২ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক

আমানতে প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ায় এবং ধীরে ধীরে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসায় জুন ও জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের ১ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
বিগত সরকারের আমলে অনিয়মের মাধ্যমে ভুয়া বা বেনামে ঋণ দেওয়ার কারণে ইসলামী ব্যাংক প্রয়োজনীয় ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটিকে ২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা জরুরি ডিমান্ড লোন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মোট পরিশোধিত ঋণের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক জুনে ৮০৮ কোটি এবং ৩১ জুলাই আরও ৭০০ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এর ফলে এখন প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ঋণ বকেয়া রয়েছে।
ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) হলো একটি ব্যাংকের গ্রাহক আমানতের সেই অংশ, যা ঋণ হিসেবে বিতরণ না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত ও শরিয়াহভিত্তিক উভয় ব্যাংককেই মোট আমানতের ৪ শতাংশ সিআরআর হিসেবে জমা রাখতে হয়।
ঋণ পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান টিবিএসকে বলেন, 'গত বছরের অগাস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আমাদের ব্যাংকের সিআরআর ছিল নেগেটিভ ২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই ঘাটতি মেটাতে পুরো অর্থই আমাদের ডিমান্ড লোন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে আমরা ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি ফেরত দিতে সমর্থ হয়েছি।'
যেখানে অন্যান্য অনেক ব্যাংক এখনও ধুঁকছে, সেখানে ইসলামী ব্যাংক কীভাবে এই সংকট কাটিয়ে উঠল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমানত আসছে, প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। গত সাত মাসে আমরা প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার নিট আমানতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা অনেক বেড়েছে। ফলে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী সিআরআর ও স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) বজায় রাখতে পারছি।'
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো ঋণ পরিশোধ করে দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে এই ব্যাংকার আরও বলেন, 'গত এক বছরে ব্যাংক খাতে সুশাসন, জন-আস্থাসহ অনেক সূচকই ভালো হয়েছে। সে হিসাবে আশা করছি, আগামী কয়েকমাসে আমানতে প্রবৃদ্ধি ভালো থাকবে, ফলে ঋণের টাকাটা আমরা ফেরত দিয়ে দিতে পারব।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেন, ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে এ ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো।
গত এক বছরে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক রদবদল ঘটেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। পরে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে তাকে অপসারণ করা হয়।
জুলাইয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ পদত্যাগ করেন। তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তারপর গত সপ্তাহে মো. ওমর ফারুক খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে বেছে নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। আর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হয়েছেন জুবাইদুর রহমান।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। এরপর নানা সময় এই ব্যবসায়ী গ্রুপকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়। তাতে একসময়ের দেশের সবচেয়ে স্থিতিশীল ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করেন। তাতে পর্ষদের ক্ষমতায় থাকা এস আলমে নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয় ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে যেখানে পর্ষদ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেখান থেকে গ্রুপটি লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে।