‘ডিউক অব ইয়র্ক’ উপাধি ত্যাগ করলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু

'ডিউক অব ইয়র্ক' উপাধি আর ব্যবহার করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রিন্স অ্যান্ড্রু। জেফরি এপস্টিন কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো ও নিজের আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিনের সমালোচনার পর অবশেষে শুক্রবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
রাজা তৃতীয় চার্লসের ছোট ভাই ও প্রয়াত রানি এলিজাবেথের দ্বিতীয় পুত্র অ্যান্ড্রুর সুনাম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রয়াত জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে।
গত বছর এক আদালতের রায়ে জানা যায়, অ্যান্ড্রুর এক ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সহযোগীকে ব্রিটিশ সরকার চীনের গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করেছিল। সে সময় অ্যান্ড্রু অবশ্য দাবি করেন, ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়েছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে অ্যান্ড্রু বলেন, 'আমাকে ঘিরে চলমান অভিযোগগুলো আমার বড় ভাই রাজা চার্লস ও রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। আমি সবসময় যেমনটি করেছি—এবারও পরিবার ও দেশের প্রতি কর্তব্যকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এ কারণে, রাজকীয় উপাধি বা আমাকে দেওয়া সম্মানসূচক মর্যাদা আমি আর ব্যবহার করব না। আগের মত, এখনও আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছি।'
রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর অ্যান্ড্রু এই সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছে রাজপরিবার সূত্র। সূত্রটির দাবি, রাজা চার্লসও এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট।
৬৫ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু বর্তমানে ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন। একসময় তিনি ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সাহসী কর্মকর্তা। ১৯৮০–এর দশকের শুরুর দিকে তিনি আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফকল্যান্ডস যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
তবে ২০১১ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূতের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। ২০১৯ সালে তিনি সব ধরনের রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন এবং ২০২২ সালে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পর তার সামরিক পদবি ও রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতাও বাতিল করা হয়। যদিও তিনি এসব অভিযোগ সবসময়ই অস্বীকার করেছেন।
সে বছর তিনি ভার্জিনিয়া জিউফ্রের করা এক মামলার নিষ্পত্তি করেন। জিউফ্রে অভিযোগ করেছিলেন, কিশোরী অবস্থায় অ্যান্ড্রু তাকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। এ অভিযোগ অ্যান্ড্রু বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। গত সপ্তাহে জিউফ্রের আত্মজীবনী প্রকাশের পর আবারও বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রকাশিত অংশ অনুযায়ী, জিউফ্রে তার বইয়ে লিখেছেন— রাজপরিবারে জন্ম নেওয়ায় অ্যান্ড্রু মনে করতেন, তার (জিউফ্রে) সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন তার (অ্যান্ড্রু) জন্মগত 'অধিকার'।
রয়্যাল বায়োগ্রাফার রবার্ট হার্ডম্যান বিবিসিকে বলেন, "বিষয়গুলো এখন আর চাপা থাকছে না। রয়্যাল প্যালেস চেয়েছে, এ বিষয়ে অ্যান্ড্রুকেও একমত হতে হবে যে, তার সঙ্গে আরও দূরত্ব তৈরি করা প্রয়োজন।"
তিনি আরও বলেন, "অ্যান্ড্রু চান, যেন মনে হয় তিনি নিজে থেকেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন—এ পরিস্থিতিতে তিনি হয়তো কিছুটা মর্যাদা ফিরে পেতে চাচ্ছেন।"