লুটপাট ঠেকাতে সাদাপাথরে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বে থাকবে যৌথবাহিনী

নজিরবিহীন লুটপাটে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র প্রায় বিরানভূমিতে পরিণত হওয়ার পর অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সিলেট জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় সাদাপাথর রক্ষায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—২৪ ঘণ্টা সাদাপাথর এলাকায় যৌথ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ।
বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট ও বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সিলেট সার্কিট হাউসে সর্বস্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মিলিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্তগুলো হলো—
১. জাফলং ইসিএ এলাকা ও সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
২. গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্ট যৌথ বাহিনীসহ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।
৩. অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বন্ধ করার অভিযান চলমান থাকবে।
৪. পাথর চুরির সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা হবে।
৫. চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই চলছে লাগামহীন লুটপাট। প্রকাশ্যে প্রশাসনের সামনেই সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের পাথর লুটে নেওয়া হয়। পরে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় কিছুদিন বন্ধ থাকলেও গত মাসের শেষ দিকে লুটপাট আরও বেড়ে যায়। ওই সময়ে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ঢলের সঙ্গে বিপুল পাথর নেমে আসে। এরপর থেকে হাজারো শ্রমিক প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে পাথর লুট করে নিয়ে যায়। সোমবার পর্যন্ত এ লুটপাট চলে।
তবে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার পর মঙ্গলবার সাদাপাথরে গিয়ে পাথর তুলতে কাউকে দেখা যায়নি। যদিও গত ১৫ দিনেই সাদাপাথরকে একেবারে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সময়ে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। শুধু পাথর নয়, নদীর তীরের বালু ও মাটিও খুঁড়ে নেওয়া হয়েছে।
সাদাপাথর লুটের সঙ্গে প্রথম থেকেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের নাম উঠে এসেছে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করছেন। পাথর লুটের অভিযোগে সোমবার তার পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির আরও কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধেও গুঞ্জন আছে।
এদিকে, সাদাপাথর লুটের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সাদাপাথর পরিদর্শনে যায় দুদক সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে নয় সদস্যের তদন্ত দল। তদন্ত শেষে দুদক জানায়, সাদা পাথরে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা।
এছাড়া, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাদাপাথর ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অবৈধভাবে উত্তোলন করা ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়।