Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
August 01, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, AUGUST 01, 2025
সাগরপাড়ি

ইজেল

শাহীন আখতার
24 September, 2023, 02:30 pm
Last modified: 24 September, 2023, 02:40 pm

Related News

  • উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা
  • ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 

সাগরপাড়ি

স্যুটকেসে তালা পড়ে। আর টাওয়ালে গা ঢাকা দিয়ে বইটা দিব্যি পড়ে থাকে লাগেজের কোনায় ট্রাভেল কিটের কোল ঘেঁষে, যদিও ভ্রমণবিরতিতে সঙ্গ দেওয়ার জন্য এর হ্যান্ডব্যাগে চড়ার কথা ছিল। এমন বিভ্রান্তিতে মহিলা যখন বাসা থেকে বের হন, পাড়াটা তখন নিঝুম।
শাহীন আখতার
24 September, 2023, 02:30 pm
Last modified: 24 September, 2023, 02:40 pm
অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

১.
'এই বইটা সঙ্গে যাচ্ছে? এক হাজার বছরের পুরোনো বই!' ডালা তোলা স্যুটকেসের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ঘরের লোকটা উদাসীন গলায় বলে। জবাবটা দিলেও চলে, না দিলেও চলে। তা ছাড়া মহিলা তখন লাগেজের ওয়েট নিয়ে চিন্তিত। স্যুটকেসে কিছু জিনিস তুলছেন, নামাচ্ছেন। হ্যান্ডব্যাগের জিনিস যেন লাগেজে চলে না যায়, বা সেফটি পিন, নেইলকাটার, সুই, পারফিউমজাতীয় জিনিসপত্র কোনোভাবে হ্যান্ডব্যাগে ঢুকলে চলবে না- এমন সব মামুলি বিষয়েও তার কড়া নজর রাখতে হচ্ছে। তাই তখন স্বামীর কথার জবাব দেওয়ার ফুরসত মেলেনি।

স্যুটকেসে তালা পড়ে। আর টাওয়ালে গা ঢাকা দিয়ে বইটা দিব্যি পড়ে থাকে লাগেজের কোনায় ট্রাভেল কিটের কোল ঘেঁষে, যদিও ভ্রমণবিরতিতে সঙ্গ দেওয়ার জন্য এর হ্যান্ডব্যাগে চড়ার কথা ছিল। এমন বিভ্রান্তিতে মহিলা যখন বাসা থেকে বের হন, পাড়াটা তখন নিঝুম। রাস্তার পাহারাদার কুকুরগুলি ঘেউ ঘেউ করে তাকে বিদায় জানায়। গাড়ির দরজা বন্ধ করতে, পেছনে আখেরি বিদায়ের বার্তা দিয়ে বাসার বাতিগুলিও যেন নিভে যায় পটপট করে।

এবারই এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন?

জানালার কাচ নামিয়ে তিনি গাড়ির বাইরে মুখ বাড়ান। ভোররাতের মিষ্টি বাতাস। কিঞ্চিত দূষণমুক্ত ও শীতল। শহরটাও জনহীন, ট্রাফিকশূন্য বলে রাতজাগা বাতিতে কেমন মায়াপুরী মায়াপুরী দেখায়। এভাবে কিছু দূর এগোনোর পর বাহনটা কোনো কুখ্যাত ময়লাখোলার পাশ দিয়ে যেতে থাকলে বদগন্ধে বাতাস ভরে যায়। মহিলা জানালার কাচ তুলে দিতে আবার সেই ভয়, পরক্ষণেই স্বগত সান্ত্বনাবাক্য- একা একা কী একটা অনিশ্চিত যাত্রা! তা বলে অগস্ত্যযাত্রা তো নয়?

কে জানে!

মানে?

আসলে করোনা মহামারি শিকড় নামিয়ে দিয়ে গেছে একেকজনের পা থেকে। নড়তে-চড়তে টান লাগে। তাই এমন জুজুর ভয়। তা ছাড়া এটা তার দেশের বাইরে একা একা দীর্ঘ ভ্রমণও বটে।

কিন্তু মহিলার এই করোনাকালীন শিকড় চাড়ানোর চিন্তাটা ভুল প্রমাণ করতেই যেন এয়ারপোর্টের টার্মিনাল গেটের মুখে উপচে পড়া ভিড়। সবাই প্রায় অভিবাসী শ্রমিক। বাকিরা তাদের বিদায় জানাতে আসা গ্রাম-উজাড়-করা আত্মীয়-পরিজন। 

'বিদায়-পর্ব কত সাড়ম্বরে হচ্ছে!' ভিড়ের মাঝখান দিয়ে ট্রলি ঠেলে টার্মিনাল গেটের দিয়ে যেতে যেতে ভাবেন তিনি। 'আর সেটা অনিশ্চিত বলেই কি?' 

মহিলা ইমিগ্রেশন শেষে ওয়েটিং এরিয়ায় ঢুকতেই ফের পুরোনো চিন্তাটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। একে তো ফ্লাইট ডিলে, তার ওপর এক হাজার বছরের পুরোনো বই- ইবনে জুবাইরের আন্দালুসিয়া থেকে ভ'মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আরবে তীর্থযাত্রার সফরনামাটি তাঁর হাতব্যাগে নেই। কিন্তু যার সফর বায়ুযানে, তার এক হাজার বছর আগের পালতোলা জলযানের বিবরণ পড়ে ফায়দা কী?

'হুম। ফায়দা অনেক। তা সরাসরি না হলেও।' মহিলা সামনের সারির চেয়ারগুলোতে ঠাসাঠাসি বসা অভিবাসী শ্রমিকদের দিকে তাকিয়ে, স্বামীর সেই প্রশ্নের নিরুচ্চার জবাব দিতে আটঘাট বেঁধে নামেন। 'কে না জানে, এখন জলযানের জমানা আবার ফিরে আসছে! অভিবাসীদের সামনে সমুদ্রপথগুলি বহু দিনের নিদ্রা ভেঙে জেগে উঠছে একে একে। ইবনে জুবাইর আন্দালুসির সময়ের পালখাটা জাহাজ না হলেও হালের বাহন রবারের ডিঙি।' এ তো মিলের কথা। তারপর ঢোক গিলে কিছু জিনিস ইয়াদ করেন তিনি- 'গরমিল যেমন, তখন সামুদ্রিক ঝড়ই কেবল যাত্রীদের দুশমন ছিল, এখন সমুদ্রে রয়েছে বহিঃসীমান্ত রক্ষীবাহিনী। যাদের আছে ড্রোন, মানুষ্যবিহীন ডুবোজাহাজ, ত্রিমাত্রিক রাডার, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিশ্লেষণের যন্ত্র, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, নাইট-ভিশন চশমা ইত্যাদি।'

