প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলা জিউফ্রের আত্মহত্যা

প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলা ভার্জিনিয়া জিউফ্রে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪১ বছর। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার নিজ খামার বাড়িতে শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। খবর বিবিসির।
জিউফ্রে ছিলেন যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সোচ্চার কণ্ঠস্বর। তিনি দাবি করেছিলেন, কিশোরী বয়সে তাকে যৌনপাচারের ফাঁদে ফেলে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর কাছে পাঠানো হয়েছিল। তবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি ছিলেন এক সাহসী যোদ্ধা। কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায়ে সেই নির্যাতনের ভার তার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হয়নি।'
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, 'আজীবন যৌন নিপীড়ন ও পাচারের শিকার হিসেবে জীবনযাপন করার পর তিনি আত্মহত্যা করেছেন।'
তিন সন্তানের জননী জিউফ্রেকে বলা হয়েছে, 'তিনি ছিলেন এমন একজন, যিনি নিজের আলো দিয়ে অন্য অনেক নিপীড়িতকে আলোকিত করেছেন।'
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে নিগারবি এলাকার একটি বাড়িতে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে পুলিশ নিশ্চিত করে, এ ঘটনায় সন্দেহজনক কিছু নেই। তবে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশের প্রধান অপরাধ তদন্ত ইউনিট।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া জিউফ্রে স্বামী রবার্ট ও সন্তানদের নিয়ে পার্থ শহরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস করছিলেন। যদিও সাম্প্রতিক খবরে বলা হয়, ২২ বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের পর এই দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটে।
তিন সপ্তাহ আগে জিউফ্রে ইনস্টাগ্রামে জানান, তিনি ভয়াবহ এক গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। যদিও তার পরিবার বলছে, বিষয়টি গোপন রাখতেই চেয়েছিলেন তিনি। পরে পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার প্রকৃত অবস্থা ততটা গুরুতর ছিল না।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আনার পর জিউফ্রে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন এবং 'মি টু' আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মুখে পরিণত হন।
তিনি জানান, ২০০০ সালে ব্রিটিশ সমাজসেবী গিলেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে পরিচিত হন এবং এরপর শুরু হয় বছরের পর বছর ধরে চলা যৌন নিপীড়ন ও পাচারের দুঃসহ যাত্রা।
২০১৯ সালে যৌনপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর নিউইয়র্কের কারাগারে আত্মহত্যা করেন জেফরি এপস্টেইন। এর আগে ২০০৮ সালে এক কিশোরীর সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
এপস্টেইনের সাবেক প্রেমিকা গিলেন ম্যাক্সওয়েল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত।
জিউফ্রে যে অভিযোগ করেছিলেন, তা অস্বীকার করলেও প্রিন্স অ্যান্ড্রু ২০২২ সালে আদালতের বাইরে এক সমঝোতায় পৌঁছান। সেই সমঝোতায় তিনি এপস্টেইনের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করলেও অভিযোগ স্বীকার বা ক্ষমা চাননি।