ট্রাম্পের হুমকির পর শান্তি অনিশ্চিত, প্রশ্নের মুখে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি

এক সময় কূটনৈতিক অচলাবস্থায় থাকা ইউক্রেন দিন শুরু করেছিল আশার আলো নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত খনিজ সম্পদ নিয়ে 'ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি'তে সম্মত-ও হয়েছিল কিয়েভ। খবর বিবিসির
এই চুক্তির আওতায়, ইউক্রেনের পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করবে ওয়াশিংটন। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র পাবে ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ, জ্বালানি অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাস খাত থেকে ভবিষ্যতের মুনাফার একটি অংশ।
পাশাপাশি, প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় মার্কিন, ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যকার প্রথম দফার শান্তি আলোচনা—যেটিকে তখন "ইতিবাচক" বলে অভিহিত করা হয়।
কিন্তু এরপরই হঠাৎ পাল্টে যায় পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হুমকি দেন—যদি দ্রুত অগ্রগতি না হয়, তারা যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা থেকে সরে আসবেন।
ইউক্রেন আশা করেছিল, রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরক্তি— আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞায় রূপ নেবে। কিন্তু উলটো শান্তি প্রক্রিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পিছিয়ে আসার হুমকি— কিয়েভের চেয়ে মস্কোর পক্ষে বেশি সুবিধাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সম্মিলিত সামর্থ্যও দীর্ঘমেয়াদে রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে যথেষ্ট নয়। রাশিয়া একদিকে ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে শান্তির কথা বলছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে খারকিভে রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রে নিহত হয়েছেন একজন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ—যা ছিল অন্যতম ভয়াবহ হামলা।
তবুও, এসব হামলার পর হোয়াইট হাউস থেকে কোনো নিন্দা আসেনি। বরং, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভের ওপর চাপ তৈরি করেছে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে। অন্যদিকে, মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কিয়েভকে চোখ রাঙাচ্ছে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করার পর ইউক্রেন পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু মস্কো এখনো তার 'সর্বোচ্চ দাবি' থেকে একচুলও সরে আসেনি—এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড দাবি এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অপসারণ।
কৃষ্ণসাগরের শান্ত জলরাশিতে, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি টহল জাহাজের কমান্ডে আছেন ইউক্রেনীয় অফিসার মিখাইলো। জাহাজের ব্রিজে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন—তিনি কি মনে করেন, তিনি শুধু ইউক্রেন নয়, ইউরোপের জন্যও যুদ্ধ করছেন?
জবাবে মিখাইলো বলেন, "রাশিয়া যদি পুরো ইউক্রেন দখল করে নেয়, তাহলে কে জানে? ১০–১৫ বছরের মধ্যে ওরা হয়তো পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া কিংবা যেকোনো বাল্টিক দেশে যাবে—এটা খুবই স্পষ্ট।"
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ফুরিয়ে আসছে। নতুন কোনো প্যাকেজ কংগ্রেসে তোলা হচ্ছে না, এমনকি প্রেসিডেন্টের জরুরি ক্ষমতার ব্যবহারের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
যদি ওয়াশিংটন শান্তি প্রচেষ্টা থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে ইউক্রেন শুধু ইউরোপীয় মিত্রদের উপর নির্ভর করেই রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলা করতে বাধ্য হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে সেই সম্মিলিত শক্তিও যথেষ্ট হবে না।
তবে কিছু জায়গায় কিয়েভের সফলতা রয়েছে। নিজেদের তৈরি এবং পশ্চিমা ড্রোন ব্যবহার করে রুশ নৌবহরকে পিছু হটাতে পেরেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট আবার চালু হয়েছে।
তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা এখন আন্তর্জাতিক মহলের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র খনিজ চুক্তির দিকে এগোচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকির পর সেটি এখন অনেকটাই একটি বাণিজ্যিক স্বার্থে রূপ নিয়েছে।
ফলে প্রশ্ন উঠছে—যুক্তরাষ্ট্র আসলে ইউক্রেন কার হাতে থাকবে তা নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন? নাকি তাদের আসল লক্ষ্য কেবল নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করা? মুনাফা কামানো?