Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
October 02, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, OCTOBER 02, 2025
ব্রিটানিয়া টকিজ—ঢাকার এক নিঃসঙ্গ সিনেমা হলের গল্প

ইজেল

তারেক আজিজ
03 December, 2024, 03:40 pm
Last modified: 03 December, 2024, 03:51 pm

Related News

  • নারকেল ‘ফারাওয়ের বাদাম’!
  • ডাবের আশ্চর্য শহরযাত্রা!
  • নারকেল নেমেছে যুদ্ধে: প্রাণ বাঁচায়, জীবন পোড়ায়
  • নারকেল: মানবসভ্যতার প্রাচীন সঙ্গী
  • আইজ্যাক বাবেলের গল্প | বুড়ো শ্লয়মি

ব্রিটানিয়া টকিজ—ঢাকার এক নিঃসঙ্গ সিনেমা হলের গল্প

নতুন রেস্তোরাঁ আর পানশালার পাশাপাশি ব্রিটানিয়া টকিজকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে বাঙালির নানান ব্যবসা। হলের সাথে লাগোয়া এক টিনের ঘরে চালু হয় হিমাংশু দত্তের ফটোগ্রাফির দোকান 'মাই স্টুডিও' যেখানে সিনেমা শেষে হল থেকে বেরিয়ে টমি আর জি আই সেনারা জড়ো হতো ছবি তোলার জন্যে
তারেক আজিজ
03 December, 2024, 03:40 pm
Last modified: 03 December, 2024, 03:51 pm
ছবি: ১৯৪৪ সালে রেজ স্টোনের তোলা আলোকচিত্রে ব্রিটানিয়া টকিজ। সংগ্রহ: টলসন মিউজিয়াম

সময়টা ১৯৪০ সাল। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তখন ছাত্র, সবেমাত্র ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রমনাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দালানকোঠার থেকে বেশি চোখে পড়ে ছায়াময় সুবিশাল গাছের সারি, সবুজ ঘাসে ঢাকা বড় বড় মাঠ আর এখানে-সেখানে ছড়িয়ে থাকা জলাধার। চমৎকার সেই ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে এসে তিনি দেখলেন, সেখানে স্কুল-কলেজের মতো পড়া ধরা নেই, শিক্ষকদের শাসনের ব্যস্ততা নেই, মাঝেমধ্যে ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার পথেও কোনো বাধা নেই। অল্প বয়স থেকেই নাটক, সিনেমার অনুরাগী ছিলেন কবীর চৌধুরী। তারুণ্যের দিনগুলোতে তিনি ঝুঁকে পড়েন ইংরেজি সিনেমার দিকে। সেকালের ঢাকায় সিনেমা হল ছিল হাতে গোনা, ইংরেজি সিনেমা দেখানোর হল ছিল আরও সীমিত। জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে কবীর চৌধুরী স্মৃতিচারণা করেছেন সে সময়ের, 'আজ থেকে সত্তর-বাহাত্তর বছর আগে ঢাকা শহরে সিনেমা হল ছিল পাঁচটি, তার মধ্যে একটির কথা, সব সময় সবার মনে থাকে না, তার অস্তিত্ব আর এখন নেই, নতুন-পুরাতন কোনো নামেই নেই। সেটা ছিল বিচিত্র একটি হল, পল্টনের বিরান এলাকায় নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকা একটা লম্বা প্রেক্ষাগৃহ।' হারিয়ে যাওয়া 'নিঃসঙ্গ' সেই সিনেমা হলের নাম ব্রিটানিয়া টকিজ, যেখানে দেখানো হতো কেবলমাত্র ইংরেজি সিনেমা। ঢাকার বর্তমান গুলিস্তান এলাকায় ছিল এই হলের অবস্থান। কবীর চৌধুরী এবং এমন আরও অনেকে, যারা বেড়ে উঠেছেন চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশকের ঢাকায়, তাদের স্মৃতিকথায় ঘুরেফিরে বারবারই এসেছে শহরের বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া ব্রিটানিয়া টকিজের নাম। 

