Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
June 12, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, JUNE 12, 2025
বাংলা ভাষায় চিকিৎসা শিক্ষা দেওয়া কি সম্ভব না?

মতামত

ফিরোজ আহমেদ
01 March, 2021, 09:00 pm
Last modified: 01 March, 2021, 09:11 pm

Related News

  • নতুন অর্থবছরে চিকিৎসা সেবা-শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ল
  • গোধূলিবেলায়
  • এআই যুক্ত নতুন ফিচার আনছে মাইক্রোসফট, নকল করা যাবে কণ্ঠস্বরও
  • যন্ত্র বনাম সাহিত্যিক: অনুবাদ যুদ্ধের শেষ সীমান্ত
  • নিরামিষাশী: হান কাং

বাংলা ভাষায় চিকিৎসা শিক্ষা দেওয়া কি সম্ভব না?

পৃথিবী জুড়েই জনগণের মাঝে উচ্চশিক্ষার প্রসার হয়েছে, ইংল্যান্ড কিংবা জাপান কিংবা চীন, কেউই ব্যতিক্রম নয়। বরং, যখন সাধারণতম পরিবারের, প্রান্তিক, গ্রামীণ ও মফস্বলের নারী ও পুরুষ শিশুরাও যথাযথ শিক্ষার সুযোগ পায়, তখনই সত্যিকারের মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান পেতে থাকে
ফিরোজ আহমেদ
01 March, 2021, 09:00 pm
Last modified: 01 March, 2021, 09:11 pm
ফিরোজ আহমেদ। প্রতিকৃতি: টিবিএস

"বাংলা ভাষায় চিকিৎসা শিক্ষা দেওয়া কি সম্ভব?" শীর্ষক একটা লেখা অধ্যাপক ও  মনোচিকিৎক তাজুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোতে লিখেছেন গত ২১ ফেব্রুয়ারি। মর্মান্তিক বেদনার সাথেই বলতে হচ্ছে, বাংলা কিংবা কোনো একটি ভাষায় চিকিৎসা শিক্ষা দেওয়া কি সম্ভব, এমন প্রাথমিক স্তরে প্রশ্নটি যে রয়ে গেছে, সেটা জাতি হিসেবে আমাদের উদ্ভট গঠনের দিকেই ইঙ্গিত করে। উদ্ভট বলছি এই কারণে যে, একদিকে বাংলা ভাষায় চিকিৎসা শাস্ত্রের গ্রন্থের সফল উদাহরণ আসলে ইতিমধ্যেই ছিল, অন্যদিকে বাংলা ভাষার গদ্য সাহিত্যের সামর্থ্য ও শক্তিমত্তার যথেষ্ট নজির থাকার পরও নিয়মিত বিরতিতে এই হাহুতাশের স্তরেই বিষয়টা রয়ে গিয়েছে। একইসাথে আশাবাদী হবার মত বিষয় হলো; অধ্যাপক তাজুল ইসলামের মত চিকিৎসক ও শিক্ষকবৃন্দ বাংলায় চিকিৎসাবিদ্যার বাস্তব অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছেন। অধ্যাপক তাজুল ইসলামের লেখা থেকেই জানা যাচ্ছে, ভূমিকাটা রাখা হচ্ছে ব্যক্তিগত পরিসর থেকে, এবং খুব অল্প অল্প করেই অগ্রগতি আসছে।

প্রাসঙ্গিক বিধায় বাংলা ভাষায় চিকিৎসা গ্রন্থ রচনার ইতিহাসে একটা ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের কাহিনীই বলা যাক। বছর কয়েক আগে ভাষাসৈনিক, চিকিৎসক আহমদ রফিক- এর সাথে সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক লেখা থেকে উদ্ধৃতি আকারে সেই কথাগুলো আবার বলি। সাক্ষাৎকারটির, সময় ২০১৭ সাল। আহমদ রফিক বলছিলেন,

"আমি বরাবরই বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার পক্ষপাতী। শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয়, উচ্চশিক্ষাও। চিকিৎসা শাস্ত্র পড়াশোনা তো বেশ জটিল। একটা উদাহরণ দিলই বোঝা যাবে, লিখিত পরীক্ষা খুব ভালো দিয়ে অনেকেই মৌখিক পরীক্ষায় উত্তর দিতে দিয়ে তোতলায়। অর্থাৎ, জানা জিনিস অন্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন... এই কথাটা আমি লিখেছিও বহু জায়গায়—তখন পরীক্ষক মনে করেন এ তো কিছু জানেই না... বাংলা একাডেমির সাথে কথা বলে ডেভিডসনের 'টেক্সট বুক অব মেডিসিন' আর কানিংহামের 'এনাটমি' এই দুটো বিশাল মোটা বই বিভিন্ন জনকে দিয়ে অনুবাদ করিয়েছিলাম। সম্পাদনায় ছিলাম আমি, সাঈদ হায়দার, আর পরে এসে যোগ দিলেন শুভাগত চৌধুরী। আমরা সম্পাদনা করতে গিয়ে দেখলাম, আমাদের চিকিৎসকরা কত কম বাংলা জানেন! এবং বিশ্বাস করবেন না, নামটা মনে নেই কে করেছিল [অধ্যায়টির অনুবাদ], 'হৃদযন্ত্র ও রক্ত সঞ্চালন' অধ্যায় পুরোটা আমাকে নতুন করে লিখতে হয়েছিল সম্পাদক হিসেবে। আরও অনেকগুলো অধ্যায়েও তাই। যাই হোক, তবুও সেটা বেরুলো।"

এভাবে আহমদ রফিকের নেতৃত্বে সেই ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ডেভিডসনের 'টেকসট বুক অব মেডিসিন' আর কানিংহামের 'এনাটমি' এই দুটো বই, দুটোই চিকিৎসা শিক্ষার ভিত্তিস্বরুপ বিবেচিত হতো। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গ্রন্থগুলোর এই অনুবাদযজ্ঞ সফল হলে- তা একটা বিশাল ঘটনা হতে পারতো বাংলায়। এরই ধারাবাহিকতায় অনূদিত হতে পারতো চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাকি সব পাঠ্যবইও। হয়তো বাকি সব বিভাগও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারতো। কিন্তু যা ঘটলো, তা স্রেফ অপচয়। শুধু টাকার বিবেচনায় না, জাতীয় স্বার্থের বিবেচনাতেও।

"সেগুলো যখন [বাংলা একাডেমীর] গুদামে পড়ে থাকলো, আমি আর হায়দার মিলে ঢাকা মেডিকেলের অধ্যক্ষের সাথে দেখা করলাম। কে ছিলেন, ঠিক মনে নেই। সামনে একজন অধ্যাপকও বসে ছিলেন। সালটাও ঠিক খেয়াল নেই, অনেক আগে। তিনি বয়সে আমাদের অনেক ছোট। তারা সবাই বললেন, এটা কিভাব সম্ভব! এটা কিভাবে সম্ভব! এটা কিভাবে সম্ভব! আমাদের খুব ক্ষুব্ধ মন নিয়ে ফিরে আসতে হলো। এটাও বলেছিলাম, সম্প্রতি শুনেছি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকল্প প্রশ্নমালা বাংলায় থাকে, যদি কেউ ইচ্ছে করে বাংলায় উত্তর দিতে পারে। বাংলায় পরীক্ষা দেয়া গেলে ছাত্ররা অনেক ভালো করবে। কাজ হলো না। ওনারা বললেন, কত নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে ইংরেজিতে। বললাম, সেগুলো যুক্ত করে দেয়া যাবে নতুন সংস্করণগুলোতে। আমি তাদের বলেছিলাম, আপনিও ছাত্র ছিলেন, আমিও ছাত্র ছিলাম, আমরা জানি বাংলায় উত্তর দিতে পারলে ছাত্ররা অনেক সহজে বুঝে উত্তর দিতে পারবেন। কোন লাভ হলো না। বইগুলো বাংলা একাডেমির গুদামে ঘুণে ধরে পচে শেষ হলো। কয়েক লক্ষ টাকার অপচয়।"