তার ওপর সাগরের উদ্ধারকারী জাহাজগুলিকেও জেল-জরিমানার ভয় দেখিয়ে হটিয়ে দিয়েছে সমুদ্র সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হোতারা। 

কিন্তু বোর্ডিং পাশ হাতে মহিলার মুখোমুখি চেয়ারে আসীন সবাই তো আর বেআইনিভাবে বাতাসে ফোলানো রবারের ডিঙায় চেপে সাগর পাড়ি দিতে যাচ্ছে না! কজন যাচ্ছে, কতজন যাচ্ছে না- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই যেন সামনের চেয়ারগুলোতে মরিয়া হয়ে চেনা মুখের তালাশ করেন তিনি।

তাঁর শৈশবের একমাত্র অভিবাসী সেই লোক, যে ঘরদোর বেচে সরকারি ইন্ধনে পাহাড়ে হিজরত করেছিল। অপুষ্টিজনিত স্কার্ভি রোগ বা গা-ভর্তি পানি নিয়ে গাঁয়ে ফিরে বলত- পাহাড়ের গাছে গাছে ডিম ফলে, সাপ মানুষের বাচ্চা ফোটায়। তার অনেক বছর পর প্রতিবেশীরা যখন ভিনদেশে পা বাড়ায়, ততদিনে মহিলাও স্থানচ্যুত, শহরে পড়তে চলে এসেছেন। তারপর আর থাকার জন্য গাঁয়ে ফেরা হয়নি। এখন মাঝেসাঝে বেড়াতে গেলে গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে নজরে পড়ে ঝাঁ ঝাঁ টিনের চাল, ডোবাসদৃশ পুকুরপাড়ে আই বা এল-প্যাটার্নের রংবেরঙের দালানকোঠা। আর শোনেন কারও কারও রাতারাতি রাজপুত্র বনে যাওয়ার বা সর্বস্ব খোয়ানোর বা চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার কিংবা লাশ হয়ে ফেরার গল্প।

২.
'রিস্ক না নিলে জীবনে উন্নতি হয়?' গত করোনাকালীন শীতের মৌসুমে আলুখেতের আল বেঁধে দিতে দিতে মহিলাকে বলেছিল আল আমিন। আল আমিন ওমানফেরত শ্রমিক। বিকেলে সবজিখেতে কাজ করে। সকাল থেকে দুপুর লেগুনা চালায়। মহিলা ভাবেন, নানা কারণেই লোকে মারা যায়। গাঁয়ে বেশির ভাগ দিন তাঁর ঘুম ভাঙে মাইকে মৃত্যুসংবাদ শুনে। মৃত্যুসংবাদের পর শুনতে পান টুপটাপ শিশির পতন। আর জানালার পর্দার ফাঁকে ধোঁয়া-নীল আলো দেখে বোঝেন যে সকাল হতে বাকি নেই। সূর্যের দেখা না মিললেও মোরগের ডাকাডাকিতে একসময় সকাল হয়। শিশিরের জালে জড়ানো সকাল। হঠাৎ হঠাৎ দু-চারজন মানুষ সেই জাল ফুঁড়ে মেঠোপথে নেমে আসে। ধ্যানমগ্ন হয়ে হাঁটে। নিঃশব্দে শিশিরের রেশমি চাদরের আড়ালে ফের মিলিয়ে যায়। নৈঃশব্দ্য ভেদ করে আচমকা চিলের চিৎকার ভেসে আসে। তখন একটি-দুটি কাক শিশিরে ডানা ভিজিয়ে এক গাছ থেকে আরেক গাছে পতপত শব্দে উড়ে যায়। এ সময়টা মহিলার ভালো লাগে, এটা তাঁর মর্নিংওয়াকের সময়ও বটে- বলেন তিনি আল আমিনকে। 

কিন্তু দিনের বাদবাকি সময় গ্রামটা মনে হয় শহরের চেয়েও বিপজ্জনক। এটা-সেটা সারাক্ষণ কিছু না কিছু ঘটছেই। দুটি থানা শহর জুড়ে দিতে যে পাকা রাস্তাটা গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে, লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ওখানে দুর্ঘটনা লেগেই আছে। ইঞ্জিন চালু আর বন্ধ করা পর্যন্তই বেশির ভাগ চালকের দৌড়। সময়মতো ব্রেক ধরতেও জানেন না। শাঁই শাঁই চলে সিএনজি, অটোরিকশা। ট্রাক চলে ঝমঝমিয়ে। হর্নের কানফাটা আওয়াজ। এমন পাগলা দৌড় কবে গ্রামতক ছড়িয়ে পড়ল! 

'এমন না হইলে দেশের উন্নতি হইব?' বাড়ির সামনে লেগুনা পার্ক করে বাজারের ব্যাগ হাতে উঠানে নামে আল আমিন। 'মনে করেন, আমি আরব সাগরেও স্পিডবোট চালাইছি। হেইডাও এ লেগুনার মতোই। স্টার্ট দিয়া ছাইড়্যা দিছি।' 

ওমান বলতে আল আমিন অজ্ঞান। প্রিয় নাম সুযোগ পেলেই জপে দিনমান। রাতে স্বপ্নে দেখে ওমানের দুকুমে ফিরে গেছে, যেখানের সাগরে স্পিডবোট থেকে জাল ফেলে ধামা ধামা মাছ ধরত সে। ওমান সাগরে তো মাছ আর পানি সমান সমান! আল আমিন ছেলের হাতে বাজারের ব্যাগ দিয়ে, পকেট থেকে মাস্ক বের করে নাড়াখেতে রোদ পোহাতে মহিলার পেছন পেছন যায়। তারও ভিটামিন-ডি দরকার। গল্পে গল্পে নাড়াখেতে মহিলাকে বলে- সে আরেকবার ওমান যেতে চায়। তা শুধু দুসরাবারের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য নয়, তার বেদুইন মালিকের নামে সাগরপাড়ে যে মসজিদ গড়েছে তার বড় ভাই, সেই মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়বে সে। বড় ভাই ছোট মালিককে খুব ভালোবাসত। শাদির আগে ফুর্তি করতে গিয়ে গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়। মাসকাটের বড় হাসপাতালে নিয়েও বাঁচানো যায়নি। চোখ দুটি মাথার পেছনে গাছের পাকা সুপারির মতো লটকে ছিল। একে তো চাকরি খোয়ানোর ভয়, তার ওপর চোখের সামনে এমন দৃশ্য, আল আমিনরা হেঁচকি তুলে খুব কান্না করেছে। বড় মালিক এখনো তা ভোলে নাই। ঘন ঘন টেলিফোন করে বলে- চলে আয়। তোরা আমার আদরের ভাইয়ের নফর, দোস্ত সবই ছিলি। আমি ফের ব্যবসা চালু করেছি। তোদের ঠকাব না। ইনসাফ পাবি। আল আমিন তাই করোনার মধ্যেও রিস্ক নিয়ে পাসপোর্ট রিনিউ করতে দিয়েছে। 

পরদিন বিকালে ভাগনে শফিউল্লাহও আল আমিনের খেতখামারের সঙ্গী হয়। আল আমিন পেঁয়াজের খেতে নিড়ানি দিচ্ছে, আইলের ঘাস-মাটি-আগাছার পাশে জিনস ও টি-শার্টের শফিউল্লাহ দাঁড়িয়ে। দালালের হাতে টাকা জমা দিয়ে ভিসার ইন্তেজার করছে সে। দেখে মনে হয় দেশে থেকেও নেই, অসম্ভব ঘোরের মধ্যে আছে। কথাও বলে না তেমন। খেতে নিড়ানি দিতে দিতে তার হয়ে আল আমিন বলে-ওমানে গেলেও ভাগিনা শিক্ষিত বিধায় মাছ ধরার কাজ করবে না। এইটা তো জাইল্যার কাম। পৌঁছেই সে গেম মারবে। ওমান-ইরান-তুরস্ক-গ্রিস... 

তখনই শফিউল্লাহর কটা চোখে ফিরোজা-নীল ভ'মধ্যসাগর ঝলকে উঠতে দেখেন তিনি। 

ভিসা হয়তো অচিরেই মিলে যাবে শফিউল্লাহর-আল আমিন বলে। কিন্তু বিদেশযাত্রার তারিখ বলে কিছু নেই। যখন দালালের ডাক আসবে, তখনই টাট্টিতে যাওয়ার বদনি ফেলে হলেও ছুটতে হবে। 

৩.
'ওরা ভীষণ টয়লেট নোংরা করে।' মহিলাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে আসা আত্মীয়টি চলন্ত ট্রেনে বলে। 'দেশ থেকে যে ফ্লাইটেই চড়েন, ওদের এড়াতে পারবেন না।' সে অভিবাসী শ্রমিকদের কথা বলছে।

মহিলার মাথা কেমন ফাঁকা ফাঁকা। মনে হয় তিনি ভিন্ন গ্রহে পৌঁছে গেছেন। ষোলো ঘণ্টা জার্নির পরও এখানে দিন। আলো ফকফক করছে। তাই মাথার ভেতর এমন গোলমাল। শেষ পর্যন্ত ঠিক সময়ে যে আসতে পেরেছেন, তাতেই স্বস্তি। তাঁর স্নায়ুগুলি এখন বিশ্রাম চায়। আর ট্রেনের ভেতরটাও অনেক আরাম। কোনো শব্দ নেই, ঝাঁকানি নেই। মহিলার চোখের পাতা বুজে আসে। কিন্তু আত্মীয়টির তো অনেক কিছু জানা বা বলার আছে। কত দিন পর দেশের আপন কারোর সঙ্গে দেখা! আঙ্কেল কেন সঙ্গে এলেন না, সে শুনেছে তো তিনি রিটায়ার করেছেন গত বছর। তাহলে? 

'ভিসা পেতে প্যারা অনেক।' মহিলা জবাবটা সংক্ষিপ্ত করতে চান। 'আমাদের মতো গরিব দেশের মানুষের জন্য। গরিব এবং মুসলমান।' তারপর নিদ্রাবশত আর বলেন না যে তাঁর কথাটা কয়েক ঘণ্টা আগেই পূর্ববর্তী এয়ারপোর্টে ফলে গেছে। তিনি হিজাবি না হলেও বাদামি চামড়ার। গোপন অঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীর আঙুল ঢুকে গেলে লাফিয়ে ওঠার আগেই দেখেন দশাসই মেয়েটি আরেকজনকে নিয়ে ভিন্ন কায়দায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। 

মহিলা ফের চোখ বোজেন। এত ক্লান্ত! অথচ গত ষোলো ঘণ্টার দৃশ্যাবলি চোখের পাতার নিচে বিরামহীন ছুটছে। তাঁর নিজের দেশের এয়ারপোর্টে আকাশ কালো করে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। কাচের জানালার এপাশ থেকে রানওয়েকে মনে হয় সমুদ্র। আর বিমানগুলি যেন সাঁতরে বেড়ানো বিশাল বিশাল তিমি। এখন টেকঅফ করবে। কিছুটা সময় কয়েকটা তিমিকে মেঘলা আকাশে উড়তে দেখেন তিনি।

ওরা যে দেশের ভাষা জানে না, অক্ষর চেনে না- মহিলার ফের অভিবাসী শ্রমিকদের কথা মনে পড়ে, কীভাবে ডিপারচারের গেট খুঁজে পায়! এক টার্মিনাল থেকে আরেক টার্মিনাল-চলন্ত ওয়াকওয়ের পাশের বিশ্বজুড়ে পরিচিত বিজ্ঞাপনগুলি দেখতে দেখতে তখন ভাবছিলেন তিনি। 

'দেশে যাওয়ার সময়টা আরও খারাপ,' আত্মীয় ছেলেটা ফের অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে বলতে শুরু করে। 'সেটা যদি মর্নিংয়ে ল্যান্ড করা কোনো ফ্লাইট হয়, যাত্রীদের গণ-প্রাতঃকর্ম ঠেকাতে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা চা-কফি সার্ভ করবে না। আপনি চেয়ে নিতে পারবেন। তাতে কিন্তু সমস্যাই বাড়বে। ততক্ষণে টয়লেট তো ফ্লাডেড।'

'চা-কফি ছাড়াই?'