শুরুর কথা

বাংলার ছায়াচিত্র বার্ষিকী থেকে ১৯৪৩ সালের ঢাকায় কমপক্ষে ৭টি সিনেমা হলের নাম জানা যায়, এগুলো হলো পল্টনের ব্রিটানিয়া টকিজ, আশেক জমাদার লেনের লায়ন সিনেমা, জনসন রোডের মুকুল থিয়েটার, বংশালের মানসী, সদরঘাটের রূপমহল, আরমনিটোলার নিউ পিকচার হাউস এবং আলী নকির দেউড়ির তাজমহল টকিজ। তবে অন্য সব হল থেকে ব্রিটানিয়া ছিল অনেকটা ভিন্ন ধরনের। অন্যান্য হলে নির্বাক, সবাক বাংলা, হিন্দি ভাষার সিনেমার পাশাপাশি নাটক ও নাচগানের ব্যবস্থা থাকলেও ব্রিটানিয়া টকিজে শুরু থেকেই কেবল সবাক ইংরেজি সিনেমাই প্রদর্শিত হতো; কারণ, এর প্রাথমিক দর্শকই ছিল ঢাকায় বসবাসরত ইংরেজরা।

বিশ শতকের প্রথমভাগে বঙ্গভঙ্গ রদের পর ঢাকায় ইংরেজ সিভিলিয়ানের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। তবে অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠার পর ঢাকায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। এসব কর্মকাণ্ড নজরদারি ও দমনের উদ্দেশ্যে ইংরেজ সরকার ত্রিশের দশকে ঢাকায় স্থায়ীভাবে সামরিক ছাউনি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দুই দফায় ডর্সেটশায়ার রেজিমেন্টের কয়েক শ ইংরেজ সৈন্য ও অফিসার ঢাকা পৌঁছে; তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বর্তমান পলাশী এলাকার বিশাল ফাঁকা মাঠে ব্যারাক বানিয়ে বসবাস শুরু করে। এর এক বছর পর ঢাকায় আসে নরফোক রেজিমেন্টের সেনাসদস্যরা। রেজিমেন্টের অফিসারদের থাকার জন্য রমনাজুড়ে কিছু পাকা বাংলোর ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ ইংরেজ সৈন্যের জায়গা হয় বাঁশের তৈরি ঘরে। নিয়ম করে তাদের টহলদারি আর ফ্ল্যাগ মার্চ চলতে থাকে।

ছবি: ১৯৩৪ সালের আলোকচিত্রে ঢাকায় নরফোক রেজিমেন্ট। সংগ্রহ: নরফোক মিউজিয়াম

ইংরেজ সেনাদের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। অলস সময় কাটানোর জন্য তখন ঢাকার একমাত্র উপাদান রেসকোর্স। মাঝে মাঝে হকি খেলার আয়োজন করত তারা। ক্যাম্পে মাঝেমধ্যে সিনেমা দেখবার আয়োজন করা হতো। ডর্সেট টকিজ নামে একটি অস্থায়ী সিনেমা হল গড়ে ওঠে। তবে এ আয়োজন ছিল অনিয়মিত। এ অবস্থায় ১৯৩৬ সালে বাঁশের তৈরি এক কাঠামোতে যাত্রা শুরু করে ব্রিটানিয়া টকিজ। ব্রিটানিয়া টকিজের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিল, সে বিষয়ে কিছু জানা যায় না, তবে ১৯৪৮ সালের দাপ্তরিক কাগজপত্রে প্রোপাইটার হিসেবে এসব পাঠকের নাম দেখা যায়। 

'ব্রিটানিয়া' ছিল ত্রিশূল ও ঢাল ধারণ করা এক নারী যোদ্ধা, যাকে রোমান শাসনের কাল থেকে ইংরেজ জাতির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। নরফোক রেজিমেন্টের প্রতীকও ছিল এই ব্রিটানিয়া। ব্রিটানিয়া টকিজের লোগোতেও ব্রিটানিয়ার উপস্থিতি লক্ষণীয়। তাই ধারণা করা যায়, প্রাথমিকভাবে ইংরেজ সৈন্যদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল বলে সিনেমা হলের নাম রাখা হয়েছিল ব্রিটানিয়া। প্রথম দিকে অবশ্য এই হলের নাম ছিল দ্য ব্রিটানিয়া সিনেমা। পরে নাম বদলে হয় ব্রিটানিয়া টকিজ—দ্য হোম অব ইংলিশ পিকচার্স। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ব্রিটানিয়া টকিজ

১৯৩৯ সালে গোটা ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সুদূর ভারতবর্ষেও পৌঁছে যায় বিশ্বযুদ্ধের আঁচ। ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসে জাপান বার্মা দখল করে নেয়, এপ্রিল নাগাদ জাপানি বিমানবহর গোটা ভারত মহাসাগরের ওপর তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণে কেঁপে ওঠে কলকাতা, আন্দামান আর কলম্বো। ঢাকা হয়ে উঠে চীন-বার্মা-ইন্ডিয়া তথা ব্রিটিশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ এক পশ্চাৎ ঘাঁটি। মার্কিন তত্ত্বাবধানে পরিচালিত তেজগাঁও ও কুর্মিটোলার বিমানঘাঁটিগুলোয় মার্কিন বিমানসেনাদের পাশাপাশি ইংরেজ ও গুর্খা সেনারাও যোগ দেয়। সেনা অফিসারদের থাকার জন্য পুরানা পল্টনের বেশ কিছু বাড়ি অধিগ্রহণ করে ইংরেজ সরকার। যুদ্ধে আহত সেনাদের চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলায় তৈরি করা হয় ফিল্ড হাসপাতাল, রমনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবহৃত তিনটি দালানে গড়ে ওঠে জেনারেল হাসপাতাল। চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় বিপুলসংখ্যক ভিনদেশি চিকিৎসক ও নার্সের সমাগম ঘটে। এদের মাঝে প্রচুর অ্যাংলো ইন্ডিয়ানও ছিল। ঢাকা প্রকৃত অর্থেই এক আন্তর্জাতিক নগরী হয়ে ওঠে। ঢাকায় সমবেত নানা দেশের সৈন্য আর চিকিৎসাকর্মীদের জন্য সান্ধ্য বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে ব্রিটানিয়া টকিজ। যুদ্ধকালে ঢাকায় অবস্থানরত ভিনদেশি নাগরিকদের দিনলিপি, চিঠিপত্র আর স্মৃতিকথায় এসেছে ব্রিটানিয়া প্রসঙ্গ। 

ছবি: ত্রিশের দশকে তোলা আলোকচিত্রে ঢাকার ডর্সেট টকিজ। সংগ্রহ: নরফোক মিউজিয়াম

বিলেতি নাগরিক রবার্ট এরিক হিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রয়্যাল ইঞ্জিনিয়ার্সের সদস্য হিসেবে ঢাকার কুর্মিটোলা এবং তেজগাঁও বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধদিনের কথা তিনি নোট করে রাখতেন তার ডায়েরিতে। নিয়মিত সিনেমা দেখার অভ্যাস ছিল রবার্টের। ডায়েরিতে উল্লেখ পাওয়া যায় বন্ধু পিটার উড্রোর সাথে মোটরসাইকেলে চেপে নভেম্বরের এক সন্ধ্যায় কুর্মিটোলা থেকে পল্টনে এসে সিনেমা দেখবার কথা, সে রাতে নৈশভোজও পল্টন থেকে সেরে গিয়েছিলেন। ব্রিটানিয়া টকিজের কাছেই ইংরেজ ও মার্কিন সৈন্যদের পানাহারের জন্য গড়ে উঠেছিল নতুন রেস্তোরাঁ রঁদেভু। সাংবাদিক জিন রোপারের স্মৃতিচারণায় এসেছে ব্রিটানিয়া টকিজ প্রসঙ্গ। যুদ্ধকালে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি চিরচেনা ঢাকা শহরকে কীভাবে রাতারাতি পাল্টে ফেলে তা দেখা মিলে রোপারের লেখায়—'পুরো শহর যেন হঠাৎই জেগে উঠল। নতুন সব দালানকোঠা আর রাস্তা তৈরি হলো, সারা দিন সে রাস্তায় ছুটে চলল নানা রকমের মোটর গাড়ি। অপর দিকে আকাশ ছেয়ে গেল অগণিত যুদ্ধবিমানে। নতুন সব খদ্দেরের উপস্থিতিতে ও. কে. রেস্টুরেন্ট জমজমাট হয়ে উঠল, সিভিল স্টেশনে চালু হলো নতুন রেস্তোরাঁ রঁদেভু। সিনেমার আকর্ষণে মার্কিন সেনারা ছুটে গেল ব্রিটানিয়ায়। প্রিয়জনের জন্য কেনাকাটায় শহরের রেশম কাপড় আর গয়নার দোকানে তাদের ভিড় জমে উঠল।'

