কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনকে নিজ বাসভবনে আতিথেয়তা দিয়েছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু
 
প্রিন্স অ্যান্ড্রু তার সরকারি বাসভবন 'রয়্যাল লজ'-এ জেফরি এপস্টেইন, গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল ও হার্ভি ওয়াইনস্টিনকে আতিথেয়টা দিয়েছিলেন। এই বাড়িটিতেই তিনি কার্যত ভাড়া ছাড়াই বসবাস করেন। খবর বিবিসি'র।
২০০৬ সালে তার মেয়ে বিয়াট্রিসের ১৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত মুখোশ-নৃত্যের অনুষ্ঠানে ওই তিনজন উইন্ডসর প্রাসাদে গিয়েছিলেন। ঘটনার দুই মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্রে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
আগেই জানা গিয়েছিল, এপস্টেইন, ম্যাক্সওয়েল ও ওয়াইনস্টিন ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে উইন্ডসর ক্যাসেলে গিয়েছিলেন। তবে তারা প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ব্যক্তিগত বাসভবনে আতিথেয়তা পেয়েছিলেন— এই তথ্য এবারই প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে।
এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বসবাসসংক্রান্ত বিষয়ে নতুন করে নজরদারিতে থাকা প্রিন্স অ্যান্ড্রু এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ধারণা করা হচ্ছে, এপস্টেইন, ম্যাক্সওয়েল ও ওয়াইনস্টিন মূল অনুষ্ঠানের আগে রয়্যাল লজে যান। মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছিল উইন্ডসর ক্যাসেলের রাজকীয় কক্ষে, যেখানে ছিল শ্যাম্পেন সংবর্ধনা ও নৈশভোজ।
বিবিসি আগের একটি প্রকাশিত ছবিতে থাকা কিছু উপাদান দেখে নিশ্চিত করেছে, সেটি রয়্যাল লজেই তোলা হয়েছিল।
ঘটনার আট দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এপস্টেইনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
২০১৯ সালে বিবিসির নিউজনাইট অনুষ্ঠানে অ্যান্ড্রুকে জিজ্ঞাসা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দুই মাস পর তিনি কেন এপস্টেইনকে মেয়ের জন্মদিনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। উত্তরে তিনি বলেন, 'আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর সময় যুক্তরাষ্ট্রে কী ঘটছে, সে বিষয়ে আমি একেবারেই অবগত ছিলাম না। গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই জানতাম না, কারণ সে (এপস্টেইন) এ নিয়ে কখনো কিছু বলেনি।'
এদিকে 'ডিউক অব ইয়র্ক' উপাধি আর ব্যবহার করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রিন্স অ্যান্ড্রু। জেফরি এপস্টেইন কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো ও নিজের আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিনের সমালোচনার পর ১৭ অক্টোবর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
রাজা তৃতীয় চার্লসের ছোট ভাই ও প্রয়াত রানি এলিজাবেথের দ্বিতীয় পুত্র অ্যান্ড্রুর সুনাম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রয়াত জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে।
৬৫ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু বর্তমানে ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন। একসময় তিনি ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সাহসী কর্মকর্তা। ১৯৮০–এর দশকের শুরুর দিকে তিনি আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফকল্যান্ডস যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
তবে ২০১১ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূতের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। ২০১৯ সালে তিনি সব ধরনের রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন এবং ২০২২ সালে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পর তার সামরিক পদবি ও রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতাও বাতিল করা হয়। যদিও তিনি এসব অভিযোগ সবসময়ই অস্বীকার করেছেন।
সে বছর তিনি ভার্জিনিয়া জিউফ্রের করা এক মামলার নিষ্পত্তি করেন। জিউফ্রে অভিযোগ করেছিলেন, কিশোরী অবস্থায় অ্যান্ড্রু তাকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। এ অভিযোগ অ্যান্ড্রু বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। গত সপ্তাহে জিউফ্রের আত্মজীবনী প্রকাশের পর আবারও বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রকাশিত অংশ অনুযায়ী, জিউফ্রে তার বইয়ে লিখেছেন— রাজপরিবারে জন্ম নেওয়ায় অ্যান্ড্রু মনে করতেন, তার (জিউফ্রে) সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন তার (অ্যান্ড্রু) জন্মগত 'অধিকার'।
১৯৯০-এর শেষ ও ২০০০-এর শুরুর দিকে জেফরি এপস্টেইন ও গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল রাজপরিবারের অতিথিশালার নিয়মিত অতিথি ছিলেন। ১৯৯৯ সালে বালমোরালে তোলা একটি ছবিতে দেখা যায় প্রিন্স অ্যান্ড্রুর আমন্ত্রণে তারা সেখানে ছিলেন।
২০০০ সালে এপস্টেইন উইন্ডসর ক্যাসেলের অতিথি ছিলেন। একই বছরে নরফোকে স্যান্ড্রিংহামে ম্যাক্সওয়েলের জন্মদিন উপলক্ষে অ্যান্ড্রু একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, যা তিনি পরবর্তীতে 'সাধারণ শুটিং-সপ্তাহান্ত' হিসেবে বর্ণনা করেন।
২০০২ সালে ম্যাক্সওয়েল ব্যক্তিগত সফরে বাকিংহাম প্যালেসে যান। দুই দশক পর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় তিনি কেভিন স্পেসির পাশে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে বসে আছেন। ধারণা করা হয়, ওই সফরের আয়োজন করেছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু, তবে এপস্টেইন সেখানে ছিলেন না।
অ্যান্ড্রু স্বীকার করেছেন, তিনি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত বিমানে ভ্রমণ করেছেন, তার দ্বীপে এবং পাম বিচের প্রাসাদে অবস্থান করেছেন, পাশাপাশি লন্ডনের বেলগ্রাভিয়ায় ম্যাক্সওয়েলের বাসায় গিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের আগস্টে এপস্টেইন নিউইয়র্কে কারাগারে যৌন পাচারের অভিযোগে বিচার শুরুর আগে আত্মহত্যা করেন। এর আগে ২০০৮ সালে ফ্লোরিডায় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর বাবা-মা অভিযোগ করেন— এপস্টেইন তাদের মেয়েকে যৌন নির্যাতনের শিকার করেছিলেন। পরে তিনি আপসচুক্তি করেন।
ম্যাক্সওয়েল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। হার্ভি ওয়াইনস্টিনও যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, যদিও তার কিছু সাজা পুনরায় বিচারের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

 
             
 
 
 
 
