রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: এইচএসসি পাশেই ১ম শ্রেণির পদে নিয়োগ, যে ব্যাখ্যা দিলো কর্তৃপক্ষ

স্নাতক পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইসিটি সেন্টারে এক শিক্ষার্থীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
এক অফিস আদেশে ছয় মাসের জন্য তাকে অস্থায়ীভাবে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগদানের সময় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এইচএসসি পাশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির চাকরি পেতে হলে অবশ্যই স্নাতক পাশ করতে হবে। স্নাতকের চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার আগে কাউকে প্রথম শ্রেণির চাকরি দেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষ বলছে, কেবল অত্যন্ত দক্ষ হওয়ায় তাকে এ পদে বিবেচনা করা হয়েছে। মোমেন খন্দকার অপি আনুষ্ঠানিক ফল না পাওয়ায় 'অ্যাপিয়ার্ড' মর্মে আবেদন করেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর এক অফিস আদেশে মোমেন খন্দকার অপিকে নিয়োগ দেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। নিয়োগের প্রায় এক মাস পর, ১২ ডিসেম্বর, তার চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
নিয়োগপ্রাপ্ত অপি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৩.২০ সিজিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার পদে ২২,০০০–৫৩,০৬০ টাকা বেতনে অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। এ নিয়োগ যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
নিয়মের ব্যত্যয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন মনে করেন, এ নিয়োগ অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়েছে।
'স্নাতক পাসের আগেই প্রথম শ্রেণির চাকরিতে কীভাবে নিয়োগ হয়? এখানে কী ধরনের মেকানিজম কাজ করেছে যে, অনার্স পাস করেনি অথচ প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে? আমি মনে করি, এটা অবশ্যই অন্যায়,' বলেন তিনি।
অ্যাডহক পদ্ধতিতে নিয়োগের প্রয়োজন কেন পড়ল প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, '৮–১০ বছর ধরে তো অ্যাডহক নিয়োগ বন্ধ ছিল, এখন কেন তা প্রয়োজন হলো? এসবের ব্যাখ্যা প্রয়োজন।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খানও নিয়োগে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। এক ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, 'সাধারণত একজন কর্মকর্তাকে স্নাতক পাস হতে হয়। মাস্টাররোলে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন ওই বিভাগ থেকে চাহিদা আসে, পেপারসও সেভাবে দেওয়া হয়।'

'ভিসি স্যার যদি মনে করেন, দপ্তরের জন্য প্রয়োজন, তখন তিনি সেভাবে অনুমোদন দিয়ে দেন। তবে এটা স্বাভাবিক নিয়মের মতো হয় না, কারণ এখানে যাচাই-বাছাই বা ভাইভা নেওয়া হয় না। সাধারণত দপ্তর থেকে যাকে সুপারিশ করা হয়, তাকেই নিয়োগ দেওয়া হয়,' বলেন তিনি।
এ নিয়োগে হয়তো কোনোভাবে অপির নথিপত্র যাচাই করা হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'সংশ্লিষ্ট দপ্তর, যেখান থেকে নিয়োগের চাহিদা এসেছিল, তাদেরই উচিত ছিল বিষয়টি যাচাই করা। যদি এটা জ্ঞাতসারে করা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।'
'আর যদি অজ্ঞাতসারে হয়ে থাকে, তাহলে তার রেজাল্ট না হওয়ার বিষয়টি অন্য ইস্যু হতে পারে,' তিনি আরও বলেন।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, সেন্টারে দক্ষ কম্পিউটার প্রোগ্রামারের জরুরি প্রয়োজন অনুভব করায় তিনি তা উপাচার্যকে জানালে, উপাচার্য দক্ষ প্রোগ্রামার খুঁজে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
'মাননীয় উপাচার্য এটাও স্পষ্ট করেন, শুধু অত্যন্ত দক্ষ হলেই বিবেচনা করা হবে,' বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম।
উপাচার্যের নির্দেশনা অনুযায়ী মোমেন খন্দকার অপিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, 'বিষয়টি আমি আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছিলাম। রেজিস্ট্রার ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখব।'
'অপি নিয়োগের সময় তার স্নাতক ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষার ফলাফল অফিসিয়ালি প্রকাশিত না হওয়ায় "অ্যাপিয়ার্ড" মর্মে আবেদন করেন। নিয়োগের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার ফলাফল প্রকাশিত হয়,' বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী, যে পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে, সে পদের জন্য ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন। "অ্যাপিয়ার্ড" আসলে কোনো সার্টিফিকেট নয়; এটি বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে সুযোগ দিলেও চাকরির ক্ষেত্রে কনফার্মেশন ছাড়া নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই।'
চাকরি করতে হলে অবশ্যই স্নাতক পাস হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটা মনে হয় পরিচালক মহোদয় বিষয়টি সিরিয়াসলি খেয়াল করেননি।'
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিটি সেন্টার বলেছে. অপি বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যতম সেরা প্রোগ্রামার। ছাত্রাবস্থায় তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি একাধিক বেসরকারি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ফার্মের সঙ্গে প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করেছেন।