বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় আইএসের কার্যক্রমের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছিলেন গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা: মালয়েশিয়া পুলিশ

মালয়েশিয়ার সরকার শুক্রবার (৪ জুলাই) জানিয়েছে, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পুলিশের ভেঙে দেওয়া বাংলাদেশি র্যাডিক্যাল মিলিট্যান্ট গ্রুপ (জিএমআরবি) সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জন্য তহবিল সংগ্রহ এবং সদস্য নিয়োগ করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৬ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৬এ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া, ১৬ জন এখনও নিরাপত্তা অপরাধ (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন ২০১২ (এসওএসএমএ)- এর অধীনে আটক রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ বাংলাদেশির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি এবং আমরা এখন তাদের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছি।'
তিনি বলেন, বাংলাদেশ গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাই করে দেখবে, তারা জঙ্গিবাদে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখবে।
উপদেষ্টা বলেন, 'যদি তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাদের শাস্তি নিশ্চিত করব।'
পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই ঘটনা ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের মালয়েশিয়ার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা জানান, সাধারণত যেকোনো নেতিবাচক ঘটনা ভিসা দেওয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং এই ঘটনার কোনো প্রভাব পড়বে না আমরা তা বলতে পারি না।
মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক তান শ্রী মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল বলেন, দলটি বার্ষিক সদস্য ফি ৫০০ রিংগিত এবং সদস্যদের আর্থিক সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী অনুদানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেছিল।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, চক্রটির ১০০ থেকে ১৫০ জন সদস্য ছিল, তারা সকলেই মালয়েশিয়ার কারখানা, নির্মাণ সাইট এবং পেট্রোল স্টেশনের মতো শ্রম খাতে কাজ করে।
তিনি শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'এই চক্র আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ও ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে সিরিয়া ও বাংলাদেশে 'আইএসের জন্য' অর্থ পাঠাত।'
এই চক্রটি নতুন সদস্য নিয়োগের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপও ব্যবহার করে।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, তারা ঠিক কত অর্থ সংগ্রহ করেছে তা এখনও তদন্তাধীন। আমাদের ধারণা, সদস্য ফি এবং চাঁদা থেকেই এই অর্থ এসেছে।
তিনি বলেন, চক্রটি আইএসের প্রচারণা, বাইআত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ এবং ধর্মীয় ক্লাস এবং কর্মী সভার মতো গোপন কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, 'যারা অনলাইনে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাদের গ্রুপের প্রভাব বিস্তারের জন্য সেল নেতা করা হয়েছিল। স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে অভিজাত চক্র গঠন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নতুন সদস্য নিয়োগ করা হয়েছিল।'
তিনি আরও বলেন, তদন্তে এখন পর্যন্ত জানা গেছে কোনো মালয়েশিয়ান এই চক্রের সঙ্গে জড়িত নয়।
এই চক্রটি মালয়েশিয়ায় কোনো ধরনের হামলার পরিকল্পনা না করলেও, তারা তহবিল সংগ্রহ এবং সদস্য নিয়োগের জন্য দেশটিকে একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ এবং ইন্টারপোলের সহায়তায় তদন্ত চলছে।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, আইএস মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ান আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশি নাগরিকদের মাধ্যমে পরিচালিত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই চক্রটির কার্যকলাপ শনাক্ত প্রাথমিকভাবে করেছে পুলিশ।
২৮শে এপ্রিল পরিচালিত অভিযানের প্রথম ধাপে সেলাঙ্গরে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জোহরে অবস্থিত জিএমআরবি-র অফিস প্রকাশ্যে আসে।
৭ই মে পরিচালিত দ্বিতীয় ধাপে জোহরে আরও ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে গ্রুপের নেতাও রয়েছেন।
১৯শে জুন থেকে ২১শে জুন পর্যন্ত পরিচালিত তৃতীয় এবং শেষ ধাপে আরও ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, এর ফলে মালয়েশিয়ায় পরিচালিত জিএমআরবি-র প্রধান নেটওয়ার্ককে কার্যত ভেঙে যায়।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, চক্রের সঙ্গে ন্যূনতম জড়িত থাকার সন্দেহভাজনদেরও তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।