মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: অনুমতি ছাড়া কস্টকোতে কেনাকাটা করতে পারবেন না ইরানি কূটনীতিকরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নিউইয়র্কে অবস্থানরত বা সফররত ইরানি কূটনীতিকদের কস্টকো -এর মতো পাইকারি স্টোরে কেনাকাটা এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিলাসপণ্য কেনা নিষিদ্ধ করেছে। তবে তারা চাইলে এসব কেনাকাটা করতে পারবেন কেবল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বিশেষ অনুমতি নিয়ে।
এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, "আমরা কখনোই ইরানি শাসক শ্রেণিকে নিউইয়র্কে কেনাকাটার উৎসব করার সুযোগ দেব না, যখন সাধারণ ইরানি জনগণ দারিদ্র্য, ভেঙে পড়া অবকাঠামো এবং সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের মারাত্মক সংকটে ভুগছে।"
ফেডারেল রেজিস্টারে চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হতে যাওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্কিন ফরেন মিশনস অফিস সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কূটনীতিকদের হোলসেল ক্লাব স্টোরের সদস্যপদ পাওয়া বা ঘড়ি, পশমের তৈরি পরিধেয়, গয়না, হ্যান্ডব্যাগ, ওয়ালেট, সুগন্ধি, তামাক, মদ কিংবা গাড়ির মতো বিলাসপণ্য কেনার সুযোগও "সুবিধা" হিসেবে গণ্য হবে, যার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
তবে এই নিয়ম কেবলমাত্র ইরানি কূটনীতিকদের লক্ষ্য করে আরোপ করা হয়েছে। নিউইয়র্কে অবস্থানরত ইরানি কূটনীতিকরা এতদিন কস্টকো কিংবা অনুরূপ স্টোর থেকে প্রচুর পরিমাণে তুলনামূলক সস্তায় পণ্য কিনে নিজের দেশে পাঠাতে পারতেন, যেসব পণ্য ইরানের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে স্থানীয়ভাবে পাওয়া যেত না।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে আরও বলেছে, "জাতিসংঘ সফরের সুযোগ নিয়ে ইরানি কর্মকর্তারা যাতে তাদের জনগণের অপ্রাপ্য পণ্য কিনে দেশে পাঠাতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র যখন বলে আমরা ইরানি জনগণের পাশে আছি, তখন আমরা সত্যিই সেটিই বোঝাই।"
এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ভিসা নিয়ন্ত্রণ নীতির আরও একটি ধাপ। বিশেষ করে জাতিসংঘে প্রতিনিধি হয়ে আসতে চাওয়া ইরানি নেতা ও কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশন চলাকালে বিশ্বনেতারা একত্রিত হচ্ছেন, এরমধ্যেই ইরানি কূটনীতিকদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে কার্যকর থাকবে।
সোমবার অনলাইনে প্রকাশিত এবং মঙ্গলবার প্রিন্ট সংস্করণে আসতে যাওয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, ইরানি কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারবর্গ যুক্তরাষ্ট্রে কোনো হোলসেল ক্লাব স্টোর—যেমন কস্টকো, স্যাম'স ক্লাব বা বিজে হোলসেল ক্লাবে—সদস্য হতে চাইলে অবশ্যই আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অনুমোদন নিতে হবে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইরানি কূটনীতিকদের এক হাজার ডলারের বেশি দামের বিলাসপণ্য এবং ৬০ হাজার ডলারের বেশি দামের গাড়ি কিনতেও অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন ফরেন মিশনস অফিসের প্রধান ক্লিফটন সিগ্রোভস।
যেসব পণ্যকে "বিলাসপণ্য" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—ঘড়ি, চামড়ার পোশাক ও ফ্যাশন সামগ্রী, সিল্কের পোশাক, জুতা, পশমের তৈরি পোশাক, হ্যান্ডব্যাগ, ওয়ালেট, ফাউন্টেন পেন, প্রসাধনী ও সুগন্ধি, শিল্পকর্ম, পুরনো আসবাবপত্র ও কার্পেট, মুক্তা, রত্নপাথর ও গয়না, মূল্যবান ধাতু, ইলেকট্রনিকস ও গৃহস্থালী সরঞ্জাম, খেলাধুলার সরঞ্জাম, বাদ্যযন্ত্র, সিগারেট ও সিগার, ওয়াইন, স্পিরিটস এবং বিয়ার।
গত ১৬ ও ১৮ সেপ্টেম্বর সিগ্রোভস এই নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করেন। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি তারা বিবেচনা করছেন।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং তার প্রতিনিধিদলকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা দেয়নি। শুধু ইরান নয়, প্রশাসন সুদান, জিম্বাবুয়ে এবং ব্রাজিলের প্রতিনিধিদলের বিরুদ্ধেও অনুরূপ বিধিনিষেধ আরোপের কথা বিবেচনা করছে।
