‘প্রিন্স’ অ্যান্ড্রু তার কুখ্যাত প্রপিতামহ এডওয়ার্ড অষ্টম থেকে যে শিক্ষা কখনও নেননি
প্রায় নয় দশক আগে ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে রাজকীয় দায়িত্বের ঊর্ধ্বে রাখায় ব্রিটেন থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন অষ্টম এডওয়ার্ড। সময় যেন আবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে; এইবার প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ক্ষেত্রে।
রাজা তৃতীয় চার্লসের ছোট ভাই ও প্রয়াত রানি এলিজাবেথের দ্বিতীয় পুত্র অ্যান্ড্রুর সুনাম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রয়াত জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে।
গতকাল (৩০ অক্টোবর) বাকিংহাম প্রাসাদ নিশ্চিত করেছে, রাজা তৃতীয় চার্লস তার ছোট ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে সবশেষ রাজকীয় উপাধি থেকে বঞ্চিত করেছেন এবং তাকে উইন্ডসর বাসভবন ছাড়তে বাধ্য করেছেন। যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে অ্যান্ড্রুর সম্পর্ক থেকে রাজপরিবারকে দূরে রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টাইম সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি এমন এক 'পতন', যা তাদের প্রপিতামহ অষ্টম এডওয়ার্ডের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্বার্থপরতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে যিনি 'সেবার চেয়ে স্বার্থকে' বেছে নিয়েছিলেন। এডওয়ার্ডের প্রেমিকা থেকে স্ত্রী হওয়া ওয়ালিস সিম্পসনের সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই ১৯৩৬ সালে সৃষ্ট হয় সাংবিধানিক সঙ্কট, যা তাকে সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য করে।
সংকটের সূত্রপাত হয় এ কারণে যে, ওয়ালিস ছিলেন দু'বার তালাকপ্রাপ্ত এক মার্কিন নারী, এবং ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান হিসেবে এডওয়ার্ড এমন এক নারীকে বিয়ে করতে পারতেন না, যার প্রাক্তন স্বামীরা তখনও জীবিত। সরকার, চার্চ এবং জনগণ সবাই এ সম্পর্কের বিরোধিতা করে, আশঙ্কা করেছিল রাজতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ও নৈতিক অবস্থান ক্ষুণ্ণ হবে। শেষ পর্যন্ত মুকুট আর ওয়ালিস; এই দুইয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হন এডওয়ার্ড, এবং তিনি বেছে নেন ওয়ালিসকেই।
এই সিদ্ধান্তে কেঁপে ওঠে রাজতন্ত্র; সিংহাসনে বসতে হয় তার ছোট ভাই জর্জ ষষ্ঠকে। নির্বাসনে ফ্রান্সে গিয়ে জীবনের বাকি সময় কাটান এডওয়ার্ড, রাজসেবার চেয়ে কেলেঙ্কারির জন্যই যাকে বেশি মনে রাখে ইতিহাস।
প্রিন্স অ্যান্ড্রুর কেলেঙ্কারিও প্রকৃতিতে আলাদা হলেও তার উৎস একই। আর তা হলো অহংকার, ভুল সিদ্ধান্ত, ও দায়িত্ববোধের অভাব। একসময় সম্মানিত ও সাহসী নৌ-অফিসার হিসেবে পরিচিত অ্যান্ড্রু জড়িয়ে পড়েন জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভার্জিনিয়া জিওফরের আনা যৌন নির্যাতনের অভিযোগে। যদিও তিনি সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জনরোষের প্রতি তার অজ্ঞতা ও সংবেদনশীলতাহীন প্রতিক্রিয়া এডওয়ার্ডের বাস্তববোধহীনতার প্রতিধ্বনি বলে মনে করেছে অনেকেই।
ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন থাকা সত্ত্বেও রাজা চার্লস রাজপরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। প্রিন্স উইলিয়াম ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ রাজপরিবারের সদস্যদের সমর্থনে তিনি অ্যান্ড্রুর সব বিশেষাধিকার বাতিল করেন। প্রাসাদের কর্মকর্তারা এক বিবৃতিতে জানান, তাদের 'ভাবনা ও সহানুভূতি রয়ে গেছে নির্যাতনের শিকারদের সঙ্গে'।
অষ্টম এডওয়ার্ড হারিয়েছিলেন তার মুকুট, আর প্রিন্স অ্যান্ড্রু; নির্বাসন থেকে রেহাই পেলেও হারিয়েছেন রাজকীয় পরিচয়ের সবশেষ অবলম্বন। তার প্রপিতামহের গল্প ছিল এক সতর্কবার্তা, যা থেকে তিনি কিছুই শেখেননি।
