সেনাবাহিনীর গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই, পরোয়ানা তামিলের দায়িত্ব পুলিশের: তাজুল ইসলাম

সেনাবাহিনীর গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই, আদালতের দেওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের দায়িত্ব পুলিশের বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনীর গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই, আদালতের দেওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করবে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার বললে, আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়।'
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে আইসিটি প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা এবং জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ২৫ সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এসময় সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, 'এই আদেশ (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা) পালনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসকে অবহিত করা হয়েছে। তারা কিন্তু গ্রেপ্তার করবে না।'
তিনি বলেন, 'তারা অবহিত থাকার অর্থ হচ্ছে যখন পুলিশ এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে যাবে, তারা অবহিত থাকলে এই পরোয়ানা তামিল করতে তাদের সাহায্য করবে। সুতরাং অ্যারেস্টিংয়ের পাওয়ার (গ্রেপ্তারের ক্ষমতা) কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, অন্য কারো নয়।'
তাজুল ইসলাম বলেন, '১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে, গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করতে হবে। এরপর আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, তাকে কোথায় রাখা হবে।'
ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ঘোষণা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি এখন পর্যন্ত জানি না যে আদৌ কোনো সাবজেল ঘোষণা হয়েছে কি না। কোনো ডকুমেন্ট আমার হাতে নেই, যেহেতু আপনারা বলছেন। যদি সরকার কোনো নির্দিষ্ট জায়গাকে সাবজেল ডিক্লেয়ার (উপকারাগার ঘোষণা) করে, সরকারের সেই ক্ষমতা আছে।'
তিনি বলেন, 'কোন জায়গাটাকে তারা জেল ঘোষণা করবেন, প্রিজন অথরিটির আওতায় নিয়ে আসবেন, সেটা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। সুতরাং এটা আমাদের কোনো কনসার্ন হওয়ার কোনো বিষয় নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আইন হচ্ছে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনতে হবে। আদালতে আনার পর আদালত যদি ফারদার অর্ডার (পরবর্তী আদেশ) দিয়ে বলেন—কারাগারে পাঠান, তখন কারাগার বলতে সেটা কেন্দ্রীয় কারাগারও হতে পারে, সেটা জাতীয় সংসদ ভবনের মধ্যেও হতে পারে, এমপি হোস্টেল হতে পারে বা অন্য কোনো জায়গাকেও যদি সরকার কারাগার ঘোষণা করেন, সে জায়গায় পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু সেটা জেল বা কারাগার হিসেবে গণ্য হবে।'
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, 'সুতরাং কোনো জায়গাকে কারাগার ঘোষণা করা হচ্ছে, তা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) বা তদন্ত সংস্থার বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আইন অনুযায়ী কাজটা করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'আসামিকে গ্রেপ্তার যদি করা হয়, করা মাত্রই উইদিন টোয়েন্টি ফোর আওয়ার্স (২৪ ঘণ্টার মধ্যে) তাকে আদালতে আনতে হবে। এটা হচ্ছে মোদ্দাকথা। সেটা সংবিধানে যেমন আছে, আইসিটির আইনে আছে, সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধি) আছে।'
প্রসঙ্গত, আজ দ্বিতীয় দিনের মতো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।