'ছাড়াই।'

এবার মহিলার চোখ থেকে পুরোপুরি ঘুম চলে যায়।

৪.
গ্রামে দিনের বেলাটা মহিলার ভালো কাটত। কিন্তু রাতটা ফুরাত না। দীর্ঘ শীতের রাত। ঘুম ভেঙে ভেঙে মনে হতো তিনি ছোটবেলায় ফিরে গেছেন। সময়টা শীতকাল বলেই হয়তো শৈশবের শীতকালীন দৃশ্যাবলি বাতিনেভা ঘরে তুলার পুঁটলির মতো নির্ভার ভেসে বেড়াত। খেতের আলের ধারের কাদামাটিতে শিশিরভেজা কলমিফুল; মাটির চুলায় ছাইমাজা অ্যালুমিনিয়ামের ডেকচিতে ক্রমে রং হারানো টগবগিয়ে ফোটা সবুজ পেঁয়াজকালি, রাঙা টম্যাটো... 

তিন দিক ঘেরা এসব বাড়ি থেকে তাঁদের আলাদা করে রাখা হতো- বাঁশের পোলোর নিচের পোষা মুরগির ছানার মতো। বড়দের চোখ বাঁচিয়ে কেন তিনি ওখানে হাজির হতেন? তাদের খোলা উঠানের চুলার ধার ছিল অবারিত। শীতে টানতও খুব। হয়তো আগুনের উম উম উত্তাপ। আর সুস্থির, অল্প উপাদানে ধ্যানমগ্ন রান্নাবান্না। একমাত্র এ সময়টাতেই। বাকি সময় ঝগড়া চলত অবিরাম। ঝগড়াঝাঁটি তুঙ্গে উঠলে পাছার কাপড় তুলে প্রতিপক্ষকে দেখাত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। বাচ্চারা কারণে-অকারণে মুখ খারাপ করত। মেজাজ শরিফ যখন, কোঁচড়ে মুড়ি বা চালভাজা নিয়ে পড়ন্ত বেলায় বাড়ি থেকে বেরোত এমন তৈলাক্ত সাজে, যেন তাদের আপাদমস্তক তেলের ড্রামে চুবানো হয়েছে। 

দূরদূরান্ত থেকে রঙিন ফুলতোলা টিনের স্যুটকেস হাতে ঘুরতে ঘুরতে এসব বাড়িতে লোক আসত শাদির পয়গাম নিয়ে। সঙ্গে নয়া লুঙ্গি, হাওয়াই শার্ট, মুখে রুমাল, হাতে মেন্দি আঁকা দামাদ। কাউকে ফেরানো হতো না। এক বসায় পাত্রী পছন্দ করা, বিয়ে পড়ানো, আয়না দেখা, মিষ্টিমুখ সব সারা। ওরা কোথা থেকে আসত আর কোথায় চলে যেত তাঁর ইঁচড়ে পাকা খেলার সাথিদের নিয়ে- তখনো জানতেন না তিনি। দু-চারটা নাম বাতাসে ভেসে বেড়াত- ডেমরা, সাইনবোর্ড, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ। তাদের কারও কারও আর হদিস মিলত না। অন্যরা কোলে-পিঠে বাচ্চা নিয়ে এসে তাঁত বোনার গল্প বলত- সতিন-শাশুড়ির মারধর, কদাচ স্বামীর সোহাগ।

'কেন রাত জেগে এসব ভাবছি!' বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরতেন তিনি। তা-ও এমন মানুষজন নিয়ে, যাদের সঙ্গে কখনো মিশতে দেওয়া হতো না। লুকিয়ে-চুরিয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়লে শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। 

এ কওমের মানুষগুলি আসছে কোথা থেকে- কেউ জানে না। গ্রামের ভিত গড়ার সময় থেকেই হয়তো আছে। তাই কেউ তাদের উচ্ছেদ করেনি। গাঁয়ের অর্ধেক জুড়ে বসলেও ওরা যেন শিকড়-ছাড়া। আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকে। দেশ-বিদেশের ডাকে সাড়া দেয় সবার আগে। সরকারের ডাকে পাহাড়ে বাঙালির সংখ্যা বাড়াতে গেছে। ওখানে অপঘাতে মরেছে অর্ধেক। আর থেকে যাওয়া আর ফেরত আসার সংখ্যাও প্রায় ফিফটি-ফিফটি। সেই ফেরত আসাদের একজনের বংশধর আল আমিন। 

সব গাঁয়েই এ কওমের সন্তানেরা আছে, যারা দেশের জন্য রেমিট্যান্স আনে। দেশের জৌলুস বাড়ায়। ওরা কোথাও আটকে নেই। আসা-যাওয়ায় আছে। হারিয়ে যায়। ফিরে আসে। বা কখনো ফেরেই না। আর বাঁশের পোলোর নিচের বাচ্চাগুলি? তারা এখন ফ্ল্যাটের মালিক, জমির দালাল, সরকারি আমলা বা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ। আর অলস বা আত্মকেন্দ্রিক কিছু বাচ্চার অভিভাবক, যারা বাবা-মাকে খুশি করতে পরীক্ষার পড়া মুখস্থ করে অথবা রাতদিন মোবাইলে ডুব মেরে থাকে এবং স্বপ্নহীন চোখে দিনযাপন করে।

৫.
'ইমিগ্র্যান্টদের ব্যাপারে উষ্মা বাড়ছে।' টেবিলম্যাটে গরম স্যুপের বাটি রাখতে রাখতে আত্মীয় ছেলেটি বলে। সে একাই টেবিল সাজাচ্ছে। আরেক সিরামিকের বাটিতে তেলে-ঝালে দেশি কায়দায় রান্না স্যামন মাছ। এ পদটা নির্ঘাৎ মহিলার কথা ভেবে পাকানো হয়েছে! 'এতে ডানপন্থীদের ভিত আরও মজবুত হবে,' বলে সে ভাতের মাড় ঝরাতে কিচেনে গেলে তিনি টেবিলে মাথা রেখে ছোটমতো একটা স্বপ্ন দেখেন- সাগরের মাছ তীরে উঠে আসছে। এবার ডানপন্থীদের ভিত মজবুত হবে। গরম ভাতের ধোঁয়ায় চটকা ভেঙে গেলে তড়িঘড়ি ঘড়ি দেখেন। তাঁর ওষুধ খাওয়ার টাইম পেরিয়ে গেছে, রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তিনি যে ওষুধটা পানি দিয়ে গিলে খান। কিন্তু আত্মীয়ের শহরতলির বাড়ির জানালার বাইরেটা তো এখনো ময়ূরপুচ্ছ-নীল, মানে দিনের আলো পুরোপুরি নিভে যায়নি। তাহলে তো তার ওষুধ খাওয়ার টাইমও ফুরিয়ে যায় নাই, যদি অদৃশ্য সময়রেখার পরোয়ানা না করে দৃশ্যমান সূর্যঘড়ি তুমি মান্য করে চলো।

পরদিন মহিলা বাইরে বেরিয়ে দেখেন দোকান বা শুঁড়িখানার জানালায় রঙিন পোস্টার। ডানপন্থীদের জয়জয়কার। দেওয়ালের কোনা-কাঞ্চায় কিছু গ্রাফিতি- বোঝা যায় না অ্যান্টি-ইমিগ্র্যান্ট না প্রো-ইমিগ্র্যান্ট না অন্য কিছু নিয়ে এসব স্যাটায়ার বা ক্ষোভ। ভাষা না জানায় চিত্রের পাশের তির্যক বয়ান তিনি বুঝতে পারেন না। পায়ে পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরেন। তাঁর এখন দরকার জেটল্যাগজনিত টানা বিশ্রাম। বায়ুযানে দ্রুত দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার এ হলো চরম খেসারত। আরেকটু ধীরে আগে বাড়লে কী এমন ক্ষতি হতো!

দ্বাদশ শতকের পরিব্রাজক ইবনে জুবাইর গ্রানাডা থেকে যাত্রা করে আলেকজান্দ্রিয়ায় আসেন ২৬ মার্চ ১১৮৩ তারিখে। আসতে তাঁর সময় লেগেছিল ৩০ দিন। ফিরতিপথ পাড়ি দিতে লাগে আরও লম্বা সময়। হ্রদের মতো শান্ত, সমাহিত সমুদ্র। পরক্ষণেই ভয়াল চণ্ডী। চোখের নিমেষে পাহাড় সমান ঢেউ ফণা তুলে তেড়ে আসে। নাকানি-চুবানি খেতে খেতে ইবনে জুবাইর হজের মানসে মক্কা আসেন, ফিরে যান বছরাধিককাল সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝায় জীবন-মৃত্যুর দোলায় দুলতে দুলতে। এমনও দিন গেছে, একরাতের টেনশনে মাথার নিকষ কালো চুল সব সাদা হয়ে গেছে। মাস্তুল থেকে পাল নামিয়ে দিনের পর দিন পুবালি বাতাসের ইন্তেজার করেছেন। পালে হাওয়া লাগলে তবেই ফের যাত্রা শুরু হবে।

এ যেন অনিঃশেষ যাত্রা। পুবালি বাতাসে এগিয়ে যান তো, পশ্চিমি ঝোড়ো হাওয়ায় কয়েক শ মাইল পিছিয়ে আসে জাহাজ। অথচ ইবনে জুবাইরদের জাহাজখানা চালাচ্ছিলেন জেনোয়ার এক দক্ষ ও অভিজ্ঞ নাবিক, যিনি সার্ফিংয়ের মতো জাহাজখানা ঢেউয়ের মাথায় ডানে-বামে নাচিয়ে ঝড় মোকাবিলা করার এলেম জানতেন। বাহনটাও ছিল শহরের মতো বিশাল আর স্বয়ংসম্পূর্ণ, যেখানে খাবারের জিনিসপত্র, ফলমূল সব কিছু বিকিকিনি হতো। সেই জাহাজও সামুদ্রিক ঝড়ের মুখে কাগুজে খেলনা তরণি বই কিছু নয়। 'আকাশ যেমন মেঘ ধরে, জাহাজের পাল তেমনি করে ধরে বাতাস,' সেই বিশ্বাসও ভেঙে খানখান, যখন দেখেন মাস্তুলসহ পালখানা মুখ থুবড়ে পড়ে বাতাসে দাপাচ্ছে, সমুদ্রের গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে।

ঝড়ের ভয়াল রাতের পর শান্ত সুবাহ। এভাবে মহাযাত্রাও শেষ হয় এক দিন। ২৫ এপ্রিল ১১৮৫, গ্রানাডায় পৌঁছান ইবনে জুবাইর আন্দালুসি।

সে তার লাঠি ছুড়ে ফেলে নিজেকে মেলে দিল জমিনে
যেমনটি করে প্রতিটা অভিযাত্রী যাত্রার সমাপ্তি হলে।
মহিলা কিতাবখানা বন্ধ করে বালিশে মাথা রাখেন।

৬.
সপ্তাহ না ঘুরতে মহিলার অভিযোগ- এখানে ঘড়ি ধরে সব চলে, নাকি বোতাম টিপে দিলে এমনি এমনি চলতে থাকে! মনে হয় এ অমানসিক চলাটা থামানো দরকার। তা রক্তমাংসের মানুষে হবে না। পথে ব্যারিকেড দিতে চাইলে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি চাই। নিদেন রাস্তা ঢালাইয়ের মোটা মোটা রোলার। 

'কিন্তু তিনি কেন ডিসিপ্লিন ভাঙতে চান,' আত্মীয় ছেলেটি অবাক হয়ে ভাবে, 'যে ডিসিপ্লিন আরাম আর নিরাপত্তার জন্ম দেয়!' 

হ্যাঁ, নিরাপত্তা! দেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তিনি কয়েক বছর সক্রিয় ছিলেন। কী অভিনবÑএখানে পথচারী পারাপারের সুবিধার্থে চালক গাড়ি থামিয়ে দেয়! তাই দেখে তিনি তো হতভম্ব, মাঝরাস্তায় স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। গাড়ি আগ বাড়বে না উনি? 'আপ পেহেলে। না না আপ...হা হা।'
'তাতেই তো খুশি হওয়া উচিত। সপ্তাহ না ঘুরতে অর্থহীন কমপ্লেন করছেন কেন?' আত্মীয় ছেলেটি গজগজ করতে করতে সশব্দে কাঠের সিঁড়ি কাঁপিয়ে ওপরতলার বেডরুমে চলে যায়। 

নিচে ডাইনিংয়ের পাশেই গেস্ট রুম, লিভিং রুম। মহিলা বলতে গেলে আস্ত একটা ফ্ল্যাট নিয়ে আছেন। এ বাড়ির বিদেশি বউ অনেক দিন সেপারেশনে আছে। বাচ্চা দুটিও মায়ের সঙ্গে। ডিনারের পর বাড়িটা সুনসান। তখন হারবাল চায়ে চুমুক দিতে দিতে তিনি যেন নিজেকে খুঁজে পান, যদিও খুব অল্প সময়ের জন্য। তারপর ঘুম আসা নিয়ে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন সব মিসমার। মহিলা বিছানা ছেড়ে উঠেও পড়েন কাকভোরে। ডাইনিংয়ের দরজা খুলে বারান্দায় আসেন। শহরতলির ঘুমন্ত পাড়া। সামনের বাড়ির দরজায় সবজির ঝুড়ি নামিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে যায় একজন। তিনি ড্রয়িং রুম থেকে ছোট একটা কার্পেট টেনে এনে বারান্দায় যোগাসনে বসেন। 

'আধ্যাত্মিক ক্রাইসিস!' মহিলাকে চোখ বোজা নিঃসাড় দেখে ঘুম-ভাঙা চোখে আত্মীয় ছেলেটি নিচু স্বরে মন্তব্য করে। সে ট্যাপ খুলে গ্লাসে পানি গড়িয়ে নেয় আর আড়চোখে বারান্দার দিতে তাকায়। টেবিল থেকে ইবনে জুবাইরের বইখানা আয়নার মতো চোখের সামনে মেলে ধরে। যেন বুঝতে চায়-মহিলার অস্থিরতার পেছনে বইটির কোনো ইন্ধন আছে কি না। সে ওখান থেকে সরে ডাইনিংয়ের দরজায় দাঁড়িয়ে মহিলাকে নিরিখ করে খানিক। আজকের দিনটা তাঁর ভালো কাটবে- আশা করে সে। তারপর কাঠের সিঁড়ি দিয়ে পা টিপে টিপে ওপরে চলে যায়। এসব ভাবনার চেয়ে আজ রোববার, তার ঘুমানো দরকার।

তিনি ইলেকট্রিক কেটলির পানি ফোটার গুড়গুড় আওয়াজ তোলা পর্যন্ত যোগাসনে বসে থাকেন। আর গোটা সপ্তাহের ঘোরাঘুরি ইয়াদ করেন। মধ্যযুগের পাথুরে কেল্লা, ওয়্যার মিউজিয়াম, স্মৃতিফলক, লেক, পাহাড়... আর কত! যদিও প্রতিদিনই কোনো না কোনো পুরোনো বন্ধু বা হারানো আত্মীয়ের দেখা মিলছে। দিন শেষে নদীর ধারের কাফেতে মিটিমিটি সন্ধ্যা, মোমের আলোয় পানাহার, থেকে থেকে নদীর দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু সমুদ্র তাঁকে টানছে। ইবনে জুবাইরের দেখা ঝড়ের রাতের মসিলিপ্ত সমুদ্র না টার্কোয়েজ-নীল সমুদ্র? সেদিন আল আমিনের ভাগনে শফিউল্লাহর চোখে তিনি ঝলকে উঠতে দেখেছিলেন- ফিরোজা-নীল সাগরের নিঃসীম ধুধু দৃষ্টি। এটা অপ্রতিরুদ্ধ- সহস্র ওয়াটের বিদ্যুতের মতো প্রচণ্ড শক্তিতে যেন টেনে নিয়ে যায়। 

তিনি জানেন, বিদেশ যাত্রা একেকজনের জন্য একেক রকম। একই সময়ের দুটি মানুষ একই ফ্লাইটে কিছু দূর একসঙ্গে ভ্রমণ করলেও। তবু অপ্রতিরোধ্য সেই নিঃসীম ধুধু দৃষ্টি তাঁকে যেন পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে।

৭.
'ওরা কেন এখানে মরতে আসে! আর আমাদের ক্রাইসিসে ফেলে!' গাইড ছেলেটি হয়তো মন থেকেই বলে কথাটা, তিনি ভাবেন ক্রাইসিসটা কি আধ্যাত্মিক? যেমন মৃত্যুভয়? মৃত্যুচিন্তা? ঘন ঘন এত মৃত্যু দেখলে তুমি নিজের মৃত্যু না ভেবে পারো না। দ্বীপের গা-জ্বলা নিরানন্দ দিন আর রাতের উন্মাতাল ফুর্তি- এর মধ্যে মৃত্যুভয় বা মৃত্যুচিন্তা রীতিমতো বেমানান, উৎপাত। দুর্বল নার্ভের যে-কাউকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। মহিলা নিজেও এ নিয়ে খানিকটা শঙ্কিত।

অথচ ভিউকার্ডের মতো সুন্দর একটা দ্বীপ। মেইনল্যান্ড থেকে ফেরিতে মাত্র দু-ঘণ্টার পথ। তিনি যখন এখানে পৌঁছান, তখনো বাতাস কিছুটা ঠান্ডা ছিল, সূর্যের উত্তাপ ছিল সহনীয়। ফেরিঘাটের অদূরেই পামগাছের সারির প্রান্তে কার পার্কিং। মাঝখানের পরিত্যক্ত উইন্ডমিলের পটভ'মিতে ছবি তুলতে গিয়ে তিনি চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে নেন। তখন সের্ভেন্তেসের অমর সৃষ্টি দোন কিহোতেকে তাঁর হালকাভাবে মনে পড়ে।

সারা গায়ে উল্কি আঁকা এক পোর্টার লাগেজসহ মহিলাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দেয়। বাইরে গনগনে রোদ, ভ'মধ্যসাগরীয় শুষ্ক গরম, আগুনে বাতাস। কিন্তু রুমের ভেতরটা কুলকুলে ঠান্ডা। ছোট জানালা, ডোমাকৃতির ছাদের ট্রাডিশনাল পাথুরে বাড়ি, এখানে একসময় আরবদের সদর্প উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে শ্লাঘা বোধ করা যায় না, আপসোসই হয় শুধু, পরের দিনই যখন অভিবাসীদের নিয়ে অসংখ্য নৌকাডুবির সাতকাহন শুনতে হয়।

