সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ভাঙার কাজ স্থগিতের নির্দেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের
সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা 'মিনিস্টার বাড়ি' ভাঙার কাজ আগামী রোববার (২৬ অক্টোবর) পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকালে 'মিনিস্টার বাড়ি' পরিদর্শন শেষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক এ নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর এ ঐতিহাসিক বাড়িটি মাত্র ১৮ লাখ টাকায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়। ওই ব্যবসায়ী বর্তমানে শ্রমিকদের দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করেছেন।
এ বাড়ি ভাঙার ঘটনায় সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও নাগরিক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানান। শুক্রবার সকালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাড়িটি পরিদর্শন করেন। এ সময় সিলেটের পরিবেশ কর্মী ও স্থপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঐতিহাসিক এ বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী। পরবর্তীতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী এবং তৎকালীন বিধানসভার স্পিকার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার এ রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই বাড়িটি 'মিনিস্টার বাড়ি' নামে পরিচিত হয়।
এ বাড়িতে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ তৎকালীন বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব এসেছিলেন বলে জানা যায়।
শুক্রবার সকালে বাড়িটিতে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল হামিদের নাতি আনিসুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'বাড়িটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। তাছাড়া এ বাড়ির পেছনে আমাদের আরও বাড়িঘর রয়েছে। তাই এটি ভেঙে ফেলতে হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এটি ভাঙতে আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তবে নিরূপায় হয়ে ভাঙতে হচ্ছে।'
ভাঙচুরে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, পুরো বাড়িটি ভাঙতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটি কখন তৈরি হয়েছিল তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, বাড়িটির বয়স শত বছরেরও বেশি। আব্দুল হামিদ ১৯৬৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষকদের পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবাদী সংগঠন 'ভূমিসন্তান বাংলাদেশে'র সমন্বয়ক আশরাফুল কবির। তিনি বলেন, 'এ বাড়িটি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। এটি না ভেঙে জাদুঘরেও রূপান্তর করা যেত। পরিবারের সদস্যরাই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারতেন।'
এ সময় উপস্থিত স্থপতি রাজন দাশ বলেন, 'এটি কোনোভাবে রক্ষা করা যায় কি না, তা আমরা আলাপ-আলোচনা করে দেখছি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষকরাও বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন।'
উল্লেখ্য, আব্দুল হামিদের বোন হাফিজা বানু ছিলেন আইনজীবী আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের স্ত্রী এবং বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবুল মোমেনের দাদী।
