Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
August 08, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, AUGUST 08, 2025
মানুষে মানুষে ঘেরা থাকলেও কেন এত একা লাগছে!

ইজেল

সৈয়দ মূসা রেজা
06 August, 2025, 03:50 pm
Last modified: 06 August, 2025, 03:50 pm

Related News

  • বন্ধুবিহীন, একা
  • উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা

মানুষে মানুষে ঘেরা থাকলেও কেন এত একা লাগছে!

একাকিত্ব একেকজনের কাছে একেক রকম রূপে ধরা দেয়। অনুভূতিও আলাদা। আপনার জন্য একাকিত্বের মানে কী? হয়তো কোলাহল, ভিড়, হাসি-আড্ডার মাঝেও আপনি সেখানে এক অচেনা মানুষ।
সৈয়দ মূসা রেজা
06 August, 2025, 03:50 pm
Last modified: 06 August, 2025, 03:50 pm
ছবি: সংগৃহীত

নিঃসঙ্গতা অনেক রকমের হয় এবং প্রতিটি মানুষ একে একেকভাবে অনুভব করে। তবে আপনার জন্য নিঃসঙ্গতা কী?

হয়তো নিঃসঙ্গতা হলো একটা শহর। শহরের রাস্তায়, কোলাহলের মধ্যে, মানুষের ভিড়ে, হাসি-তামাশার মাঝে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করেন একজন অচেনা মানুষ হিসেবে–বিচ্ছিন্ন, সংযোগহীন, যেন অপ্রাসঙ্গিক। এটা ভাবতে গিয়েই বিবিসির ম্যাট ওয়ারেননের একটা লেখার কথা মনে পড়ছে, 'হোয়াই আই ফিল সো লোনলি ইভেন দো আই অ্যাম সাররাউন্ডেড বাই পিপল'। এই নিবন্ধে নানাভাবে নিঃসঙ্গতার কথা লিখেছেন: হয়তো সেটা একটা মরিচিকা হয়ে যাওয়া সম্পর্ক–একটা বিবাহ বা পার্টনারশিপ, যেখানে কথা শোনা হয় না, চাহিদা পূরণ হয় না। আপনি সেখানে আছেন, কিন্তু কেউ আপনাকে দেখতে পায় না–এমন নানা কিছুর কথা ছিল।

তবে একাকিত্ব একেকজনের কাছে একেক রকম রূপে ধরা দেয়। অনুভূতিও আলাদা। আপনার জন্য একাকিত্বের মানে কী? হয়তো কোলাহল, ভিড়, হাসি-আড্ডার মাঝেও আপনি সেখানে এক অচেনা মানুষ। বিভ্রান্ত। বিচ্ছিন্ন। যেন একটি অবাঞ্ছিত ছায়া।

আবার হয়তো আপনি মেরি শেলির ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন উপন্যাসের রবার্ট ওয়ালটনের মতো। যিনি উত্তর মেরু অভিযানে বিশ্বস্ত নাবিকদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু আসলে চেয়েছিলেন একজন সত্যিকারের বন্ধু। 'একজন এমন মানুষ, যার চোখ আমার চোখের জবাব দিতে পারে, যে আমাকে অনুভব করতে পারে'–এই ছিল তার ভাবনা।

এ কথা সবার জানা যে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে একাকিত্ব বাড়ে। আর সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষেরা অনেক সময় বাধ্য হয়ে দীর্ঘমেয়াদি নিঃসঙ্গতা সহ্য করেন। এটি  অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।

তবে আপনি যদি এই লেখার শুরুতে বর্ণিত অভিজ্ঞতাগুলোর মতো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো একসময় সন্দেহ করেছেন, সব মানুষই কি একাকিত্ব থেকে মুক্তি দেয়? বাস্তবতা হলো, কখনো কখনো তারাই হয়তো একাকিত্বের মূল কারণ। সত্যি বলতে, আমরা বন্ধুবান্ধবের মাঝেও, প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গেও, জনতার ভিড়েও একা অনুভব করতে পারি।

এ অভিজ্ঞতার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। ম্যাট ওয়ারেননের লেখায় ২০২১ সালে একটা গবেষণার কথা উল্লেখ করা যায়–এতে ৭৫৬ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দুই বছর ধরে স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত তাদের অনুভূতি লিপিবদ্ধ করেছেন, তাদের একাকিত্বের অনুভূতি জনবহুল, অতিভিড়াক্রান্ত শহরাঞ্চলে বেড়েছে। তাহলে এই প্রশ্ন করা যায় প্রযুক্তিনির্ভর এই নগরজীবন কি আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে তুলছে? অর্থাৎ আধুনিক শহর ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপন আমাদের সামাজিকভাবে যোগাযোগ কম ঘটাচ্ছে? 

এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আজকের সময়কে অনেকেই একাকিত্বের মহামারি হিসেবে দেখছেন। এ এমন এক বৈশ্বিক সংকট; যা বয়স ও জাতির সীমানা মানে না। মানে না শ্রেণি বা ভৌগোলিক সীমা; যা আমাদের মস্তিষ্কের গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে। আবার বিবিসির ২০১৮ সালের লোনলিনেস এক্সপেরিমেন্ট নামের একটি জরিপের কথা বলি। সেখানে ৫৫,০০০ মানুষের মধ্যে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বলেছেন, তারা প্রায়ই বা খুবই বেশি সময় একা বোধ করেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিয়মিতভাবে একাকিত্ব অনুভব করেন।  তবে তাদের একেকজনের অভিজ্ঞতা একেক রকম।

টেস্ট অফ চেরি

সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, আজকের এই সময়ে যখন আমাদের হাতে রয়েছে সারা দুনিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রযুক্তি; যখন আমরা এক ক্লিকে অজানা লোকজনের সঙ্গে আলাপ করতে পারি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিতদের জীবন অনুসরণ করতে পারি; তখনো কেন এত একাকিত্ব? যখন বিশ্বজুড়ে শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে; অনুমান ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ৬৮ শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করবে, তখন কেন আমরা এত নিঃসঙ্গ? এমন প্রযুক্তি-সংযুক্ত আর মানুষে ঠাসা পরিবেশে থেকেও আমরা কেন নিঃসঙ্গ? ইউনিকোডভিত্তিক যুগান্তকারী বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার অভ্রের প্রাণপুরুষ মেহেদী খান অনেক দিন আগে প্রায় একই প্রশ্নের অবতারণা করেছিলেন অভ্রের পুরোনো ওয়বসাইটে। সে সাইটটি এখন নেই। তাই স্মৃতি হাতড়ে বিষয়টি তুলে আনলাম। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে যা বলেছিলেন, তার মর্ম কথাটি ছিল, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান, বাসে বা গাড়িতে চড়ুন কিংবা পার্কে ঘোরাফেরা করুন, আপনার চারপাশে শত শত নিঃসঙ্গ মানুষকে দেখতে পাবেন। 

এই প্রশ্নগুলো থেকে আরও একটি জিজ্ঞাসা উঠে আসে, তাহলে এটা কি সত্যিই আরেকটি বিশ্বমারি, যা আমাদের দূরে রাখতে হবে! চিকিৎসার মাধ্যমে মুছে ফেলতে হবে! লজ্জার মতো এড়িয়ে চলতে হবে! নাকি এই নিঃসঙ্গতার মাঝেও কিছু শেখার আছে?

একাকিত্ব: একটি বহুস্তরীয় আবেগ?

একাকিত্ব কোনো সহজবোধ্য ধারণা নয়। এটি জটিল, আবছা অনুভূতির জগৎ। কিংস কলেজ লন্ডনের ইতিহাসবিদ এবং 'আ বাইয়োগ্রাফি অব লোনলিনেস' বইয়ের লেখক ফে বাউন্ড আলবার্টি মনে করেন, একাকিত্ব আসলে একটি 'আবেগগুচ্ছ', যেখানে দুঃখ, রাগ, হিংসা–এসব অনুভূতি মিলেমিশে থাকে। তাঁর গবেষণা জানায়, আধুনিক অর্থে  'একাকিত্ব' বা `loneliness' শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় ১৮০০ সালের পর।

