রাশিয়া, চীনের চেষ্টা ব্যর্থ, ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হচ্ছে

ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা বিলম্বিত করতে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীনের আনা প্রস্তাব পাস ব্যর্থ যাওয়ায়— ইরানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আবারো কার্যকর হচ্ছে। শনিবার থেকে এটি পুনরায় কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত।
ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালে পশ্চিমা দেশগুলোই প্রধান ভূমিকা নেয় নিরাপত্তা পরিষদে। ফলে এ সিদ্ধান্ত পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলতে পারে। ইতিমধ্যেই ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই পদক্ষেপ কঠোর প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়বে এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার দুয়ার খুলে দেবে।
১৫ সদস্যের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীনের পক্ষে আনা প্রস্তাবে মাত্র চারটি দেশ সমর্থন দেয়। নয়টি দেশ বিপক্ষে অবস্থান নেয়, দুটি দেশ বিরত থাকে। ফলে ছয় মাসের জন্য ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল স্থগিত রাখার প্রস্তাব পাস হয়নি। ফলে প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে যায়।
শুক্রবার (নিউইয়র্ক সময়) ভোটাভুটি শেষে যুক্তরাজ্যের জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত বারবারা উড বলেন, "এই পরিষদ কোনো দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানের পরিষ্কার পথ দেখতে পাচ্ছে না। প্রস্তাব ২২৩১ অনুযায়ী 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়ার সব ধাপ পূর্ণ হয়েছে। তাই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিস্তার-সম্পর্কিত কার্যক্রমে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এ সপ্তাহান্তে ফের কার্যকর হবে।"
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান শুক্রবার একদল সাংবাদিক ও বিশ্লেষকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রতিক্রিয়ায় ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে দাঁড়ানোর চিন্তা করছে না।
তিনি বলেন, "ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে ছুটবে না… উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রস্তুত আছি।
শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা (মধ্যরাত জিএমটি) থেকে জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এর আগে ইউরোপীয় তিন দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি (ই৩)— স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়ায় নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে ৩০ দিনের একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। এসব দেশ অভিযোগ করে, তেহরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তাই নিষেধাজ্ঞাও ফের কার্যকর করা দরকার।
'স্ন্যাপব্যাক' সক্রিয় করায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' আখ্যা দিয়েছিল ইরান। আর জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত পশ্চিমাদের অভিযুক্ত করে বলেছেুন, তারা কূটনীতির পথকে 'কবর দিয়েছে'।
নিরাপত্তা পরিষদকে ইরানের প্রতিনিধি আরাগচি বলেছেন, "যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, আর ই৩ (ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি) সেটিকে কবর দিয়েছে। এই স্ন্যাপব্যাক আইনগতভাবে অকার্যকর, রাজনৈতিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং প্রক্রিয়াগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ।"
নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির পরে শনিবার ইরান জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের বার্তাসংস্থা মেহের।