জন্মদিনে এপস্টেইনকে লেখা ‘ট্রাম্পের চিঠি’ প্রকাশ কংগ্রেসের, ‘ভুয়া’ বলছে হোয়াইট হাউজ

মার্কিন কংগ্রেসে প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিত্তশালী ও কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের জন্মদিনের বিশেষ 'বার্থডে বুক'। ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে তৈরি সেই স্বারক বইয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি থাকার দাবি করা হয়েছে।
তবে হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়েছে, ট্রাম্পের নামে থাকা ওই চিঠি ভুয়া। এতে এক নারীর দেহের আঁকাবাঁকা চিত্রও রয়েছে। হোয়াইট হাউসের ভাষ্যে, 'প্রেসিডেন্ট এই ছবি আঁকেননি, আর তিনি স্বাক্ষরও করেননি।'
২০০৩ সালে এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে বইটি তৈরি করেছিলেন ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল—এপস্টেইনের সাবেক বান্ধবী ও সহযোগী। ২৩৮ পাতার ওই বইয়ে ট্রাম্প ছাড়াও রাজপরিবারের সদস্য, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন তারকাদের লেখা রয়েছে।
তিন বছর পর এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। ২০২১ সালে বইটির লেখক ম্যাক্সওয়েল দোষী সাব্যস্ত হন কিশোরী মেয়েদের পাচারে এপস্টেইনকে সহযোগিতা করার অভিযোগে।
গত মাসে সাবপোয়েনা জারি করার পর এপস্টেইন এস্টেটের আইনজীবীরা এসব নথি হাউস ওভারসাইট কমিটিতে জমা দেন।
এ বছরের জুলাইয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রথম ট্রাম্পের কথিত এসব চিঠি প্রকাশ করলে তিনি এটিকে 'ভুয়া' বলে অস্বীকার করেন এবং পত্রিকার সাংবাদিক, প্রকাশক, নির্বাহীদের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেন।
বইটিতে ট্রাম্পের পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের লেখা একটি নোট রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও ক্লিনটনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এপস্টেইনকে তিনি চিনতেন বটে, তবে তার অপরাধ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ লর্ড পিটার ম্যান্ডেলসনও বইয়ে এপস্টেইনকে 'মাই বেস্ট পাল' [আমার প্রিয় বন্ধু] লিখেছেন। পরে অবশ্য তিনি এ সম্পর্কের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এছাড়া বইয়ে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নামও উল্লেখ আছে। এক নারী লিখেছেন, এপস্টেইনের মাধ্যমে তিনি প্রিন্স অ্যান্ড্রু, ক্লিনটন ও ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচিত হন এবং এমনকি তিনি 'বাকিংহাম প্রাসাদের ব্যক্তিগত কক্ষ দেখেছেন' ও 'ইংল্যান্ডের রানির সিংহাসনে বসেছেন'। তবে অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
'দ্য ফার্স্ট ফিফটি ইয়ার্স' শিরোনামের এই স্ক্র্যাপবুকে রয়েছে এপস্টেইনের শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের ছবি, ব্যক্তিগত রসিকতা, গানের অংশ, ভ্যানিটি ফেয়ারের কভার নিয়ে কৌতুকচিত্র ও অশ্লীল স্কেচ।
ডেমোক্র্যাটরা অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প আগে দাবি করেছিলেন জন্মদিনের ওই নোট নেই। কংগ্রেসম্যান রবার্ট গার্সিয়া বলেন, 'এখন প্রমাণ হয়েছে ট্রাম্প মিথ্যা বলেছেন এবং সত্য গোপন করার চেষ্টা করছেন।'
অন্যদিকে রিপাবলিকান কমিটি চেয়ারম্যান জেমস কোমার অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা রাজনৈতিক স্বার্থে বেছে বেছে তথ্য প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, কমিটির মূল লক্ষ্য হলো ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং আমেরিকানদের কাছে স্বচ্ছতা আনা।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প ও এপস্টেইনের মধ্যে বহু বছর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ২০০০-এর দশকের শুরুতে মার-আ-লাগো রিসোর্ট থেকে কর্মচারী নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়।
এপস্টেইন ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো ফ্লোরিডায় অপরাধমূলক মামলায় অভিযুক্ত হন। ২০১৯ সালে কারাগারে বিচার চলাকালে তিনি মারা যান।