অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে রাজশাহীতে এবার ছাতিম গাছে ফুল কম
রাজশাহীতে গত বছর ছাতিম গাছে প্রচুর ফুল এসেছিলো। ফুলের সুমিষ্ট গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল পুরো নগরী। এ নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে রিপোর্ট হয়েছিলো, 'ছাতিমের শহর রাজশাহী, ফুলে ফুলে ভরে উঠছে নগর'।
কিন্তু এবার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ফুল অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ায় গাছে ফুল কম এসেছে। গাছে যেসব ফুল এসেছিল, সেগুলোও বৃষ্টিপাতে চুপসে গেছে। অনেক ফুল শুকিয়ে গেছে। ফলে খুব মনোযোগ দিয়ে না দেখলে বাইরে থেকে বোঝা যায় না গাছে ফুল এসেছে কি না!
রাজশাহীর সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত এবং শ্রীরামপুর এলাকার জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনের সড়কে দেখা গেছে, সারি সারি ছাতিম গাছ দাঁড়িয়ে আছে। সড়ক ধরে হেঁটে গেলে গাছে কোনো ফুলই চোখে পড়ে না। কাছে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখলে গাছের পাতার ভেতরে দেখা যায় ফুল, বিবর্ণ, ধূলিধূসর ও নির্জীব।
তবে অনেক গাছে নতুনভাবে কুঁড়ি আসতে দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর ঘোড়া চত্বর থেকে বর্ণালীর মোড় পর্যন্ত সড়কে ফ্লাইওভারের কাজ করায় ছাতিম গাছে কয়েক স্তরের পুরো ধুলার স্তর জমেছে ছাতিম গাছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের হিসাবে, গত কয়েক বছরে নগরীর বিভিন্ন চওড়া ফুটপাতে প্রায় ৫৬০টি ছাতিম গাছ লাগানো হয়েছে।
এরমধ্যে নগরীর রেলগেট থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত, শ্রীরামপুর জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনের সড়কের দুই ধারে, সিপাইপাড়া জেলখানার পিছনের সড়কের ফুটপাত, উপশহর, সপুরাসহ বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে এসব ছাতিম গাছ লাগানো হয়েছে। শুধু রেলগেট থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের দুপাশের ফুটপাতে লাগানো হয়েছে ৩৫০টি ছাতিম গাছ।
নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে লক্ষ্মীপুর সড়কের ধারে ছাতিম গাছের ছায়াতলে কাজীহাটা এলাকার চা বিক্রেতা শামসুল আলমের চায়ের দোকান।
শামসুল বলেন, 'আমি গত ৩০ বছর ধরে এই এলাকায় চায়ের দোকান করছি। এবার গাছে গত বছরের তুলনায় ফুল কম এসেছে। তবে কিছু কিছু গাছে আবার ফুল ভালোই এসেছিল। কিন্তু এখন আর গাছে ফুল তেমন নাই। সব ঝরে গেছে।'
তার ধারণা, গাছে আবার নতুনভাবে কুঁড়ি আসছে। সপ্তাহ দুই পর আবার গাছে ভালো ফুল ধরবে।
কাজীহাটার ফলের দোকানদার মমিন বলেন, 'আগে গাছে নিয়মিত পানি দেওয়া হতো। এখন তো আর কোনো যত্ন নিতে দেখি না।'
বেস্ট ইলেকট্রনিক্সের বিক্রয়কর্মী সুমনও একই সুরে বললেন, 'এবার মোটামুটি গাছে ফুল এসেছিল, কিন্তু আগেরবারের মতো না। এখন গাছে কোনো যত্ন নাই। গাছে ধূলার আস্তর পড়ে আছে, পাখির বিষ্ঠা লেগে আছে গাছের পাতায়। আগে যেভাবে নিয়মিত গাছে পানি স্প্রে করা হতো, তার কিছুই দেখা যায় না। পানি দিলে গাছ চকচক করে।'
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিবেশ শাখা প্রধান ও পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ উল ইসলাম জানান, অক্টোবর মাসের শুরু থেকে ছাতিম গাছে ফুল আসতে থাকে। কিন্তু ফুল ফোটার সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ছাতিম গাছের ফুল ঝরে গেছে। এজন্য এবার গাছে কম ফুল দেখা গেছে। তারপরও যা ফুল ছিল, তাতে রাতে নগরবাসীকে সুমিষ্ট গন্ধ দিয়েছে।
তিনি বলেন, 'ছাতিম গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। তীব্র রোদে মানুষকে ছায়া দেয়। আবার এ সময় এর মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক কিলোমিটার দূর থেকেও এই ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। ফুল ঝরে যাওয়ার পর এর বীজ সংগ্রহ করা হয়। পরে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়।'
সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে ছাতিম ফুলের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন: 'অপু বলিল, কী ফুলের গন্ধ বেরুচ্ছে, দিদি? তাহাদের মা বলিল, তাহাদের জ্যেঠামশায়ের ভিটার পিছনে ছাতিম গাছ আছে, সেই ফুলের গন্ধ। তাহার পর সকলে গিয়া ঘুমাইয়া পড়ে। রাত্রি গভীর হয়। ছাতিম ফুলের উগ্র সুবাসে হেমন্তের আঁচলাগা শিশিরাদ্র নৈশবায়ু ভরিয়া যায়। মধ্যরাতে বেনুবনশীর্ষে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের ম্লান জ্যোৎস্না উঠিয়া শিশিরসিক্ত গাছপালার ডালে পাতায় চিকচিক করছে।'
