সিরিয়ায় আইএসের ঘাটিতে 'ব্যাপক' হামলা যুক্তরাষ্ট্রের
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে 'ব্যাপক' সামরিক অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের ওপর সাম্প্রতিক এক প্রাণঘাতী হামলার জবাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। খবর বিবিসি'র।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানায়, যুদ্ধবিমান, অ্যাটাক হেলিকপ্টার ও কামানের সহায়তায় মধ্য সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ৭০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। অভিযানে জর্ডানের বিমান বাহিনীও অংশ নেয়।
সেন্টকমের ভাষ্য অনুযায়ী, আইএসের গোপন আস্তানা ও অস্ত্রের গুদাম ধ্বংসে ১০০টিরও বেশি নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম প্রিসিশন মিউনিশন ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'আমরা অত্যন্ত জোরালোভাবে আঘাত করছি।' গত ১৩ ডিসেম্বর পালমিরা শহরে আইএসের এক চোরাগোপ্তা হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন বেসামরিক মার্কিন দোভাষী নিহত হওয়ার পর এই প্রতিশোধমূলক অভিযান চালানো হলো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে সেন্টকম জানায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় 'অপারেশন হকআই স্ট্রাইক' শুরু করা হয়।
সেন্টকম কমান্ডার অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার বলেন, 'যারা আমেরিকান এবং এই অঞ্চলে আমাদের সহযোগীদের ক্ষতি করতে চায়, যুক্তরাষ্ট্র সেই সব সন্ত্রাসীকে নিরলসভাবে তাড়া করে যাবে।'
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেন, এই অভিযান কোনো যুদ্ধের সূচনা নয়; এটি একটি 'প্রতিশোধের ঘোষণা'।
তিনি আরও বলেন, 'বিশ্বের যেখানেই আপনি আমেরিকানদের লক্ষ্যবস্তু করবেন, আপনার বাকি সংক্ষিপ্ত ও উদ্বিগ্ন জীবন এই ভয়ে কাটবে যে যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে খুঁজবে, খুঁজে বের করবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করবে। আজ আমরা আমাদের শত্রুদের খুঁজে বের করেছি এবং হত্যা করেছি। অনেককে মেরেছি। এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে।'
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'যেমনটা আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, দায়ী খুনি সন্ত্রাসীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত কঠোর প্রতিশোধ নিচ্ছে।' তিনি আরও দাবি করেন, সিরিয়া সরকার এই অভিযানে 'পূর্ণ সমর্থন' দিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানায়, রাকা ও দেইর এজ জোর শহরের কাছে আইএসের অবস্থানগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে। সংস্থাটির দাবি, এসব হামলায় আইএসের একজন প্রভাবশালী নেতাসহ বেশ কয়েকজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে আইএস এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলো বিবিসি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এর আগে সেন্টকম জানিয়েছিল, পালমিরায় ওই প্রাণঘাতী হামলাটি আইএসের একজন বন্দুকধারী চালিয়েছিল, যাকে পাল্টা হামলায় হত্যা করা হয়েছে। ওই চোরাগোপ্তা হামলায় আরও তিনজন মার্কিন সেনা আহত হন। পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা বলেন, হামলাটি এমন একটি এলাকায় সংঘটিত হয়েছে, যেখানে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
তবে সিরিয়ান অবজারভেটরি দাবি করেছে, হামলাকারী ব্যক্তি সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিল। এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি এবং বন্দুকধারীর পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত সিরীয় যোদ্ধাদের একটি জোট ঘোষণা দিয়েছিল, সিরিয়ায় আইএসের নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বশেষ ভূখণ্ডটির পতন ঘটেছে। তবে এরপরও গোষ্ঠীটি বিভিন্ন সময় হামলা চালিয়ে আসছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়া ও ইরাকে এখনো আইএসের পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার যোদ্ধা সক্রিয় রয়েছে।
আইএসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
সম্প্রতি সিরিয়া আইএস দমনে গঠিত আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গত নভেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শারার নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ২০২৪ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারকে উৎখাত করে। ওই সফরকে তিনি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি 'নতুন যুগ' হিসেবে আখ্যা দেন।
