Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
September 29, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, SEPTEMBER 29, 2025
মৃণাল সেনের সিনেমা: হ্রস্বস্বরের কথকতা

ইজেল

গৌতম মিত্র
14 May, 2023, 01:30 pm
Last modified: 14 May, 2023, 04:18 pm

Related News

  • নারকেল: মানবসভ্যতার প্রাচীন সঙ্গী
  • রোজিনার বাড়ির লজিং মাস্টার, ‘রসের বাইদানি’ থেকে ‘তাণ্ডব’, ৩০০ ছবির পরিবেশক মাস্টার ভাই!
  • আইজ্যাক বাবেলের গল্প | বুড়ো শ্লয়মি
  • সোভিয়েতরা কীভাবে হেমিংওয়েকে গুপ্তচর বানাল
  • বাজেট ছাড়িয়েছিল দ্বিগুণ: ‘লগান’ চলচ্চিত্র প্রযোজনায় যে বিপাকে পড়েছিলেন আমির খান

মৃণাল সেনের সিনেমা: হ্রস্বস্বরের কথকতা

বাংলা সিনেমার বিশ্বখ্যাত নির্মাতা মৃণাল সেনের শততম জন্মদিন আজ।
গৌতম মিত্র
14 May, 2023, 01:30 pm
Last modified: 14 May, 2023, 04:18 pm
ইলাস্ট্রেশন: টিবিএস

জীবনে প্রথম সিনেমা দেখতে গেছেন মৃণাল সেন। সঙ্গে দাদা। স্বদেশি মেলায় দেখানো হচ্ছে 'কপালকুণ্ডলা'। কতই বা আর বয়স তখন মৃণাল সেনের। তরুণ-ই বলা চলে। দুই ভাই কিন্তু চরিত্রে কিছু ফারাক ছিল দুজনের মধ্যে। দাদাটি যত চটপটে, চালাক-চতুর বা বলিয়ে, মৃণাল ততটাই সাদাসিধে, বোকা ও সরল। সিনেমা দেখে দুভাই তখন ফিরছে। প্রথম সিনেমা দেখার বিস্ময়ে মৃণাল অভিভূত, আবিষ্ট ও হতবাক।

একসময় দাদা বলে উঠল, 'মফস্বলের পর্দা তো, কলকাতার পর্দার মতো বড়ো তো নয়, দেখিসনি, মাঝে মাঝে কাপালিকের শুধু খড়ম পরা পা-জোড়া দেখা গেছে, অর্থাৎ বাকি শররীটা কাটা গেছে।'

পরে মৃণাল সেন এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে মন্তব্য করেছিলেন, শুধু চোখের দেখা নয়, মনের দেখাও সিনেমায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই চোখের দেখা পেরিয়ে মনের দেখা সম্ভব হয় ক্যামেরার সাহায্যে, দৃশ্যবস্তুকে প্রয়োজনমতো সাজিয়ে-গুছিয়ে বা দরকারমতো ছোট-বড় করে উপস্থিত করে। যেমন 'কপালকুণ্ডলা'র পরিচালক করেছিলেন, শুধু খড়ম পরা পা-জোড়া দেখিয়ে। এই দৃশ্যবস্তুর মধ্য দিয়ে পরিচালক শুধু কাপালিকের পা দেখাতে চাননি, দেখাতে চেয়েছেন কাপালিকের দাপট।

মৃণাল সেন মনে করেন, সিনেমার কাজ visual perception- এর মধ্য দিয়ে intellectual perception-এ পৌঁছানো। মৃণাল সেন রবীন্দ্রনাথের 'জীবনস্মৃতি'র উল্লেখ করেন:

'শিশুকাল হইতে কেবল চোখ দিয়া দেখাই অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছিল, আজ যেন একেবারে সমস্ত চৈতন্য দিয়া দেখিতে আরম্ভ করিলাম।'

সিনেমা এই চৈতন্য দিয়ে দেখা। মৃণাল সেনের বিজ্ঞানবাগীশ দাদা গোটা সিনেমাটা দেখেছিলেন চাক্ষুষ দৃষ্টি দিয়ে। visual perception ডিঙিয়ে intellectual perception- এ পৌঁছানো তাঁর আর হলো না। এরপর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলেছেন মৃণাল সেন:

'কবিতার পাঠক যেমন তাঁর বুদ্ধি খাটিয়ে, তাঁর সৃজনী শক্তি দিয়ে, তাঁর হৃদয়ের উত্তাপ দিয়ে বইয়ের পাতার সেই আক্ষরিকতার আড়ালে আত্মিক আবহাওয়াটির আমেজ পেয়ে থাকেন, ঠিক তেমনি সিনেমার দর্শকও তাঁর বুদ্ধি ও হৃদয় দিয়ে ছবি ও শব্দের সীমানা পেরিয়ে "চৈতন্য" রাজ্যে প্রবেশ করেন।'

'সিনেমার ভাষায় একেই আমরা বলে থাকি মন্তাজ... একাধিক ছবি ও শব্দের প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে দর্শককে নতুন এক স্তরে পৌঁছে দেওয়ার সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়া, যে স্তর পুরোপুরিভাবে বোধের, উপলব্ধির, ধরা-ছোঁয়া ও দেখাশোনার বাইরে, যা আলাদাভাবে সেই সব ছবি বা শব্দের কোনোটিতে উপস্থিত নয় ...'

আসলে মৃণাল সেনের কাছে সিনেমা দর্শন। সিনেমার দর্শনের খোঁজে তিনি সিনেমা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সিনেমায় যাকে মন্তাজ বলা হয়, সিনেমা-রাজ্যের বাইরে তাকে বলা হয় ডায়ালেকটিকস। মৃণাল সেন খুব স্পষ্ট করে বলছেন:

'সিনেমার আঙ্গিকে এবং যান্ত্রিকতার ক্ষেত্রে এই মন্তাজকেই সিনেমার রাজ্যের বাইরে বলা হয়ে থাকে ডাইলেকটিকস, যে কথাটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ হয়তো খানিকটা "উগ্র" রাজনীতির আঁচ পেয়ে কিঞ্চিত আশঙ্কিত হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু আশঙ্কা সম্পূর্ণ অমূলক, কারণ, কথাটি দর্শনশাস্ত্রজাগ এবং এইটিকে আমাকে আমদানি করতে হচ্ছে আমার বক্তব্য প্রকাশেরই তাগিদে। ডায়ালেকটিকস... দুই বা ততধিক বস্তু বা অবস্থার বিরোধের মধ্য দিয়ে তৃতীয় অবস্থায় উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ মন্তাজ।

'বিশ্বচরাচরের সমস্ত কিছুতেই এই ডায়ালেকটিকস ঘটছে। ঘটতেই হবে। এবং সিনেমার যান্ত্রিকতা বা আঙ্গিকেই শুধু নয়, একটা পুরো ছবি গড়ে তোলার প্রতিটি পর্যায়েই ডায়ালেকটিকস বর্তমান। ঘটনার বিন্যাসে, চরিত্র সৃষ্টিতে, নাটকের গঠন পদ্ধতিতে... সর্বত্রই ডায়ালেকটিকস ঘটে চলেছে পারস্পরিক সংঘর্ষ বা অন্তর্বিরোধ ও নতুন অবস্থায় উন্নীত হওয়ার মধ্য দিয়ে। নাটক সার্থকতায় পৌঁছোয় বিরোধের মধ্য দিয়ে, চরিত্রে স্পষ্টতাও অন্তর্বিরোধের মাধ্যমেই ঘটে থাকে আর ঘটনার বাস্তবতাও পুরো মাত্রায় নির্ভরশীল বিরোধী অস্তিত্বের সংঘর্ষের ভেতরেই।'

মৃণাল সেনের সিনেমাকে বুঝতে হবে এই ডায়ালেকটিকসের মধ্য দিয়েই। রাজনীতিকে তাঁর সিনেমা থেকে কোনোভাবেই আলাদা করা চলবে না। দায়বদ্ধতা সমস্ত শিল্পীরই থাকে, সমসাময়িক দুই পরিচালক, সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকেরও ছিল, কিন্তু সেই দায়বদ্ধতার স্বরূপ আলাদা। মৃণাল সেন বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি ফেনোমেনন।

প্রথম ছবি 'রাতভোর' (১৯৫৫) থেকে 'আমার ভুবন' (২০০২) অবধি মৃণাল সেনের কাহিনিচিত্রের সংখ্যা ২৮। 'রাতভোর' যখন পরিচালনা করেন, বয়স মাত্র ২২। কিন্তু সিনেমা নিয়ে ভাবনা, সিনেমা দেখা বা সিনেমা করার স্বপ্নের বীজ তো তাঁর অনেক আগেই বপন হয়ে গেছে। দেশভাগের আগে ফরিদপুর থেকে কলকাতায় পড়তে আসা ছেলেটির জীবনের প্রথম ও একমাত্র গল্পটি মাত্র ১৩ বছর বয়সে লেখা। 'ভারতবর্ষ' (আশ্বিন ১৩৫৩) পত্রিকায় প্রকাশিত 'ছায়ার কায়া' গল্পটির তেইশ বছর বয়সের নায়ক নাইট শোতে সিনেমা দেখে পায়ে হেঁটে মেসবাড়িতে ফিরে সিনেমার স্মৃতিতে ডুবে যায়। সিনেমাটি ছিল রুবেন ম্যামোলিয়ন পরিচালিত 'ক্রিশ্চিয়ানা'। নায়িকা গ্রেটা গার্বো। সিনেমা, স্মৃতি, কল্পনা, বাস্তব মিলেমিশে এক হয়ে যায় 'ছায়ার কায়া' গল্পের নায়কের স্বপ্নে ও জাগরণে। গল্পটি শেষ হচ্ছে এইভাবে। নায়ক রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে, 'আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে হে সুন্দরী'। এই সুন্দরী নায়িকা নয়, সিনেমার কোনো চরিত্র নয়, এই সুন্দরী আসলে সেই আশ্চর্য মাধ্যম...যার নাম ছায়াছবি।

গীতা সেন ও মৃনাল সেন।

মাত্র আঠারো বছর বয়সে ফরিদপুর থেকে কলকাতায় চলে আসেন মৃণাল সেন। অতঃপর এই কলকাতা শহর তাঁর চেতনায় ও শরীরে জড়িয়ে যাবে। কলকাতা নিয়ে লিখেছেন:

'এ শহর আমাকে উত্তেজনা দেয়, প্ররোচিত করে। একদিন এই শহরে আমি পথহারা আগন্তুকের মতো প্রবেশ করেছিলাম, কিন্তু আজ আমি ঘোরতর কলকাতাসক্ত। বিনা দ্বিধায় আমি বলতে পারি কলকাতা আমার সব পেয়েছির দেশ।'

পড়া পড়া আরও আরও পড়া। তখনকার ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি খোলা থেকে বন্ধ হওয়া অবধি নিয়মিত বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকতেন। অনুবাদও করে ফেলেন কারেল চাপেকের একটি বই। ১৯৪৮-এ কলকাতায় ফিল্ম সোসাইটির জন্ম। সত্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, বংশী চন্দ্রগুপ্ত প্রমুখের উদ্দ্যোগে। রুডলফ আার্নহাইমের লেখা 'ফিল্ম' বইটি এই সময় মৃণাল সেনের হাতে আসে। তিনি উপলব্ধি করলেন সিনেমাও কত শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।

রাজনীতিকে বিষয় করে সিনেমা করেছেন বা বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু কোনো দিনই সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে নাম লেখাননি। এ বিষয়ে সরাসরি তাঁর বক্তব্য জানিয়েছেন:

'আমি কখনই কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার ছিলাম না। ঋত্বিক পরে মেম্বার হয়েছিল। আমি মেম্বার ছিলাম না। পার্টি যখন এক ছিল, তখনও না, যখন দু'ভাগ হল, তখনও না। কিন্তু আমাকে ওঁরা পার্টি মেম্বারের মতই দেখতেন।'

প্রথম সিনেমা 'রাতভোর' সুপারফ্লপ। মৃণাল সেন নিজেও সিনেমাটিকে বাতিল করেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, 'একটা বাজে গল্প আর ফিল্মের টেকনিক সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকায় ব্যাপারটা কোথাও দাঁড়ায়নি'। তাছাড়া 'পথের পাঁচালী' ঠিক মাস দুয়েক আগে মুক্তি পেয়েছে, তখনো চলছে। চলছে সুপারহিট ছবি 'সবার উপরে'। 'রাতভোর' রিলিজ করার পর মৃণাল সেনে এমনটাও ভেবেছিলেন, 'ছবিটা করে আমি এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে ভাবতে শুরু করেছিলাম আমার সিনেমা ছেড়ে অন্য কিছু করা উচিত।'

