‘প্রিন্স’ উপাধি হারালেন অ্যান্ড্রু, ছাড়তে হবে রাজকীয় প্রাসাদ ‘রয়্যাল লজ’
 
কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ার পর 'প্রিন্স' উপাধি হারালেন রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাই অ্যান্ড্রু। একই সঙ্গে তাকে উইন্ডসরের রাজকীয় প্রাসাদ 'রয়্যাল লজ' ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসি'র।
বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে বাকিংহাম প্রাসাদ জানায়, অ্যান্ড্রু এখন থেকে 'অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর' নামে পরিচিত হবেন।
চলতি মাসের শুরুতে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তিনি 'ডিউক অব ইয়র্ক'সহ অন্যান্য রাজকীয় উপাধিও ত্যাগ করেন।
সম্প্রতি প্রয়াত ভার্জিনিয়া জিউফ্রের স্মৃতিকথায় আবারও অভিযোগ ওঠে, কৈশোরে তিন দফা তার সঙ্গে যৌনসম্পর্কে জড়িয়েছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। তবে অ্যান্ড্রু সব সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় জিউফ্রের পরিবার জানায়, 'নিজের সত্য আর সাহস দিয়ে তিনি এক ব্রিটিশ রাজপুত্রকে নামিয়ে এনেছেন।' এ বছরের শুরুতে জিউফ্রে আত্মহত্যা করেন।
প্রাসাদের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজা 'আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সব উপাধি, সম্মান ও মর্যাদা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।'
রাজপ্রাসাদ আরও জানায়, 'রয়্যাল লজের লিজ বাতিলের আনুষ্ঠানিক নোটিশ এখন প্রদান করা হয়েছে।'
অ্যান্ড্রু স্যান্ডরিংহাম এস্টেটের একটি ব্যক্তিগত বাড়িতে উঠবেন, যা রাজা চার্লসের ব্যক্তিগত অর্থায়নে হবে বলে জানা গেছে।
প্রাসাদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তিনি অস্বীকার করলেও এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়েছে।'
এছাড়া, যে-কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাজপ্রাসাদ।
অ্যান্ড্রুর দুই কন্যা প্রিন্সেস ইউজিন ও প্রিন্সেস বিয়েট্রিস রাজকুমারীর মর্যাদা বজায় রাখবেন। তিনি এখনো সিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন।
অ্যান্ড্রুর সাবেক স্ত্রী সারা ফার্গুসনও 'রয়্যাল লজ' ছাড়ছেন বলে জানা গেছে। তিনি নিজস্বভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করবেন।
এ মাসের শুরু পর্যন্ত তিনি 'সারা, ডাচেস অব ইয়র্ক' উপাধি ব্যবহার করছিলেন। তবে অ্যান্ড্রু স্বেচ্ছায় 'ডিউক অব ইয়র্ক' উপাধি ত্যাগ করার পর তিনি ফিরে গেছেন নিজের আগের নাম 'সারা ফার্গুসন'-এ।
 
অ্যান্ড্রুর রাজপদবী বাতিলের সিদ্ধান্তে যুক্তরাজ্য সরকারের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল এবং সরকার এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে।
বিবিসির 'কোয়েশ্চন টাইম' অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ব্রিটিশ সংস্কৃতিমন্ত্রী লিসা নন্দী বলেন, এটি যৌন নির্যাতন ও গ্রুমিং–এর শিকারদের জন্য 'অত্যন্ত শক্তিশালী বার্তা'।
তিনি বলেন, 'এটি বড় একটি পদক্ষেপ এবং রাজা একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার মনে হয়, রাজা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়।'
প্রিন্স অ্যান্ড্রুর উপাধি ও সামরিক পদমর্যাদা বাতিলের মধ্য দিয়ে রাজপরিবারের ওপর চলমান চাপের এক অধ্যায় আপাতত শেষ হলো।
জেফরি এপস্টেইন নামের দণ্ডিত যৌন অপরাধীর সঙ্গে অ্যান্ড্রুর সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক আবারও জোরালো হয়, যখন ভার্জিনিয়া জিউফ্রের আত্মজীবনীতে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠে আসে।
অ্যান্ড্রু সব সময় জিউফ্রেকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তবে চলতি মাসের শুরুতে ২০১১ সালের কিছু ই-মেইল প্রকাশ্যে আসে। সেগুলোতে দেখা যায়, তিনি এপস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। যদিও অ্যান্ড্রু দাবি করেছিলেন, ওই সময়ের আগেই তিনি বন্ধুত্বের সম্পর্ক শেষ করেছিলেন।
সম্প্রতি অ্যান্ড্রুর জীবনযাপন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজপরিবারের কর্মরত সদস্য না হয়েও তিনি কীভাবে এত ব্যয়বহুল জীবনযাপন করছেন, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
২০০৪ সাল থেকে অ্যান্ড্রু উইন্ডসর এস্টেটের রয়্যাল লজে বসবাস করছেন। এক বছর আগে তিনি ক্রাউন এস্টেটের সঙ্গে ৭৫ বছরের জন্য ওই বাড়ির লিজ চুক্তি করেন। ক্রাউন এস্টেট রাজপরিবারের সম্পত্তি হলেও এটি একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়।
দ্বিতীয় শ্রেণির ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়্যাল লজে রয়েছে একাধিক কটেজ, প্রার্থনার স্থান, ছয় শয্যার বাড়ি ও নিরাপত্তাকর্মীদের থাকার জায়গা।
গত সপ্তাহে লিজ চুক্তির নথি প্রকাশের পর জানা যায়, অ্যান্ড্রু বাড়িটির জন্য বছরে খুবই সামান্য ভাড়া দিতেন। এমনকি সেটিও চুক্তি অনুযায়ী সব সময় দিতে হতো না।
বিবিসির হাতে পাওয়া নথি অনুযায়ী, তিনি শুরুতেই বড় অঙ্কের অর্থ—মোট ৮০ লাখ পাউন্ডেরও বেশি অগ্রিম পরিশোধ করেছিলেন, যার মধ্যে সংস্কার ব্যয়ের অর্থও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে তিনি কার্যত ৭৫ বছরের ভাড়ার দায় থেকে একসঙ্গে মুক্তি পান।
অন্যদিকে, জানা গেছে ২০০৬ সালে অ্যান্ড্রু রয়্যাল লজে তার মেয়ে বিয়েট্রিসের জন্মদিনে জেফরি এপস্টেইনকে আতিথেয়তা দিয়েছিলেন। তখন যুক্তরাষ্ট্রে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। এ বিষয়ে অ্যান্ড্রু কোনো মন্তব্য করেননি।
রাজপ্রাসাদের জন্য বৃহস্পতিবারের এই ঘোষণা মূলত অ্যান্ড্রুর অতীতের কেলেঙ্কারি থেকে মুক্তি পাওয়ার এক প্রচেষ্টা—যার পর তিনি আর 'প্রিন্স' নন, বরং শুধু 'অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর'।

 
             
 
 
 
 
 
 
 
