মালিক আল ফায়েদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হ্যারোডসের ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের তহবিল

যুক্তরাজ্যের বিলাসবহুল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হ্যারোডস তাদের সাবেক মালিক মোহাম্মদ আল-ফায়েদের বিরুদ্ধে আনা ঐতিহাসিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি একটি তহবিল গঠন করেছে।
মোহাম্মদ আল-ফায়েদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সুরাহা করতে চলতি বছরের মার্চ মাসে এই ক্ষতিপূরণ স্কিমটি চালু করা হয়। এই উদ্যোগের আওতায়, শতাধিক ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে মারা যাওয়া মোহাম্মদ আল-ফায়েদ ১৯৮৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত হ্যারোডসের মালিক ছিলেন। তার মালিকানাধীন থাকাকালে একাধিক নারী কর্মী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন।
হ্যারোডস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে ৫ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড এবং আইনি ও প্রশাসনিক খরচের জন্য অতিরিক্ত ৫৩ লাখ পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট ৬ কোটি ২৩ লাখ পাউন্ড।
এই বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের সরাসরি প্রভাব পড়েছে কোম্পানির আর্থিক হিসাবে। সর্বশেষ অর্থবছরে হ্যারোডস ৩ কোটি ৪৩ লাখ পাউন্ড লোকসান গুনেছে, যেখানে আগের বছর প্রতিষ্ঠানটির লাভ ছিল ১১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড।
হ্যারডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইকেল ওয়ার্ড জানান, কর্মসূচিটি চালু হওয়ার পর থেকে শতাধিক ভুক্তভোগী এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'যোগ্য ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়া শুরু হয়েছে এবং এই কর্মসূচি ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চালু থাকবে।'
মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফায়েদের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তে এ পর্যন্ত ১৪৬ জন অভিযোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
কর্মসূচির আওতায়, প্রত্যেক যোগ্য আবেদনকারী সাধারণ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ লাখ পাউন্ড পাবেন। তবে কোনো ভুক্তভোগী যদি বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে সম্মত হন, তবে তিনি চিকিৎসা খরচসহ সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৮৫ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত পেতে পারেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দেড় লাখ পাউন্ড।
তবে এই ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করলে ভুক্তভোগীরা ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আর কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন না। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হতে হলে আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি যৌন নিপীড়ন বা অন্যায়মূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষার শিকার হয়েছিলেন এবং এর জন্য হ্যারোডস কর্তৃপক্ষ দায়ী।
অভিযোগ রয়েছে, আল-ফায়েদ বহু কর্মীকে চাকরিতে নিয়োগের সময় আপত্তিকর ডাক্তারি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে বাধ্য করতেন।
ক্ষতিপূরণ তহবিলের পাশাপাশি সৌন্দর্য পণ্যের ব্যবসায় মন্দা এবং কিছু ব্যবস্থার আধুনিকীকরণকেও মুনাফা কমার জন্য দায়ী করেছে হ্যারোডস। কোম্পানির আয় অবশ্য আগের মতোই ১ বিলিয়ন পাউন্ডের কাছাকাছি রয়েছে।
কর্মসূচিটি চালুর সময় এক বিবৃতিতে হ্যারোডস বলেছিল, 'অতীতকে যদিও আমরা বদলাতে পারব না, কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা সঠিক কাজটি করতে বদ্ধপরিকর। আমরা আজকের মূল্যবোধ দিয়ে চালিত হতে চাই এবং নিশ্চিত করতে চাই যে ভবিষ্যতে এমন আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।'
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মোহাম্মদ আল-ফায়েদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি।