Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
August 04, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, AUGUST 04, 2025
মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন

ইজেল

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস; রূপান্তর: মারুফ হোসেন
25 July, 2025, 12:05 pm
Last modified: 25 July, 2025, 12:04 pm

Related News

  • উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা
  • ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 

মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস; রূপান্তর: মারুফ হোসেন
25 July, 2025, 12:05 pm
Last modified: 25 July, 2025, 12:04 pm

অপূর্ব সুন্দরী সে, হরিণীর মতো ছিপছিপে গড়ন। ত্বক কোমল রুটিরঙা, আমন্ডের মতো এক জোড়া সবুজ চোখ।  কাঁধ অবধি নেমে এসেছে একরাশ কালো চুল। আর চেহারায় এমন এক প্রাচীন আভা, যা আন্দিজের হতে পারত, আবার ইন্দোনেশিয়ারও। তার পোশাকে পরিশীলিত রুচির ছাপ—লিঙ্কসের চামড়ার জ্যাকেট, সূক্ষ্ম ফুলের কাজ করা খাঁটি রেশমের ব্লাউজ, প্রাকৃতিক লিনেনের প্যান্ট আর বুগেনভিলা ফুলের রঙে চিকচিক করা সরু ফিতের জুতো। আমি তখন প্যারিসের শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে নিউইয়র্কগামী বিমানে ওঠার লাইনে দাঁড়িয়ে। ঠিক সেই সময় তাকে হেঁটে যেতে দেখলাম সিংহীর মতো নিঃশব্দ পদক্ষেপে। দেখার সঙ্গে সসঙ্গে ভাবলাম, 'আমার জীবনে দেখা এ-ই সবচেয়ে সুন্দরী নারী।' তার আগমন ছিল এক অপার্থিব আবির্ভাব। সে এল এক মুগ্ধতার ঝলক হয়ে—তারপর টার্মিনালের ভিড়ে মিলিয়ে গেল। 

সকাল বাজে নয়টা। সারা রাত ধরে তুষার পড়েছে, শহরের রাস্তায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি যানজট, আর হাইওয়েতে গাড়িঘোড়া কচ্ছপের মতো গড়াতে গড়াতে চলছে। বিশাল ট্রেইলার ট্রাকগুলো সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, আর গাড়ির জানালায় তুষার জমে যাচ্ছে। তবে বিমানবন্দরের টার্মিনালের ভেতরে তখনো বসন্ত।

আমি দাঁড়ালাম এক বয়স্ক ডাচ মহিলার পেছনে, যিনি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তার এগারোটা স্যুটকেসের ওজন নিয়ে তর্ক করে যাচ্ছেন। একঘেয়েমিতে ভুগতে শুরু করেছি যখন, ঠিক তখনই চোখে পড়ল সেই রমণীর মুহূর্তের আবির্ভাব। তার সৌন্দর্যে নিশ্বাস আটকে এল। তাই কীভাবে শেষ হলো সেই ডাচ মহিলার তর্ক, জানি না। হঠাৎ টিকিট ক্লার্ক ঘোর ভাঙিয়ে দিয়ে তিরস্কারের সুরে আমাকে মেঘের রাজ্য থেকে নামিয়ে আনল। দৃষ্টিভ্রমের অজুহাতে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, সে প্রথম দর্শনে প্রেমে বিশ্বাস করে কি না। কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে সে বলল, 'অবশ্যই। অন্য কোনো ধরনের প্রেম তো অসম্ভব।' এরপর জানতে চাইল, আমি ধূমপায়ী আসন চাই কি না।

'যেকোনো একটা হলেই চলবে—যতক্ষণ না ওই এগারোটা স্যুটকেসের পাশে বসতে হয়,' ইচ্ছাকৃত দুষ্টুমির ছলে বললাম।

মেয়েটি পেশাদার হাসিতে আমার কথার তারিফ করল, তবে চোখ সরাল না পর্দা থেকে।

'একটা সংখ্যা বেছে নিন,' বলল সে, 'তিন, চার অথবা সাত।'

'চার।'

তার হাসিতে ফুটে উঠল বিজয়োল্লাস। 

'এখানে পনেরো বছর কাজ করছি,' বলল সে, 'আপনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি সাত নম্বর বাছেননি।'

বোর্ডিং পাসে সিট নম্বর লিখে আমাকে সব কাগজপত্র ফেরত দিল মেয়েটি। এই প্রথম আমার দিকে আঙুররঙা চোখ তুলে তাকাল সে, যা সেই সুন্দরীকে আবার দেখার আগপর্যন্ত আমার জন্য সান্ত্বনা হয়ে রইল। তারপরই সে জানাল, বিমানবন্দর এইমাত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; সব ফ্লাইট দেরি হবে।

'কতক্ষণ?'

'ঈশ্বর জানেন,' মুখে হাসি ধরে রেখে বলল সে। 'রেডিওতে আজ সকালে বলেছে এটা নাকি বছরের সবচেয়ে বড় তুষারঝড় হবে।'

সে ভুল বলেছে: ওটা ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে বড় তুষারঝড়। কিন্তু ফার্স্ট-ক্লাস ওয়েটিং লাউঞ্জে এখনো বসন্ত—ফুলদানিতে তাজা গোলাপ, এমনকি ক্যানে-বাজানো সংগীতও তার স্রষ্টাদের ইচ্ছেমতোই মহৎ ও প্রশান্তিদায়ক মনে হচ্ছিল। 

হঠাৎ মনে হলো, এই জায়গাটাই হতে পারে সেই সুন্দরীর জন্য উপযুক্ত আশ্রয়—আর আমি নিজের দুঃসাহসে নিজেই স্তম্ভিত হয়ে তাকে অন্য ওয়েটিং রুমগুলোতে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু প্রতিটি কোণেই বাস্তব জগতের পুরুষ—হাতে ইংরেজি খবরের কাগজ। তাদের স্ত্রীরা অন্য কারও কথা ভাবতে ভাবতে দূরের জানালা দিয়ে দেখছিল বরফে মোড়া বিমান, বরফঢাকা কারখানা, আর রোয়াসির সুবিশাল তুষারভুমজি—যেন হিংস্র সিংহের আক্রমণে বিধ্বস্ত। দুপুর নাগাদ বসার মতো আর কোনো জায়গা রইল না। গরম এতটাই অসহনীয় হয়ে উঠল যে আমি একঝলক বাতাসের জন্য বাইরে পালিয়ে এলাম। 

বাইরে বেরিয়ে এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখলাম। সব ধরনের মানুষে গিজগিজ করছে প্রতিটি ওয়েটিং রুম, দমবন্ধ করা করিডর আর সিঁড়ির ধাপেও শিবির গেড়েছে তারা। কেউ শুয়ে আছে মেঝেতে, সঙ্গে বাচ্চা-কাচ্চা, মালপত্র, এমনকি পোষা প্রাণীও। শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আর পুরো বিমানবন্দরকে—এই স্বচ্ছ প্লাস্টিকের প্রাসাদটা—দেখাচ্ছে দুর্যোগে আটকে পড়া বিশাল মহাকাশযানের মতো। কেন যেন মনে হচ্ছিল, সেই সুন্দরীও নিশ্চয়ই এই জনারণ্যের কোথাও আছে। এই কল্পনা আমাকে অপেক্ষা করার জন্য নতুন সাহস জোগাল।

দুপুরের খাবারের সময় হতেই আমরা বুঝে গেলাম, আমাদের জাহাজডুবি হয়েছে। সাতটা রেস্তোরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া আর ভিড়ে ঠাসা বারের বাইরে অন্তহীন লাইন। তিন ঘণ্টার মধ্যে সব বন্ধ করে দিতে হলো; কারণ, খাওয়ার বা পান করার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। শিশুরা—যাদের তখন মনে হচ্ছিল যেন সারা পৃথিবীর সব বাচ্চা একসাথে এখানে হাজির—একযোগে কাঁদতে শুরু করল। মানুষের ভিড় থেকে উঠতে লাগল পশুপালের মতো একটা গন্ধ। সবকিছু তখন শুধুই প্রবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল। এই হুড়োহুড়ির মধ্যে যা জোটালাম, তা হলো বাচ্চাদের দোকান থেকে বেঁচে যাওয়া শেষ দুটো ভ্যানিলা আইসক্রিমের কাপ। খদ্দেররা একে একে চলে যাচ্ছে, ওয়েটাররা টেবিলের ওপর চেয়ার তুলে রাখছে, আর আমি কাউন্টারে বসে খুব ধীরে ধীরে আইসক্রিম খাচ্ছি। আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছি—হাতে ছোট কাগজের কাপ, তাতে শেষ আইসক্রিম, সঙ্গে শেষ কাগজের চামচ—আর ভাবছি সেই নারীকে।

নিউইয়র্কগামী ফ্লাইট, যেটি সকাল এগারোটায় ছাড়ার কথা ছিল, ছেড়ে গেল রাত আটটায়। আমি যখন কোনোমতে বোর্ডিং শেষ করলাম, ততক্ষণে ফার্স্ট ক্লাসের অন্য যাত্রীরা সবাই যার যার সিটে বসে পড়েছে। একজন এয়ার হোস্টেস আমাকে আমার সিটে পৌঁছে দিল। আমার হৃৎস্পন্দন যেন থেমে গেল। আমার ঠিক পাশের আসনে, জানালার ধারে, অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীর দক্ষতায় নিজের জায়গা গুছিয়ে নিচ্ছে সেই সুন্দরী। ভাবলাম, 'যদি কখনো এ কথা লিখি, কেউ বিশ্বাস করবে না।' আমি অপ্রস্তুত, অস্পষ্ট একটা সম্ভাষণ করলাম; সেটা তার কানেই পৌঁছাল না।

সে এমনভাবে গুছিয়ে বসছিল যেন বহু বছর ওখানেই থাকবে বলে এসেছে। প্রতিটি জিনিস নির্দিষ্ট জায়গায় পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখল, যতক্ষণ না তার আসনটি একটা আদর্শ বাড়ির মতো হয়ে উঠল, যেখানে সবকিছুই হাতের নাগালে পাওয়া যাত। এর মধ্যে একজন স্টুয়ার্ড আমাদের জন্য শ্যাম্পেন নিয়ে এল। তাকে দেবার জন্য একটা গ্লাস তুলে নিয়েছিলাম, কিন্তু শেষ মুহূর্তে থেমে গেলাম। কারণ, সে চাইল শুধু এক গ্লাস পানি। স্টুয়ার্ডকে প্রথমে দুর্বোধ্য ফরাসিতে, তারপর খানিকটা ভাঙা ইংরেজিতে অনুরোধ করলে, ফ্লাইট চলাকালীন তাকে যেন কোনো কারণেই জাগানো না হয়। তার উষ্ণ, গভীর কণ্ঠে ছিল প্রাচ্যের বিষাদের ছোঁয়া।

স্টুয়ার্ড পানি নিয়ে আসার পর সে তার কোলে তুলে নিল একটা তামার পাত-মোড়া প্রসাধনীর বাক্স, যেন পুরোনো দিনের দাদির সিন্দুক। সেখান থেকে বের করল এক জোড়া সোনালি ক্যাপসুল, আরও অনেক রঙের বড়ি ছিল বাক্সে। পুরো কাজটা সে এমন এক পদ্ধতিগত, গম্ভীর ভঙ্গিতে করল, যেন জন্মের পর থেকে জীবনে কোনো অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেইনি।

সবশেষে সে জানালার পর্দা নামিয়ে দিল, জুতো না খুলেই কোমরের নিচ পর্যন্ত নিজেকে কম্বলে ঢেকে ফেলল। চোখে চাপাল স্লিপিং মাস্ক, পিঠ ফিরিয়ে দিল আমার দিকে। তারপর নিঃশব্দে ঘুমিয়ে পড়ল। নিউইয়র্ক পর্যন্ত অনন্ত আটটা ঘণ্টা আর অতিরিক্ত বারো মিনিট কাটাল নিস্পন্দ ঘুমে—একটা দীর্ঘশ্বাসও নয়, সামান্য নড়াচড়াও নয়।

