Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

আমাদের হারিয়ে যাওয়া রিল, নেগেটিভ আরও কতশত স্মৃতি!

বিলাতিদের হাত ধরে এ অঞ্চলে ক্যামেরার আগমন। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৮৪০ সালে প্রথম ক্যামেরা আর ফটো স্টুডিও আসে পশ্চিমবঙ্গে। ১৮৯০-এর পরে নবাবদের হাত ধরে ঢাকায় ফটো স্টুডিও চালু হয়। এরপর ধীরে ধীরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফটোগ্রাফির বিস্তার ঘটে। স্বাধীনতার আগে দেশে সাদাকালো ছবি তোলা হতো। ১৯৭৯ সালের দিকে প্রথম রঙিন ছবি তোলা হয়। এলিফ্যান্ট রোডে ফুজি ফিল্মের ল্যাবে রঙিন ছবি প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছিল। এর আগে রঙিন ছবি প্রিন্টের জন্য ছবির ফিল্ম বিদেশে পাঠানো হতো।
আমাদের হারিয়ে যাওয়া রিল, নেগেটিভ আরও কতশত স্মৃতি!

ইজেল

ফাইয়াজ আহনাফ সামিন
21 September, 2024, 10:00 pm
Last modified: 22 September, 2024, 01:59 pm

Related News

  • পোপের ছবি পোস্ট করার কথা অস্বীকার করলেন ট্রাম্প!
  • আহত ফিলিস্তিনি শিশুর ছবি জিতল প্রেস ফটো অব দ্য ইয়ার 
  • ছবিতে ইউনূস-মোদির বৈঠক
  • ছবিতে বিশ্বজুড়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন
  • ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার প্রকাশিত ছবিতে সত্য আড়াল করা হয়েছে: পুলিশ

আমাদের হারিয়ে যাওয়া রিল, নেগেটিভ আরও কতশত স্মৃতি!

বিলাতিদের হাত ধরে এ অঞ্চলে ক্যামেরার আগমন। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৮৪০ সালে প্রথম ক্যামেরা আর ফটো স্টুডিও আসে পশ্চিমবঙ্গে। ১৮৯০-এর পরে নবাবদের হাত ধরে ঢাকায় ফটো স্টুডিও চালু হয়। এরপর ধীরে ধীরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফটোগ্রাফির বিস্তার ঘটে। স্বাধীনতার আগে দেশে সাদাকালো ছবি তোলা হতো। ১৯৭৯ সালের দিকে প্রথম রঙিন ছবি তোলা হয়। এলিফ্যান্ট রোডে ফুজি ফিল্মের ল্যাবে রঙিন ছবি প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছিল। এর আগে রঙিন ছবি প্রিন্টের জন্য ছবির ফিল্ম বিদেশে পাঠানো হতো।
ফাইয়াজ আহনাফ সামিন
21 September, 2024, 10:00 pm
Last modified: 22 September, 2024, 01:59 pm
ফিল্ম ছবির নেগেটিভ। ছবি- সংগৃহীত

ক্যামেরা–স্মৃতি ধরে রাখার এক আশ্চর্য যন্ত্র। শাটারে ক্লিক করলেই সামনের দৃশ্য বা মানুষের অবয়ব অবিকল উঠে আসে ছবির পাতায়। যুগ যুগ ধরে সংরক্ষিত থাকে সে ছবি। স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন হলো ছবি। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে তোলা হয়েছিল প্রথম ছবি। এ ২০০ বছরে ছবি তোলা ও সংরক্ষণ করার অনেক ধরনের নতুন উপায় বের হয়েছে, আবার বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক কিছুই। কাঠের বক্স ক্যামেরা থেকে হালের স্মার্টফোনে তিন-চারটি করে ক্যামেরা এই বিবর্তনের ইতিহাস দীর্ঘ।

বিলাতিদের হাত ধরে এ অঞ্চলে ক্যামেরার আগমন। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৮৪০ সালে প্রথম ক্যামেরা আর ফটো স্টুডিও আসে পশ্চিমবঙ্গে। ১৮৯০-এর পরে নবাবদের হাত ধরে ঢাকায় ফটো স্টুডিও চালু হয়। এরপর ধীরে ধীরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফটোগ্রাফির বিস্তার ঘটে। স্বাধীনতার আগে দেশে সাদাকালো ছবি তোলা হতো। ১৯৭৯ সালের দিকে প্রথম রঙিন ছবি তোলা হয়। এলিফ্যান্ট রোডে ফুজি ফিল্মের ল্যাবে রঙিন ছবি প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছিল। এর আগে রঙিন ছবি প্রিন্টের জন্য ছবির ফিল্ম বিদেশে পাঠানো হতো।

এখন ফটোগ্রাফির উত্তর আধুনিক যুগে বাস করছি আমরা। আজকাল সবার হাতেই থাকে স্মার্টফোন। আর স্মার্টফোনের স্মার্টনেসের অন্যতম সংজ্ঞায়ন করে এর ক্যামেরা। মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে যে কেউ করতে পারে ফটোগ্রাফি। ছবি তুলে সে ছবি এডিট করা থেকে শুরু করে সংরক্ষণ করা, আদান-প্রদান করা কিংবা প্রিন্ট করে ঘরে সংরক্ষণ করা, এর সবই এখন হাতের মুঠোয়।

এসএলআর ক্যামেরা, ১৩৫ মিলিমিটার নেগেটিভ রিল, রিল ডেভেলপের ডার্করুম, নানা রকম কেমিক্যাল, ফটো স্টুডিওতে বাহারি ব্যাকগ্রাউন্ড ড্রপ–এসবই অ্যানালগ যুগের ফটোগ্রাফির অংশ ছিল। সময়ের সাথে সাথে এগুলো আজ বিলুপ্ত। শখের বশে নেগেটিভ রিলের ফটোগ্রাফি চালিয়ে যাচ্ছে এমন লোকও এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের দেশে আশি বা নব্বইয়ের দশক থেকে যারা ফটোগ্রাফির সাথে জড়িত, তাদের কাছে অ্যানালগ ফটোগ্রাফির যুগটাই যেন বেশি রঙিন। ডিএসএলআর ক্যামেরা, মেমোরি কার্ড আর আধুনিক প্রিন্টারের যুগেও তাদের কাছে অ্যানালগ যুগের স্মৃতি অমলিন।

স্টুডিও পদ্মার সামনে আক্কাস মাহমুদ। ছবি: নূর-এ-আলম/টিবিএস

এমনই একজন এনালগ যুগের ফটোগ্রাফার আক্কাস মাহমুদ। ইস্কাটন রোডের পদ্মা স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী তিনি। আশির দশক থেকে ফটোগ্রাফির সাথে যুক্ত আছেন। সে সময় নেগেটিভ রিল থেকে ছবি ডেভেলপ করাও ছিল ফটোগ্রাফির মতোই একধরনের শিল্প। ফটোগ্রাফি জানা লোকেরাও সবাই নেগেটিভ থেকে ছবি বানাতে পারতেন না। আক্কাস মাহমুদ ফটোগ্রাফি আর নেগেটিভ রিল থেকে ছবি ডেভেলপ করা, দুটিতেই সমানভাবে পারদর্শী। 

মেধা আর শ্রমের সোনালি যুগ

'ক্যামেরা জিনিসটা এখন খুব কমন হয়ে গিয়েছে। সবার হাতে হাতে ক্যামেরা। সবাই এখন ফটোগ্রাফি করতে পারে। কিন্তু আমাদের সময় জিনিসগুলো ভিন্ন ছিল। বছর তিরিশ-চল্লিশেক আগে যে কেউ চাইলেই ফটোগ্রাফি করতে পারত না। ফটোগ্রাফি ছিল একটি সাধনার ব্যাপার। এটি ছিল গুরুমুখী বিদ্যা। ফটোগ্রাফি শিখতে হতো হাতেকলমে। দক্ষ ফটোগ্রাফারদের তখন অনেক কদর করা হতো। ফটোগ্রাফি ছিল একটি কষ্টার্জিত সাধনার ফল। এর জন্য প্রয়োজন ছিল মেধা, দক্ষতা আর শ্রম। আমার কাছে অ্যানালগ ফটোগ্রাফির সময়টাই ফটোগ্রাফির সোনালি যুগ'-বলছিলেন আক্কাস মাহমুদ।

এখন পেশাদার ছবি তোলার জন্য ডিএসএলআর (ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স) ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। এতে মেমোরি কার্ড ব্যবহার করে হাজার হাজার ছবি তোলা যায়। প্রয়োজনমতো ছবি মুছে ফেলা যায় কয়েকটি ক্লিকেই। আর ছবি আদান-প্রদান করাও সহজ। ক্যামেরাতেই থাকে ব্লুটুথ।

কিন্তু আগে ছবি তোলার সরঞ্জাম ছিল বেশ কয়েকটি। তখন ছিল এসএলআর (সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স) ক্যামেরা, সাদাকালো ছবির জন্য ১২০ মিলিমিটার আর রঙিন ছবির জন্য ১৩৫ মিলিমিটারের নেগেটিভ রিল। ১২০ মিলিমিটারের একটি রিলে ছবি তোলা যেত মাত্র বারোটি আর রঙিন ছবির ১৩৫ মিলিমিটার রিলে মাত্র ৩৬টি ছবি তোলা যেত। এর কমও না বেশিও না। রিল শেষ হলে ক্যামেরায় আবার নতুন রিল লাগাতে হতো। আগে ছবি তোলার এ জিনিসগুলো বেশ দুর্লভ ছিল। আমাদের দেশে কিছুই তৈরি হতো না। ফিল্ম আর ক্যামেরা সব আসত জাপান, জার্মানি ও আমেরিকা থেকে। ফুজি ফিল্ম আসত জাপান থেকে আর কোডাক ফিল্ম আসত জার্মানি থেকে। এগুলো পাওয়া যেত ঢাকার গুটিকয়েক দোকানে। 

স্টুডিও পদ্মায় সালমান শাহ। ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

ঢাকা স্টেডিয়ামে মিতালী নামক একটি দোকানে এসএলআর ক্যামেরা পাওয়া যেত। নিউমার্কেটে ছিল এক-দুটি ক্যামেরা আর ফিল্মের দোকান। এখন বসুন্ধরা শপিং মলেই ক্যামেরার দোকান আছে প্রায় এক শটি। এই ডিজিটাল যুগে একেকটা মেমোরি কার্ডে হাজার হাজার ছবি তুলে ফেলা যায়, যা রিলের সময় সম্ভব ছিল না। প্রতিটি ছবি খুব যত্নের সাথে এবং চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হয়েই তুলতে হতো।

এসএলআর ক্যামেরার স্কোপ (যেখানে চোখ রেখে ছবি তোলা হয়) ছিল ছোট্ট। আর এখন ক্যামেরার বড় স্ক্রিনে ছবি দেখে তোলা যায়। সেই ছোট স্কোপে তাকিয়ে ফ্রেম আর ফোকাস ঠিক রেখে আন্দাজ করে ছবি তুলতে হতো। ক্লিক করলেই রশ্মির মাধ্যমে ছবি চলে যেত রিলে। এক্সপোজার, শাটার স্পিড, ডেপথ অব ফিল্ড ঠিক আছে কি না, এগুলো তখন জানার কোনো উপায় ছিল না। একটু গরমিল হলেই ছবি ভালো আসত না। ফেটে যেত বা বেশি কন্ট্রাস্ট পড়ে সাদা হয়ে যেত। নেগেটিভের ছবি তো সাথে সাথে দেখারও উপায় নেই। ছবির প্রিন্টের জন্য ল্যাবে গিয়ে রিল দিয়ে অপেক্ষা করতে হতো কয়েক দিন।

রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে সাংবাদিকেরা তাড়াহুড়োর মধ্যে ছবি তুলতেন। সেসব ছবি কেমন হয়েছে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হতো ছবি প্রিন্ট পর্যন্ত। এমন অনেক হয়েছে যে ছবি হাতে আসার পর দেখা গিয়েছে ছবি ঝাপসা বা ফেটে গিয়েছে কিংবা সাদা হয়ে গিয়েছে। অনেক বিখ্যাত ফটোগ্রাফারকে বড় বড় অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে ছবি তুলে প্রিন্টের পর মনমতো ছবি না পেয়ে হতাশ হতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে না পড়ার জন্যই তখনকার ফটোগ্রাফাররা ছবি তোলার কাজ পেশাদারত্বের সাথে নিতেন। কেউ চাইলেই ফটোগ্রাফার হতে পারত না।

ডার্করুমের কারিকুরি

ছবি প্রিন্টের জন্য প্রথম দিকে আধুনিক কোনো মেশিন ছিল না। রিল ডেভেলপ করার জন্য ফটো স্টুডিওতে থাকত ডার্করুম। ডার্করুম বলতে আদতেই একটি অন্ধকার রুম ছিল। অনেক বিখ্যাত ফটোগ্রাফারের নিজস্ব ডার্করুম ছিল। ক্যামেরা থেকে ফিল্ম বের করে ফটোগ্রাফাররা যেত ডার্করুমে। ডার্করুমে রিল থেকে ছবি পর্যন্ত আসার তিনটি প্রক্রিয়া ছিল।

একটি ১৩৫ মি.মি. ফিল্মরোল। ছবি- লেখক

প্রথমে রিল বের করে তা রাখা হতো একটি সিরামিকের পাত্রে। অন্য কোথাও রাখলে রিলে দাগ পড়ে ছবি নষ্ট হওয়ার ভয় থাকত। সিরামিকের পাত্রে পানি থাকত। পানিতে পুরো রিলটা একবার ওয়াশ করা হতো। সেখান থেকে পানি ঝরিয়ে আরেকটি পাত্রে কেমিক্যালের মধ্যে রিল ডুবিয়ে রাখা হতো। এই কেমিক্যালে কতক্ষণ রিল রাখা যাবে, এটাও ছিল অভিজ্ঞতার ব্যপার। কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না আর। রিল আর ছবি ভেদে ৫-৭ মিনিট কেমিক্যালে ডুবিয়ে রাখা হতো রিল। ডার্করুমের ভেতরে থাকত খুব কম পাওয়ারের একটি বাল্ব। প্রায় শূন্য ওয়াটের এ বাল্ব লাল কাগজ দিয়ে ঘেরা থাকত। এ লাল আলোতে রিল দেখে ঠিক করা লাগত পরের ধাপের জন্য রিল প্রস্তুত হয়েছে কি না। যদি প্রস্তুত না হয়, তবে আবার কেমিক্যালে ডুবিয়ে রাখতে হতো রিল। আবার বেশিক্ষণ ডুবিয়ে রাখলে রিল কালো হয়ে যেত। এরপর আরেকটি কেমিক্যালের পাত্রে রিল রাখা হতো আগের কেমিক্যালের প্রক্রিয়াকে স্থির করার জন্য। 

হাইপো নামক একধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হতো এখানে। হাইপোতে রিল ডুবিয়ে দুই-তিন মিনিট নাড়াচাড়া করা হতো। এতে করে রিলে ছবি বসে যেত। হাইপো থেকে রিল তুলে আবার পানিতে রিল দেওয়া হতো ওয়াশ করার জন্য। রিলের ওপর ইমালশন নামক একটি পিচ্ছিল পদার্থ থাকে। পানিতে ধোয়ার পর এই ইমালশন চলে যায়। তারপর রিলটিকে শুকানোর জন্য কাপড়ের মতো ক্লিপ দিয়ে নেড়ে দেওয়া হতো। শুকানোর পর সে রিল থেকে ছবি প্রিন্টের পরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এরপর রিলকে এনলার্জ মেশিনে দেওয়া হতো ছবি প্রিন্টের জন্য। এর ওপর বাতি ছিল। আর মাঝখানে রাখা হতো ফিল্মের নেগেটিভ। নিচে দেওয়া থাকত একটি ইজেল। ইজেলের ওপর ছবির পেপার রাখা হতো, অর্থাৎ যে কাগজে ছবিটা প্রিন্ট হবে, সেটি রাখা হতো। ওপরের আলো প্রথমে নেগেটিভে পড়ত, তারপর ইজেলের ওপরে রাখা কাগজে ছবির প্রতিফলন তৈরি করত। ইজেলের মধ্যে ইঞ্চির মাপ দেওয়া থাকত। ছবির মাপের চাহিদামতো ইজেলে কাগজ রাখা হতো।