তবে আধুনিক বিজ্ঞানের চোখে নিঃসঙ্গতা হচ্ছে বাস্তব সামাজিক সংযোগের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত সংযোগের বিচ্ছেদ। অর্থাৎ একা থাকা মানেই নিঃসঙ্গতা নয়। বিজ্ঞানীরা সাধারণত একাকিত্বকে সংজ্ঞা দেন এভাবে, এটি হলো বাস্তব সামাজিক সম্পর্ক আর প্রত্যাশিত সম্পর্কের মধ্যকার ফারাক। অর্থাৎ আপনি একা না থাকলেও একা অনুভব করতে পারেন।

ইউনিভার্সিটি অব বাথের মনোবিজ্ঞানী স্যাম কার মনে করেন, একাকিত্ব নিয়ে সবচেয়ে বড় 'মিথ' হলো, মানুষই এর সমাধান। বাস্তবে মানুষই অনেক সময় এর কারণ।

কার বলেন, 'সবাই একটা জিগস পাজলের টুকরোর মতো; আমরা চাই এই জগতে মানিয়ে নিতে। কিন্তু আমাদের জীবনের মানুষেরাই অনেক সময় আমাদের সেই খাপ খাওয়ার অনুভূতি দেন না। হয়তো তারা আমাদের প্রকৃত রূপটিকে চিনতে পারেন না, অদৃশ্য করে রাখেন, কিংবা তাদের সামনে আমাদের ছদ্মবেশ নিতে হয়। এটাই বহু মানুষের একাকিত্বের মূল।'

বাউন্ড আলবার্টিও বলেন, শারীরিক বিচ্ছিন্নতা একাকিত্বের মূল নয়। বরং মানসিক দূরত্ব মানুষকে সবচেয়ে বেশি নিঃসঙ্গ করে তোলে। সম্পর্ক, যা তৃপ্তিদায়ক হওয়ার কথা, সেগুলোই যখন খালি লাগে, তখন নিঃসঙ্গতা সবচেয়ে তীব্র হয়। অনেকে ভাবেন, একা থাকলেই একাকিত্ব। কিন্তু আমার গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের সবচেয়ে একা লাগার কারণ হলো আবেগগত দূরত্ব। সম্পর্ক থাকার পরও যদি তা তৃপ্তি না দেয়, তাহলেই সবচেয়ে বেশি একা লাগতে পারে। আমি নিজেও এমন সময়ে একা অনুভব করেছি, যখন আশপাশে অনেক মানুষ ছিল; কিন্তু তাদের মধ্যে একজনকেও মনে হয়নি, আমার চিন্তাধারার সাথে কোনো মিল আছে।'

একটা ঘটনা বলি, এক গবেষকের কাছে এক চিঠি এসেছে আমেরিকা থেকে। একজন নারী লিখেছেন, তিনি ৫০ বছর ধরে বিবাহিত। কিন্তু তার স্বামীই বরাবর তার একাকিত্বের উৎস। তিনি ভেবেছিলেন, বিয়ে তাকে সুখ দেবে; বাস্তবে সেটা হয়নি। যে সম্পর্ক নিরাময় আনবে বলে ভেবেছিলেন, সেটাই হয়ে উঠেছে অসুখ।

একটি সম্পর্ক তখনই একাকিত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যদি এক পক্ষ শারীরিক ঘনিষ্ঠতা চায়, আর অন্য পক্ষ চায় মানসিক বন্ধন–ফলে উভয়ে একসঙ্গে থেকেও একা হয়ে পড়ে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য গবেষক ও দ্য ইন্সট্যান্ট মুড ফিক্স বইয়ের লেখক অলিভিয়া রেমেস বলছেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার চাহিদা পূরণ হচ্ছে কি না, সেই ধারণা। কেউ যদি কেবল এক ব্যক্তির সঙ্গেই গভীরভাবে যুক্ত থাকে, কিন্তু মানসিকভাবে পূর্ণতা পায়, তাহলে সে একা মনে করে না। আবার কেউ অনেকের মাঝেও গভীর সম্পর্কের খোঁজে একা অনুভব করতে পারে।' অর্থাৎ কারও সঙ্গে গভীর সংযোগ থাকলে একজন মানুষ নিঃসঙ্গ না-ও হতে পারেন, আবার বহু মানুষের মাঝে থেকেও কেউ কেউ নিঃসঙ্গ অনুভব করতে পারেন।

একাকিত্বের উপকারও আছে?

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, একাকিত্ব আমাদের মস্তিষ্কে নিহিত একটি সতর্কসংকেত। খিদে যেমন  আমাদের খাওয়ার জন্য তাড়না দেয়। একইভাবে একাকিত্ব আমাদের জানায়, কিছু একটা ঠিক নেই। নিঃসঙ্গতা জানায়, আমাদের সামাজিক পরিবেশে কিছু সমস্যা আছে। পরিবর্তন দরকার।

প্রাগৈতিহাসিক যুগে বিচ্ছিন্নতা ছিল বিপজ্জনক। বুনো প্রাণী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে একা পড়লে বাঁচার সম্ভাবনা কমে যেত। তখন নিঃসঙ্গতার অনুভব আমাদের দলবদ্ধ জীবনে ফিরিয়ে আনার স্নায়বিক পদ্ধতি হিসেবে কাজ করত। তাই মনে করা হয়, একাকিত্ব মানুষের একটি বিবর্তনগত সুরক্ষাব্যবস্থা।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধারণা বদলায়। বাউন্ড আলবার্টি নামে এক গবেষকের গবেষণা জানায়, ১৯ শতকের আগে 'lonely' শব্দের মানে ছিল 'একলা' থাকা–খারাপ নয়, বরং সৃজনশীল। একা থাকা মানে প্রকৃতি বা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, পটভূমির গোলযোগ বা ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ মুছে ফেলে গভীর ধ্যানে যাওয়া। মোরাকাবা মোশাহেদা শব্দগুচ্ছের সাথে একলা চলরে নীতির যোগসূত্র রয়েছে।

টেস্ট অফ চেরি, আব্বাস কিয়ারোস্তমি

'তখন এটি ছিল oneliness বা একাকিত্ব–এই শব্দটাকে আমি খুব পছন্দ করি,' বলেছিলেন বাউন্ড আলবার্টি। 'যখন কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ লিখেছিলেন, lonely as a cloud, তিনি শুধু একা থাকার কথা বলেছেন, একাকিত্বের দুঃখ নয়।'

কিন্তু গত দুই শতাব্দীতে পৃথিবী বদলে গেছে। ধর্মীয় ও ঐতিহ্যিক কাঠামো দুর্বল হয়েছে। শহর বেড়েছে। পরিবার ভেঙে পড়েছে। সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আর মানুষ হয়ে পড়েছে অজ্ঞাতপরিচয়ের ভেতরকার কেউ। ব্যক্তিস্বাধীনতার চর্চা, ভোক্তাবাদ–সব মিলিয়ে সামাজিক বন্ধনের সুতা দুর্বল হয়ে গেছে। মানুষ হয়ে উঠেছে নামহীন। 'অ্যানোনিমাস'। ইনডিভিজুয়ালিজম বা ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা বেড়েছে।

বাউন্ড আলবার্টি আরও বলেছেন, 'যখন চারপাশে দেখি সামাজিক যত্ন নেই। সংযুক্তির অভাব, "আমরা" বলতে কিছু নেই। শুধু কেনাকাটা ছাড়া একসঙ্গে হওয়ার আর কোনো উপায়ই নেই, তখন মনে হয়, একাকিত্ব স্বাভাবিক। অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়।'

তাহলে কী করণীয়?

তবে আমরা যদি নিঃসঙ্গতা অনুভব করি, কী করব? প্রথমত, বুঝতে হবে, একাকিত্ব ক্ষণস্থায়ী, নাকি দীর্ঘমেয়াদি। যদি এটা আপনাকে কাজ, সম্পর্ক বা জীবন চালাতে বাধা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ জরুরি, বলেন রেমেস।

দ্বিতীয়ত, নিজে থেকে নিঃসঙ্গতা বেছে নেওয়া আর বাধ্য হয়ে নিঃসঙ্গ থাকা। দুটো ভিন্ন জিনিস।  একাকিত্ব স্বেচ্ছায় এসেছে নাকি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটাও বোঝা দরকার। কেউ নিজেই একাকিত্ব বেছে নেন। কিন্তু কেউ বয়স, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, বৈষম্য ইত্যাদি কারণে একা হয়ে পড়েন। এই কাঠামোগত সমস্যাগুলোর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমাধান প্রয়োজন।

বন্ধুত্ব: এক প্রতিষেধক

সাধারণ সমস্যা, আমরা অপরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলতে দ্বিধা করি। ২০১৪ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে একটি গবেষণা করেছে। যাত্রাপথে অপরিচিতের সঙ্গে কথা বললে কেমন লাগে? অধিকাংশই ভেবেছিলেন, ভালো লাগবে না। কিন্তু যাদের বলা হয়েছিল, কথা বলতে হবে, তারা শেষ পর্যন্ত তাদের যাত্রা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন।

এই গবেষণার ফলাফল দেখে যুক্তরাজ্যের কিছু রেল কোম্পানি ২০১৯ সালে চালু করেছিল 'চ্যাট ক্যারেজ' বা আলাপচারিতার বগি, আর একটি বাস কোম্পানি চালু করেছিল 'conversation starter' বা আলোচনা শুরু করার কার্ড।

এই সঙ্গে গবেষণাটি ভেঙে দেয় 'লাইকিং গ্যাপ' বা 'ভালো লাগার দূরত্ব' নামের এক মানবিক ভুল ধারণা। আমরা ভাবি, অন্যেরা আমাদের পছন্দ করে না। বাউন্ড আলবার্তি বলেন, 'যত বেশি অভ্যস্ত হই নিঃসঙ্গতায়, তত বেশি ভাবি যে সবাই আমাদের প্রত্যাখ্যান করছে। এটা নিজের জন্য অশুভ ভবিষ্যদ্বাণী হয়ে যায়।'

তাই ভিড়ের মাঝে নিজেকে একা মনে হলে সম্মান রেখে আশেপাশে কাউকে সালাম দিন। প্রতিদিন এক নতুন মানুষের সঙ্গে একবার কথা বলার চ্যালেঞ্জ নিন–গবেষণা বলছে, এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, প্রত্যাখ্যানের ভয় কমে। তবে শুধু সংযোগ করলেই চলবে না, অর্থবহ সংযোগ গড়ে তুলতে হবে।

একসময় একা থাকার অভ্যাসে আমরা ধরে নিই, সবাই আমাদের প্রত্যাখ্যান করবে। কারও শরীরী ভাষা বা মুখভঙ্গি থেকে প্রতিনিয়ত সেই প্রত্যাখ্যান খুঁজি। ফলে নিজেরাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।

তবে সবাইকে বিরক্ত করা নয়, বরং সংবেদনশীলভাবে নতুন কারও সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন একজন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলার চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, প্রত্যাখ্যানের ভয় কমে।

সবশেষে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন–এই নিঃসঙ্গতা আমাকে কী বলছে?

রেমেস বলেন, উত্তরগুলো খতিয়ে দেখতে সতর্ক হোন। যদি বলেন, 'আমি নিঃসঙ্গ, কারণ আমি যথেষ্ট মানুষকে কাছে টানি না'–তাহলে সমাধান সহজ, আপনি উদ্যোগ নিতে পারেন।

কিন্তু যদি বলেন, 'আমি নিঃসঙ্গ, কারণ আমি অপছন্দনীয়'–তাহলে সমাধান হবে বিমূর্ত, যা আপনাকে আরও দুর্বল করে তুলবে।

তাই নিজের নিয়ন্ত্রণে যেসব কাজ থাকে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিন।

মানে আছে এমন সম্পর্ক গড়ুন

বন্ধুত্ব বা সম্পর্কেও নিঃসঙ্গতা আসতে পারে। যদি আপনি নিজেকে অদৃশ্য, অশ্রুত অথবা ছদ্মবেশে অনুভব করেন, তাহলে খোলামেলা কথা বলুন। সম্পর্ক যদি বিষাক্ত হয়, তখন বের হয়ে আসাও জরুরি হতে পারে।

স্যাম কার বলেন, 'মানুষের জীবনে সব সম্পর্ক একদিন শেষ হয়–বিয়ে, চাকরি, বন্ধুত্ব, প্রিয়জনের মৃত্যু। তখন নতুন করে নিজেকে গড়ে তোলাই মানব জীবনের বাস্তবতা।'

তবে কেবল সম্পর্ক করলেই হবে না, সেগুলো অর্থবহ হতে হবে। অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন, স্বেচ্ছাসেবামূলক তৎপরতায়  জড়ান। 'অন্যকে সাহায্য করলে নিজের কষ্ট থেকে মন সরে যায়। সংযুক্তির অনুভূতি বাড়ে, এটি একাকিত্ব কমাতে কার্যকর।'

স্পর্শের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কার কতটুকু শারীরিক স্পর্শ দরকার, তা ভিন্ন। তবে যাদের স্পর্শ কম, তারা বেশি নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন। এমনকি হালকা কাঁধে হাত রাখলেও সামাজিক সংযুক্তির অনুভূতি বাড়ে।

২০২০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্ষিপ্ত স্পর্শ যারা পেয়েছেন, বিশেষত যারা অবিবাহিত, তারা কম অবহেলিত বোধ করেছেন।

বার্গম্যান, দি ভার্জিন স্প্রিং

প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর ভূমিকা

মানুষের সঙ্গ ছাড়াও প্রকৃতিতে সময় কাটানো বা পোষা প্রাণীর সঙ্গেও গভীর বন্ধন তৈরি হতে পারে। উল্লিখিত গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মানুষ প্রকৃতির সংস্পর্শে আসতেন, তারা ২৮ শতাংশ কম একাকিত্ব অনুভব করতেন।

সম্পর্ক থেকেও একা লাগতে পারে

বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যেও একাকিত্ব আসতে পারে। যদি আপনি অনুভব করেন, আপনাকে কেউ দেখছে না। আপনার কথা কেউ শুনছেন না। কিংবা আপনাকে মুখোশ পরে থাকতে হচ্ছে। এমন হলে খোলাখুলি যোগাযোগ করুন। আপনি কী চান, বলুন। তাদেরও বলার সুযোগ দিন। যদি সম্পর্ক বিষাক্ত হয়, তবে তা ছাড়ার কথা ভাবুন। তবে সম্পর্ক জোড়া লাগার সুযোগ থাকলে সে সুযোগও কাজে লাগান।

আমরা যখন একাকিত্ব অনুভব করি, তখন আমরা নিজেদের কাছে প্রশ্ন করি, 'আমি একা কেন?' এই প্রশ্নের উত্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি বলেন, 'আমি অনেক চেষ্টা করিনি, মানুষদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিইনি', তাহলে সে সমস্যা পরিবর্তনযোগ্য। সমস্যার সমাধান হতে পারে। 

কিন্তু যদি বলেন, 'আমি পছন্দনীয় নই' বা 'আমি অদৃষ্টহীন', তাহলে তা এমন একটি সমাধানে নিয়ে যায়, যা দুর্জ্ঞেয়। 'মূল কথা হলো, পরিস্থিতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে ভাবতে পারলে তবেই আপনি পরিবর্তন আনতে পারবেন', বলেন রেমেস।

কীভাবে এই নিঃসঙ্গতা কাটানো যায়?

এটি কাটানোর নানা উপায় রয়েছে, মানবিক সংযোগ: নিয়মিত পরিবারের সদস্য, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। সামাজিক কাজে যুক্ত হওয়া, স্বেচ্ছাসেবা, কমিউনিটি ক্লাব, গ্রুপ অ্যাক্টিভিটিতে অংশ নেওয়া। নিজের অনুভূতি শোনা, ডায়েরি লেখা, থেরাপি নেওয়া–যাতে নিজের ভেতরের শূন্যতা চিহ্নিত করা যায়। ডিজিটাল ডিটক্স, সময় বেঁধে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা। নিজের ভালো লাগার কাজ করা, গান শোনা, বই পড়া, এবাদত করা বা প্রাকৃতিক জায়গায় সময় কাটানো।

বিজ্ঞান কী বলছে ভবিষ্যৎ নিয়ে?

বর্তমানে কিছু গবেষক নিঃসঙ্গতা নিয়ে ডিজিটাল ইন্টারভেনশনের চেষ্টা করছেন। কিছু অ্যাপ তৈরি হয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের দিনে দু-একজন পরিচিত মানুষকে ফোন দিতে মনে করিয়ে দেয়।

আবার ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এমন ভার্চুয়াল বন্ধু তৈরির কাজও চলছে, যারা নিঃসঙ্গতার সময়ে সঙ্গ দিতে পারে। যদিও প্রশ্ন থেকেই যায়–মানুষের জায়গায় মেশিন কখনো পারবে কি সম্পর্কের সেই উষ্ণতা দিতে?

