জলবায়ু সংকটে উষ্ণ হচ্ছে আইসল্যান্ড, প্রথমবারের মতো মশা শনাক্ত
উত্তর মেরুর কাছাকাছি হওয়ায়– তুষার ঢাকা এক বরফের রাজ্যই ছিল আইসল্যান্ড। কিন্তু, এই ভুখণ্ডেও এখন জলবায়ু সংকটের প্রভাবে উষ্ণতা বাড়ছে, যার ফলে প্রথমবারের মতো মশা শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে। এই ঘটনা আরও ইঙ্গিত দিচ্ছে, দেশটি এখন আগের তুলনায় কীটপতঙ্গের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশে পরিণত হচ্ছে।
চলতি মাসের আগে পর্যন্ত আইসল্যান্ড ছিল বিশ্বের যে কয়েকটি ভূখণ্ড মশামুক্ত ছিল– আইসল্যান্ড ছিল তার একটি। এর বাইরে একমাত্র মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকায়ও মশা নেই।
বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই সতর্ক করে আসছিলেন যে, আইসল্যান্ডে এক সময় মশা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করতে পারে, কারণ সেখানে প্রচুর জলাভূমি ও পুকুর রয়েছে, যা প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ।
যদিও তীব্র শীত কীটপতঙ্গের অনেক প্রজাতির টিকে থাকার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তবে দেশটির তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে—উত্তর গোলার্ধের গড় উষ্ণতার চেয়েও প্রায় চারগুণ দ্রুত। গলছে হিমবাহ, আর দেশটির জলসীমায় এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় উষ্ণ সমুদ্রের মাছ যেমন ম্যাকারেলও ধরা পড়ছে।
আইসল্যান্ডের ন্যাচারাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের পতঙ্গবিদ ম্যাথিয়াস আলফ্রেদসন এই আবিষ্কারটি নিশ্চিত করেছেন। এক শখের বিজ্ঞানীর পাঠানো নমুনা নিজে পরীক্ষা করে তিনি মশাগুলো শনাক্ত করেন।
তিনি জানান, "কিডাফেল, কিয়োস অঞ্চলে 'সুলিসেটা অ্যানুলাটা' প্রজাতির তিনটি মশা পাওয়া গেছে—দুটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ। এগুলো মথ ধরার জন্য ঝোলানো ওয়াইন রশিতে আটকা পড়ে।"
এই প্রজাতিটি ঠান্ডা সহনশীল, এবং শীতকালে বেজমেন্ট বা খামারে আশ্রয় নিয়ে টিকে থাকতে পারে।
মশাগুলো প্রথমে খুঁজে পান বিউর্ন হ্যালটাসন, যিনি ফেসবুকের 'ইনসেক্টস ইন আইসল্যান্ড' গ্রুপে বিষয়টি শেয়ার করেন। তিনি জানান, "১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় লাল ওয়াইনের ফাঁদে একটি অচেনা মাছির মতো পোকা দেখি। তখনই বুঝে যাই কিছু অস্বাভাবিক ঘটছে। দ্রুত ধরে ফেলার পর দেখি—এটি একটি স্ত্রী মশা।"
তিনি আরও দুটি মশা ধরেন এবং সেগুলো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠান, যেখানে সেগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।
বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির মশা নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাজ্যে এ বছর প্রথমবারের মতো- ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস ইজিপ্টাই -এর ডিম পাওয়া গেছে, আর কেন্ট এলাকায় শনাক্ত হয়েছে এশীয় টাইগার মশা (এডিস অ্যালবোপিক্টাস)। এই দুই প্রজাতিই বহিরাগত, যা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ ছড়ায়।
