ্প্রয়োজন।"
২
বদরুদ্দীন উমরের কাছে শ্রেণীই প্রধান বা একমাত্র সত্য: 'তাহার উপরে নাই'। ইতিহাস বা ব্যক্তিকে তিনি এই শ্রেণী দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচার করেন। একজন কমিউনিস্ট হিসেবে তাঁর এই দেখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম। তবে তাঁর বিচার-বিশ্লেষণে সরলীকরণের ঝোঁকটা যে কখনো কখনো খুব প্রবল হয়ে ওঠে তার নমুনা হিসেবে আমরা এখানে ২০১৭ সালের ২১ মে জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ জাদুঘরে প্রদত্ত তাঁর লিখিত ভাষণটির উল্লেখ করতে পারি। এতে তিনি জিয়াকে 'মুজিবের ছোটভাই' বলে উল্লেখ করেছিলেন। আর যেহেতু শ্রেণি অবস্থানের দিক থেকে মুজিব, জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনা ও ড. ইউনূসের মধ্যে কোনো তফাত নেই, সেহেতু তিনি তাঁদেরকে এক পর্যায়ভুক্ত করেছিলেন।
তবে সে ভাষণেই তিনি বোধহয় প্রথমবারের মতো মুজিবকে একজন 'বড় মাপের নেতা' বলে স্বীকৃতি দেন। তারপরও তিনি সে বক্তৃতায় কিংবা তার আগেপরে সবসময় ও বারবার মুজিবকেই দেশের সব দুরবস্থার জন্য দায়ী করেছেন। কারণ তাঁর মতে এই দুরবস্থার সূচনা ১৯৭২ সালে কিংবা তারও আগে ১৯৭০ সালে মুজিব ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয়ের মধ্য দিয়ে। উক্ত বক্তৃতায় উমর আরও বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশে সমাজতন্ত্রের আদর্শ খুবই জনপ্রিয় ছিল। উমরের এই পর্যবেক্ষণটা কতটা সঠিক বা বাস্তবসম্মত? তাঁর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন তোলাই যায়, সমাজতন্ত্রের কোন মডেলটা জনগণ তখন পছন্দ করতো? সোভিয়েত, চীনা, কোরীয়, আলবেনীয় নাকি অন্য কোনো মডেল? নেতা হিসেবে ভাসানীর জনপ্রিয়তাকেও কি উমর সাহেবদের আকাক্সিক্ষত সমাজতন্ত্রের মডেলের সঙ্গে এক করে দেখা যায়? ১৯৬৯ সালের পর তো ভাসানী ইসলামী সমাজতন্ত্রের কথা বলতে শুরু করেন। যে-কারণে উমর সাহেব এ সময় তাঁর লেখায় ভাসানীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা প্রচারের অভিযোগ তোলেন। সারা দেশের মানুষ চেনে, আস্থা রাখতে পারে, এমন একজনও বাম নেতা কিংবা একটিও বাম রাজনৈতিক দল কি তখন দেশে ছিল? ১৯৭০-৭১ সালে কিংবা তারপর?
৩
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনা নিঃসন্দেহে বদরুদ্দীন উমরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি যদি আর কিছু না-ও করতেন কেবল এই কাজটির জন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকতেন। তবে তিনি বোধহয় মনে করেন, ইতিহাস কেবল ঘটনার বর্ণনা নয়, একটি দৃষ্টিভঙ্গিও। সে দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা চালিত হওয়ার ফলে ভাষা আন্দোলনের দুটি পর্বেই এর পেছনে কমিউনিস্ট বা বামপন্থীদের ভূমিকাকে তিনি যে বা যতটা গুরুত্বে তুলে ধরেছেন, তমদ্দুন মজলিস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বা শক্তির ভূমিকা সে তুলনায় কমই স্থান পেয়েছে। একথা অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে।
তাছাড়া বইগুলো লিখিত হয়েছে প্রধানত তাজউদ্দীন আহমদের দিনলিপি ও তাঁর সরবরাহকৃত দলিলপত্র, মাহমুদ আলী সম্পাদিত নওবেলাল পত্রিকার ফাইল এবং কিছু ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিচারে যাঁদের অধিকাংশই সে সময় কমবেশি বামমনোভাবাপন্ন ছিলেন।
উমর নিজে জাতীয়তাবাদী নন। বাঙালি বা বাংলাদেশী কোনো অর্থেই নন। তবে ১৯৬০ দশকের শেষার্ধ থেকে ১৯৭১ অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল অবধি এদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একাংশের মধ্যে সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে তাঁর সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৮) বই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁর এই ঐতিহাসিক অবদানের কথা আমাদের স্মরণ রাখতেই হবে।
সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ 'মুসলমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন'-এ আমাদের ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উমর লিখেছেন, "পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম বাঙালী মুসলমান 'মুসলমান বাঙালী'তে রূপান্তরিত হতে শুরু করলো ...। এইভাবে মধ্যবিত্ত বাঙালী মুসলমানদের জীবনে সূত্রপাত হলো এক অভূতপূর্ব চেতনার।"
অবশ্য এর পরবর্তী বাক্যেই তিনি লিখেছেন: "পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা দ্বারা মুসলমানদের মধ্যে যদি কোন সত্যিকার বিপ্লব ঘটে থাকে তাহলে এই হলো তার সঠিক পরিচয়।"
জিন্নাহকে বদরুদ্দীন উমর দেখেছেন একজন বাস্তববাদী, বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে (এ বিষয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির আশ্চর্য মিল লক্ষ করা যায়, দেখুন: অসমাপ্ত আত্মজীবনী)। জিন্নাহর প্রতি উমরের শ্রদ্ধার প্রমাণ হিসেবে আমরা এখানে তাঁর সাম্প্রদায়িকতা বইটিতে জিন্নাহর উল্লেখে বা তাঁর নামের সঙ্গে সর্বত্র 'কায়েদে আজম' কথাটা ব্যবহারের উদাহরণ দিতে পারি (৩২ পৃষ্ঠার বইয়ে মোট ২১ বার)। উমর তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক সততার পরিচয় দিয়েছেন বইটির বাংলাদেশোত্তর সংস্করণেও তা অপরিবর্তিত রেখে। বলা যায় এখানেই তিনি আমাদের লেখক-বুদ্ধিজীবীদের সারিতে ব্যতিক্রম।

৪
ভাষা আন্দোলনের সময় বদরুদ্দীন উমর ছিলেন বয়সে তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কিন্তু তমদ্দুন মজলিসের সঙ্গে শিথিল ধরনের যোগাযোগ ছাড়া এ পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর কোনো ভূমিকা ছিল বলে জানা যায় না। তিনি নিজেও তেমনটা দাবি করেননি। যদিও একই সময়কালে তাঁর বাবা আবুল হাশিম (যদিও তিনি তখন দৃষ্টিশক্তিহীন) সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচিতে শুরু থেকে কখনো বক্তা আবার কখনো সভাপতি হিসেবে যুক্ততার মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একুশে ফেব্রুয়ারির পর বন্দি হয়ে তাঁকে দীর্ঘ সময় কারাগারেও কাটাতে হয়। তবে তারুণ্যের দিনগুলোতে ভাষা আন্দোলনে অংশ না নিলেও, পরবর্তীকালে উমর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনার দায় অনুভব করেছিলেন। কাজটি যখন শুরু করেন তখন তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
একইভাবে ১৯৬০ দশকের শেষার্ধে আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংগ্রামেও উমরের পিতা আবুল হাশিমের ছিল নেতৃস্থানীয় ভূমিকা। বেতারে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধের সপক্ষে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, সরকারি উদ্যোগে বাংলা হরফ সংস্কারের প্রচেষ্টা, রাষ্ট্রবিরোধী অভিযোগে কয়েকটি বই (যার মধ্যে উমরের সংস্কৃতির সংকট ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা বই দুটিও ছিল) নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি প্রতিটি ঘটনায় তিনি বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে সামনের সারিতে থেকে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছেন। ইসলামী একাডেমীর পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকায় এবং নিজেও তিনি ইসলামী শাস্ত্রে সুপণ্ডিত হওয়ায়, আবুল হাশিমের এই প্রতিবাদী অবস্থান সেদিন আমাদের স্বাধিকার সংগ্রামে বাড়তি বল সঞ্চার করেছিল। আর এ পর্যায়ে তাঁর পুত্র বদরুদ্দীন উমরের লেখা বইগুলো আমাদের সংগ্রামে তাত্ত্বিক আয়ুধের কাজ করেছে।
মার্কসবাদে বদরুদ্দীন উমরের দীক্ষা ঘটে ১৯৬০ এর দশকের গোড়ায় যখন তিনি বিলেতে পড়তে যান। উপমহাদেশের আরও অনেক অভিজাত বামপন্থীর মতো অক্সফোর্ডের পরিবেশেই তাঁর বিপ্লবী চিন্তার স্ফূরণ ঘটে। এই অভিজাততন্ত্রী বিপ্লবীয়ানার ঐতিহ্য তিনি আজীবন বহন করেছেন, শিষ্য-অনুরাগীদের মধ্যেও সঞ্চার করেছেন বললে ভুল হবে না। পরবর্তীকালে সক্রিয় রাজনীতি করতে গিয়ে কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন — অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছেন। সে প্রচেষ্টায় ব্যক্তিগতভাবে তাঁর হয়তো সততা ও আন্তরিকতারও কমতি ছিল না। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চম্মন্যতা মনে হয় সেখানে বাধ সেধেছে।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের নামটিও প্রায় সুশীলগন্ধী, কৃষক-শ্রমিকরা তো নয়ই, দেশের অল্প মানুষই সে দলটির নাম জানে। দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় বাম-বুদ্ধিজীবী ও চিন্তক পরিচয়েই শেষ পর্যন্ত বদরুদ্দীন উমর বেঁচে ছিলেন। যদিও নিজে তিনি সব সময় তাঁর কমিউনিস্ট বা একটিভিস্ট পরিচয়টিকেই মুখ্য করে তুলতে চেয়েছেন। বললে অত্যুক্তি হবে না, সাংগঠনিক কাজে তিনি বরং তাঁর প্রতিভার অপচয়ই ঘটিয়েছেন। তাঁর সফল সাংগঠনিক উদ্যোগ বলতে দীর্ঘজীবী সংস্কৃতি পত্রিকা এবং অধুনা হীনপ্রভ লেখক শিবির। সমাজতন্ত্র-অনুরাগী সাহিত্যকর্মীদের সংগঠন হিসেবে লেখক শিবির এ যাবত দেশে নতুন ধারার কোনো সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলন সৃষ্টি করতে পেরেছে কি? বরং নিকট অতীতে এই সংগঠনের উচ্চপদাধিকারী কেউ কেউ উমরের বিপরীত পথেই হেঁটেছেন বলে জানি।
৫
বদরুদ্দীন উমরের প্রতিষ্ঠান বিরোধী অবস্থান, এমনকি রাজনৈতিকভাবে যাঁরা তাঁর সঙ্গে একমত নন, তাঁদের চোখেও তাঁকে শ্রদ্ধার উচ্চ আসনে বসিয়েছে। যে-দেশে পুরস্কার-পদক ইত্যাদির বিনিময়ে আনুগত্য ক্রয় একটি সাধারণ ব্যাপার, আর লেখক-শিল্পীদের অনেকে এগুলো পাওয়ার জন্য পারেন না এমন কিছু নেই, সেদেশে একে একে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক ফিরিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। হয়ে উঠেছেন যাকে বলে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার প্রতীক। তবে এর আগেও তিনি আরেকটি কাজ করেছেন। পার্টির নির্দেশে নয়, আপন সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতার সম্মানজনক ও নিশ্চিত আয়ের চাকরি ছেড়ে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মীর জীবন বেছে নেয়া। আর আজীবন তাতেই নিরত থাকা। ভুল হোক কিংবা শুদ্ধ, এমন উদাহরণ আমাদের দেশে বেশি নেই।
এক সময় আমরা জানতাম, পাকিস্তান আমলে বদরুদ্দীন উমর তাঁর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লেখাগুলোর জন্য সরকারের চক্ষুশূল হয়ে তাঁর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরিটি হারান। তবে ঘটনাটি ঠিক এভাবে ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে যা ঘটেছিল উমরের কাছ থেকেই তা জানা যায়। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান (যিনি ছিলেন প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর) উপাচার্য মুহম্মদ শামসউল হককে বলেছিলেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বদরুদ্দীন উমরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। শামসউল হক বামপন্থী ছিলেন না, বরং রক্ষণশীল ধারারই মানুষ ছিলেন তিনি (পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে যথাক্রমে ইয়াহিয়া এবং জিয়াউর রহমান ও সাত্তার মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন)।
তাছাড়া বর্তমানের মতো তখন বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসন পায়নি। তবে শিক্ষা প্রশাসনে তখনও বোধহয় শিরদাঁড়াসম্পন্ন মানুষের অভাব ঘটেনি। শামসউল হক গভর্নরকে জানিয়েছিলেন, শুধু লেখালেখির কারণে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ তাঁর নেই। শামসউল হক রাজশাহী ফিরে গিয়ে উমরকে গভর্নরের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তার বিষয়ে অবহিত করলে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর সরকারি চাপ কমাতে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দেন। তবে উমর সাহেব নিজেই জানিয়েছেন, এটাও মূল কারণ নয়। যেহেতু ততদিনে তিনি সর্বসময়ের জন্য রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
উমর সব সময় বলে এসেছেন মনের তাগিদেই তিনি লেখেন, পুরস্কার বা স্বীকৃতির জন্য নয়। কিন্তু অন্যরাও কি সবাই পুরস্কারের আশায় লেখেন? তাও বোধহয় না। তারপরও ১৯৭৩ সালে তাঁর বাংলা একাডেমি পুরস্কার গ্রহণ না করার পেছনে একটা শক্ত যুক্তি ছিল। এ ধরনের পুরস্কার বা সম্মাননা লেখকের চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর প্রভাব ফেলে, তাকে প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের অনুগত বা সেবাদাসে পরিণত করতে পারে। তাঁর সেদিনকার ভাষাটা ছিল স্পষ্ট প্রত্যাখ্যানের।
কিন্তু পরবর্তীকালে বিশেষ করে সর্বশেষ স্বাধীনতা পদকের বেলায় তা অপারগতায় রূপ নিয়েছে। যেন পুরস্কারের ব্যাপারে পূর্বের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। অন্তত এ উপলক্ষে তাঁর দলের তরফ থেকে যে প্রেস-বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয় তাতে তেমন মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে (পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায় সরকারকে ধন্যবাদও দেওয়া হয়েছে তাতে)। তারপরও তাঁর পূর্বাপর স্ববিরোধিতাহীন এই ভূমিকা, চারিত্রিক সংহতির এই দৃষ্টান্তের জন্য বদরুদ্দীন উমর আমাদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। চিরকাল শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন। এটাই বা কজন পারেন?
বদরুদ্দীন উমরের শিষ্য-অনুসারী কিংবা সাধারণভাবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল কেউ কিন্তু তাঁর এই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার আদর্শ অনুসরণ করতে এগিয়ে আসেননি। আগামীতে আসবেন তেমন সম্ভাবনাও কম। সেই দায়ও কি কেউ অনুভব করেছেন? মনে হয় না। এখানেই তাঁর অনন্যতা, আবার এখানেই তিনি সম্পূর্ণ একা। সমাজ কিংবা জনগণের পাল্স বোঝার ক্ষেত্রে এদেশের ট্রাডিশনাল কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর অক্ষমতা বা ব্যর্থতার তিনি সমালোচনা করেছেন। বেশ কঠোরভাবেই করেছেন। তাঁর এই উপলব্ধির যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু জীবনকালে তিনি বা তাঁর প্রতিষ্ঠিত পার্টি এক্ষেত্রে নতুন কোনো সম্ভাবনার সূচনা করতে পেরেছে কি?
এই দেশ ও সমাজ তাঁর কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করেনি বলে মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি একাধিক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। জীবনের উপান্তে পৌঁছে এই অনুভবজাত খেদই কি নানা প্রসঙ্গে তাঁর বিবিক্ত মনোভাবের পরিচয় হয়ে প্রকাশ পেয়েছে?
৬
মৃত্যুর আগে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে দেওয়া বদরুদ্দীন উমরের কিছু বক্তব্য চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। মুক্তিযুদ্ধের 'সত্যিকার ইতিহাস', ২৫ মার্চ রাতে মুজিবের স্বেচ্ছা-বন্দিত্ব ইত্যাদি নিয়ে এসব প্রশ্ন বা সমালোচনা একেবারে নতুন নয়। এর আগেও উমর নিজে এবং অন্যরা এ নিয়ে অল্পবিস্তর কথাবার্তা বলেছেন। লেখালেখিও কম হয়নি।
তবে এবারে দেখা গেছে তাঁর মতাদর্শের বিপরীত অবস্থানের লোকজন এমনকি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতাকারীরাও তাঁর সে কথাগুলোকে নিজেদের সপক্ষে ব্যবহার করছেন। বদরুদ্দীন উমরের মতো একজন মানুষ বলেছেন বলেই কথাগুলোর মূল্য বা গুরুত্ব যেন তাঁদের কাছে বেশি। অত্যুৎসাহী কেউ কেউ সাক্ষাৎকারের ছলে তাঁকে দিয়ে কিছু কথা বলিয়েও নিয়েছেন বলে মনে হয়।
এ প্রসঙ্গে তাঁর মতামত বা সমালোচনাগুলোর সবই অবান্তর, অযৌক্তিক বা ভিত্তিহীন তা বলবো না। কিন্তু তাঁর বিচারে বুর্জোয়া ধারার একজন রাজনীতিক দেশের ভেতরে আত্মগোপন করে গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ পরিচালনা করবেন এটাই বা কতখানি প্রত্যাশিত? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে নেই (আমি আমার অন্য লেখায় করেছি)। কিন্তু এ প্রসঙ্গে যে-প্রশ্নটি এড়ানো যায় না তা হলো, তিনি নিজে তো ওই সময়টিতে সক্রিয় রাজনীতি করতেন, ছিলেন একটি বাম রাজনৈতিক দলের (ইপিসিপি-এমএল) কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা।
তো একাত্তরের নয় মাসে তাঁর দলটি জনগণকে সংগঠিত ও তাদেরকে সশস্ত্র প্রতিরোধে শামিল করার ব্যাপারে কতটা কী করেছিল? তিনি ও দলের অন্য নেতারা তো এ সময় কেবল দলিল-পাল্টা দলিল রচনায়ই সময় ব্যয় করেছেন। তাঁর নিজের স্বীকৃতি অনুযায়ী তিনি এ সময় প্রথমে ১৮ ও পরে ৬৪ পৃষ্ঠার দুটি দলিল রচনা করেন (দেখুন : দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকার, ২৬ মার্চ ২০২৫)। পরিস্থিতি মূল্যায়নে পার্টির অন্য নেতাদের ব্যর্থতা উপলব্ধির পরও যুদ্ধের পুরো সময়টা তিনি দলেই রয়ে গেলেন কেন? কেন ১৯৭১ এর ডিসেম্বরের আগে তিনি পার্টির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে পারলেন না?
বলা যায় জীবনের শেষদিকেই দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'লড়াই করতে গিয়ে আমি দেখেছি, আমি দক্ষিণপন্থীদের দিক থেকে বিরোধিতা পাইনি, সব বিরোধিতা পেয়েছি বামপন্থীদের কাছ থেকে।' (দেখুন : ঐ) ঘোষিতভাবে কমিউনিস্ট বা মার্কসবাদী হয়েও তাঁর 'দক্ষিণপন্থীদের দিক থেকে বিরোধিতা না পাওয়ার' কারণটি তিনি কখনো অনুসন্ধান করে দেখেছেন কিনা জানি না। আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর অনুসারী-অনুরাগীদের এ বিষয়ে একটি আত্মানুসন্ধান বা আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
৭
সবকিছুর পরও বদরুদ্দীন উমর আমাদের একজন ব্যতিক্রমী চিন্তক ও বুদ্ধিজীবী। সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর অনেক কটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাঁকে বহু আগেই দেশের একজন শ্রেষ্ঠ গবেষক ও পণ্ডিতের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও খ্যাতি বা পরিচিতি এনে দিয়েছে। জীবনকালে তাঁর সংগঠক ব্যক্তিত্ব এবং সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে প্রতিক্রিয়াধর্মী বা সাংবাদিকতামূলক রচনা ও বক্তৃতা-বিবৃতিই হয়তো অনেকের কাছে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এখন আমাদেরকে আবার তাঁর সেই কালোত্তীর্ণ কাজগুলোর দিকেই ফিরে তাকাতে হবে। সামনে এগোনোর জন্য সেগুলোই হবে আমাদের মহামূল্য পাথেয়।
লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক