রাজশাহীতে একই পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার, চিরকুটে লেখা 'আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে'

রাজশাহীর পবা উপজেলায় একই পরিবারের চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে বামুনশিকড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের পাশে একটি চিরকুটও পড়ে ছিল।
মতিহার থানা পুলিশের এএসআই কালাম পরভেজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন মিনারুল ইসলাম (৩০), তার স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮), ছেলে মাহিম (১৩) এবং মেয়ে মিথিলা (১৮ মাস)। মাহিম খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিনারুল ও তার ছেলে এক ঘরে ছিলেন, অন্য ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন তার স্ত্রী ও মেয়ে। সকালে প্রতিবেশীরা ঘরে গিয়ে মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দেখেন মিনারুল ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে, তার ছেলের মরদেহ বিছানায় পড়ে আছে, অন্য ঘরে তার স্ত্রী ও মেয়ের মরদেহ শোয়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, মিনারুল স্ত্রীকে ওড়না দিয়ে, মেয়েকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ছেলেকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তিনি নিজে আত্মহত্যা করেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিনারুল একসময় জুয়া খেলতেন ও মাদকাসক্ত ছিলেন। এতে বিপুল পরিমাণ ঋণ করেছেন। সম্প্রতি তিনি তার বাবার জমি বিক্রি করে ঋণের কিছুটা শোধ করলেও আর্থিক সংকটে ছিলেন।
পারিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়েদ আলী মোরশেদ বলেন, 'তার বাবা জমি বিক্রি করে ঋণ শোধ করেছে। তারপরও ঋণ ছিল। দুই দিন আগে আমার কাছ গিয়ে, বাড়িতে খাওয়ার চাল নাই বলে, দুই হাজার টাকা নিয়ে আসছে। অভাব অনটনে থাকতো, ঋণও ছিল। প্রতি সপ্তাহে ঋণের কিস্তি শোধ করতে হতো। এসব নিয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিল।'
এদিকে মরদেহের পাশে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে লেখা, 'আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম এই কারণে যে, আমি একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার স্ত্রী সন্তান কার কাছে থাকবে। কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া তারা কিছুই পাবে না। আমি মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়া দাওয়ার অভাবে। এতো কষ্ট আর মেনে নিতে পারলাম না। আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে, মরে যাওয়াই ভালো হলো। কারো কাছে আর কিছু চাইতে হবে না।'
প্রাথমিকভাবে এটি মিনারুলের লেখা বলে ধারণা করা হলেও, এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু সুফিয়ান জানান, প্রাথমিকভাবে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, চিরকুটটি মিনারুলের লেখা। তবে পুলিশ চিরকুটের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা করবে।
রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান জানান, মরদেহ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ সব দিক মাথায় রেখে তদন্ত চালাচ্ছে।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।