Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
May 29, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, MAY 29, 2025
হাসানের মনের কালো সিন্দুক

ইজেল

ফারুক ওয়াসিফ
22 November, 2021, 10:45 pm
Last modified: 23 November, 2021, 03:37 pm

Related News

  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...
  • কলম্বো সাহিব কা মকবারা–ফিরছে তার আদিরূপে

হাসানের মনের কালো সিন্দুক

বাংলাদেশের বাস্তবতাকে হাসান দুরবগাহ বলেছেন। এই বাস্তবতায় অবগাহন করা কঠিন। তাঁর কথা ধরেই বলা যায়, শুধু শুভ-সুন্দর-প্রগতির বাস্তবতায় অবগাহন করেই কি শুচি হওয়া যায়? যাকে অসুন্দর-অশুভ বলছি, তাকেও বুঝে দেখা ও দেখানো তো কথাশিল্পীর কাজ হওয়ার কথা। ওই কালো সিন্দুকে তো দুটি নকশাই থাকার কথা। সিন্দুকটিও তো সাদা বা কালো কারও একার নয়, দুজনেরই। কথাশিল্পীর কি এমন পক্ষপাত থাকতে পারে?
ফারুক ওয়াসিফ
22 November, 2021, 10:45 pm
Last modified: 23 November, 2021, 03:37 pm

'বিধবাদের কথা' হাসান আজিজুল হকের অন্যতম সেরা গল্প। তাঁর সিগনেচার এই গল্পে স্পষ্ট। সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের 'অলৌকিক মানুষ' উপন্যাসের মতো দুই বোনের বিয়ে হয় দুই ভাইয়ের সাথে। দুটি বোন দেখতে এক রকম হলেও একজনের গায়ের রং কালো, আরেকজনের সাদা। তাদের দুটি সাদা-কালো ছেলেও হয়। এই দুই ভাইয়ের একান্নভোগী পরিবারের গল্পটাকে তিনি চালিয়ে দেন মুক্তিযুদ্ধের উথাল-পাতাল সময়ের মধ্যে। সেই জগৎও কালো ও সাদা। মাদ্রাসাপড়ুয়া দুষ্টু কালো ছেলেটি রাজাকার হয়, স্কুলপড়ুয়া সুশীল সাদাটি হয় মুক্তিযোদ্ধা। বাবাদের দুজনের একজন পাকপন্থী, আরেকজন 'জয় বাংলার' লোক। বাবা-পুত্রেরা যুদ্ধেই মারা যায়। থাকে শুধু দুই বিধবা, সন্তানহারা দুই মা। দিনমান তারা একটি কাঁথা দুদিক থেকে বুনে যায়। এক বিধবা বোনেন শৈল-সুন্দর দৃশ্য, আরেকজন সুচের নকশিতে গেঁথে তোলেন অশৈল-অসুন্দর। সাদা-কালোয় বিভক্ত দুনিয়ার মতো তাদের নকশি করা ছবিও কাঁথার মাঝখানে এসে থমকে যায়। মিলতে পারে না। সেখানে একটা শেকল এঁকে জীবন দুটিকে স্থায়ীভাবে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এক সংসার, এক শোক, একই জীবন হলেও সেই সুতায় আঁকা শেকলটা দুজনের জীবন ও কল্পনাকে আলাদা করে রাখে। দিনশেষে দুই বোনে কাঁথাটা আলগোছে ভাঁজ করে ঘরের পুরোনো কালো সিন্দুকের ডালা খুলে তার একেবারে তলায় রেখে দেয়।

হাসানের দুনিয়া এই কালো-সাদায় বিভক্ত। তাঁর কৃষকেরা, তাঁর নারীরা, তাঁর নায়কেরা মৃদুমন্দ দোষ করলেও তারা মূলত 'ভিকটিম'। তাঁর জোতদার, ফতোয়াবাজ, ধর্ষক, ঘেরমালিকেরা এককথায় নরাধম। কিন্তু জগৎ তো আর সাদা-কালো নয়, সাদাও নয় সব সময় সাদা, কালোকেও চিরকাল অন্ধকারে রাখা যায় না। এই গল্পটি যেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসেরই প্রতীক ও প্রতিনিধি। ভালো ও মন্দ, প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল, ইসলামপন্থী ও সেকুলারপন্থী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ…ভাগের শেষ নাই। এখানেও দুটি ভাগের ছবি এঁকে যাচ্ছেন দুজন বিধবা। হাসানের চোখে তাঁদের একজন শুভ, আরেকজন অশুভের প্রতীক। এই ভাগের সংসারে সাহিত্য ও সেসবের লেখকেরাও প্রগতিশীল আর অপ্রগতিশীল ভাগে ভাগ হয়ে যান। সাহিত্য যদি প্রথমত সাহিত্য না হয়, তাহলে তার গায়ে মার্কা জুড়ে দিলে কী লাভ?

