বছরে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ৭,৫০০ শরণার্থী নেওয়ার ঘোষণা ট্রাম্পের, ইতিহাসে সর্বনিম্ন
 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম শরণার্থী প্রবেশসীমা ঘোষণা করেছেন। ২০২৬ অর্থবছরে দেশটিতে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৫০০ জন শরণার্থী প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই স্বক্রান্ত নথি স্বাক্ষরিত হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রেসিডেনশিয়াল নথিতে বলা হয়, সারা বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকা মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী গ্রহণ ব্যবস্থা কার্যত বন্ধই থাকবে। তবে নির্ধারিত ৭ হাজার ৫০০ জনের বেশির ভাগ স্থান বরাদ্দ করা হবে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের জন্য।
এতে আরও বলা হয়, '(প্রেসিডেন্টের) নির্বাহী আদেশ ১৪২০৪ অনুযায়ী, প্রবেশসংখ্যা প্রধানত দক্ষিণ আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। স্বদেশে বেআইনি বা অন্যায় বৈষম্যের শিকার অন্য গোষ্ঠীর সদস্যরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।'
ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন, কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ও শীর্ষ আফ্রিকান নেতারা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ওই নথিতে আরও বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন ভবিষ্যতে শরণার্থী পরিষেবার সাথে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার পরিধি সীমিত করবে। এছাড়া বর্তমানে শরণার্থী পুনর্বাসনের জন্য যে অনুদান ও চুক্তি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়, তা হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস বিভাগের শরণার্থী পুনর্বাসন অফিসে সরিয়ে নেওয়া হবে।
একটি পৃথক ঘোষণায় বলা হয়েছে, 'এই স্থানান্তর নিশ্চিত করবে যে সম্পদ, তত্ত্বাবধান এবং দায়িত্ব শরণার্থী পুনর্বাসন কার্যক্রমের সঙ্গে ঠিকভাবে মিলবে, যা পুরোপুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত হবে।'
ট্রাম্পের নির্ধারিত শরণার্থী প্রবেশসীমা ১৯৮০ সালের 'রিফিউজি অ্যাক্ট' পাস হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে কম। সেই আইনেই যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী গ্রহণ ও পুনর্বাসনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চালু হয়।
এরপর থেকে অন্তত ২০ লাখ শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পেয়েছেন। ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প সেই কর্মসূচি স্থগিত করার চেষ্টা করেছিলেন, যা আদালত থেকে আটকে দেওয়া হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার ঘোষিত এই নতুন প্রবেশসীমাসীমা বাইডেন প্রশাসনের শেষ বছরের তুলনায় অতি সামান্য; তখন ১ লাখ ২৫ হাজার শরণার্থী প্রবেশের অনুমতি ছিল। অক্টোবর ২০২৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত নতুন এই সীমা প্রযোজ্য হবে।
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ কোটি ২৭ লাখ শরণার্থী রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট প্রতিবছর শরণার্থী প্রবেশের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারেন, তবে সর্বনিম্ন সীমা নেই। এই কারণে দীর্ঘদিন ধরে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্প, যিনি তার প্রথম মেয়াদে প্রবেশের সংখ্যা কমিয়েছিলেন, তিনি কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী কর্মসূচি (ইউএসআরএপি) বন্ধ করে দিতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো অ্যারন রাইকলিন-মেলনিক লিখেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় 'শরণার্থী' শব্দের সংজ্ঞাই বদলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, 'ট্রাম্পের নতুন শরণার্থী সংজ্ঞা এমন মানুষদের প্রবেশের সুযোগ দেয়, যাদের আসল শরণার্থী সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত নয়—যিনি নিপীড়নের শিকার হন (শুধু 'বৈষম্য নয়') জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক মতের কারণে।'
তিনি আরও লিখেছেন, 'দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী কর্মসূচি জাতিগত নিধন ও অন্যান্য ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের আশ্রয় দিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এখন এটি শ্বেতাঙ্গ অভিবাসনের পথ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক মানবিক কর্মসূচির মুকুট রত্নের কী পতন!'
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক শরণার্থী সহায়তা প্রকল্প (আইআরএপি) জানিয়েছে, সীমা ঘোষণা করার আগে ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসের বাধ্যতামূলক পরামর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। সংস্থাটি একে খোলাখুলিভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দিয়েছে।
সংস্থার প্রেসিডেন্ট শরিফ আলি এক বিবৃতিতে বলেন, 'আজকের ঘোষণা দেখিয়ে দেয়, বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রতি দায়িত্ব এই প্রশাসন কতদূর অবহেলা করেছে।'
ট্রাম্পের ঘোষণায় শরণার্থী প্রবেশের এই বিশাল কাটছাঁটের কারণ বলা হয়নি; কেবল উল্লেখ করা হয়েছে, এটি 'মানবিক উদ্বেগ বা জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় ন্যায্য'।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প সব ধরনের অভিবাসনের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ চালিয়েছেন। তবে অনেকে আশা করেছিলেন, ঐতিহাসিকভাবে উভয় রাজনৈতিক দলে সমর্থিত শরণার্থী কর্মসূচিতে তিনি হয়তো হস্তক্ষেপ করবেন না।

 
             
 
 
 
 