নতুন রেস্তোরাঁ আর পানশালার পাশাপাশি ব্রিটানিয়া টকিজকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে বাঙালির নানান ব্যবসা। হলের সাথে লাগোয়া এক টিনের ঘরে চালু হয় হিমাংশু দত্তের ফটোগ্রাফির দোকান 'মাই স্টুডিও' যেখানে সিনেমা শেষে হল থেকে বেরিয়ে টমি আর জি আই সেনারা জড়ো হতো ছবি তোলার জন্যে। ১৯৪৪ সালে ব্রিটানিয়া টকিজের খুব কাছে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর জানা যায়। ওই দুর্ঘটনায় এটি-১৬ নামের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে দুই মার্কিন সেনার করুণ মৃত্যু হয়। তবে যুদ্ধ চলাকালে হলের কোনো ক্ষতি হয়েছিল বলে জানা যায় না।

বাঙালির স্মৃতিতে ব্রিটানিয়া

ইংরেজভাষীদের পাশাপাশি ব্রিটানিয়া টকিজের দর্শকের একটি বড় অংশ ছিল বাঙালি। সে সময়ে লায়ন সিনেমায় দেখানো হতো হিন্দি-উর্দু ছবি, যার দর্শক ছিল মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষ। অভিজাত ব্যক্তিরা ভিড় জমাত মুকুল সিনেমায়, যেখানে মূলত কলকাতায় তৈরি বাংলা ছবি দেখানো হতো। অপর দিকে ইংরেজি জানা লোকেদের, বিশেষ করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গন্তব্য ছিল ব্রিটানিয়া টকিজ। ব্রিটানিয়ার সেই অদম্য আকর্ষণ বিষয়ে কবীর চৌধুরীর বক্তব্য, 'ওই হলে আমি ও আমার ভাই মুনীর অনেক ইংরেজি ছবি দেখেছি, বহু প্রসিদ্ধ তারকার অভিনয় দেখে চমৎকৃত হয়েছি: রবার্ট টেইলার, ক্লার্ক গ্যাবল, স্পেন্সর ট্যাসি, এরল ফ্লিন, ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কস, মার্লিন ডিয়েট্রিচ, বেটি ডেভিস, গ্রেটা গার্বো, মেরিলিন মনরো, জেন ফন্টেইন এবং আরও কত কত অভিনেতা-অভিনেত্রী।' ব্রিটানিয়ায় সব সময় যে দর্শকে পূর্ণ থাকত, তা না। একদিনের কথা কবীর চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, 'সেদিন আবহাওয়া ভালো ছিল না। আকাশে ঘন মেঘ, মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। সিনেমা দেখতে এসেছি আমি ও মুনীরসহ সর্বসাকুল্যে পাঁচজন। ছবি শুরু হবার নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট আগে মালিকের প্রতিনিধি আমাদের সামনে এসে করজোড়ে বললেন, আজ শো হবে না, আমরা যেন তাদের ক্ষমা করে দিই, পাঁচজন দর্শক খুবই কম সংখ্যক, এই টিকিট দিয়েই আমরা পরবর্তী যেকোনো দিন যেকোনো শো দেখতে পারব। কী আর করা, আমরা হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছিলাম। সেদিন কী সিনেমা ছিল মনে নেই কিন্তু নাম করা একটা ফিল্ম যে ছিল, সে কথা বেশ মনে আছে।' কবীর চৌধুরীর ধারণা, হলের মালিকের নিশ্চয়ই আয়ের অন্য উৎস ছিল, লিখেছেন, 'এটা ছিল তার একান্ত সুখের কারবার।'

ব্রিটানিয়ায় প্রদর্শিত কয়েকটি সিনেমার পোস্টার।

ব্রিটিশরাজের শাসনকালে ইংরেজদের উপস্থিতিতে ব্রিটানিয়া টকিজে সিনেমা দেখতে গিয়ে অপ্রীতিকর এক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন সাংবাদিক আব্দুল মতিন। সে কথা তিনি উল্লেখ করেছেন তার 'স্মৃতিচারণা পাঁচ অধ্যায়' নামের আত্মজীবনীতে; তিনি লিখেছেন, ছবির শেষে পর্দায় 'ইউনিয়ন জ্যাক' ভেসে উঠত এবং ব্রিটেনের জাতীয় সংগীত 'গড সেভ দি কিং' শোনা যেত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের এই প্রতীক আমরা অত্যন্ত ঘৃণা করতাম। তখন সিনেমা হলের দর্শকদের অধিকাংশ ছিল ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ নাগরিক। তারা আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাদের জাতীয় পতাকা ও সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করত। আমরা একমুহূর্তও অপেক্ষা না করে বেরিয়ে যেতাম। ব্রিটিশ 'টমি'দের তা পছন্দ হয়নি। তাদের একজন আমাদের এক বন্ধুকে একদিন আক্রমণের চেষ্টা করে। তার পর থেকে আমরা খুব সতর্ক থাকতাম এবং ছবি শেষ হওয়ামাত্র সাবধানে হল থেকে বেরিয়ে পড়তাম।

দেশভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে থিতু হন সাহিত্যিক, সম্পাদক মীজানুর রহমান। ঢাকা পুরাণে ব্রিটানিয়া টকিজকে নিয়ে নস্টালজিক হয়েছেন তিনি, 'গুলিস্তান সিনেমার উল্টো দিকে ওই যেখানে সাধারণ বিমার সদন, সেখানে ছিল ব্রিটানিয়া হল। তখন তো পুরো এলাকাটাই ছিল ন্যাড়া, ঘরবাড়ি বলতে তেমন কিছু ছিল না। ছিল কিছু ক্লাবঘর, ডিএসএ গ্রাউন্ড আর বাকিটা সবুজ। এই সবুজের পটে ওই একরত্তি হল।...দেখতে মোটেও সুশ্রী নয়, কিম্ভুত একটা গুদোমঘর বুঝিবা! কলকাতার টকি শো হাউসকে মনে করিয়ে দেয়। ভেতরে বসার আয়োজনও তেমনই, যেন বা অতিথি এসেছে, সম্ভ্রম বুঝে বাড়ি থেকে, ধারকর্জ করে, কিছু সস্তায় বানিয়ে আনা সোফা, চেয়ার...তেকেলে, নড়বড়ে। মার্কিন-ইংরেজ সেনারা বিদেয় নিয়েছে সেই কবে, কিন্তু হলের শুধুই ইংরেজি ছবি দেখানোর ঐতিহ্যটুকু থিতু ছিল ওই চল্লিশের শেষ পাদেও। কত ছবি দেখেছি: রোনান্ড কোলম্যানের ভালো ও মন্দে মেশানো দ্বন্দ্ববিধুর ডাবল লাইফ, এস্থার উইলিয়ামসের হাসি রাশি বিকিনি শো বেদিং বিউটি, লরেল-হার্ডির হাস্যেলাস্যে ভরপুর এ হান্টিং উই উইল গো, পিটার উস্তিনভ অভিনীত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধনির্ভর ছবি সাহারা, আর সাত-আটবার দেখেও তৃষ্ণা মেটেনি যে ছবি—স্যার লরেন্স অলিভিয়ার অভিনীত শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট।'

১৯৪৮ সালে ব্যবহৃত ব্রিটানিয়া টকিজের ফাইল। ছবি সৌজন্যে: অধ্যাপিকা লট হোক, এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্পী মুর্তজা বশীর, বাবা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সাথে জীবনের প্রথম সিনেমা দেখেছিলেন ব্রিটানিয়া টকিজে। পরিণত বয়সে উচ্ছ্বসিত শিল্পী সে কথা স্মরণ করেছেন পরম মমতায়। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতিতে সতত উজ্জ্বল ব্রিটানিয়া টকিজ, তিনি লিখেছেন, 'টিনের শেড দেওয়া গুদামের মতো দেখতে ব্রিটানিয়া। ওই হলের সম্মুখভাগে ছিল দুটো আকর্ষণীয় বড় দেয়াল, যাতে চারশিটের পোস্টার লাগানো থাকত ছবির। একটি দেয়ালে ঘড়ি ংযড়রিহম ব্যানারে যে ছবি চলছে, তার পোস্টার। অন্য দেয়ালটিতে ঈড়সরহম ব্যানারে আগামী ছবির বিজ্ঞাপন। চারশিটের বিরাট পোস্টার এসথার উইলিয়ামস অভিনীত বেদিং বিউটির। বিকিনি পরা এসথারকে হাঁ করে তাকিয়ে দেখার মতো। এ ছবিতেই প্রথম বাস্তব চরিত্রের সঙ্গে অ্যানিমেশনের যোগ অবাক হয়ে দেখি।' কবি শামসুর রাহমান তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে রমনার মনোরম দালান থেকে কলেজ স্থানান্তরিত হয়েছে সিদ্দিকবাজারের এক পুরাতন দালানে। কলেজের দিনগুলোতে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছুটে গেছেন ব্রিটানিয়ায়, তিনি লিখেছেন, প্রক্সি দিয়ে দাও ছুট ব্রিটানিয়া সিনেমা হলের দিকে। ব্রিটানিয়া ছিল তখনকার অভিজাত সিনেমা হল, যেখানে শুধু ইংরেজি ফিল্ম দেখানো হতো। ব্রিটানিয়ায় ম্যাটিনি শোতে বহু নামজাদা ফিল্ম দেখেছি। পল মুনি অভিনীত একাধিক ছবি সেখানেই দেখি। 'গ্রেটা গার্বো' এবং চার্লস বয়ারের 'ম্যারি ওয়ালেস্কা'ও দেখি ব্রিটানিয়ায়। কলেজজীবনের অনেক দুপুরের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বহুকাল আগে লুপ্ত এ সিনেমা হলটিতে। ব্রিটানিয়া টকিজের আরেক নিয়মিত দর্শক ছিলেন নাট্যকার মুনীর চৌধুরী। স্কুল জীবনের শেষ দুটি বছর তাকে সিনেমা দেখার নেশায় পেয়েছিল। কখনো বড় ভাই কবীর চৌধুরীর সাথে, আবার কখনো একাই চলে যেতেন ব্রিটানিয়ায়। অনেকেই মনে করেন যে নাটকের প্রতি তার আকর্ষণের সূত্রপাত সম্ভবত এখান থেকেই হয়েছিল। 

১৯৪৩ সালে ঢাকায় তোলা ছবিতে রবার্ট এরিক হিল।

বেলাশেষে ব্রিটানিয়া

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, ইংরেজ শাসনের অবসান, দেশভাগ, দাঙ্গাসহ বহু ঘটনার সাক্ষী ব্রিটানিয়া টকিজ। বিশ্বযুদ্ধ ও দেশভাগ শেষে ইংরেজভাষী দর্শকদের প্রায় সবটুকুই হারায় ব্রিটানিয়া। ১৯৫০-এর দাঙ্গায় ভাঙচুরের শিকার হয় এই হলো। এরপরও হলটির ব্যবসা টিকে ছিল। তবে সিনেমা প্রদর্শনের পাশাপাশি হলটি নানান সভা, সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্যও ভাড়া দেওয়া শুরু হয়। ব্রিটানিয়া হলে ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একটি উল্লেখযোগ্য আয়োজনের কথা স্মরণ করেছেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সেদিন ছিল প্রথম শহীদ দিবস। ঢাকা কলেজের ছাত্ররা ব্রিটানিয়া হলে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের কণ্ঠে বেশ কয়েকটি গণসংগীত পরিবেশিত হয়। এ ছাড়া ছাত্ররা রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা', দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের 'ধনধান্য পুষ্পে ভরা', অতুল প্রসাদের 'মোদের গরব মোদের আশা', নজরুলের 'কারার ঐ লৌহ কবাট' গানগুলো পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানের শেষে আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...' কবিতায় সুরারোপ করে প্রথমবারের মতো গান আকারে পরিবেশন করেন শিল্পী আব্দুল লতিফ। তার সাথে ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র, পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী আতিকুল ইসলাম এবং আরও কয়েকজন। প্রথমবারের মতো কবিতাটি গান আকারে শুনে ব্রিটানিয়ায় উপস্থিত ছাত্রজনতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন; হলটি এক অভাবনীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে ওঠে।

ইংরেজ খানাপিনার রেস্তোরাঁ রঁদেভু। আলোকচিত্রী: রেজ স্টোন, সংগ্রহ: টলসন মিউজিয়াম

১৯৫৩ সালে ব্রিটানিয়া টকিজের বিপরীতে চালু হয় আলো ঝলমলে, আধুনিক, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সিনেমা হল গুলিস্তান। এ সময়ে গুলিস্তান ভবনে এবং একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে একের পর এক রেস্তোরাঁ, বিপণিবিতান। এককালে সন্ধ্যা নামলে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া পল্টনের মাঠে যে ব্রিটানিয়া টকিজ ভাসমান জাহাজের মতো আলো ছড়াত, নতুন নতুন স্থাপনার ভিড়ে তার আলো ক্রমেই ম্রিয়মাণ হয়ে আসে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় ব্রিটানিয়া টকিজ। হারিয়ে যাওয়া ব্রিটানিয়ার নামটি রয়ে যায় ঢাকাবাসীর স্মৃতির পাতায়, আর সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার খাতায়—

'মর্নিং শোয়ে নেই আভা গার্ডনার,
ব্রিটানিয়া হলে নেই হ্যামলেট ছদ্মবেশে অলিভিয়রের,
গ্রেগরি পেকের পায়ে চকচকে কালো জুতা কখন উধাও...'

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
    রংপুরে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: ৩ উপজেলায় আক্রান্ত ১১ জন
  • পুষ্টিকর ডাবের শাঁসের রয়েছে জনপ্রিয়তা। ছবি: টিবিএস
    ডাবের আশ্চর্য শহরযাত্রা!
  • পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে কৃষিকাজের জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করছেন একজন কৃষক। ছবি: রয়টার্স
    যেভাবে সৌরশক্তিচালিত কৃষিকাজ পানি বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তানকে
  • ইনফোগ্রাফিক: টিবিএস
    সৌর প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমলো উন্মুক্ত দরপত্রে
  • রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলের একটি তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে সচল তেল উত্তোলনের পাম্পিং জ্যাক যন্ত্র। ছবি: ভিটালি তিমকিভ/ স্পুটনিক
    ইউক্রেন যুদ্ধের নতুন মোড়: তেল নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির নতুন খেলা!
  • মোল্লার খিচুড়ি। ছবি: জুনায়েত রাসেল।
    মোল্লা খিচুড়ির টানে পদ্মার পাড়ে

Related News

  • নারকেল ‘ফারাওয়ের বাদাম’!
  • ডাবের আশ্চর্য শহরযাত্রা!
  • নারকেল নেমেছে যুদ্ধে: প্রাণ বাঁচায়, জীবন পোড়ায়
  • নারকেল: মানবসভ্যতার প্রাচীন সঙ্গী
  • আইজ্যাক বাবেলের গল্প | বুড়ো শ্লয়মি

Most Read

1
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: ৩ উপজেলায় আক্রান্ত ১১ জন

2
পুষ্টিকর ডাবের শাঁসের রয়েছে জনপ্রিয়তা। ছবি: টিবিএস
ইজেল

ডাবের আশ্চর্য শহরযাত্রা!

3
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে কৃষিকাজের জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করছেন একজন কৃষক। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

যেভাবে সৌরশক্তিচালিত কৃষিকাজ পানি বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তানকে

4
ইনফোগ্রাফিক: টিবিএস
বাংলাদেশ

সৌর প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমলো উন্মুক্ত দরপত্রে

5
রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলের একটি তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে সচল তেল উত্তোলনের পাম্পিং জ্যাক যন্ত্র। ছবি: ভিটালি তিমকিভ/ স্পুটনিক
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন যুদ্ধের নতুন মোড়: তেল নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির নতুন খেলা!

6
মোল্লার খিচুড়ি। ছবি: জুনায়েত রাসেল।
ফিচার

মোল্লা খিচুড়ির টানে পদ্মার পাড়ে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net