আহমদ রফিকদের প্রায় স্বেচ্ছাসেবায় তখনকার দিনের কয়েক লক্ষ টাকায় যা হয়েছিল, এখন হয়তো তা করতে বহু কোটি টাকা লাগবে। কিন্তু টাকার অপচয়ের চাইতেও আরও গুরুতর যে যে বিবেচনায় আজকে বাংলায় চিকিৎসা শিক্ষা দেয়া যেতে পারে কী না, সেই প্রশ্নটি তুলেছেন অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, সেই সেই জাতীয় ক্ষতির হাত থেকে আমরা নিশ্চিতভাবেই রেহাই পেতাম। সেটা হলো মুখস্তবিদ্যার হাত থেকে চিকিৎসা বিদ্যার অধ্যয়নকে অনেকখানি মুক্ত করে শিক্ষাটাকে বহুগুন বেশি বোধগম্য করা। অধ্যাপক তাজুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন, থাইল্যান্ড বা জাপানে চিকিৎসকরা মাতৃভাষাতেই কথা বলেন, ইংরেজিতে না। থাই বা জাপানীরা কেন মাতৃভাষায় শিক্ষা দেন? সহজ কারণ, মাতৃভাষায় শিক্ষা দিলে শিক্ষার মান উন্নততর হয় বলেই সেটা করা হয়, আদালত মাতৃভাষার প্রচলন করতে বলেছেন বলে বা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আবেগী বিষয় সেখানে প্রধান বিবেচ্য না। ভাষাগত আবেগের মূল্য বিপুল, কিন্তু এই্ আবেগ নিছক অযৌক্তিক নয়। নিজ ভাষায় উচ্চশিক্ষার প্রায়োগিক গুরুত্বের বিষয়টিও এই দেশগুলো বিবেচনায় নিয়েছে। প্রশ্ন হলো এই যে, কোরিয়া, জাপান, চীন কিংবা থাইল্যান্ড এরা সকলেই তো আমাদের বহু পরে পশ্চিমা চিকিৎসা ব্যস্থার সংস্পর্শে এসেছে, এদের যে কারও আগেই কৃতবিদ্য বাংলাভাষী চিকিৎসকরা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু উপমহাদেশ জুড়ে আমরাই এই বিদ্যাটাকে মাতৃভাষায় আত্মীকৃত করতে ব্যর্থ হয়েছি।

এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আরও বিস্মিত হয়েছিলাম। আহমদ রফিকের অনুবাদ যজ্ঞ একটা প্রেরণা তৈরি করেছিল, ১৯৮৭ সালে লিয়াকত আলী (সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের স্বপ্নদ্রষ্টা) এবং খাইরুল ই্সলাম নামের দুইজন তরুণ চিকিৎসক উদ্যোগ নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাবিদ্যার গ্রন্থ অনুবাদ করেন, সেটা 'ধাত্রীবিদ্যা'। তখনকার বিখ্যাত ধাত্রীবিদ্যার অধ্যাপক সুরাইয়া জাবীন এর সম্পাদিত গ্রন্থ হিসেবে সেটি প্রকাশিত হয়েছিল, ওই বাংলা একাডেমী থেকেই। এই অনুবাদ কর্মটিও প্রায় একই কারণে, প্রাতিষ্ঠানিক উৎসাহের অভাবে হারিয়ে গেলো!

২. পরিভাষার দিক দিয়ে দারিদ্র্যের অভিযোগে বাংলাকে উচ্চশিক্ষার বাহন হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। সেই প্রশ্নটা আহমদ রফিককে সেদিন করতেই তিনি বললেন—

"পরিভাষা কেনো সমস্যা হতে যাবে? ঘাড়ের কাছে এই যে পেশী, এটার নামটা গ্রিক—স্টারনোক্লেইডোমাস্টোইড—আপনার পক্ষে এটা উচ্চারণ করতে কষ্ট হবে। এটা কি ইংরেজি? ইংরেজরা তাদের চিকিৎসাবিদ্যার বই লেখার সময় ভাষাটা ইংরেজি রাখলেও পরিভাষাগুলো, এই নামগুলো হুবহু গ্রিক বা লাতিনেই রেখেছে। পরিভাষা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এইসব শব্দমালাকে তো অনুবাদ করার দরকার নাই, অনায়াসে রেখে দেয়া যায়। হেপাটিকামকে অবশ্য তারা লিভার করেছে। নামবাচককে অনুবাদ না করলেও চলে।"

