গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শুনানিতে বিক্ষোভ, দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বললেন বক্তারা

শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমলে নিয়ে আজ বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে শুনানির ডাক দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
তবে শুনানির প্রথম পর্বেই তুমুল বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ দশমিক ৭২ টাকা করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে প্রতিবাদকারীদের একটি দল এই শুনানি অবিলম্বে বাতিলের দাবি তোলে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের বক্তব্যের পরপরই প্রতিবাদকারীরা স্লোগান দিতে শুরু করেন এবং প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
'প্রহসনের এই শুনানি বন্ধ করো, এখনই বন্ধ করো'—এমন স্লোগান দিতে থাকেন প্রতিবাদকারীরা।
একপর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধিরা শুনানি থেকে ওয়াকআউট (ত্যাগ) করেন। ক্যাবের নেতারা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবকে 'বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক' বলে আখ্যা দেন।
বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যাহ্ন বিরতির ঘোষণা দেন।
শুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিইআরসি আসলে সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়ন করছে। কমিশনের উচিত স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সরকারের চাপে নতি স্বীকার না করা।
তিনি সতর্ক করে বলেন, গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে ৭৫ দশমিক ৭২ টাকা হলে শুধু জ্বালানি খাত নয়, সব উৎপাদন খাত ভবিষ্যতে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা যদি এই প্রস্তাব অনুমোদন করেন এবং এর কারণ অনুধাবন করতে না পারেন, তবে আমাদের শিল্প খাত বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাবে।
তিনি আরও বলেন, শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে ৭৫ দশমিক ৭২ টাকায় বৃদ্ধির পেছনে কারা রয়েছেন? কারা এমন চাপ দিচ্ছে যাতে আমাদের শিল্পখাত রপ্তানি বাজার থেকে ছিটকে পড়ে?
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এ শুনানির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, 'বিইআরসি কি কখনো গবেষণা করেছে, এই বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি দেশের ব্যবসা খাতের ওপর কী প্রভাব ফেলবে?'
বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শুনানিতে ক্যাব, বিকেএমইএ, বিসিআইসহ বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের গ্যাসের মূল্য নির্ধারিত হবে আমদানি করা এলএনজির প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে। অনুমোদিত লোডের বেশি ব্যবহারকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।