উপসংহার: একাকিত্ব মানেই ভাঙাচোরা হওয়া নয়

একাকিত্ব একটি স্বাভাবিক, বৈচিত্র্যময় ও মাঝে মাঝে দরকারি মানবিক অনুভূতি। সমাজ যতই ব্যস্ত হোক, নিজের সঙ্গে সম্পর্ক, অন্যের সঙ্গে সংযোগ, প্রকৃতির সঙ্গে মিলন–সবই দরকার।

স্যাম কার বলেন, 'মানুষের জীবনে যেসব জিনিসে আমরা সংযুক্তি অনুভব করি–তা একসময় শেষ হয়ে যায়। বিয়ে, চাকরি, বন্ধুত্ব–সবই ক্ষণস্থায়ী। আর তখন আমাদের নিজেদের নতুন করে গড়তে হয়, নতুন কিছুর সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। এ যাত্রায় মাঝে মাঝে মরুভূমি পার হতে হয়, যা একাকিত্বে ভরা। কিন্তু এটিকে ভাঙন না ভেবে আমাদের অস্তিত্বের অংশ হিসেবে দেখা উচিত।'

নিঃসঙ্গতা কখনো কখনো সৃজনশীলতার জন্ম দেয়, কখনো নিজেকে চিনে নেওয়ার সুযোগ এনে দেয়। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। একজন মানুষ হিসেবে, আমাদের প্রাথমিক চাহিদাগুলোর মধ্যে একটা হলো–কারও কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া। সেই চাহিদা যখন অপূর্ণ থাকে, তখন চারপাশে যত মানুষই থাকুক, মন একা থেকে যায়। তাই নিঃসঙ্গতাকে চিহ্নিত করা, মানা, ও সচেতন পদক্ষেপ নেওয়াই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব–নিজের প্রতি আর প্রিয়জনদের প্রতিও।

তাই একা লাগলে নিজেকে দোষ দেবেন না। এ অনুভূতি আমাদেরই। আমাদেরই বলছে, শোনো, অনুভব করো, বদলাও। এটা কোনো রোগ নয়, এটা মানবজীবনের ছায়া। তবু তাতেই রোদ্দুর খোঁজা যায়।

Related Topics

টপ নিউজ

একাকিত্ব / মানুষের ভিড়ে একা / নিঃসঙ্গতা / একা লাগছে / ইজেল / সৈয়দ মূসা রেজা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ২ কোটি ডলারের জাপানি বিনিয়োগ চুক্তিতে লাইফলাইন পাচ্ছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল
  • পুরান ঢাকাকে যুক্ত করতে এই প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়নে আসছে বিশ্বব্যাংক
  • ‘দয়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না’: আদালতকে মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া 
  • ঢাকা বিমানবন্দরের ‘নো ফ্লাই জোনে’ অনুমোদনবিহীন ৫২৫ উঁচু ভবন, ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের: সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান
  • ২ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক
  • কবরেও একা যেতে হবে, দুর্নীতি করলে জেলখানায়ও একা যেতে হবে: কলিমউল্লাহকে বিচারক

Related News

  • বন্ধুবিহীন, একা
  • উনিশ শতকের ঢাকায় ফটোগ্রাফি
  • অন্য কারও ঘুমের ভেতর
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কাজ: পোশাক পর্যবেক্ষণ এবং ফ্যাশন নির্দেশনা

Most Read

1
অর্থনীতি

২ কোটি ডলারের জাপানি বিনিয়োগ চুক্তিতে লাইফলাইন পাচ্ছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল

2
বাংলাদেশ

পুরান ঢাকাকে যুক্ত করতে এই প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়নে আসছে বিশ্বব্যাংক

3
বাংলাদেশ

‘দয়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না’: আদালতকে মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া 

4
বাংলাদেশ

ঢাকা বিমানবন্দরের ‘নো ফ্লাই জোনে’ অনুমোদনবিহীন ৫২৫ উঁচু ভবন, ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের: সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান

5
অর্থনীতি

২ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক

6
বাংলাদেশ

কবরেও একা যেতে হবে, দুর্নীতি করলে জেলখানায়ও একা যেতে হবে: কলিমউল্লাহকে বিচারক

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net