এসএলআর ক্যামেরা। ছবি- লেখক

ধীরে ধীরে ছবির কাগজে রিল থেকে প্রতিফলন পড়ত। তারপর সে কাগজকে নিয়ে আবার আগের তিনটি প্রক্রিয়ায় কেমিক্যালের মাধ্যমে ছবি তৈরি করা হতো। ছবি তৈরি করার সময় এটিকে হাত দিয়ে ধরা যেত না। কারণ, আঙুলের ছাপ পড়ার সম্ভাবনা থাকত এতে। ধরার জন্য একটি বিশেষ ধরনের চিমটা ব্যবহৃত হতো। শেষ কেমিক্যালে রাখার পর ছবিকে ওয়াশ করে শুকানোর জন্য নেড়ে রাখা হতো। এভাবেই শেষ হতো ছবি বানানোর এই কষ্টসাধ্য ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

এখন ছবি তোলার পর ছবিকে নানাভাবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে এডিট করা যায়। ছবিতে কোনো কমতি থাকলে বা কোনো দাগ থাকলে ফটোশপের মাধ্যমে তা মুহূর্তেই সরিয়ে ফেলা যায়। সরানো যায় মুখের দাগ, ব্রণ বা চোখের নিচের কালি। কিন্তু অতীতে যখন এভাবে নেগেটিভ ফিল্ম থেকে ছবি বের করা হতো, তখন এ কাজ করা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাধ্য।

তখন এ কাজকে বলা হতো রি-টাচ করা। ডার্করুমের ক্ষীণ বাল্বের সামনে নেগেটিভ ধরে এর কমতি খোঁজা হতো। ডাক্তার যেভাবে এক্স-রে প্লেট বাতির সামনে ধরে ভাঙা হাড় খুঁজে বের করেন, অনেকটা সেভাবেই। কোনো সমস্যা, যেমন মুখের ব্রণ খুঁজে পেলে নেগেটিভের ওপরে সরু ২বি পেন্সিল দিয়ে আলতো করে দাগ দেওয়া হতো ব্রণ মোছার জন্য।

নেগেটিভের দুটি অংশ থাকে। ইমালশন অংশ ও গ্লসি অংশ। ইমালশন অংশেই এই কারিকুরি করা হতো। কিন্তু এটি করার সময় নেগেটিভের ওপর তো আঁচড় পড়ত। সেটি ঠিক করার জন্য পা সাজানোর আলতা ব্যবহার করা হতো। খুব সরু ব্রাশ দিয়ে আলতা মাখিয়ে দেওয়া হতো রিলের ওপরে। এতে করে ছবি লাল হতো না। কারণ, এই রি-টাচ পদ্ধতি শুধু সাদাকালো ছবি তোলার যুগেই করা সম্ভব হতো।

ওয়াশ করার পর ছবি শুকানোর জন্য রাখা। ছবি- সংগৃহীত

খরচাপাতি

আশির দশক থেকে যারা ছবি তুলত, তারা ছবি ডেভেলপ করার জন্য হয় নিজে ডার্করুমের কাজ শিখত, না হয় আশেপাশে কোনো ফটোস্টুডিও থাকলে সেখানে গিয়ে ছবি ডেভেলপ করাত। ডার্করুমের কাজ জানত অনেক অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফাররা। বেশির ভাগ নতুন ফটোগ্রাফার অন্যদের সহায়তা নিত। এ ছাড়া প্রায় সকল পত্রিকা অফিসের থাকত নিজস্ব ডার্করুম।

রিল থেকে ছবি বের করতে খরচ কেমন হতো? প্রশ্ন করলে পদ্মা স্টুডিওর মালিক আক্কাস মাহমুদ বলেন, 'সাদাকালো ফিল্ম ডেভেলপ করতে আমরা দশ টাকা নিতাম। পুরো ফিল্মকে নেগেটিভ বানিয়ে দিতে এই খরচ হতো। আর ছবি বানানোর খরচ ছিল কয় কপি নেবে ও কোন সাইজের ছবি নেবে, তার ওপর। চার ইি  বাই ছয় ইি  আর বি২ সাইজের ছবি ছিল বেশি জনপ্রিয়। বি২ সাইজের ছবি একটির দাম পড়ত তিন টাকা। পোস্টার কার্ড সাইজের দাম পড়ত চার টাকা। এরপর ছবির আকার যত বড় হতো, দামও তত বাড়ত। ছবি তোলা আর ছাপানো ছিল বেশ খরুচে ব্যাপার। রিলের সব ছবি কেউ প্রিন্ট করত না। নেগেটিভ দেখে দেখে পছন্দমতো সাত-আটটি ছবি প্রিন্ট নিতো।'

ছবির তোলার যে ফিল্ম, তার আবার দাম ভিন্ন ভিন্ন হতো প্রকারভেদে। সাদাকালো ছবি তোলার জন্য নিওপেন নামক জাপানিজ ফিল্ম ব্যবহার করা হতো। জার্মান ব্র্যান্ড কোডাকও ব্যবহার করা হতো। এগুলো একেকটি ফিল্মের দাম পড়ত ৭০ থেকে ৯০ টাকা করে। আবার ইলফোর্ড নামের একটি ফিল্ম ব্যবহার করত পেশাদার ফটোগ্রাফাররা। এর দাম ছিল ১২০ টাকা। রঙিন ছবির ফিল্মের জন্য জাপানিজগুলোর দামই পড়ত ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সাধারণত স্টুডিওতে বা পেশাদার ছবি তোলার সময় এসব দামি দামি ফিল্ম ব্যবহার করা হতো। 

এসএলআর ক্যামেরা আর ফিল্মের রিল। ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে যারা ছবি তোলা শিখত বা বাড়িতে একটি ক্যামেরা কিনে পরিবারের ছবি তুলত– এমন মানুষদের জন্য এত দাম দিয়ে ফিল্ম কেনা ছিল নাগালের বাইরে। তাদের জন্য ছিল আরেকটি দেশি পদ্ধতি। একে বলা হতো রি-ফিল। শব্দটা আসলে রি-ফিল্ম, কিন্তু মানুষের মুখে প্রচলিত হতে হতে এটি হয়ে যায় রি-ফিল।

এফডিসিতে সিনেমা বানানোর জন্য ভিডিও ক্যামেরায় ব্যবহার করা হতো বিদেশ থেকে আনা বড় বড় রিলের ক্যান। এগুলোর একেকটিতে কয়েক শ হাত লম্বা নেগেটিভ রিল থাকত। এফডিসির লোকেরা এসব রিলের ক্যান নিউমার্কেটে বিক্রি করে দিত। আর এই ক্যানগুলো খুলে প্রায় ১২০ মিলিমিটার সাইজ অনুযায়ী কাটা হতো। তারপর এগুলো ফিল্মে ভরে বিক্রি করা হতো। ভিডিও ক্যামেরার জন্য বানানো রিল এভাবে কালোবাজারি করে বিক্রি করা হতো। একেকটি ১২০ মিলিমিটার রি-ফিলের দাম ছিল মাত্র দশ টাকা। সাদাকালো ছবির যুগে এ কাজ বেশি করা হতো। রঙিন ছবির সময় রি-ফিল জনপ্রিয়তা হারায়; কারণ, এতে ছবির রং ভালোমতো আসত না। ফলে তখন সবাইকেই দামি ফিল্ম কিনতে হতো।

অ্যানালগ থেকে ডিজিটালে বিবর্তন

আমাদের দেশে রঙিন ফিল্ম চালু হয় আশির দশকে। এলিফ্যান্ট রোডের আলপনা প্লাজায় ফুজি ফিল্মের দোকান খোলা হয় প্রথম। এখানে জাপান থেকে ফুজির কর্মীরা এসে রঙিন ছবি ডেভেলপ করা শিখিয়ে দিয়ে যায়। পরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুজি ফিল্মের শাখা খোলা হয়। এছাড়া মোহাম্মদপুরের বেঙ্গল কালার ল্যাব, এজেড কালার ল্যাবও ছিল রঙিন ছবি হাতে ডেভেলপ করার প্রথম দিককার স্টুডিও। এসব স্টুডিও আধুনিক যন্ত্র নিয়ে আসে, যেগুলোয় ফিল্মের নেগেটিভ দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি বের হয়ে আসত। ডার্করুমের প্রচলন কমে যায় এর পর থেকে। ২০০০ সালের দিকে সাদাকালো ফিল্ম প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।

একটি ডার্ক রুম। ছবি- সংগৃহীত

কিন্তু তখনো ছিল এসএলআর ক্যামেরা। অর্থাৎ ফিল্মের ক্যামেরা। ডিজিটাল ক্যামেরা বা ডিএসএলআর ক্যামেরার যুগে আমরা প্রবেশ করি ২০০৩-এর দিকে। ২০০২ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে ফিল্ম ডেভেলপ করা হতো। কিন্তু এরপরে ব্যাপকভাবে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে সবাই। এসএলআর ক্যামেরা আর ফিল্ম রোলের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মেমোরি কার্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ে সবাই।

'আমাদের পদ্মা স্টুডিওতে ২০০৫ পর্যন্ত ফিল্ম ডেভেলপ করার মেশিন রেখেছিলাম আমরা। গুটিকয়েক ক্রেতা ছিল, যারা নিয়মিত তখনো ফিল্ম ডেভেলপ করার জন্য আসত। পরে ধীরে ধীরে তারাও ডিজিটালে আসতে বাধ্য হয়। ২০১০ পর্যন্ত আমরা আগের ফিল্ম যুগে নেগেটিভগুলা সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম। পরে সেগুলো ফেলে দেই। মজার ব্যপার হলো, এখনো আমাদের কাছে কালেভদ্রে এক দু-জন মানুষ আসেন ফিল্ম ডেভেলপ করার জন্য। যারা শুধু শখের বশে এখনো ফিল্মে ছবি তোলেন এসএলআর ক্যামেরা ব্যবহার করে। কিন্তু আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি না। আমার জানামতে ঢাকায় দৃক গ্যালারিতে এখনো ফিল্ম থেকে ছবি ডেভেলপ করার মেশিনটা আছে'- বলছিলেন আক্কাস মাহমুদ।

এখন ব্যাক্তিগতভাবে হোক বা বাণিজ্যিকভাবে হোক– ফটোগ্রাফির সেই অ্যানালগ যুগ আর নেই। ডিজিটাল ক্যামেরা, মেমোরি কার্ড, ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটর–এর সবই বর্তমান যুগের ফটোগ্রাফির অনুষঙ্গ। তবে যারা ফটোগ্রাফির সাথে অনেক আগে থেকে জড়িত, তাদের অনেকেই আগের সেই সোনালি যুগের কথা মনে করে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। আক্কাস মাহমুদ বলেন, 'আমার কাছে সেই নেগেটিভ রিলের যুগটাই ফটোগ্রাফির আসল সময় মনে হয়। এখন সবকিছু অতি সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। ফিল্ম ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার যে আনন্দ, তা এখন আর নেই। ফিল্মের ছবির যে ডিটেইল আর শার্পনেস থাকত, তা এখন অনেক দামি ক্যামেরার ছবিতেও থাকে না।'

তবে সময়ের সাথে সাথে নতুনকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে সবাই। ফিল্ম ক্যামেরায় ছবি তোলার বেশ ভোগান্তি ছিল। ছবি ভালো আসবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যেত না ছবি হাতে পাওয়ার আগপর্যন্ত। ছবি ডেভেলপ করাও ছিল অনেক পরিশ্রমের কাজ। এই প্রক্রিয়ার পুরোটাই ছিল ব্যয়বহুল। কিন্তু ডিজিটাল যুগ ফটোগ্রাফির ভোগান্তি কমিয়েছে। এখন সহজেই ছবি ছাপানো ও সংরক্ষণ করা যায়। সফট কপিও সংরক্ষণ করে রাখা যায় ইন্টারনেটে।

কিন্তু এখন ক্যামেরা অতি সহজলভ্য হওয়ার কারণে দেশের ফটোগ্রাফি-বাণিজ্য ধ্বংসের মুখে। স্টুডিওতে এসে কেউ আর ছবি তুলতে চায় না। আগে মানুষ বাসায় মোটা মোটা ফটো অ্যালবামে পাতার পর পাতা ছবি সাজিয়ে রাখত। ফটো অ্যালবাম খুলে বাসার সবাই একসাথে বসে ছবি দেখা ছিল একটি উৎসবের মতো। কিন্তু এখন আর সে প্রচলন নেই, সে আবেগ নেই। ফোনের গ্যালারিতে হাজার হাজার ছবি দেখে ফেলা যায় আঙুলের ছোঁয়ায়।

ডিএসএলআর ক্যামেরা। ছবি: সংগৃহীত

ফটো স্টুডিওগুলোর বাণিজ্য দাঁড়িয়ে আছে শুধু পাসপোর্ট সাইজের ছবির ওপর। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজে ছবি তোলার জন্যই মানুষ এখন স্টুডিওতে আসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরির আবেদন কিংবা ভিসার আবেদন– এগুলো ছাড়া ফটো স্টুডিওতে মানুষের পা পড়ে না। অতীতে যেকোনো উৎসবে ফটো স্টুডিওতে ভিড় পড়ে যেত মানুষের ছবি তোলার জন্য। কিন্তু এখন দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০-২৫টি করে স্টুডিও তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। পাসপোর্ট সাইজের ছবিও মানুষ এখন মোবাইলে তুলে প্রিন্টের দোকানে ছাপিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।

সময়ের সাথে সাথে হয়তো আরও আধুনিকায়ন আসবে আমাদের ফটোগ্রাফিতে। ফটো স্টুডিওগুলোও হয়তো সুবিধা করতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিবে। কিন্তু আমাদের ফটোগ্রাফির যে সোনালি যুগ ছিল একসময়, তার স্মৃতি যেন কখনো হারিয়ে না যায়–বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই প্রত্যাশা রাখলেন আক্কাস মাহমুদ।

 

Related Topics

টপ নিউজ

ফিল্ম ক্যামেরা / ছবি / স্টুডিও / ফিল্ম স্টুডিও

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বাংলাদেশের ২০ মিগ-২৯ ইঞ্জিনের মধ্যে সচল মাত্র ৬টি—৩৮০ কোটি টাকার মেরামত চুক্তির উদ্যোগ
  • ২০৪৫ সালের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলার দান করব, বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র শিশুদের ‘হত্যা’ করছেন মাস্ক: গেটস
  • রাতভর উত্তেজনা শেষে ভোরে গ্রেপ্তারের পর হত্যা মামলায় কারাগারে আইভী
  • আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার, ২ জন সাময়িক বরখাস্ত
  • নয়াদিল্লিতে সৌদি ও ইরানি মন্ত্রী; পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পূর্বে যেসব তৃতীয় পক্ষ মধ্যস্থতা করেছে
  • ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের

Related News

  • পোপের ছবি পোস্ট করার কথা অস্বীকার করলেন ট্রাম্প!
  • আহত ফিলিস্তিনি শিশুর ছবি জিতল প্রেস ফটো অব দ্য ইয়ার 
  • ছবিতে ইউনূস-মোদির বৈঠক
  • ছবিতে বিশ্বজুড়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন
  • ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার প্রকাশিত ছবিতে সত্য আড়াল করা হয়েছে: পুলিশ

Most Read

1
বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ২০ মিগ-২৯ ইঞ্জিনের মধ্যে সচল মাত্র ৬টি—৩৮০ কোটি টাকার মেরামত চুক্তির উদ্যোগ

2
আন্তর্জাতিক

২০৪৫ সালের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলার দান করব, বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র শিশুদের ‘হত্যা’ করছেন মাস্ক: গেটস

3
বাংলাদেশ

রাতভর উত্তেজনা শেষে ভোরে গ্রেপ্তারের পর হত্যা মামলায় কারাগারে আইভী

4
বাংলাদেশ

আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার, ২ জন সাময়িক বরখাস্ত

5
আন্তর্জাতিক

নয়াদিল্লিতে সৌদি ও ইরানি মন্ত্রী; পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পূর্বে যেসব তৃতীয় পক্ষ মধ্যস্থতা করেছে

6
আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab