নাসা চায় চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনকারী প্রথম দেশ হোক যুক্তরাষ্ট্র

নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফি সংস্থাটিকে চাঁদে একটি পারমাণবিক চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
চাঁদের পৃষ্ঠে একটি চুল্লি স্থাপন করে চাঁদে অনুসন্ধানে বৈদ্যুতিক জ্বালানি শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করার এই উদ্যোগটি চীন ও রাশিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে রাখবে। কারণ এই দুই দেশ যৌথভাবে ২০৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা কমপক্ষে তিনবার দিয়েছে—এমনটাই বলা হয়েছে ৩১ জুলাই তারিখের একটি নির্দেশনায়।
যদি অন্য কোনো দেশ প্রথমে এ ধরনের চুল্লি স্থাপন করে তাহলে সেখানে তারা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রবেশাধিকার নাও পেতে পারে বা বিলম্ব হতে পারে।
এই উপস্থিতি গড়ার অংশ হিসেবে নাসার আর্টেমিস কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন হলো আর্টেমিস থ্রি, যা বর্তমানে ২০২৭ সালে চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে—এই মিশনের মাধ্যমে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর আবার মানুষ চাঁদের মাটিতে পা রাখবে। তবে, এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে এখনও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করা বাকি রয়েছে।
ড্রোন বিষয়ে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে শন ডাফি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা চাঁদে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় আছি, চীনের সঙ্গে চাঁদে যাওয়ার দৌড়ে আছি।'
তিনি আরও বলেন, 'চাঁদে একটি ঘাঁটি গড়তে হলে আমাদের জ্বালানি শক্তির প্রয়োজন।'
ডাফির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে এই প্রকল্প পরিচালনার জন্য একজন নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।
এই নতুন নির্দেশনার খবর সর্বপ্রথম প্রকাশ করে পলিটিকো।
নাসা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিবিষয়ক দপ্তর এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে একই ধরনের প্রকল্পে কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে 'ফিশন সারফেস পাওয়ার' প্রকল্প, যার মাধ্যমে চাঁদে কমপক্ষে ৪০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে—যা দিয়ে একটানা ৩০টি ঘর ১০ বছর চালানো সম্ভব বলে জানিয়েছে নাসা তাদের ওয়েবসাইটে।
পারমাণবিক চুল্লি চাঁদে দীর্ঘসময় অবস্থানের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে, তবে নতুন প্রকাশিত পরিকল্পনায় এখনও স্পষ্ট করা হয়নি কখন চাঁদে একটি ঘাঁটি নির্মাণ করা যাবে। নাসার উদ্ধৃত অনুমান অনুযায়ী, চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি মানব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তত ১০০ কিলোওয়াট বৈদ্যুতিক শক্তির প্রয়োজন।
ডাফি বলেন, 'জ্বালানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যদি আমরা চাঁদে জীবন টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হই তাহলে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনাও আমরা করতে চাই। তাই এই প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
জুলাই মাসে নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি শন ডাফির প্রথম বড় উদ্যোগ। তবে তিনি পরিবহণ বিভাগের সচিবের দায়িত্বের পাশাপাশি এই অতিরিক্ত পদ গ্রহণ করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কারণ, এভিয়েশন সেফটি বা বিমান নিরাপত্তা ইস্যুতে কঠিন সময় পার করছে মার্কিন পরিবহণ বিভাগ।
গত বৃহস্পতিবার তিনি আরেকটি নির্দেশনা জারি করেছেন, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) বিকল্প হিসেবে একটি বেসরকারি মহাকাশ স্টেশন তৈরির প্রক্রিয়া দ্রুততর করা যেতে পারে। এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৬০ দিনের মধ্যে নতুন প্রস্তাব আহ্বান করা হবে, এবং কমপক্ষে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ছয় মাসের মধ্যে চুক্তি প্রদান করা হবে। নতুন এই আদেশে নাসার চুক্তির পদ্ধতিতে কিছু নমনীয়তা আনা হয়েছে।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাস লিকসহ নানা সমস্যায় পড়েছে, এবং এটি ২০৩০ সালের মধ্যে অবসরে পাঠানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।