বাংলাদেশের বাস্তবতাকে হাসান দুরবগাহ বলেছেন। এই বাস্তবতায় অবগাহন করা কঠিন। তাঁর কথা ধরেই বলা যায়, শুধু শুভ-সুন্দর-প্রগতির বাস্তবতায় অবগাহন করেই কি শুচি হওয়া যায়? যাকে অসুন্দর-অশুভ বলছি, তাকেও বুঝে দেখা ও দেখানো তো কথাশিল্পীর কাজ হওয়ার কথা। ওই কালো সিন্দুকে তো দুটি নকশাই থাকার কথা। সিন্দুকটিও তো সাদা বা কালো কারও একার নয়, দুজনেরই। কথাশিল্পীর কি এমন পক্ষপাত থাকতে পারে?

হাসান আজিজুল হকের মনের তলায়ও যেন আছে এক কালো সিন্দুক। সিন্দুকের ভেতর আটকে থাকা বাতাসের গুমরানি টের পাওয়া যায় তাঁর গল্পে। সেই সিন্দুকটি যেন দেশের প্রতীক, আরও নির্দিষ্ট করে বললে স্মৃতি দিয়ে গড়া দেশের ধারণা ওই সিন্দুক। ৪৭-এ একটা দেশ দুভাগ হলো, ৭১-এ আবার দেশের পরিচয় বদলাল, স্বাধীনতাও এল। কিন্তু অনুভূতির যে দেশ, স্মৃতিপদার্থে গড়া যে দেশ, তা অধরাই থেকে যাচ্ছে। সেখানে যাওয়ারও উপায় নাই। আগম-নিগমের সাঁকোটা ভেঙে দিয়েছে সময়। রাষ্ট্র আলাদা বলে কেবল নয়। দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতার তোড়ে সেই দেশ উবে গেছে। তার 'ইনোসেন্স' নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানে যাওয়া যায় না, তাকে ভোলাও যায় না। কিন্তু তার জন্য টান, তার জন্য হাহাকার তো থেকে যেতে পারে আমৃত্যু আজীবন। ফেরা হয় না, কেবল মনের তলার কালো সিন্দুকে পুরে তা বয়ে বেড়ানো যায়। এই কালো সিন্দুকের আরেক নাম ট্রমা—দেশভাগের ট্রমা। স্মৃতি দ্বারা পরিপুষ্ট হয় এই ট্রমা।

যা নাই তা চাওয়ার নাম প্রেম, তার যাত্রা হয় 'অতলের আঁধি'র দিকে। 'আগুনপাখি' উপন্যাসের ওই মা দেশ বোঝেন না, রাষ্ট্র মানেন না, তিনি কেবল তার পরিচিত ভরাট সংসারে ফিরতে চান। হাসানের হৃদয়ের পর্দায় অনুরণন তোলে রাঢ়ের জীবন। গন্তব্য হারিয়ে পথকেই ঘর করেছেন তিনি। ভাষা, স্মৃতি, ভূগোল ও সমাজ মিলিয়েই তো মানুষের পরিচয়। সেখানে ভাষা যদি ভূগোল হারায়, স্মৃতি যদি হারায় তার উৎস কিংবা একটা সমাজ টুকরা টুকরা হয়ে ছিটকে পড়ে বিভিন্ন সীমান্তের কাঁটাতারে, তখন কী হবে কারও পরিচয়? জাতিরাষ্ট্র যাদের বেমানান করে দিয়েছে, তাদের আত্মপরিচয়ের নোঙরটা পড়ে থাকবে স্মৃতির খোঁয়ারির দরিয়ায়। নোঙরছেঁড়া দড়ি হাতে তাঁরা ঘুরে বেড়াবেন এক জনসমুদ্র থেকে আরেক জনসমুদ্রে। এটা কি নিরাশ্রয়ের ভয়? নাকি পুনর্বাসিত হতে না-পারা আত্মার স্মৃতিপ্রেত হয়ে থাকার যন্ত্রণা?

এ শুধু গৃহ হারানোর ভয় না। শুধু দেশ দিয়েও মেটানো যায় না ক্ষুধিত পাষাণের এই পিপাসা। এটা যেন আপনকার জগৎ হারিয়ে ফেলার বিচ্ছেদ। এটা যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে আবার তা পাওয়ার তালাশ। ওয়েলশ ভাষায় 'হিরায়েথ' (hiraeth) নামে একটা শব্দ আছে। বাংলায় বললে হয়তো বলা যায়, 'এমন এক দেশের জন্য মন পোড়ানি, যা আদতে ছিল না।' সেটা এমন এক দেশ বা হোমের জন্য আকুলতা, যা কখনো নিজের ছিল না, কিন্তু যার জন্য মনটা পোড়ায়। উত্তরবঙ্গের ভাষায় এর কাছাকাছি শব্দ হলো 'ফাপর'। কোনো পরিবেশকে আপন মনে না হলে উত্তরের কৃষকদের সেখানে ফাপর লাগে। এই হিরায়েথ, এই ফাপর, এই ট্রমা হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যের ওই কালো সিন্দুক। তা স্পর্শাতীত, তা বিচারের ঊর্ধ্বের এক দুঃখ। ইতিহাসের কাঠগড়ায় তা যাচাই হতে নারাজ।

সে কারণেই কি তাঁর গল্পের মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের পরও স্বাধীনতার স্বাদ খুঁজে পায় না! 'ফেরা' গল্পের কৃষক পরিবার শরণার্থী দশা থেকে ফিরে দেখতে পায় ভিটা বলে কিছু নেই। তাঁর জগৎ যেন 'হোমলেস'। তাঁর নারীরা ঘর পায় না বলে 'মন তার শঙ্খিনী' হয়ে থাকে। এই দেশ নিছক রাষ্ট্র নয়, মানচিত্র নয়, ভূমি নয়, এই দেশ হলো 'হোম'। হোম তাকেই বলে যার মাটি-মানুষ-পরিবেশকে আপন বলে ভাবা যায়। যাকে আশ্রয় করা যায়। দেশের জন্য এই মনপোড়ানি তা সীমান্তের ভেতরের বা বাহিরের কোনো ভূমি না, সেটা এক আরশিনগর। তার বিরাজমানতা তো ইতিহাসে নয়, কল্পনায়। সুতরাং হিরায়েথ যেন এক অনন্ত নির্বাসন; দেশভাগের স্মৃতিবন্দিত্ব। দেশচ্যুতদের অভিজ্ঞতা তাই ঠাঁই করে যত না ইতিহাসে, তার চাইতে বেশি স্মৃতিতে।

হাসানের জগৎ যতই রাঢ় আর সুন্দরবনীয় ভাগে বিভক্ত থাক, দেশের জন্য যুদ্ধ আর দেশহারা মানুষের হাহাকারের সুর যতই আলাদা হোক, তাঁর চরিত্ররা যতই নিরাশ্বাস হোক; তিনি বাংলাদেশবাসী হয়ে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় বিশুদ্ধ ঘটি যতই হোন, স্মৃতির ভেতর সব একাকার। তিনি বর্তমানের ভাঙা বাস্তব নিয়ে গল্প লিখলেও তাঁর ওই কালো সিন্দুকের তলায় লুকানো কাঁথাটি কিন্তু ওই সীমানা আঁকা শেকল বরাবর দ্বিখণ্ডিত হয়নি। ইউটোপিয়াই হোক বা বাসনার ভূগোল হোক, তাঁর সকল লেখা সেই অতিদেশের কথা বলে। পাণিণীর ব্যকরণশাস্ত্রে 'অতিদেশ' কোনো দেশ না, তা ভাষার একটা সূত্র। অতিদেশ ঘটে তখন, যখন যা বলা হচ্ছে তা ছাপিয়ে আরও বড় অর্থের ইশারাপাত ঘটে। হাসানের বাস্তবের 'অতিদেশ হলো' সেই অতিবাস্তব জগৎ। একটি-দুটি নয়, সব গল্প-উপন্যাস হাতে নিয়ে বসলে অর্থের এই উত্তরণ মানসচোখে দেখা যাবার কথা। হ্যাঁ, সেটাও অবশ্যই বাংলাদেশের সাহিত্যের অংশ।

শিল্প একধরনের স্বীকারোক্তি। নির্বাসিতের ট্রমার স্বীকারোক্তি, এর অসহ্য বিষাদ, তাঁর সাহিত্যে মিশিয়ে রেখে গেছেন হাসান। শোকের উদ্‌যাপন আছে, ট্রমা লুকিয়ে থাকে মনের তলায়, ওই কালো সিন্দুকে রাখা নকশিকাঁথার মতো। সময়ে সময়ে অন্য বিষয়ের গল্পের ভেতর তা ঘাই মারে। তাই তাঁর গ্রাম বিষণ্ন, জীবন বিষণ্ন আর শহর মানে বাতাস থমকে থাকা গরম আর ধুলা।

হাসান আজিজুল হকের শিল্প আগ্রাসীরকম বাস্তববাদী। তাঁর ভাষা ও বয়ানের চৌম্বকীয় টান গল্পের বিষয়-আশয়সমেত পাঠককেও দুলিয়ে-নাচিয়ে ঢেউভঙ্গের দিকে নিয়ে যায়। ঢেউ যেমন তীরে আছড়ে পড়ে ভেঙে যায়, গল্পের অন্তিম নাটকীয়তাকে হাসান তেমনি একটা ধসের দিকে নিয়ে যান। হাসানের এই হলো ক্ষমতা; তিনি যে পরিণতি ঘটাতে চান, তাঁর গল্পের ভাষা, গাছপালা, আকাশ-পানি, পশু ও মাকড় সব যেন সেই লক্ষ্যের দিকেই যেতে বাধ্য। কোথাও সামান্য বিচলন দেখাবার মুরদ তাদের থাকে না। 'মন তার শঙ্খিনী' গল্পে পরস্ত্রী হামিদাকে ভালবাসার অপরাধে শাদুকে সালিসে জুতাপেটা করা হয়। কিন্তু হামিদা তাতে খুশি। এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে দুজনের ভালবাসার স্বীকৃতি তো এল। কিন্তু শাদু আর তার সাথে কথা বলে না। যাবার সময় হামিদা কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলতে পারে, 'আজ যেচি আমি সোয়ামির বাড়ি, তোর ছেলে রইল আমার প্যাটে। খানিকটো শোধ দেলোম।'

গল্প শেষ। প্রেমের কী নিদারুণ শোধবোধ। তাঁর গল্পের শুরু থেকে শেষে দৃশ্য, বাক্য, প্রতীক আর সংলাপ যেন কিরিচের পোঁচ, যুতটুকু কাটার ততটাই কাটে, বেশিও না কমও না। তাঁর ভাবনাজগতে ব্যতিক্রম 'বিলি ব্যবস্থা' গল্পের কথাও বলি। যথারীতি জোতদারের নুলা ছেলেটা ভূমিহীন নেক বক্‌শের বোবা বোনকে গর্ভবতী করে ফেলে। মেয়েটির পেট ফুলে উঠলে যথারীতি সালিস বসে। জোতদারের ছেলের অপরাধ আলোচ্য নয়, বিচার্য বিষয় বোবা মেয়েটির জেনা করার পাপ। যথারীতি তাকে মাটিতে পুঁতে পাথর মারার শাস্তি দেওয়া হয়। পাথরবৃষ্টির পরেও মেয়েটি মরে না। একসময় তারা বোবা জবান থেকে বেরিয়ে আসে জন্তুর মতো আওয়াজ। কারও সাহস হয় না কান পেতে শোনার। হাইলা চাষি নেক বক্‌শ, তার ভাই শুধু কান পাতে, 'একবার, দুবার, তিনবার। তারপর দারুণ আতঙ্কে সে চেঁচিয়ে ওঠে, কি কহিছে বাহে? কি কহে সে? কে কান্দে? বোবা চিৎকার শোনা যায়। কে কান্দে কহিস? পয়গম্বর নবীজি কান্দে কহিছে আমার বুন। চোখের আঁসুতে সোনার দাড়ি ভিজাইয়া আমার পয়গম্বর নবীজি কান্দে। জারে জার হইয়া কান্দে।'  

নবীর নামে একটি সত্যিকার অবলা মেয়েকে মাটিতে পুঁতে পাথর ছুড়ে মারার শাস্তি দেওয়া হলো। সেই বোবা মেয়েটি শুনতে পায়, পয়গম্বর তার জন্য কাঁদছেন, জারে জার হইয়া কাঁদছেন। ধর্ম যে কেবল শোষণের হাতিয়ার নয়, শোষিত আত্মার ফরিয়াদ, অশ্রুপ্রবাহিত উপত্যকার দীর্ঘশ্বাস; এই মার্কসীয় বীক্ষা/// ব্যবহার করে কী সুন্দর এক অ্যামবুশ তিনি ঘটালেন। ধর্মের এই দিকটি (কেবল ইসলামের বেলায় অবশ্য) তাঁর অন্য সব গল্পে প্রায় উপেক্ষিত।

হাসান আজিজুল হক বাস্তববাদী এই অর্থে না যে তিনি বাস্তব উপাদানের বাইরে গিয়ে গল্প বলেন না। তিনি বাস্তববাদী আরও বড় অর্থে। তিনি সমাজে ও ইতিহাসে নির্মিত জীবনের আদলগুলোই ব্যবহার করেন। তাঁর রচনা প্রতিনিধিত্বশীল। তাঁর কৃষকের মধ্যে সব কৃষকের ফরিয়াদ আছে, তাঁর নারীর মধ্যে নারীত্বের বহুবাচকতা আছে, তাঁর প্রকৃতিও বৃহৎ বাংলারই প্রতিনিধিত্বশীল। কুড়িগ্রামের রাজারহাট বলে যে জায়গাটি, সেখানে মিলের পাড় গ্রাম পার হলে বিস্তীর্ণ পাটখেত দেখেছিলাম। মাটির রাস্তা উঁচু করে বাঁধা। সন্ধ্যার মুখে চারপাশ নির্জন, পাটখেতে গোড়ালিডোবা পানি। হঠাৎ দেখি একজায়গায় পাটগাছের মাথাগুলো নড়ছে। ছপছপ শব্দ। ধীরে ধীরে পাটখেতের ভেজা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল এক প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী। বিস্তীর্ণ পাটখেতের মধ্যে এতক্ষণ উবু হয়ে ছিল। তার নির্জন একাকিত্বে সে হয়তো দেখেছে কোনো ব্যাঙের বসে থাকা, থাকতে থাকতে হয়তো পরিচিত হয়ে গেছে কোনো সাপ। তারপর কাজ শেষে জমি থেকে বেরিয়ে কাদাপায়ে উঠেছে সভ্যতার সড়কে। ঠিক যেন হাসান আজিজুল হকের 'আমৃত্যু আজীবন' গল্পের কৃষক। এই প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র সৃষ্টি হাসানের গল্পকে করে তোলে চিরকালীন।

গত শতকের তিরিশের দশকে স্পেনদেশীয় নন্দনতাত্ত্বিক হোসে ওর্তেগা ঈ গাসেত 'শিল্পকলার বিমানবিকীরণ' নামের প্রবন্ধে বাস্তববাদের এই প্রতিনিধিত্বশীলতার সমালোচনা করেছিলেন। তিনি দেখান, আধুনিক সাহিত্য-সংগীত-চিত্রকলা বাস্তববাদী হচ্ছে না। তারা আর প্রতিনিধিত্বশীল থাকতে চাইছে না। মানবিক হতে গিয়ে বাস্তববাদ শিল্পের সাথে আপস করছে। তিনি দেখতে পান, নতুন এক বিমানবিকীকরণের আরম্ভ। আজ এসে মনে হয়, গাসেতের কথা ফলেনি। বিশ্বসাহিত্য বিমূর্ত বিমানবায়নের চাইতে মানবায়নেই এখনো মোক্ষ খুঁজছে। বাস্তববাদ, পরাবাস্তববাদ, জাদুবাস্তববাদ, মায়াবাস্তববাদ, যা-ই বলা হবে, 'বাস্তব' থাকবেই, মানুষ থাকবেই। বিমানবীকরণের প্রক্রিয়ায় যদি মানুষই হারিয়ে যায়, তাহলে সেই শিল্প তো শিল্পীদের শিল্প। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়া মানুষের জীবনের উষ্ণ আঁচ জীবনঘষা আগুনের আভা তাতে দেখা যায় কি? হাসান শেষ অবধি মানববাস্তবকেই আরাধ্য ভেবে গেছেন। তাঁর মানবায়ন কেবল মানুষ দিয়ে হয় না, তিনি করেন বস্তু ও প্রাণপুঞ্জের মানবায়ন, ভাষার মানবায়ন, শিল্পের মানবায়ন।

যদিও আমরা জানি, রুশ বিপ্লব পরবর্তী বাস্তববাদ সাহিত্য জীবনকে বড় একপেশে করে দেখেছিল, কল্পনার ঘাটতি অনেকের সাহিত্যকর্মকে নিরস করে ফেলেছিল। কিন্তু নিরেট বাস্তববাদী হয়েও হাসান যে বড় শিল্পী, তার কারণ হয়তো তাঁর ওই কঠিন মানবিকতা। ওই মানবিকতার দায়েই তিনি স্মৃতি দিয়ে ঠাসা কালো সিন্দুকটি আমৃত্যু বয়ে বেড়িয়েছেন। সেই সিন্দুকে ভালবাসা যেমন ছিল, তেমনি ছিল ঘৃণাও। অমীমাংসিত দেশভাগ, অবণ্টিত স্বাধীনতা, নির্দয় বাস্তবতার প্রতি ঘৃণা তাঁকে কোথাও কোথাও সীমিত করেনি কি? কেননা স্মৃতি তো একচক্ষু সাইক্লোপ। অভিজ্ঞতার চোখ দুটি। সাহিত্য তো চায় তৃতীয় নয়ন মেলতে। সেই তৃতীয় নয়নে তাকালে দুটি বিধবার জীবনে সাবিত্রীর যন্ত্রণা এবং আগুনপাখির হুতাশন তিনি দেখতে পেতেন। 


(লেখাটি এই লেখকের 'হাসান আজিজুল হকের সাহিত্য: ক্রন্দনশীল বাস্তবের জ্বালাময় অশ্রু' নামের প্রবন্ধের দ্বিতীয় ভাগ)

Related Topics

টপ নিউজ

হাসান আজিজুল হক / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আন্তঃনগর ট্রেনে আরও বেশি যাত্রাবিরতি দেওয়ার চাপে রেলওয়ে
  • যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হলে কানাডাকে বিনামূল্যে ‘গোল্ডেন ডোম’ সুরক্ষা দেবেন ট্রাম্প
  • মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হারের ধাক্কা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে
  • ইউক্রেনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ‘পাল্লার সীমাবদ্ধতা’ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ
  • ‘সরকারের মাথা থেকে পচন ধরেছে’: তারুণ্যের সমাবেশে মির্জা আব্বাস
  • ‘ড. ইউনূসের কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন’: সালাহউদ্দিন আহমদ

Related News

  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...
  • কলম্বো সাহিব কা মকবারা–ফিরছে তার আদিরূপে

Most Read

1
বাংলাদেশ

আন্তঃনগর ট্রেনে আরও বেশি যাত্রাবিরতি দেওয়ার চাপে রেলওয়ে

2
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হলে কানাডাকে বিনামূল্যে ‘গোল্ডেন ডোম’ সুরক্ষা দেবেন ট্রাম্প

3
অর্থনীতি

মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হারের ধাক্কা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে

4
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ‘পাল্লার সীমাবদ্ধতা’ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ

5
বাংলাদেশ

‘সরকারের মাথা থেকে পচন ধরেছে’: তারুণ্যের সমাবেশে মির্জা আব্বাস

6
বাংলাদেশ

‘ড. ইউনূসের কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন’: সালাহউদ্দিন আহমদ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net