সে ছিল এক তীব্র যাত্রা। আমি সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি, প্রকৃতিতে একজন সুন্দরী নারীর চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। আর আমার পাশে ঘুমিয়ে থাকা সেই রূপকথার চরিত্রের জাদু থেকে মুহূর্তের জন্যও নিজেকে মুক্ত করতে পারিনি। বিমান আকাশে উঠতেই বিদায় নিল আগের সেই স্টুয়ার্ড। তার জায়গায় এল একজন নিয়মকানুন মেনে চলা বিমানবালা। সে এসে সুন্দরীকে জাগাতে চাইল, একটা প্রসাধনসামগ্রীর ব্যাগ আর সংগীত শোনার হেডফোন দেওয়ার জন্য। আমি তৎক্ষণাৎ স্টুয়ার্ডকে দেওয়া নির্দেশনাগুলো তাকে বললাম। কিন্তু সুন্দরী যে রাতের খাবারও চায় না, এ কথা তার নিজের মুখ থেকে শোনার জন্য বিমানবালাটি জোরাজুরি করতে লাগল। শেষমেশ আগের স্টুয়ার্ডকে এসে সেই নির্দেশনা নিশ্চিত করতে হলো। তারপরও বিমানবালাটি আমাকে এই বলে ভর্ৎসনা করল যে সুন্দরী তার গলায় 'ডু নট ডিস্টার্ব' লেখা ছোট্ট বোর্ড কেন ঝোলায়নি।

রাতের খাবার খেলাম একা একা। মনে মনে নিজেকে সেই সব কথা বললাম, যা সে জেগে থাকলে তাকে বলতাম। এত স্থির, এত গভীর ছিল তার ঘুম, একসময় শঙ্কা জাগল—সে কি নিছক ঘুমাচ্ছে, নাকি মৃত্যুর ঘুমে ঢলে পড়েছে? যে দুটো সোনালি ট্যাবলেট খেয়েছে, সেগুলো কি নিদ্রার জন্য, না নিস্তব্ধতার শেষ গন্তব্যের জন্য? প্রতিবার পান করার সময় আমি গ্লাস তুলে তার উদ্দেশে বললাম: 'তোমার সুস্বাস্থ্য কামনায়, অপরূপা।'

খাবার শেষ হতেই আলো নিভে গেল। একটা সিনেমা চালানো হলো, যেটা কেউই দেখল না। আর আমরা দুজন এই বিশাল জগতের অন্ধকারে একা হয়ে গেলাম। শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ তুষারঝড় থেমে গেছে, আটলান্টিকের বুকে রাত নেমেছে—আকাশ পরিষ্কার, তারাভরা, নির্মল। বিমানের গতি থেমে আছে যেন, শুধু সময় বয়ে চলেছে। তারপর আমি তাকিয়ে রইলাম তার দিকে, পলকহীন চোখে। ইঞ্চি ইঞ্চি করে মুগ্ধ চখে দেখলাম তাকে কয়েক ঘণ্টা ধরে। তার মধ্যে প্রাণের একমাত্র চিহ্ন খুঁজে পেলাম তার কপালে ভেসে ওঠা স্বপ্নের ছায়ায়। তার কপালটা যেন জলের ওপর ভেসে যাওয়া মেঘের মতো। অপরূপার গলায় একটা সূক্ষ্ম চেইন, এতটাই পাতলা যে সোনালি ত্বকের ওপর প্রায় অদৃশ্য হয়ে আছে। তার নিখুঁত কান দুটো ফোঁড়ানো ছিল না, সুস্বাস্থ্যের কারণে হাতের নখে গোলাপি আভা। বাঁ হাতে একটা সাদামাটা আংটি। মেয়েটির বয়স যেহেতু কুড়ির বেশি মনে হচ্ছিল না, আমি নিজেকে প্রবোধ দিলাম—ওটা নিশ্চয় বিয়ের আংটি নয়, বরং কোনো ক্ষণস্থায়ী বাগদানের চিহ্নমাত্র। 'তোমার ঘুমঘোরে জেনেছি আমি—নিশ্চিন্ত, নিষ্কলঙ্ক, নিবেদনময় এক স্রোত, স্নিগ্ধ রেখা, এতটাই কাছে, অথচ আমার বেঁধে রাখা হাতের বাইরে।'—শ্যাম্পেনের ফেনার চূড়ায় বসে গেরার্দো দিয়েগোর সেই অমর সনেট মনে পড়ে গেল। তারপর নিজের সিটটা পেছনে হেলিয়ে দিলাম, যাতে তার সিটের সমান্তরাল হয়ে যাই। এখন আমরা পাশাপাশি—এমনকি স্বামী-স্ত্রীর বিছানাতেও হয়তো এমন ঘনিষ্ঠ হওয়া যেত না। তার শ্বাসপ্রশ্বাসও কণ্ঠের মতোই উষ্ণ; আর তার ত্বক থেকে উঠে আসছিল এক স্নিগ্ধ সুবাস, যেটা একমাত্র তার রূপ থেকেই নিঃসৃত হতে পারে।

অবিশ্বাস্য লাগছিল সবকিছু। গত বসন্তে ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার এক অসাধারণ উপন্যাস পড়েছিলাম—প্রাচীন কিয়োতোর একদল সম্ভ্রান্ত মানুষ রাতভর বিপুল অর্থ ব্যয় করত শহরের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের নগ্ন ও মাদকগ্রস্ত অবস্থায় দেখার জন্য, তাদের পাশে সারা রাত কেবল শুয়ে থাকার জন্য। ওই মেয়েদের জাগানো যেত না, ছোঁয়াও যেত না; অবশ্য কেউ সে চেষ্টাও করত না। কারণ, তাদের আসল আনন্দই ছিল এই মেয়েদের ঘুমাতে দেখা। সেই রাতে, আমি যখন অপরূপার ঘুমের প্রহরী হলাম, তখন কেবল সেই জাপানি সৌন্দর্যচর্চার মর্মই বুঝিনি—তাকে পূর্ণ মাত্রায় উপলব্ধিও করলাম।

শ্যাম্পেনের নেশায় ডুবে গিয়ে আপনমনে বললাম, 'কে ভেবেছিল, এই শেষ বয়সে এসে আমি এক প্রাচীন জাপানি হয়ে উঠব।'

শ্যাম্পেনের দাপট আর সিনেমার নিঃশব্দ বিস্ফোরণে পরাভূত হয়ে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বোধ করি। জেগে উঠতেই মনে হলো মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। বাথরুমে গেলাম। ফেরার পথে আমার আসনের দুই সিট পেছনে তাকিয়ে দেখি, সেই এগারোটা স্যুটকেসওয়ালা বৃদ্ধা। এমন বিদঘুটে ভঙ্গিতে পড়ে আছে, যেন যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলে রাখা এক বিস্মৃত মরদেহ। রঙিন পুঁতির মালায় গাঁথা তার চশমাটা গড়িয়ে পড়ে আছে আলের মাঝখানে। মুহূর্তের জন্য অদ্ভুত এক দুষ্টু আনন্দে ভরে উঠল মন—চশমাটা না তুলে রেখে দেব।

শ্যাম্পেনের বাড়াবাড়ি থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আয়নায় নিজেকে দেখলাম—গা ঘিনঘিনে আর কুৎসিত। অবাক হয়ে ভাবলাম, প্রেমের ধ্বংসলীলা এতটাও ভয়াবহ হতে পারে! একটা আকস্মিক ঝাঁকুনিতে বিমান নিচে নেমে এল, তারপর আবার সামলে নিয়ে ছুটে চলল পূর্ণ গতিতে। 'রিটার্ন টু ইয়োর সিট' সাইনটা জ্বলে উঠল। আমি তড়িঘড়ি বেরিয়ে এলাম—আশা করছিলাম, ঈশ্বরের এই অস্থিরতা হয়তো অপরূপাকে জাগিয়ে দেবে, আর সে হয়তো ভয়ে আমার বাহুতে আশ্রয় নেবে। হুড়োহুড়িতে আরেকটু হলেই ডাচ মহিলার চশমা মাড়িয়ে দিচ্ছিলাম। সত্যি বলতে, দিলে খুশিই হতাম। কিন্তু হঠাৎ থেমে গেলাম। ফিরে গিয়ে চশমাটা তুলে তার কোলে রাখলাম। তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠল মন—তিনি তো আমার আগে সিট নম্বর চারটা নিতে পারতেন!

অপরূপার ঘুম ছিল অজেয়। বিমান স্থির হতেই ইচ্ছা হচ্ছিল কোনো একটা অজুহাতে তাকে একটু নাড়িয়ে দিই। কারণ, সে রেগে গেলেও ফ্লাইটের শেষ ঘণ্টায় তাকে জাগ্রত দেখতে চেয়েছিলাম, যাতে আমি অন্তত আমার স্বাধীনতা ফিরে পাই। ফিরে পাই আমার যৌবনটুকুও। কিন্তু পারলাম না। 'ধুর ছাই!' কষে গাল দিলাম নিজেকে। 'আমি বৃষ রাশির জাতক হলাম না কেন!'

ল্যান্ডিং লাইট জ্বলে ওঠার মুহূর্তে সে নিজে থেকেই জেগে উঠল। তাকে এতটা সতেজ লাগছিল, যেন পুরো রাতটা গোলাপবাগানে কাটিয়ে এসেছে। তখনই বুঝতে পারলাম, বিমানে পাশাপাশি বসা যাত্রীরা ঘুম থেকে উঠে একে অপরকে সুপ্রভাত জানায় না, ঠিক বহুদিনের বিবাহিত দম্পতিদের মতো। সে-ও সুপ্রভাত বলল না। স্লিপিং মাস্ক খুলে দীপ্তিময় চোখে সামনের দিকে তাকাল সে। সিটটা সোজা করে নিল। কম্বল সরাল। চুলে হাত বোলাল—নিজে থেকেই নেমে এল সেটা জায়গামতো। আবার কোলের ওপর রাখল প্রসাধনীর বাক্সটা। দ্রুত, অপ্রয়োজনীয় মেকআপ করল। কাজটা করতে ঠিক ততটুকুই সময় নিল, যাতে বিমানের দরজা খোলার আগপর্যন্ত তাকে আমার দিকে তাকাতে না হয়। তারপর গায়ে চাপাল লিঙ্কসের চামড়ার জ্যাকেটটা। আমার প্রায় গা ঘেঁষে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল 'মাফ করবেন'—একেবারে খাঁটি লাতিন আমেরিকান স্প্যানিশে। না বলল বিদায়, না বলল ধন্যবাদ। আমাদের রাতটাকে সুখের করে তোলার জন্য আমি যা যা করেছি তার জন্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপও কিছু বলল না। আর তারপর মিলিয়ে গেল আজকের রোদে, নিউইয়র্কের আমাজন জঙ্গলের ভেতর।

 

Related Topics

টপ নিউজ

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ / গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস / মার্কেস / গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস / গল্প / সাহিত্য / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • চার শ্রেণি বাদে সব ধরনের ব্যক্তি করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করল এনবিআর
  • যশোরে বিএনপি নেতা ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে ৪ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ
  • মার্কিন শুল্ক হ্রাসের পর স্থগিত কার্যাদেশ ফিরতে শুরু করেছে, স্বস্তির সুবাতাস পোশাকখাতে
  • চাঁদাবাজির ঘটনা আছে তা কেউই জানতাম না, রিয়াদের ডাকে গিয়ে ফেঁসে গেছি: আদালতে অপু
  • এক হাজারেরও বেশি নতুন ওষুধের দ্রুত নিবন্ধন চান ওষুধ উৎপাদকরা
  • ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইট হঠাৎ বন্ধ, সিইওর বিরুদ্ধে দেশ ছেড়ে পালানোর অভিযোগ

Related News

  • উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা
  • ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 

Most Read

1
অর্থনীতি

চার শ্রেণি বাদে সব ধরনের ব্যক্তি করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করল এনবিআর

2
বাংলাদেশ

যশোরে বিএনপি নেতা ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে ৪ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ

3
অর্থনীতি

মার্কিন শুল্ক হ্রাসের পর স্থগিত কার্যাদেশ ফিরতে শুরু করেছে, স্বস্তির সুবাতাস পোশাকখাতে

4
বাংলাদেশ

চাঁদাবাজির ঘটনা আছে তা কেউই জানতাম না, রিয়াদের ডাকে গিয়ে ফেঁসে গেছি: আদালতে অপু

5
বাংলাদেশ

এক হাজারেরও বেশি নতুন ওষুধের দ্রুত নিবন্ধন চান ওষুধ উৎপাদকরা

6
বাংলাদেশ

ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইট হঠাৎ বন্ধ, সিইওর বিরুদ্ধে দেশ ছেড়ে পালানোর অভিযোগ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net