সিলেট মহানগর বিএনপিতে সভাপতি পদ নিয়ে বিরোধে দুই নেতা
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ নিয়ে চরম ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। নাসিম হোসাইন নাকি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী কে এখন সভাপতির দায়িত্বে, এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলটির কেন্দ্রের পাল্টাপাল্টি বিজ্ঞপ্তির কারণে সৃষ্ট এই অস্পষ্টতাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়েছেন দুই নেতার অনুসারীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই বিভ্রান্তির সূত্রপাত বিএনপির কেন্দ্র থেকে জারি করা দুটি বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে। গত বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে নাসিম হোসাইনের পদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার কথা জানানো হয়। পরবর্তীতে আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নাসিমের পদ কখনোই স্থগিত ছিল না।
কেন্দ্রের এমন নির্দেশনায় সভাপতি হিসেবে নাসিম হোসাইন দায়িত্ব পালন করবেন নাকি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন নেতাকর্মীরা।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর কাজিটুলার মক্তবগলি এতিমখানায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও ভোজের আয়োজন করেন নাসিম হোসাইন। এই আয়োজনের খবর পেয়ে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
নাসিম অনুসারীদের অভিযোগ, ওই আয়োজনে গিয়ে কয়েস লোদী ও তার অনুসারী কয়েকজন ব্যানার খুলে ফেলেন এবং মহানগর বিএনপির নাম ব্যবহার করে অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অন্যদিকে লোদী অনুসারীদের অভিযোগ, অনুষ্ঠানে কয়েস লোদী উপস্থিত হওয়ার পরপরই নাসিম হোসাইন ও তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে যান।
সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩ সালের ১০ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে ভোটে মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সৈয়দ সাফেক মাহবুব নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালে বিদেশে চলে যান নাসিম। এরপর ১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর নাসিম হোসাইনকে বাদ দিয়ে সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে ১৭০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে তিনিই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এ অবস্থায় গত বুধবার রাতে রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আগে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইনের দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে তার পদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে কিন্তু নাসিমের দাবি, তার কোনো পদ স্থগিত করেনি বিএনপি।
বিষয়টি জানার পর বৃহস্পতিবার রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে নতুন আরেকটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, ভুলবশত সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে তার দলীয় পদ স্থগিত ছিল না। এই বিজ্ঞপ্তির পর নাসিম হোসাইন নিজেকে সভাপতি দাবি করছেন এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তা মানতে নারাজ।
তবে বিএনপির কিছু নেতা জানিয়েছেন, নাসিম হোসাইন ভুল তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভ্রান্ত করেছেন। দল কখনোই তার পদ স্থগিত করেনি। আর সর্বশেষ মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে রাখাই হয়নি।
এ প্রসঙ্গে নাসিম হোসাইন জানান, কেন্দ্র থেকে ভুলবশত তার পদ-পদবি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয় কিন্তু তিনি বিষয়টি কেন্দ্রে জানানোর পর সংশোধন করা হয়। সভাপতি হিসেবে তিনি দলে আছেন এবং দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই।
তিনি বলেন, 'আমার পদ কখনও স্থগিত করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি পদটি শূন্য রেখে কমিটি গঠন করা হয়েছিল।'
অন্যদিকে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, 'এ বিষয়ে আমি অবগত নই। কেন্দ্র থেকেও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি আমার সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।'
