মার-এ-লাগোর স্পাতে কর্মরত তরুণীদের ‘চুরি’ করার পরই এপস্টিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যৌন অপরাধে দণ্ডিত জেফ্রি এপস্টিন মার-এ-লাগো রিসোর্টের স্পা থেকে তার অধীনস্থ তরুণী কর্মীদের 'চুরি করে নেওয়ার' পরই তিনি এপস্টিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। খবর বিবিসি'র।
স্কটল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফেরার পথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, "সে লোকজনকে নিয়ে যেত, আমি বলতাম 'আর করো না', কারণ ওরা আমার অধীনে কাজ করতো... এরপরও সে আরও কয়েকজনকে নিয়ে যায়। তখনই তার সাথে সম্পর্ক শেষ।"
এই কর্মীরা তরুণী ছিলেন কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, "উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ।" তিনি জানান, তারা সবাই মার-আ-লাগোর স্পা থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। তাদের একজন ছিলেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে, যিনি ২০০০ সালের গ্রীষ্মে মাত্র ১৬ বছর বয়সে রিসোর্টটিতে কাজ শুরু করেন।
২০১৯ সালে আদালতে প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, জিউফ্রে অভিযোগ করেন, গিলেন ম্যাক্সওয়েল তাকে নিয়োগ দেন এপস্টিনকে ম্যাসাজ দেওয়ার জন্য, যা পরবর্তীতে যৌন নিপীড়নের দিকে গড়ায়। তিনি প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং এপস্টিনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন, যদিও উভয়েই তা অস্বীকার করেছেন। চলতি বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় জিউফ্রে আত্মহত্যা করেন।
এটি ট্রাম্পের সর্বশেষ মন্তব্য, যেখানে তিনি নিজেকে এপস্টিনের সঙ্গে যেকোনো সম্পর্ক থেকে আলাদা করার চেষ্টা করছেন। এর আগে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছিল, এপস্টিনকে "অসভ্য আচরণ" করার কারণে মার-আ-লাগো থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এই দুটি বক্তব্যে সাংঘর্ষিকতা আছে কি না— জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, "আপনি জানেন, দুটোর মধ্যে আসলে খুব বেশি পার্থক্য নেই।"
এক সময় ট্রাম্প ও এপস্টিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাদের বিভিন্ন পার্টিতে একসঙ্গে দেখা গেছে। ২০০৪ সালে ফোরক্লোজ হওয়া একটি পাম বিচের জমি কেনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত সেই সম্পত্তি ট্রাম্পই কিনে নেন।

এপস্টিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ফের সামনে এসেছে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এপস্টিন-সংক্রান্ত সব নথি প্রকাশ করবেন। তবে চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও এফবিআই এক বিবৃতিতে জানায়, তাদের কাছে কোনো "অপরাধমূলক তালিকা" নেই।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানান, এপস্টিন-সম্পর্কিত বিচার বিভাগের নথিতে তার নামও রয়েছে। তবে কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কারও নাম কোনো নথিতে থাকা মানেই তার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ আছে— এমন নয়।
এছাড়া, ট্রাম্প ও এপস্টিনের আয়োজিত পার্টিতে অংশ নেওয়া একাধিক নারী পরবর্তীতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। ১৯৯৭ সালে জিল হার্থ নামে এক নারী অভিযোগ করেন, মার-আ-লাগোর একটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্প তাকে জোর করে চুমু খান এবং যৌন হেনস্তা করেন। ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।
মডেল স্টেসি উইলিয়ামস অভিযোগ করেন, এপস্টিন তাকে ট্রাম্প টাওয়ারে নিয়ে গেলে ট্রাম্প তার শরীরের বিভিন্ন অংশে অশোভনভাবে স্পর্শ করেন। ট্রাম্প এই অভিযোগও অস্বীকার করেছেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের আরও এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০০৩ সালে এপস্টিনের জন্মদিন উপলক্ষে একটি কার্ডে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ একটি কার্টুনের নিচে ট্রাম্প স্বাক্ষর করেন। কার্ডটিতে লেখা ছিল: "এনিগমারা কখনও বুড়ো হয় না।" শেষ লাইনে ছিল: "একজন বন্ধু দারুণ জিনিস। শুভ জন্মদিন— প্রতিদিন হোক একটি নতুন রহস্যময় আনন্দ।" ট্রাম্প এই প্রতিবেদনকে "ভুয়া" বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং পত্রিকাটির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন।

এদিকে, কিশোরী মেয়েদের যৌন নিপীড়নে সহায়তার দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এপস্টিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গিলেন ম্যাক্সওয়েলকে আগামী ১১ আগস্ট কংগ্রেসের হাউস ওভারসাইট কমিটিতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে।
তবে ম্যাক্সওয়েলের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র যদি তাকে আইনি সুরক্ষা (ইমিউনিটি) বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদান করা হয় এবং প্রশ্নগুলো আগেই জানানো হয়, তবেই তিনি সাক্ষ্য দেবেন। সিবিএস-এর হাতে আসা এক চিঠিতে তার আইনজীবীরা লিখেছেন, "যদি তাকে ক্ষমা করা হয়, তিনি খোলাখুলিভাবে ও সততার সঙ্গে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক।"
কিন্তু কমিটির চেয়ারম্যান জেমস কমার জানিয়ে দিয়েছেন, ম্যাক্সওয়েলকে কোনো ধরনের ইমিউনিটি দেওয়া হবে না। কমিটির একজন মুখপাত্র বলেন, "যিনি শিশু পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, এমন কাউকে ইমিউনিটি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।"
সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কমার বলেন, "এই নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যে খুব একটা বিভক্তি নেই। এমন কাউকে কেউই ইমিউনিটি দিতে চান না।"
ম্যাক্সওয়েলকে ক্ষমা করা হবে কি না— এমন প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, "এটা আমার ক্ষমতার মধ্যে পড়ে," তবে তিনি এ বিষয়ে এখনো কিছু ভাবেননি।