শোনা কথা, তাই আহমদ রফিকের মতটা জেনে রাখার জন্যই সেই সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম : "চীনারা নাকি এমনকি বিদেশী পরিভাষাও না নিয়ে, যথাসম্ভব দেশী পরিভাষা ব্যবহারের চেষ্টা করে?"
"সেটা তো ঠিকই, কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম, বাংলায় উচ্চশিক্ষা দিতে একেবারেই তো রাজি হয় না, তাই অন্তত ওটুকু সুবিধা দিয়ে বিদেশী পরিভাষাগুলো যথাসম্ভব রেখেই চেষ্টা করলাম।"

পরিভাষা নির্মাণে আহমদ রফিকের যুক্ততা বহুবছরের। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানালেন : "পরিভাষা সমস্যার কথা সবাই বলেন তো, সেইজন্য 'চিকিৎসা বিজ্ঞান পরিভাষা কোষ' তৈরি করেছিলাম। আমার আগে বাংলা একাডেমির অত্যন্ত ছোট একটা পরিভাষা কোষ ছিল। আমাদেরই আরেক বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার ছিলেন, ডাক্তার মোর্তোজা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন, মোর্তোজা এটা করেছিলেন। বাংলা একাডেমি আমাকে বলাতে, আমি ওতে কয়েক হাজার শব্দ সংযোজন করি। বইটা বেশ মোটা হয়। আমি এতে বহু শব্দ পরিবর্ধন-পরিমার্জন করি। চিকিৎসা বিজ্ঞান পরিভাষা কোষ নামে বাংলা একাডেমি এটা প্রকাশ করে। এরপর পরিভাষা নামে একটা অনিয়মিত সংকলন প্রকাশ করেছি বেশ কিছুদিন।"

"তারপর একে একে বেড়িয়েছে রসায়ন পরিভাষা কোষ, পদার্থবিদ্যা পরিভাষা কোষ, উদ্ভিদবিদ্যা পরিভাষা কোষ..."

কিন্তু, একদিকে পরিভাষা কোষ বেড়িয়েছে, আরেকদিকে তো বাংলায় পরীক্ষা দেয়া নিষিদ্ধ হয়েছে, পরিভাষার অভাবের কথাই বলে! আহমদ রফিক একটু উত্তেজিত হন : "আমি বলি, পরিভাষা কোনো সমস্যাই না। সমস্যা আমাদের চিন্তায়। শ্রেণিস্বার্থে। যে শ্রেণির হাতে সমাজ অর্থনীত্‌ যাদের হাতে শাসিত, তারা যদি শিক্ষাটাকে ব্যাপক করে, যদি অনেক বেশি ছাত্র আসে, তাহলে তারা বেশি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে।"

৮০'র দশকে আহমদ রফিকরা কাজ করেছেন চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক পরিভাষার উন্নয়ন নিয়ে। ২০২১ সালে আমাদের তাও একই আক্ষেপ শুনতে হচ্ছে। অথচ ১৯৬৩ সালেও একই অনুভূতি নিয়ে আরেক বিখ্যাত বাঙালী বিজ্ঞানী সত্যেন বোস লিখেছিলেন,

"তাদের মাঝে যারা ইংরেজি বোঝেন, তারাও ইংরেজিতে কথা বলেন না। কারণ, তাদের মনে এমন বিশ্বাস ছিল না যে, ইংরেজি বললে নিজের মনের ভাব স্পষ্ট করে বোঝাতে পারবেন। সেইজন্য যে সব বিজ্ঞানী ও দার্শনিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারা সকলেই জাপানী ভাষাতেই নিজের মনোভাব প্রকাশ করছিলেন। দেখা গেল শুদ্ধ দার্শনিক তত্ত্ব কিংবা বর্তমান বিজ্ঞানের উচ্চস্তরে কথা সবই জাপানী ভাষায় বলা সম্ভব এবং জাপানী কথায় তা বলবার জন্য লোকে ব্যাগ্র।"

৩. চিকিৎসাশাস্ত্রের এই অনুদিত বইগুলোর কোনোটিই এখন আর আহমদ রফিকের সংগ্রহে নেই, এতবার বাড়ি বদলেছেন, কোথায় কিভাবে সেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে! যে উদ্যোগটি একটা যুগ-পরিবর্তনের সূচনা করতে পারতো, চিকিৎসাবিদ্যা পড়ুয়াদের ঘরে ঘরে যে বইটার উপস্থিত থাকার কথা ছিল, তার পরিকল্পকের কাছেই নেই তা একটাও! বাংলা একাডেমিতে? থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে, তাহলে আর পাওয়া যাবে না—এমন আশঙ্কাও জানালেন। ফলে দ্রুতই বাংলা একাডেমিতে ঘুরে এলাম বাংলা ট্রিবিউনের সাহিত্য সম্পাদক জাহিদ সোহাগ সমভিব্যাহারে। দেখে এলাম, পাঠাগারে নীরবে অপেক্ষা করছে কানিংহামের 'প্রাকটিক্যাল এনাটমি ম্যানুয়েল', দুইখণ্ডে ভেভিডসনের 'চিকিৎসা বিজ্ঞান : মূলসূত্র ও প্রয়োগ', আর সেই 'চিকিৎসাবিদ্যা পরিভাষা'। একটা উলটে দেখলাম, ১৯৮৩ সালটা জ্বলজ্বল করছে। যুগান্তর ঘটেনি, ব্যর্থতায় পর্যবসিত এই প্রকল্পটা তারপরও বাংলায় উচ্চশিক্ষার ইতিহাস রচনার চেষ্টার মহৎ একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে, ভাষাকে ভালোবেসে বিপুল শ্রম নিয়োগের একটা প্রকল্প হিসেবে থেকে যাবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সেই অধ্যক্ষের নামটাও জানা থাকলে মন্দ হতো না, একবার মনে হলো খোঁজ নেই। পরপরই অবশ্য তার প্রতি ব্যক্তিগত সব অভিযোগটা তুলে নিলাম, বাকি সবার চেয়ে বাড়তি কী এমন অপরাধ তিনি করেছেন! তার পথেই তো সব বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল-পদার্থ-রসায়ন-উদ্ভিদবিদ্যা-সমাজবিজ্ঞান একে একে সব বিদ্যার পরিসরেই তো বাংলা বিলুপ্ত হলো। 

৪. বাংলায় চিকিৎসাশাস্ত্রের উচ্চশিক্ষা দেওয়ার শিক্ষা বিষয়ে একটা বড় আপত্তি করা হয় বিদেশীদের সাথে যোগাযোগে ঝামেলা হবে বলে। একই আপত্তি প্রকৌশল বা অন্য সব বিদ্যার জন্যও প্রযোজ্য। এরা কখনো বিবেচনা করে দেখেন না যে, বাঙালী একজন চিকিৎসক কদাচিৎ বিদেশীদের মুখোমুখি হন, তার চাইতে অনেক বেশি বিদেশী রোগী দেখেন থাই চিকিৎসক। অন্যদিকে, মাতৃভাষায় পড়াবার কারণে যদি পাঠদানের মান ভালো হয়, সেটাই অনেক বড় অর্জন হবে। একইসাথে, প্রয়োজন হবে চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত একটা জাতীয় অনুবাদ কেন্দ্রের, যারা প্রতিনিয়ত সারা পৃথিবীতে চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণা সাময়িকীগুলো থেকে লেখা অনুবাদ করতে থাকবেন এবং সেগুলো পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হতে থাকবে। চিকিৎসকদের অনেকেই ইংরেজি, জাপানী, জার্মান, কোরীয় বা নানান বিদেশী ভাষা শিখবেন, সেখান থেকে জ্ঞান সম্পদ বাংলাতে নিয়ে আসবেন। তারা যোগসূত্রের কাজটি করবেন। এবং সারা দুনিয়ার অভিজ্ঞতাই বলে, এভাবে কাজটি সম্পাদনা করলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়, বিদেশী ভাষাকে তখন আগ্রহীদের জন্য আলাদা একটা বিষয় হিসেবে শেখানো হয়, কিন্তু কিছুতেই বিদেশী ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করা হয় না। অর্থাৎ মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চাকে যারা অন্য ভাষা 'নিষিদ্ধ' বা 'চর্চা নিরুৎসাহিত' করার তুল্য বলে ভাবেন বা প্রচার করেন, তারা হয় বিষয়টা বোঝেন না, অথবা অপপ্রচার করে থাকেন।