পরের ছবি 'নীল আকাশের নীচে' মুক্তি পায় ১৯৫৯-এ। একজন চীনা ফেরিওয়ালার সঙ্গে একজন বাঙালি গৃহবধূর সম্পর্কের কাহিনি। বধূটির মধ্যে সেই ফেরিওয়ালা খুঁজে পায় তার দিদিকে। রাজনৈতিক সচেতনতা যে আজীবন মৃণাল সেনকে ঘিরে থাকবে, তা এই সিনেমায় স্পষ্ট। নিজেও তিনি বলেছেন, 'আমি বলতে চেয়েছিলাম যে (আমরা) পৃথিবীর অন্যান্য দেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সঙ্গে এক সূত্রে বাঁধা। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম মূলত এক। আমার এখনো মনে হয় আমার চিন্তাধারা ভুল ছিল না।' তবে প্রথম দুটি সিনেমায়, কী গল্প নির্বাচনে কী অভিনেতা নির্বাচনে বা সংগীত ব্যবহারে মৃণাল সেনের স্বাধীনতা ছিল না।

আমার ব্যক্তিগত মত, আমার যে মৃণাল সেন, তাঁর যাত্রা শুরু 'বাইশে শ্রাবণ' থেকে। কানাই বসুর 'বিয়ের দিন' গল্পটি থেকে মৃণাল সেনের 'বাইশে শ্রাবণ' হয়ে ওঠা এক ম্যাজিকই বটে। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর দিনটিকেই মৃণাল সেন বয়স্ক পুরুষ ও তার তরুণী ভার্যার বিয়ের দিন হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন! এর জন্য ছবিটির মুক্তি পেতে অসুবিধেও হয়েছিল।

১৯৬১ সালে মুক্তি পেল 'পুনশ্চ'। এই ছবিটির কোনো প্রিন্ট সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। কালের গহŸরে তলিয়ে গেছে। অথচ ষাট দশকের শুরুতে বাংলায় যে নায়িকা প্রধান চলচ্চিত্রের শুরু, 'মেঘে ঢাকা তারা'র নীতা, 'মহানগর'-এর আরতি, তার সঙ্গে যুক্ত হতেই পারে 'পুনশ্চ'-এর বাসন্তী। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালের স্বপ্ন আশা আকাক্সক্ষা ধূলিসাতের গল্প 'পুনশ্চ'। 'পুনশ্চ' চলল না, ফ্লপ হলো।

পরপর চারটি সিনেমা না চলার পর মৃণাল সেন বেশ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। অনবরত নিজের ব্যর্থতার জায়গাটা খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এবার কী ছবি করবেন? অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তর একটা গল্প বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে। চিদানন্দ দাশগুপ্ত মৃণাল সেনকে বললেন, খুব ভালো গল্প। 'অবশেষে' (১৯৬৩) তৈরি হলো। বিবাহবিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে কমেডি। মৃণাল সেন টালিগঞ্জের ফর্মুলা সিনেমার ছাঁচে নিজেকে ঢেলে দেখতে চাইছিলেন যে সেখানে তিনি মানানসই কি-না। বিজ্ঞাপনে লিখলেন, 'এক গাল হাসি, এক ফোঁটা চোখের জল, এক অভিনব চিত্রায়ণ।' কিন্তু এই পথ যে তাঁর পথ নয়, অচিরেই তা মৃণাল সেন বুঝতে পারলেন। 'প্রতিনিধি'র (১৯৬৪) পর ১৯৬৫ সালে নির্মিত 'আকাশ কুসুম'-এ মৃণাল সেন যেন তাঁর নিজস্ব পথ খুঁজে পেলেন।

সত্যি কথা বলতে গেলে, 'বাইশে শ্রাবণ' ছাড়া প্রথম ৬টি ছবির কোনোটিতেই মৃণাল সেন তেমন স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। সময়টা ১৯৬৫। মুম্বাইয়ের এক ফিল্ম ক্লাবে মৃণাল সেন ত্রুফোর ছবি 'ফোর হান্ড্রেড ব্লোজস' দেখেন। এই সিনেমা মৃণাল সেনের চিন্তা-চেতনায় এক আমূল পরিবর্তন এনে দিল। আশীষ বর্মণের কাহিনি অবলম্বনে 'আকাশ কুসুম'-এর চিত্রনাট্য লেখা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কলকাতা ফিরে ত্রুফোর ফরাসি নবতরঙ্গের সিনেমা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, আবার নতুন করে লিখলেন, 'আকাশ কুসুম'-এর চিত্রনাট্য। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক স্বতন্ত্র যুগের সূচনা হলো। সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের সমান্তরাল এক ধারা হয়ে উঠলেন মৃণাল সেন।

যদিও সত্যজিৎ রায় সরাসরি আক্রমণ করলেন 'আকাশ কুসুম'কে। সত্যজিৎ রায়ের মতো ব্যক্তির কাছে এই ধরনের অসিহষ্ণুতা আশা করা যায় না। 'দ্য স্টেটসম্যান'-এর পৃষ্ঠায় তিনি 'আকাশ কুসুম'-এর গল্পটা তুলে ধরে শেষ লিখলেন, 'Contemporary morals: A crow-film is a crow-film is a crow-film' এই পত্রযুদ্ধে মৃণাল সেনসহ অনেকেই জড়িয়ে পড়বেন। তবে এটা ঠিক, 'আকাশ কুসুম' ও পরবর্তীকালের 'ভুবন সোম' ভারতীয় চলচ্চিত্রে এক স্বতন্ত্র ভাষার জন্ম দিয়েছে।

সত্তর দশকে এসে এক অন্য মৃণাল সেনকে আবিষ্কার করি। রাগী, সমসাময়িক ও অনুভবী। কলকাতাকে কেন্দ্র করে এক ট্রিলজির জন্ম হয়। 'ইন্টারভিউ' (১৯৭০), 'কলকাতা-৭১' (১৯৭১) ও 'পদাতিক' (১৯৭৩)। অবশ্য 'কোরাস'কেও (১৯৭৪) এর পাশাপাশি রাখা যায়। 'ভুবন সোম' অবধি যে একরৈখিক গল্প বলার প্রবণতা ছিল, তা এখানে ভেঙে ফেলে ভারতীয় সিনেমায় এক নতুন যুগের সূচনা করেন। এখানে তাঁর পথ প্রদর্শক পরিচালক জঁ লুক গোদার। রোমান্টিক মানবতাবাদ থেকে সরে এসে তিনি এক পরিবর্তনকামী দর্শনে ডানা মেলতে চাইলেন। মৃণাল সেন নিজেই এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে:

'ফ্র্যাগমেন্ট অব ফিজিক্যাল রিয়েলিটিকে নিয়ে আমি আমার ইচ্ছেমতো একটা শেপ দিয়েছি। টুকরো টুকরো বাস্তব ছবি ও শব্দ জোগাড় করেছি, জুড়েছি নিজের ইচ্ছেমতো, নিজের ইচ্ছেমতো একটা পৃথিবী তৈরি করেছি। তারপর নিজস্ব লজিক আমদানি করেছি পৃথিবীটাকে বাঁধতে, অর্গানাইজড করতে, কনভিনসিং করে তুলতে, বক্তব্যটা শুরু করতে।'

স্মিতা পাতিল ও মৃণাল সেন।

এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মৃণাল সেনকে। একে একে আমরা পাব 'মৃগয়া' (১৯৭৬), 'ওকা উরি কথা' (১৯৭৭), 'পরশুরাম' (১৯৭৮), 'একদিন প্রতিদিন' (১৯৭৯), 'আকালের সন্ধানে' (১৯৮০), খারিজ (১৯৮২) ও 'খÐহর'-এর (১৯৮৩) মতো কালজয়ী সব সিনেমা। 

কোথায় থামতে হয়, জানতেন মৃণাল সেন। তাঁর চলচ্চিত্র এই থামার-ই ইতিহাস। পরিমিতি বোধ তাঁর মাথার মুকুট। ছোট ছোট দৃশ্যে অনবদ্য সব মুহূর্ত তৈরি করা। জীবন ও চলচ্চিত্র কোথায় যেন এক হয়ে যায়। 'একদিন প্রতিদিন'-এর উৎকণ্ঠা বা 'খারিজ'-এর বিবেক দংশন কখন যেন আমাদের মধ্যেও চারিয়ে যায়। 'খণ্ডহর'-এর বাড়িটা আর বাড়ি থাকে না, কখন যেন আমার শরীর হয়ে যায়।

বেঁচে ছিলেন ২০১৮ অবধি, অথচ ২০০২-এর পর কোনো কাহিনিচিত্র করেননি। শেষ ৩২ বছরে সিনেমার সংখ্যা মাত্র ৫। এই সংযম শিক্ষণীয়। অনেকের মতো জীবিত লাশ হয়ে ব্যর্থ সিনেমার বোঝা বাড়াননি।

আত্মজীবনী 'তৃতীয় ভুবন'-এর শেষের পৃষ্ঠায় মৃণাল সেন লিখছেন:

'অফুরন্ত? অবিশ্রান্ত? না কি এই শেষ? কে বলবে সেই কথা! অথচ কত সহজ করেই না চ্যাপলিন বলেছিলেন: "When I go, I go!"

'আর আমি? কে আমি? কোথাকার কে? ক'টা মানুষ জানে আমাকে, কে-ই বা ভাবে আমাকে নিয়ে?'

আপনার জন্মের এক শ বছর পরেও আপনাকে নিয়ে আমরা ভাবি মৃণাল সেন। যত দিন এই গ্রহে চলচ্চিত্র নামের শিল্পমাধ্যমটি থাকবে, তত দিন আপনার নাম সগৌরবে উচ্চারিত হবে মি. সেন।
 

Related Topics

টপ নিউজ

মৃণাল সেন / বাংলা সিনেমা / চলচ্চিত্র / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি: টিবিএস
    প্রফেসর ইউনূস যখন কথা বলছিলেন, মনে হচ্ছিল জিয়াউর রহমানের কণ্ঠ শুনছি: মির্জা ফখরুল
  • ছবি: টিবিএস
    বেনজীরের অর্থপাচার মামলায় রিমান্ডের আদেশ শুনে কাঠগড়ায় ঢলে পড়লেন আসামি মার্কিন নাগরিক এনায়েত
  • ছবি: ইনস্টাগ্রাম
    তামিল সুপারস্টার থেকে রাজনীতিবিদ, কে এই থালাপতি বিজয়? যার জনসভায় পদদলিত হয়ে ৩৯ জন নিহত হয়েছেন
  • প্রতীকী। ছবি: শাটারস্টক
    দুর্গন্ধযুক্ত জুতা যেভাবে ভারতের ইগ নোবেলজয়ী গবেষণার প্রেরণা জোগালো
  • ফাইল ছবি/সংগৃহীত
    খাগড়াছড়িতে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় নিহত ৩; জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  • জিয়া হায়দার রহমান। স্কেচ: টিবিএস
    পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার কি ভজকট পাকিয়ে ফেলেছে?

Related News

  • নারকেল: মানবসভ্যতার প্রাচীন সঙ্গী
  • রোজিনার বাড়ির লজিং মাস্টার, ‘রসের বাইদানি’ থেকে ‘তাণ্ডব’, ৩০০ ছবির পরিবেশক মাস্টার ভাই!
  • আইজ্যাক বাবেলের গল্প | বুড়ো শ্লয়মি
  • সোভিয়েতরা কীভাবে হেমিংওয়েকে গুপ্তচর বানাল
  • বাজেট ছাড়িয়েছিল দ্বিগুণ: ‘লগান’ চলচ্চিত্র প্রযোজনায় যে বিপাকে পড়েছিলেন আমির খান

Most Read

1
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

প্রফেসর ইউনূস যখন কথা বলছিলেন, মনে হচ্ছিল জিয়াউর রহমানের কণ্ঠ শুনছি: মির্জা ফখরুল

2
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

বেনজীরের অর্থপাচার মামলায় রিমান্ডের আদেশ শুনে কাঠগড়ায় ঢলে পড়লেন আসামি মার্কিন নাগরিক এনায়েত

3
ছবি: ইনস্টাগ্রাম
আন্তর্জাতিক

তামিল সুপারস্টার থেকে রাজনীতিবিদ, কে এই থালাপতি বিজয়? যার জনসভায় পদদলিত হয়ে ৩৯ জন নিহত হয়েছেন

4
প্রতীকী। ছবি: শাটারস্টক
আন্তর্জাতিক

দুর্গন্ধযুক্ত জুতা যেভাবে ভারতের ইগ নোবেলজয়ী গবেষণার প্রেরণা জোগালো

5
ফাইল ছবি/সংগৃহীত
বাংলাদেশ

খাগড়াছড়িতে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় নিহত ৩; জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

6
জিয়া হায়দার রহমান। স্কেচ: টিবিএস
বাংলাদেশ

পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার কি ভজকট পাকিয়ে ফেলেছে?

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net