বিকালে মরা ঘাস আর ক্যাকটাসের ঝাড় পেরিয়ে পাথুরে রাস্তায় পা ফেলে ফেলে সৈকতে নামতে নামতে মহিলা ভাবছিলেন সারা বেলা হোটেলে বসে থাকা স্রেফ সময়ের অপচয়। সূর্যের উত্তাপ আর ট্যুরিস্টের ভিড় এড়াতে চাইলে খাঁড়ির ফিরোজা-নীল জলে গা ডুবিয়ে বসে থাকা যায়। এত উঁচু উঁচু ক্লিফ, দিনমান ছায়া দেয় নিশ্চয়। তখন সূর্যাস্ত দেখার তাড়া ছিল বলে তিনি কাছের পরিত্যক্ত জেটিতে না থেমে শুকনো বালুর ওপর দিয়ে তরতরিয়ে সৈকতে নেমে যাচ্ছিলেন। কিন্তু জেটির দিকে ক্যামেরার ভিউফাইন্ডার দিয়ে এক ঝলক তাকিয়েও ছিলেন বুঝি, যখন দিগন্তহীন সাগরের প্যানোরামিক ভিউ ক্যামেরায় ধারণ করতে ক্ষণিকের জন্য বালুপথে থেমেছিলেন। সেখানে ডুবন্ত সূর্যের সাজ-করা আকাশ আর গোলাপি সমুদ্রের পটভ'মিতে এক নতজানু মানুষের সেলুয়েট, যে হাঁটুর ওপর কনুই রেখে দুহাতে মাথা চেপে বসেছিল। সে সূর্যাস্ত উপভোগ করছিল না, পানির দিকে তাকিয়েছিল। 

পরদিন সকাল সকাল ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পরিত্যক্ত জেটিতে একই দৃশ্য। ততক্ষণে ছায়াশরীর থেকে আসল মানুষটা বেরিয়ে এসেছে। একজন আরব-আফ্রিকান অভিবাসী যুবক। তারা একই ট্যুরিস্ট ফেরিতে গতকাল দ্বীপে পৌঁছেছেন। মহিলার হাই-হ্যালোতে যুবক হাসে না একদম, মাথা নাড়ে শুধু। কিন্তু ছবি তুলতে দেয়। আর কাছে গেলে কথা বলে, যদিও সাগরের বড় বড় ঢেউয়ে তখনো তার আনত দৃষ্টি। 

কাঠের জেলে নৌকায় যে ছিদ্র ছিল, স্মাগলারের জানা থাকলেও চালকসহ আর কেউই তা জানতেন না। সেই প্রথম সমুদ্রে ভাসা, যুবক ও তার বন্ধুর। ছিদ্রঅলা নৌকায় বসে ভয় তাড়াতে ফ্যামিলি আর ফুটবল নিয়ে তারা আলাপ করছিল। বন্ধুটি সাঁতার জানত না। নৌকা যখন ডুবতে শুরু করে সে সাগরে ঝাঁপ দেয়। উদ্ধারকারী জাহাজ থেকে ছোড়া টিউব ধরে ভাসতে ভাসতে ওঠে এই জেটিতে। তিন বছর পর, ভ'মধ্যসাগরের অপর পাড় থেকে আবার এখানে। বন্ধুটি হারিয়ে গেছে, সে পৌঁছেছে অভীষ্ট লক্ষ্যে, এক নামকরা কলেজে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। এখন তার গরমের ছুটি। 
যারা এমন জার্নির পর বেঁচে যায়, তারা নিশ্চয় জানে মৃত্যু কী! ক্যামেরাটা ব্যাগে ভরতে ভরতে ভাবেন তিনি।

হোটেলে ঢুকতে উল্কিঅলা পোর্টার তাঁকে নৌকাডুবির কাহিনি শোনায়। ভাঙাচোরা নৌকাগুলির ভাগাড়ও, সে বলে দেয় হোটেল থেকে কতটা কাছে। সে গেট ওয়ে টু ইউরোপ নামের সমুদ্রতীরের তোরণের নান্দনিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে। খোঁজ দেয় স্থানীয় এক আর্টিস্টের অভিবাসী-মিউজিয়ামের। ওখানেই তিনি সাক্ষাৎ পান সেই গাইডের।

অভিবাসী-মিউজিয়াম দেখে তো মহিলার মাথা ঘুরে ওঠে। চার বছর আগের সামুদ্রিক ঝড়ে জাহাজের সাড়ে তিন শ যাত্রীর অধিকাংশই নিকাশ হয়ে যায়। মিউজিয়ামের সব সামগ্রীই ঝড়ের পর সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া। যেমন জুতা, ফটো, চিঠি, তেলের কনটেইনার, লাইফ জ্যাকেট, রুকস্যাক, টুকরা কাপড়, বাচ্চাদের রবারের খেলনা, ক্রেডিট কার্ড, কোরান শরিফ। মিউজিয়ামের ফটকে ভাঙা নৌকার কাঠ দিয়ে তৈরি ক্রস যেন অতন্ত্র প্রহরী। সেভাবেই পবিত্র ক্রসখানা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

সমুদ্রতীরের গেট ওয়ে টু ইউরোপ-ইউরোপের প্রবেশতোরণও একই উপকরণের। তবে এখানের জুতাগুলি সাইজে বড় আর সাগরের দিকে কামানের মতো তাক করা। 'আমরা চাই না ওরা আর আসুক?' উত্তাল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে গাইড ছোকরা বলে। 'তাদের কফিনগুলি চলে গেলেও ক্ষত রেখে গেছে।' বিমর্ষ হয়ে বলে সে। 

ক্ষত তো থাকবেই। শত-সহস্র মৃত্যুর স্মৃতি কি রাতারাতি মুছে যাবে! বিভিন্ন বয়সের ডেডবডি দেখার স্মৃতি! তবু মহিলার মনে হয় এই প্রখ্যাত শিল্পকর্মের চেয়ে তাঁর সামনের রক্তমাংসের ছেলেটি অনেক বেশি সেনসেটিভ।
'তারপর! তোরণে জুতা দেখেই কি অভিবাসীরা ফিরে যাচ্ছে?' 

তিনি এই প্রথম হাসতে দেখেন গাইড ছেলেটিকে আর বলতে শোনেন-না-না, বহিঃসীমান্ত রক্ষীবাহিনী ফ্রন্টেক্স! ফ্রন্টেক্স ড্রোন ব্যবহার শুরু করলে অভিবাসীরা হটতে থাকে। রুট চেঞ্জ করে। না হয় বোটের চেহারা পালটে দেয়। যেমন জেলে নৌকায় অথবা ফাইবার গ্লাসের বোটে অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়ে এখনো আসে মাঝে মাঝে।

গাইড অভিবাসীদের গণকবর দেখাতে চাইলে তিনি পিছু হটেন। ভাবেন, এক্ষুনি তাঁকে ইবনে জুবাইরের কিতাবে ফিরে যেতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি পরিত্যক্ত জেটির সেই আরব-আফ্রিকান যুবকটির সঙ্গে তাঁর আরেকবার সাক্ষাৎ ঘটে। তিনি যেকোনো মূল্যে সাগরপাড়ি দেওয়া জীবিত অভিবাসী দেখতে চান।

জেটি শূন্য। যুবকটি কি ফিরে গেছে? কিন্তু মেইনল্যান্ডের রিটার্ন ফেরি তো বিকেলবেলায়! সে কি কোনো হোটেলে উঠেছে? নাকি সমুদ্রে নেমেছে? যুবকটির সঙ্গে আরেকবার দেখা না হলে তাঁর গোটা ট্যুরই তো ব্যর্থ হয়ে যাবে বা ভ্রমণের গল্পটা রয়ে যাবে অসম্পূর্ণ। ফিরে গিয়ে শফিউল্লাহকে কী বলবেন তিনি? নৌকাডুবি, গণকবর আর জুতার প্রদশর্নীর? নাকি আরব-আফ্রিকান যুবকটির গল্প? যে এমন জার্নি থেকে বেঁচে গেছে, সে নিশ্চয় জানে মৃত্যু কী, জীবনের অর্থ কোথায়। 

৮.
দেশে ফেরার দিন মহিলা এয়ারপোর্টে ফ্লাইটের অপেক্ষা করছেন। ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করে আল আমিনকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে একবারেই পেয়ে যান তিনি। রুট চেঞ্জ হলেও শফিউল্লাহ এখন গেমের মধ্যে আছে- আল আমিন বলে। ভাগিনা পদে পদে ঠকছে কিন্তু হারছে না। গত মাসটা সে এমন এক দেশে ছিল, যার নাম লিবিয়া, যে দেশের রাস্তা দিয়ে আপনি হাঁটতেছেন, জানবেনও না যে কখন পেছন থেকে বিক্রি হয়ে গেছেন। তারপর আসে প্রতীক্ষিত সেই সাগরপাড়ি। আল আমিন বলে, তার আগে শফিউল্লাহ দেশে একটি ভিডিও পাঠায়। একটা পুরোনা পাকা বাড়ির ভেতরে তোলা ভিডিওটা, যার দরজা-জানালার কপাট লাগানো আর বাত্তির জোর কম। তাই ঘরের কারোরই চেহারা স্পষ্ট ছিল না। ক্যামেরাটাও নড়বড়ে। সেটা একটু নড়েচড়ে ফিক্সড হয়ে যায় একটা বিবর্ণ ফাঁকা দেয়ালে। তখন একটা গায়েবি আওয়াজ আসেÑ'আমরা তোমাদের ক্ষুদ্র নৌকায় তুলে দিচ্ছি। তোমরা কি নিজের ইচ্ছায় যাচ্ছ, না কেউ তোমাদের জোর করে পাঠাচ্ছে?'

'কেউ আমাদের জোর করতেছে না। আমরা সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় সাগরের ওই পাড়ে যাব।' জবাবটা আসে যেন সেই ফাঁকা দেয়ালের বুক ফেটে। হুহু বাতাসে। শফিউল্লাহর গলা সেই কান্নার ঢেউখেলা কোরাসে হারিয়ে যায়।

পরদিন আসে তার টেক্সট মেসেজ- ওরা সাগরপাড়ে গিয়ে দেখে নৌযানের দেখা নেই। শুধু একটা বড়সড় বাক্স। তাদের সামনেই দালালের দোসরেরা টর্চ জ্বেলে বাক্স খোলে। গ্যাসবেলুনের মতো ফুলিয়ে তৈরি করে রবারের ডিঙি। তিল ধারণেরও ঠাঁই নেই, এমন ঠেসেঠুসে তাতে আদম পোরে। তারপর ঘুটঘুটে আন্ধার রাতে ডিঙি ভাসায় সাগরে। এভাবে শুরু হয় তাদের বহুদিনের প্রতীক্ষিত সমুদ্রযাত্রা।

অগস্ত্যযাত্রা! মহিলা ফোন কানে জিবের নিচে কথাটা লুকিয়ে ফেলেন। ওপাশে আল আমিন যেন মৃদু ভূমিকম্পে দুলে উঠেছে। বোঝা যায় প্রাণপণে কথা হাতড়াচ্ছে সে। রাত দেড়টায়- আল আমিন কম্পিত গলায় বলে, ভাগিনার কল আসে। 'সমুদ্র অহন শান্ত, মামু! কোনো সমস্যা নাই। আমি গেইমের মধ্যে আছি। আল্লা ভরসা।' এ ছিল শফিউল্লাহর শেষ কথা।

তার মানে, মহিলা নিজেকে আশ্বস্ত করতে বলেন, শফিউল্লাহ এখন লিবিয়ার উপকূল ছেড়ে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরে। রবারের ডিঙায় চড়ে গেট ওয়ে টু ইউরোপের দিকে এগোচ্ছে সে।

 

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল / গল্প

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করল যুক্তরাষ্ট্র
  • জাতীয় সরকার নিয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য সত্য নয়; সাদিক কায়েম সমন্বয়ক ছিল না: নাহিদ ইসলাম
  • ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলা: জামিন পেলেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবী
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শেষ হচ্ছে আজ, শিগগিরই জানা যাবে শুল্কের হার 
  • ব্যাংক একীভূতকরণে সরকার বিনিয়োগ করে লাভসহ ফেরত পাবে: গভর্নর
  • ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম কেনার অভিযোগে ৬ ভারতীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

Related News

  • উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা
  • ঘুমের মধ্যে ঘুরছে মন বিচিত্র জগতের অজানা পথে-প্রান্তরে! 

Most Read

1
বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করল যুক্তরাষ্ট্র

2
বাংলাদেশ

জাতীয় সরকার নিয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য সত্য নয়; সাদিক কায়েম সমন্বয়ক ছিল না: নাহিদ ইসলাম

3
বাংলাদেশ

ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলা: জামিন পেলেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবী

4
অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শেষ হচ্ছে আজ, শিগগিরই জানা যাবে শুল্কের হার 

5
অর্থনীতি

ব্যাংক একীভূতকরণে সরকার বিনিয়োগ করে লাভসহ ফেরত পাবে: গভর্নর

6
আন্তর্জাতিক

ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম কেনার অভিযোগে ৬ ভারতীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net