আশার কথা হলো, বাংলাদেশের জনগণের ভিন্ন একটা বাস্তবতা ইংরেজি ভিত্তিক এই এলিট স্বার্থকে অনেকখানি ক্ষয়িষ্ণু করেছে। সংখ্যাগত বৃদ্ধি ও শিক্ষার বিস্তার চিকিৎসা শিক্ষাকে এখন আর উচ্চবিত্তের মাঝে সীমায়িত রাখছে না। অধ্যাপক তাজুল ইসলাম যেমন বলেছেন নিজেই:

"বাংলাদেশে যেখানে সর্বত্র শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হয় না, সেখানে চিকিৎসাশিক্ষার মতো টেকনিক্যাল ও জটিল বিষয় বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব কতটুকু বাস্তবসম্মত? যাঁরা ভাবছেন এটি অলীক চিন্তা, তাঁদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, ইতিমধ্যেই আমাদের মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে লেকচার ক্লাসের অন্তত অর্ধেক বাংলায় করা হয়; ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নোত্তর ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের বেশির ভাগ বাংলাতেই হয়ে থাকে। এ রকমটি অনিবার্য, কেননা বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে ও বুঝে নিতে মাতৃভাষায় আলাপচারিতা করতেই হয়। কোনো কিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণ ও এর বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে কথা বলতে গেলে মায়ের ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এসে যাবে। অন্তত হওয়া উচিত। আর প্র্যাকটিক্যাল বিষয়গুলো প্রায় পুরোটাই বাংলা ভাষায় করা হয়ে থাকে।"

 ৫.কিন্তু, বাজারে একটা চালু প্রচার আছে যে, শিক্ষার এই ব্যাপক প্রচলনের কারণে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে! এই প্রচারণার মাঝেও সেই এলিট ভূতটিই কার্যকর। পৃথিবী জুড়েই জনগণের মাঝে উচ্চশিক্ষার প্রসার হয়েছে, ইংল্যান্ড কিংবা জাপান কিংবা চীন, কেউই ব্যতিক্রম নয়। বরং, যখন সাধারণতম পরিবারের, প্রান্তিক, গ্রামীণ ও মফস্বলের নারী ও পুরুষ শিশুরাও যথাযথ শিক্ষার সুযোগ পায়, তখনই সত্যিকারের মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান পেতে থাকে। শিক্ষার মানের ভালো-মন্দ নির্ভর করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর, বিষয়কে বোঝাবার মত যোগ্য শিক্ষক ও উপকরণাদির ওপর। শিক্ষার্থীর ভাষা কিংবা আর্থিক যোগ্যতার ওপর না।

ফলে বাংলা ভাষায় চিকিৎসা শিক্ষা [এমনিভাবে আরও সকল উচ্চশিক্ষা] প্রদানে বাধা কারা? কারা এটাকে ধীরগতির করে ফেলছে? এবং কিভাবে উত্তরণ হবে? এই দুটো প্রশ্নের উত্তরে এইটুকু সংক্ষেপে বলা যায়:

ক. বাংলায় চিকিৎসা শিক্ষা দেয়ার পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে বাঙালী ক্ষুদ্রমনা এলিটের কায়েমী স্বার্থ, এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের কর্তৃত্ব। বাংলাতে চিকিৎসা শিক্ষা দেয়ার পথে প্রধান চাহিদা তৈরি করছে অ-এলিট জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সাথে যুক্ততা।

খ. বাংলায় চিকিৎসা শিক্ষা দেয়ার জন্য অবশ্যই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থাপনায় পাঠ্যপুস্তকের অগ্রাধিকার নির্ণয়, বাংলায় তা প্রণয়ন, এবং সেটার মান যাচাই ও সম্পাদনার বন্দোবস্ত করা হলে- বাংলায় এটা ঘটবে দ্রুত এবং যথাযথ গুনগত ভিত্তি অটুট রেখেই।

শেষতঃ, এটুকু বলা যায়, ভাষার চাহিদা না থাকায় নাইজেরিয়ার ইগবো ভাষাটি [যে ভাষার মানুষ ছিলেন চিনুয়া আচেবে] মত সংখ্যা বাড়তে থাকা জনগোষ্ঠীর ভাষাও আমাদের চোখের সামনেই বিলুপ্ত হতে চলেছে [কিন্তু দেশটির অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতেই অনুত্তীর্ণ হয়, মাতৃভাষা হারিয়েও]। অন্যদিকে বাংলা ভাষার আশার দিকটি হলো এর পরবাসী মনের অধিকারী এলিট অংশের সকল অনীহা, অনিচ্ছা এমনকি কখনো কখনো বদদোয়া সত্ত্বেও বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর পদচারণা নিত্যই বাড়ছে, বাংলা ভাষার চাহিদাও বাড়ছে। বাংলায় চিকিৎসা শিক্ষা [আর সকল উচ্চশিক্ষা সমেত] আজ কিংবা কাল দেয়া বাস্তবায়ন হবেই। কিন্তু সেটা কি এইরকম অবক্ষয়ী প্রক্রিয়ায়, নাকি সুসমন্বিত একটা পরিকল্পনা মাফিক, সেটাই প্রশ্ন। রবি ঠাকুর বলতেন, সভ্যতা মানে প্রস্তুতি; অর্থাৎ পরিকল্পনা। বাংলাদেশের পরবাসী মনের আমলা/শাসক/নীতিনির্ধারকগণ বরং তাদের সকল প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা দিয়ে যা অবশ্যসম্ভাবীরূপে ঘটবেই, তাকে বিলম্বিত করার চেষ্টাটিই প্রাণপণে করে যাচ্ছেন।

  • লেখক: প্রাবন্ধিক, অনুবাদক এবং রাজনীতিক 

Related Topics

টপ নিউজ

বাংলা পরিভাষা / অনুবাদ / চিকিৎসা শিক্ষা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি
  • ‘পুলিশ যেতে ভয় পেয়েছে’: মুজিবের বাড়ি ভাঙার সময় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্নে ইউনূস
  • দিল্লিতে দাবা টুর্নামেন্ট: রানী হামিদের সঙ্গীকে ঢুকতে দেয়নি ভারত, ঘটনায় ‘বিপর্যস্ত’ ৮০ বছর বয়সি এ দাবাড়ু
  • নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে স্টারমার সম্পর্কে প্রেস সচিবের বক্তব্য
  • পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই: ড. ইউনূস
  • মায়ের মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা-শাকিল আহমেদ

Related News

  • নতুন অর্থবছরে চিকিৎসা সেবা-শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ল
  • গোধূলিবেলায়
  • এআই যুক্ত নতুন ফিচার আনছে মাইক্রোসফট, নকল করা যাবে কণ্ঠস্বরও
  • যন্ত্র বনাম সাহিত্যিক: অনুবাদ যুদ্ধের শেষ সীমান্ত
  • নিরামিষাশী: হান কাং

Most Read

1
বাংলাদেশ

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি

2
বাংলাদেশ

‘পুলিশ যেতে ভয় পেয়েছে’: মুজিবের বাড়ি ভাঙার সময় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্নে ইউনূস

3
খেলা

দিল্লিতে দাবা টুর্নামেন্ট: রানী হামিদের সঙ্গীকে ঢুকতে দেয়নি ভারত, ঘটনায় ‘বিপর্যস্ত’ ৮০ বছর বয়সি এ দাবাড়ু

4
বাংলাদেশ

নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে স্টারমার সম্পর্কে প্রেস সচিবের বক্তব্য

5
বাংলাদেশ

পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই: ড. ইউনূস

6
বাংলাদেশ

মায়ের মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা-শাকিল আহমেদ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net